#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ_6
” love u vaiya.আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যেও না প্লিজ। তারাতারি সুস্থ হয়ে যাও। নিজের জন্য নয় তোমার বোনের জন্য তোমাকে সুস্থ হতে হবে। তুমি কি বুঝতে পারছো না তোমার বোনটার খুব কষ্ট হচ্ছে ।”
এটুকু বলেই মেঘ চুপ হয়ে গেলো । সবাই বুঝতে পারলো মেঘ ঘুমিয়ে গেছে। সবার চোখ থেকে পানি পড়ছে। মেঘের কথাগুলো শুনে কেউ নিজেদের সামলাতে পাড়েননি।
মোনা খান নিজের চোখের পানি মুছে মেঘের কপালে একটা চুমু খেয়ে আহানের দিকে তাকালো। তাকিয়েই ওবাক হয়ে গেলো আহান এক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে ।চোখের পাপড়ি গুলো ভেজা,, ঠোট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। আহানকে শেষ কবে তিনি কাদতে দেখেছে তার মনে নেই। তার এই ছেলে সবসময়ই সিরিয়াস মুডে থাকে। সেই ছেলে আজকে একটা মেয়ের জন্য কাদছে কথাটা ভাবতেই আরেক দফা অবাক হলেন তিনি।
আহান ফোনটা কেটে হনহন করে ওটি থেকে বের হয়ে সোজা মিরা রহমানের সামনে গিয়ে দাড়ালো।ওর পিছনে পিছনে মোনা খান রিয়া চৌধুরী এবং সজিদ চৌধুরীও আসলেন।মিরা রহমান বসে বসে নিশব্দে কাদছিলেন । ওনারা সবাই বাহিরে বসে এতক্ষন ফোনে মেঘের সব কথা শুনছিলো। আহানকে দেখে মিরা রহমান উঠে দাড়ালো ।আহান মিরা রহমানের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় জিঙ্গেস করে
“মামনি আই হোপ মেঘ এতক্ষন যা বলেছে তোমরা সবটাই শুনেছো ,, আমি এটা জানতে চাই যে মেঘের এসব কথার মানে কি? আর মিহিরের এই অবস্থা কিকরে হলো? মেঘ কেনই বা বললো যে সবাই ওকে বাজে কথা বলে অপবিএ বানিয়ে দিয়েছে? ওর জন্য তোমাদের অপমান সহ্য করতে হয়েছে ?অ্যাকচুলি ওর সাথে হয়েছেটা কি?”
মিরা রহমান সবার দিকে তাকিয়ে দেখলেন সবাই প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে ওনার দিকেই তাকিয়ে আছেন। ওনি চোখের পানি মুছে লম্বা একটা শ্বাস নিলেন।তারপর এক এক করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটাই বললেন ।মেঘের বিয়ে ভাঙা থেকে শুরু করে মিহিরের গুলি লাগা পর্যন্ত সব ঘটনা ।
সবাই সবটা শুনে বড়োসড়ো ঝটকা খেলো।
মিরা রহমান কথাগুলো বলতে বলতে শব্দ করে কেদে দিলেন।এই মূহুর্তে মোনা খানের নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। নিজের সো কলড ইগোর জন্য তার বোনটা সবার কাছে কতটা অপমানিত হয়েছে। শুধু তাই নয় মেঘ আর মিহিরের এই অবস্থার জন্য কোনো না কোনো ভাবে ওনারাই দায়ী। যদি নিজের বোনের ছোট্ট ভুলটাকে যদি ক্ষমা করে দিতেন।তাহলে হয়তো আজকের দিনটা অন্য রকম হতো। হাসান চৌধুরী সাজিদ চৌধুরীরও একই কথা ভাবছেন। আহানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ।চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে। রেগে দাতে দাত চেপে আজম রহমান ও মিরা রহমানকে উদ্যেশ্য করে বললো
“লাইক সিরিআসলি। আপনারা এইটুকু একটা পিচ্চি মেয়ের বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন।আই কান্ট বিলিভ দিস।কতোটুকু বয়স ওর । ডু হ্যাব এ এ্যানি আইডিয়া আপনারা কি করতে যাচ্ছিলেন ।আপনারা
কেমন বাবা মা ? আমি তো ভাবতেই পারছি না আজকের যুগে এসে আপানারা এরকম কাজ করেছেন।”
আহানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ।ইচ্ছে করছে এখানের সব কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ।ও ওখানে আর এক মিনিটও দাড়ালো না হনহন করে হসপিটাল থেকে বাইরে বের হয়ে গেলো।
________________________________________________
হাসপাতালের বেডের উপর এক পাশে গুটি শুটি মেরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে মেঘ। তার পাশেই মিহির বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে এক হাত দিয়ে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর হাত দিয়ে ফোন স্ক্রল করছে।
“Good Eveing গাইস । ”
খুব পরিচত একটা কন্ঠ শুনে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো মিহির। তাকিয়েই মিহিরের ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উটলো। দরজার সামনে আহান, আহির, হিয়ান, হিমা, রিয়ান, দাড়িয়ে আছে।মিহির ঠোটে হাসি রেখেই বললো
” Good Eveing হিমা আপু।”
হিমা কেবিনে ডুকতে ঢুকতে বললো
“এখন কেমন আছি?”
“আপু তুমি সারাদিন আমার সাথেই ছিলে তিনটার দিকে বাসায় গেছো ।এখন মাএ সাতটা বাজে এইটুকু সময়ের মধ্যে আমার কি হবে?এতো চিন্তা কেনো করো বলতো?”
” তো আমার ভাইটা অসুস্থ এতো বড় একটা অপারেশন হয়েছে ।আর আমার এইটুকু চিন্তা হবে না।”
মিহির অসহায় মুখ করে বললো
“আপু এটাকে চিন্তা করা বলে না। প্যামপার করা বলে। তোমরা সবাই মিলে যা শুরু করেছো তাতে আমার নিজেকে দুই বছরের বাচ্চা মনে হচ্ছে।”
মিহিরের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। হিমা হাসতে হাসতে হাত দিয়ে মিহিরের মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলো
— “আমার এই ভাইটাকে তো ছোট্ট বেলায় একটুও আদর করতে পারিনি ।তাই একসাথে সব পুষিয়ে নিচ্ছি।বলেই মিহিরের বেডের পাশের চেয়ারের উপর বসলো।”
কারো কথার শব্দ কানে আসতেই পিট পিট করে চোখ খুললো মেঘ। মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ায় চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল। ঘুমু ঘুমু চোখে সামনে তাকাতেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফেললো। মুখের এক্সপ্রেশন এমন হয়ে গেলো যেনো কেউ ওকে করলার জুস খাইয়ে দিয়েছে। মেঘদের বেডের পায়ের কাছের স্টানে উপরে দুই হাত রেখে ভর দিয়ে দাড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছে আহান। এই একজনকে মেঘ একদম সজ্য করতে পারে না। গত দশ দিন ধরে ওর জিবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছে। এই দশ দিনে আহান মেঘকে যতোগুলো ধমক দিয়েছে তা এই ষোলো বছরে ওর মা বাবা ভাইও ওকে দেয়নি।দেখতে কি সুন্দর কিন্তু আস্ত একটা খচ্চর।দশ দিন আগে যখন মেঘের সেন্স এসেছিলো তখন চোখ খুলে দ্বীতিয় বারের মতো আহানকে দেখেছিলো।নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে দেখেছিলো তার বেডের পাশের টুলে বসে একটা ছেলে ফোন স্ক্রল করছে।ছেলেটার গায়ের রং ফর্সা,,ঠোট দুটো হালকা গোলাপি,, মাথার সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো,, চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে,,, দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুম না হওয়ার জন্য এই অবস্থা।