#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_17
“স্যার আপনাদের সমস্যাটা আমি শুনেছি ।কিন্তু আপনারা যদি এভাবে বলেন তাহলে কিভাবে হবে। তার থেকে আপনারা একটা কাজ করুন,, আপনারা দুজনেই আপাততো দুটো দুটো চারটা টেডি নিয়ে নিন আর বাকি গুলো আমি আপনাদের কালকের মধ্যে অর্ডার দিয়ে এনে দিবো।”
আহান রাগি কন্ঠে বললো
“যা বলেছি চুপচাপ তাই করুন। আমি যখন একবার বলেছি ওইগুলো আমি নিবো তার মানে ওই গুলো আমিই নিবো।At any cost..”
আহানের কথায় ম্যানেজার বেশ অনেকটা রেগে গেলো। আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে ঝাড়ি মেরে বললো
“আজব পাবলিক তো আপনি। সামান্য টেডিবিয়ারের জন্য এভাবে বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বসে আছেন।তাও আবার কি অদ্ভুত আবদার,,একটা টেডি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এরকম আবদার কেউ করে? এতো ক্ষন থেকে আপনাদের অনেক চেচামেচি সহ্য করেছি,,আর না। আপনাদের কারো কাছেই আমি কোনো প্রডাক্ট বেচবো না। আপনারা এক্ষুনি ভালোয় ভালোয় এই শপটা থেকে বের হয়ে যান।নয়তো পুলিশ ডেকে জেলে ঢুকিয়ে দিলো।”
আহানের সাথে এভাবে রুঢলি কথা বলায় জেড়িন আর আবির মনে মনে বেশ খুশী হলো। মেঘ পুলাশের নাম শুনে বেশ অনেকটা ঘাবরে গেলো।ও আহানের কাছে গিয়ে আহানের এক হাত আকরে ধরে মিনমিন করে বললো
“এখান থেকে চলুন প্লিজ। আমার টেডি লাগবে না। বাসায় অনেক গুলো আছে সেগুলোই আমার কোনো কাজে লাগে না ।আর নতুন করে কতো গুলো কিনে কি করবো । প্লিজ চলূন আমার খুব ভয় লাগছে।”
আহান মেঘের দিকে তাকালো দেখলো ভয়ে মেঘের চোখ মুখ একদম শুকিয়ে গেছে। যে হাত দিয়ে আহানের বাহু ধরে রেখেছে সেই হাতটাও মৃদু কাপছে। মেঘকে এতোটা ভয় পেতে দেখে আহানের রাগটা আরো বেশি বেরে গেলো। ও মেঘের হাতটা নিজের বাহু থেকে আলতো করে ছাড়িয়ে দিয়ে, একদম ম্যানেজারের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর নিজের হুডিটা একটু উপরে তুলে মুখের মাক্সটা সরিয়ে ফেললো। হুডিটা এমন ভাবে সরিয়েছৈ যেনো ম্যানেজার ছাড়া আর কেউই ওকে দেখতে না পায়। ম্যানেরজার আহানের চেহারা দেখার সাথে সাথে দুই কদম পিছিয়ে গেলো।মূহুর্তেই ওনার চেহারা থেকে সব বিরক্তি, রাগ উড়ে গিয়ে চেহারায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।ম্যানেজারের হাত পা রিতিমতো কাপাকাপি শুরূ করে দিয়েছে।ওনার মুখ দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওনি আহানকে এখানে দেখে কতোটা অবাক হয়েছে।ম্যানেযারকে এভাবে কাপাকাপি করতে দেখে আবির আর জেরিন অনেক টা অবাক হয়ে গেলো। মেঘও বেশ অবাক হলো।যেই লোক একটু আগেও ওদের পুলিশে দেওয়ার জন্য ভয় দেখাচ্ছিলো,,সে এখন নিজেই ভয়ে কাপছে। আহান নিজের রাগে লাল হয়ে যাওয়া তীক্ষ্ম চোখ দুটো একবার ম্যানেজারের দিকে নিক্ষেপ করলো,,তারপর আবার মুখে মাক্সটা পড়ে মাথার হুডিটা টেনে দিয়ে রুক্ষ স্বরে বলল