গায়ের এ্যাস কালারের একটা টিসার্ট পড়া। ফর্সা শরিরে এ্যাশ কালারের টিশার্ট টা এই ছেলেটার সুন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। ছেলেটাকে দেখে বড্ড ক্লান্ত মনে হচ্ছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো ছেলেটার এই ক্লান্ত মুখটা দেখতে মেঘের ভীষন ভালো লেগেছিলো।তার লাইফে প্রথম বার সে কারো উপরে ক্রাস খেয়েছিলো। তারপর সুস্থ হওয়ার পর যখন ওদের দুই ভাইবোনকে আহানদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।তখন ওরা ভীষন রকমের শকড হলেও পরে নিজেদের সামনে নিয়েছিলো।ইতিমধ্যে ওদের সবার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। ওরা মেঘদের সাথে এমন ব্যবহার করে যেনো ওরা অনেক দিনের পরিচিত।এদের মধ্যে একমাএ আহান সেই ব্যাক্তি যে কথায় কথায় মেঘকে ধমক দেয়।প্রথমে ওকে দেখে মেঘ যে ক্রাশ খেয়েছিলো তা এখন ধমক খেয়ে খেয়ে বাশে পরিনত হয়েছে।
“যাক ঘুম কুমারির ঘুম ভাঙলো তাহলে ”
আহিরের কথায় ভাবনার জগত থেকে বেড় হয়ে এলো মেঘ।তাকিয়ে দেখলো আহির তার পাশেই দারিয়ে আছে।মেঘ আহিরের দিকে তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিয়ে বললো
“গুড ইভেনিং ভাইয়া।”
আহির ও মুচকি হেসে বললো
“গুড ইভেনিং মাই ক্লাউড”
আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো
এই সন্ধ্যা বেলায় কেনো ঘুমিয়েছিলে?এই অসময়ে কেউ ঘুমায়?সারাদিন অনিয়ম না করলে পেটের ভাত হজম হয়না তাইনা।
মূহুর্তেই মেঘের হাসি গায়েব হয়ে গেলো বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে বিরবির করে বললো
“ব্যাস আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেলো।চলতি ফিরতি ডিসিপ্লিনের ফ্যাক্টরি কোথাকার।”
কথাটা বিরবির করে বললেও সবাই শুনতে পেলো। সবাই হু হা করে হাসতে লাগলো। আহান রাগি চোখে মেঘের তাকালো আহান এভাবে তাকাতেই মেঘ ভয়ে চুপসে গেলো। আহির আহানকে উদ্যেশ্য করে বললো
” ভেরি ব্যাড ব্রো। আমার বোনের দিকে একদম রাগি চোখে তাকাবে না।”
রিয়ান সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বললো
“খবরদার আহান আমার শালিকাকে একদম ভয় দেখাবি না।তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
মিহির অভিযোগের স্বরে বললো
“ব্রো তুমি ওদের কারও কথা শুনবে না। ও কাল রাত চারটা পর্যন্ত বসে বসে আমার ফোন দিয়ে গেমস খেলছে।বারবার বারন করেছি কিন্তু আমার একটা কথাও শুনেনি।রাতে ঘুমাতে পারেনি তাই এতোক্ষন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিল।আমি বলেছিলাম তোমাকে বলে দেবো কিন্তু ও বললো ও নাকি তোমাকে ভয় পায় না।”
মেঘ কটমট করে মিহিরের দিকে তাকালো কিন্তু মিহির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে রইলো।আহান রাগি চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। আহানকে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘের আত্মারাম খাচা ছাড়া হয়ে গেলো। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ও বুঝতে পারছে আজকে ওর কপালে শুনি আছে ।আহান খুব শান্ত কন্ঠ মেঘকে বললো
“মেঘ তারাতারি ফ্রেস হয়ে রেডি হও আমারা এখন
বের হবো।”
মেঘ কাপা কাপা গলায় বললো
“ক্ কোথায়?”