“আমি কি করবো, আর কি করবো না , তার কৈফিয়ত আমি কাউকে দেই না। কিন্তু আপনি যেহেতু আমার বয়সে বড়,তাই আপনার একটা কনফিউশন ক্লিয়ার করতেই পারি।আসলে ওই পুতুলটা এই নোংরা মেয়েটা (জেরিন কে দেখিয়ে ) ছুয়েছে তাই এই পুতুলটা একদম নোংরা আর অপবিএ হয়ে গেছে। আর আমি চাইনা আমার পরির (মেঘের দিকে তাকিয়ে ) কাছে কোনো নোংরা বা অপবিএ জিনিস থাকুক। তাই ওটাকে পুরিয়ে ফেলতে বলেছি । আই হোপ সবটাই বুঝতে পেরেছেন।এবার চুপচাপ গিয়ে যেটা বলেছি সেটা করুন ।নাহলে আপনাদের সাথে ঠিক কি কি হবে সেটা নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। ”
ম্যানেজারটা ভয়ার্ত গলায় বললো
“সরি স্যার !আমি বুঝতে পারিনি এটা আপনি। আর আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।যেভাবে যেভাবে আপনি বলেছেন আমরা ঠিক সেভাবে সেভাবেই করবো। আমি নিজে গিয়ে এগুলো আপনার গাড়িতে পৌছে দিয়ে আসবো।সরি অনস এগেইন স্যার”
আহান বললো
“ইটস ওকে ! আপনাকে এসব পৌছে দিতে হবে না। আমি আমার একজন গার্ড কে বলে রাগবো ও এসে নিয়ে যাবে।”
ম্যানেজার ,,ওকে স্যার বলে এক প্রকার দৌরে চলে গেলো।আবির আর জেরিন ওনাকে অনেকবার পিছন থেকে ডাকলো কিন্তু উনি একটুর জন্যও পিছনে ফিরলেন না। জেরিন আর আবির অবাক হয়ে লোকটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো
“চলো এবার যাওয়া যাক। আমাদের আরো অনেক কেনেকাটা বাকি আছে। তারাতারি চলো।”
মেঘও সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে আহানের সাথৈ হাটা দিলো। তখনই জেরিন পিছন থেকে মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো
“বয়ফ্রেন্ড নিয়ে রাতের বেলা বাইরে ঘুরে বেরাচ্ছিস , ছোট মামু (মেঘের বাবা)সেটা জানে?আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়?আমি যদি ছোট মামুকে ফোন করে বলে দেই ,তার আদরের ছোট্ট মেয়ে এতো রাতে বাইরে ছেলে নিয়ে ঘুরছে। তাহলে তোর আর এই ছেলের কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখ। ”
জেরিনের কথায় আহান আর মেঘ দুজনেই দাড়িয়ে গেলো। আহান জেরিনের দিকে একটু এগিয়ে এসে ওর সামনে দাড়িয়ে বললো
“Oh my god.. মিসেস রহমান । আমি তো আবারও ভয় পেয়ে গেলাম ।আপনি আমার মতো একটা বাচ্চা ছেলেকে বারবার এইভাবে ভয় দেখাচ্ছেন? এটা কিন্তু ঠিক না। এন্ড বাই দা ওয়ে ,, ওর বাবাকে শুধু মাএ এইটুকু কেনৌ বলবেন? তার থেকে ভালো এইটা বলবেন,, মেঘকে আপনি একটা ছেলের সাথে হোটেলে দেখেছেন আর সাথে কয়েকটা পিক এডিট করে নিয়ে যাবেন।যেমনটা আপনি চার বছর আগে করে ছিলেন। এসব বিষয়ে তো আপনি আগে থেকেই এক্সপার্ট । আচ্ছা আপনার কাছে মেঘের বাবার সেলফ ফোন নম্বর আছে?নাকি আমার থেকে নিবেন?”