” শপিং মলে যাবো।”
” ক্ কেনো?”
আহান ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“ডান্স করতে। শপিং মলে মানুষ কেনো যায়। অভিঅ্যাসলি শপিং করতে।তোমার আর মিহিরের জন্য রেগুলার প্রয়োজনিয় কিছু জিনিস কিনবো।”
“কিন্তু ‘মা’ ‘বাবাই’ সিলেট থেকে তো আমাদের প্রয়োজনিয় জিনিস পএ সব নিয়ে এসেছে।”
“সবকিছু নিয়ে আসলেও, তোমার আর মিহিরের অল্প কিছু ড্রেস এনেছে। বাকিগুলো ওখানকার গরিবদের দিয়ে এসেছে। এতোদিন তোমরা হাসপাতালের ড্রেস পড়েছিলে । কালকে মিহিরের ডিসচার্জ হবে তখন বাসায় গিয়ে কি পড়বে?আর তোমার তো ডিসচার্জ অনেক আগেই হয়ে গেছে ।তাও এখনো তুমি হসপিটালের ড্রেস পড়েই আছো।এবার কি এগুলো বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্লান আছে।”
” কিন্তু —-”
“সাট আপ। কোনো কিন্তু না ।আর একটা কথাও যদি বলো মাথায় তুলে একটা আছাড় মারবো (একটা ব্যাগ মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো) এটার মধ্যে তোমার একটা ড্রেস আছে দুই মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে এসো।”
মেঘ বুঝতে পাড়লো ও যদি এখন আর কিছু বলে তাহলে আহান ওকে সত্যি সত্যি আছাড় মারবে। তাই শুকনো একটা ডোক গিলে ব্যাগটা নিয়ে সোজা দৌরে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।হাতে চিপস নিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকছিলো সারিকা সাইফা হটাৎ সাইফা দাড়িয়ে গেলো সাইফাকে এভাবে দাড়াতে দেখে সারিকা দাড়িয়ে ব্রু কুচকে বোনের দিকে তাকালো ।সারিকা দেখলো সাইফা একদৃষ্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।সারিকা সাইফার দিকে তাকিয়ে ব্রু নাচালো ,যার মানে কি?
সাইফা সারিকা কে ফিসফিস করে বললো।
“মিহির ভাইয়ার হাসিটা কি সুন্দর তাই না?দেখতেও পুরো চকলেটের মতো ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি ।ওনাকে দেখলেই আর হার্ট জোরে জোরে বিট করে। আমিতো ওনাকে প্রথম দিন দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলাম।তারপর থেকে যতোবার ওনাকে দেখেছি ততোবার ক্রাশ খেয়েছি। ”
তারপর মন খারাপ করে বললো
“ওনি তো আমার দিকে ফিরেও তাকান না।”
সারিকা হেসে দিয়ে বললো
” তোর বাজে বকা বন্ধ হলে আমরা ভিতরে যাই। তুই দেখতে তো পেত্মির মতো, তাই ফিরেও তাকায় না।”
সাইফা রেগে বললো
” তুই এটা ভুলে যাচ্ছিস আমরা দুজন একই রকম দেখতে।
_____________________________
বড়ো একটা শপিং মলের সামনে দাড়িয়ে আছে মেঘ,আহির , হিয়ান, সাড়িকা। সাইফা , হিমা, রিয়ান আসেনি ওরা মিহিরের সাথে আছে ।আহান পার্কিলডে গাড়ি পার্ক করতে গেছে। মেঘ বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে আছে। বাকিরাও পচন্ড বিরক্ত হয়ে আছে আহানের উপর প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেছে আহানের আসার কোনো নাম নেই। মেঘ বললো
“একটা গাড়ি পার্কি করতে এতোক্ষন লাগে।গাড়ি পার্কি করতে গেছে নাকি প্লেন ল্যান্ড করতে গেছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”
হিয়ান বললো
“তোরা এখানে দাড়া আমি গিয়ে দেখছি।”
মেঘ বিরক্তি নিয়ে বললো
“কোনো দরকার নেই ভাইয়া ।তারপর দেখবো তুমিও তোমার ভাইয়ের মতো হাপিশ হয়ে গেছো।”
পিছন থেকে আহান বললো
” কাউকে কোথাও যেতে হবে না আমি এসে গেছি।”
সবাই ঘুরে পিছনে তাকালো।আহানের সাথে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটা আহানের বয়সি হবে । আর মেয়েটা আহানদের থেকে একটু ছোট হবে।
সাড়িকা ভাবি বলে চিৎকার করে মেয়েটাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আহির অবাক হয়ে বললো
“তোমরা এখানে কিভাবে এলে । তোমরা তো এতোদিন তোমাদের গ্রামের বাড়িতে ছিলে তাইনা।”
মেঘ প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । আহান সেটা বুঝতে পেরে মেঘের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো
“মেঘ ও আমার আরেক ফ্রেন্ড অভি। আমাদের সাথে লন্ডনের একই ভার্সিডিতে পড়ে। (মেয়েটাকে দেখিয়ে বললো )ও হলো আলিশা অভির ছোট বোন। আর ‘অভি’ ‘আলিশা’ ও হলো মেঘনা।”
অভি মুচকি হেসে মেঘনার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো
” হাই মেঘনা।”
মেঘ হ্যান্ডশেক করতে যাবে তার আগেই আহান অভির সাথে হ্যান্ডশেক করলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় অভি আহমোক হয়ে গেলো।আহান অভির দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“হাই হ্যালো পড়েও করা যাবে এখন ভিতরে যাওয়া যাক।”
আহানের এরকম কান্ডে সবাই মুখ টিপে হাসছে ।মেঘ অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে ।ব্যাপারটা অন্য দিক ঘোরানোর জন্য আলিশা এসে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো
” কেমন আছো মেঘনা ”
” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আপু ।আপনি কেমন আছেন।”
ওদের কথার মাঝে সাড়িকা মেঘকে উদ্যেশ্য করে বললো
” ‘মেঘা আপুই’ আলিশা আপুর কিন্তু আরেকটা পরিচয় আছে ।আপু আমাদের উড বি ভাবি হয়। আমরা সবাই আপুকে ভাবি বলে ডাকি। ”
মেঘ ঠোট টা গোল করে বললো
“ও ও ও তার জন্য তুমি আপুকে তখন ভাবি বলছিলে।আমি ভাবছি তুমি মজা করছো।”
আহির এসে আলিশার কাধে এক হাত রেখে বললো
“মজা কেনো করবে ।ও আমার একমাত্র ভবিষ্যত বউ । (তারপর আলিশার দিকে তাকিয়ে বললো ) তুমি তো আমায় ভুলেই গেছো বেবি।আমাকে রেখে পনেরো দিন একা একা দাদুর বাড়ি থেকে ঘুড়ে এলে তুমি কি নিষ্ঠুর । ”
মেঘের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।অবাক কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“আহির ভাইয়া আপু তোর উড বি ওয়াইফ?”
মেঘের এরকম চেহারা দেখে সবাই হেসে দিলো। হিয়ান এসে আহিরের কান টেনে দিয়ে বললো
“তুই শেষ পর্যন্ত আমার বউ নিয়ে টানাটানি শুরু করলি।তোর লজ্জা করে না বড়ো ভাইয়ের বউকে নিজের বউ বলতে।”
” আহ ভাই লাগছে তো। পাবলিক প্লেসে এভাবে কান ধরে টানাটানি করো না প্লিজ। আমার মান সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।”
হিয়ান আহিরের কান ছেড়ে দিলো। আহির মুখটাকে পেচার মতো বানিয়ে একহাত দিয়ে নিজের কান ডলছে ।মেঘ বুঝলো আলিশা হিয়ানের উডবি ওয়াইফ। আলিশা মুচকি হেসে মেঘকে বললো
“ননোদিনী তুমি কিছু মনে কোরো না। আসলে আমি আর আহির একই কলেজে পড়ি ।আমি ওর এক ব্যাস সিনিয়র কিন্তু আমরা খুব ভালো বন্ধু । তাই আমরা মাঝে মাঝে এরকম মজা করি।”
মেঘ কিছুই বললো না শুধুই হাসলো। এদের সবাইকে মেঘের ভিষন ভালো লাগে। সবাই কতো ফ্রি সবাই মাইন্ডের । একে অপরের সাথে কতো সুন্দর ভাবে কথা বলে কেয়ার করে। এটা ওর আরেকটা ফ্যামেলি।এখন থেকে এদের সাথে থাকবে ভাবতেই ওর খুশি খুশি লাগে। এতোদিন তো জানতোই না ওর এতো সুন্দর একটা পরিবার আছে।
__________________________________________________________________________
রাত এগোরোটার দিকে ওরা শপিং মল থেকে বের হলো।টানা তিন ঘন্টা সবাই শপিং করেছে। সবার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।সবাই নিজেদের জন্য টুকিটাকি শপিং করেছে। মাঝখানে সবাই ছোট একটা ব্রেক নিয়ে রেষ্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করেছে । বলা বাহুল্য মেঘ আর মিহিরের জন্য সবাই মিলে পুরো দোকান তুলে নিয়ে আসছে। একেক জন একেকটা ড্রেস পছন্দ করছে। আহানই মেঘের বেশিরভাগ ড্রেস পছন্দ করেছে।মেঘ শুধু বসে বসে সবার পাগলামো দেখেছে।ও বলেছিলো এখন এতোগুলো ড্রেস লাগবে না পড়ে এসে আবার নিয়ে যাবে । কিন্তু আহানের এক ধমক খেয়ে আর কিছু বলার সাহস হয়নি। ইতিমধ্যে অভি আর আলীশার সাথেও মেঘের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ওদের সবার শপিং এর বিল আহানই দিয়েছে। বাইরে এসে অভি আর আলিশা গাড়িতে উঠলো। ওরা সবাইকে বাই বলে ওদের গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।আহান পার্কিলড থেকে গাড়ি নিয়ে এলো।তারপর গাড়ি থেকে নেমে হিয়ানকে বললো
“আমি ড্রাইভার কে ফোন দিয়েছিলাম কাছাকাছি আছে ।তুই আহির সাড়িকা সেই গাড়িতে করে বাড়িতে চলে যা।আমি মেঘকে হসপিটালে দিয়ে আসছি।”
ওদের কথার মাঝে ড্রাইবার গাড়ি নিয়ে চলে এলো ।হিয়ান ওকে বাই বলে ।আহির আর সাড়িকা কে নিয়ে সেই গাড়ি তে চলে গেলো।
আহান মেঘের হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে গাড়ির পিছনের ছিটে রেখে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের দরজা খুলে মেঘকে বসতে বললো মেঘও আর কিছু না বলে ভালো মেয়ের মতো চুপচাপ গিয়ে বসলো।
আহান দরজা আটকে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইব করতে লাগলো।কিছুদূর আসার পর মেঘ বললো
“একি এটা তো হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা না।আমরা আসার সময় তো অন্য রাস্তা দিয়ে এসেছিলাম। ”
স্বাভাবিক ভাবেই বললো
” এখন অনেক রাত হয়ে গেছে, ওই রোড দিয়ে গেলে অনেক লেইট হবে। তাই শটকাট দিয়ে যাচ্ছি ।”
মেঘ আর কিছু বললো না।অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই সিটে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। আহান একবার আর চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইব করায় মনোযোগ দিলো।
চলবে…..