আহানের ব্যাঙ্গাত্মক কথা শুনে জেরিন বেশ রেগে গেলো। কিন্তু আহানের কথার উওরে কি বলবে সেটা খুজে পেলো না । মেঘ শুধু অবাক হয়ে আহান কেই দেখছে। আহানকে এতো কনফিডেন্টলি কথা বলতে দেখে জেরিন ভাবলো এখান থেকে চলে যাওয়াই ওর জন্যে ভালো ।নাহলে আবার কেচো খুরতে কেউটে বেরিয়ে আসবে । তাই ও তারাহুরো করে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই আহান ওকে ল্যাং মারলো সাথে সাথে জেরিন মুখ থুবরে উপুর হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো। মেঘ চমকে উঠে দুহাত নিয়ে নিজের মুখের উপর রাখলো।এমন কিছু হবে ও ভাবতেই পারেনি। শপের অন্যান্য কাষ্টমারেরা হা হা করে হেসে দিলো। আবির লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে।আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে ,হাটু গেরে জেরিনের সামনে বসে ওকে লো ভয়েজে বললো
“এতোক্ষন বেশি ওড়াউড়ি করছিলি তো।তাই তোকে তোর জায়গাটা বুঝিয়ে দিলাম। ভবিষ্যতে যদি তোর জন্য আমার পিচ্চি পরিটা একটুও কষ্ট পায় ,, তাহলে তোর এমন অবস্থা করবো নিজেকেও নিজে আয়নায় দেখে আতকে উঠবি। তোকে এতোদিন বাচিয়ে কেনো রেখেছি জানিস?কারন তোর একটা ভুলের জন্য আমি আমার ছয় বছর আগে হারিয়ে যাওয়া পরিটাকে চার বছর আগে ফিরে পেয়েছি। তাই বলে এটা ভাবিস না ,বার বার একই ভুল করে পার পেয়ে যাবি। আর কোনো দিন যদি আমার জানের কাছ থেকে কিছু কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে তোর কি অবস্থা করবো যাষ্ট ভাবতেও পারবি না। আর আজকের কথা অন্যায়টা তুলে রাখলাম সুদে আসলে ফেরত দিবো।”
আহানের কথা শুনে ভয়ে জেরিনের কলিজা কেপে উঠলো। যেই ছেলে এতোক্ষন আপনি আপনি করে কথা বলছিলো সে সেকেন্ডের মধ্যে নিজের রুপ পাল্টে একদম আপনি থেকে সোজা তুইতে চলে গেলো। কে এই ছেলেটা ?মেঘের সাথে এর কিসের সম্পর্ক ? জেরিনের মাথায় শুধু এই সবই ঘুরপাক খাচ্ছে। আহান সোজা হয়ে দাড়িয়ে মেঘের একহাত চেপে ধরে শপ থেকে বেরিয়ে গেলো।
_____________________
মেঘ কিছু একটা ভাবতে ভাবতে আনমনেই হাটছিলো। আহান দেখলো মেঘ কপাল কুচকে কিছু একটা ভাবছে। ও একটু গলা খাকারি দিয়ে মেঘকে জিঙ্গেস করলো
“কি এতো ভাবছেন ম্যাম?”
মেঘ আনমনেই বললো
“ভাবছি জেরিনের বেবিটা কোথায়? সেদিন রেষ্টুরেন্টেও ওদের সাথে কোনো বেবি দেখলাম না আর আজও দেখলাম না।”
আহান স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“এর্ভোরশন করিয়ে ফেলেছে।”
কথাটা কানে যেতেই মেঘে পৃথিবী উল্টে গেলো। ওর মনে হচ্ছে ও ভুল শুনেছে । ওর মুখ থেকে আপনা আপনিই বেরিয়ে আসলো
“কি?,,,,,,,”
“হুমম। তোমরা এখানে আসার কিছু দিন পরেই জেরিন চুপিচুপি হসপিটালে গিয়ে বেবিটা এর্ভোশন করিয়ে এসেছে। পরে যখন সবাই জানতে পেরে ওকে প্রশ্ন করেছিলো,ও এটা কেনো করলো তখন ও সবাইকে বলে এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিলে ওর ফিগার খারাপ হয়ে যাবে। তাই ও বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলেছে।আবিরও এই বিষয় কিছুই জানতো না।যেদিন সবটা জানতে পারলো তার দুইদিন পরই ও কানাডা চলে গিয়েছিলো । গতো মাসেই ফিরেছে। ”
মেঘের চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। কেউ দেখার আগে খুব সাবধানে সেটা মুছেও ফেললো কিন্তু আহানের চোখে ঠিকই পড়েছে। মেঘ ভেজা গলায় বললো
“ছিহঃ ও এতোটা নিচে নেমে গেছে। একটা বাচ্চা,, যে কিনা পৃথিবীর আলো অবদি দেখেনি । ও সেই নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে মেরে ফেলেছে। মানুষ কতোটা নিষ্ঠুর হলে নিজের সন্তান কে নিজের হাতে মেরে ফেলতে পারে। জানোয়ার একটা।”
কথাটা বলতে বলতে মেঘের চোখ দুটো আবার ভিজে এলো। ও চোখের পানিটা মুছে আহানকে জিঙ্গেস করলো
“আচ্ছা এসব আপনি কিভাবে জানলেন? কবে জানলেন?আর আমাকে এতো দিন জানাননি কেনো?মাম্মাম বাবাই জানে এসব?”
“আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম মেঘ,, যখন এই কাহিনি ঘটেছে তখন থেকেই। আর শুধু মামনি পাপা না,, আমরা সবাই এই ঘটনা জানতাম।তোমাকে জানাই নি কারন তুমি তখন অনেক পিচ্চি ছিলে । অলরেডি তোমার উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছিলো।ডাক্তার বলেছিলো তোমাকে আর যেনো অতিরিক্ত মানষিক চাপ দেওয়া না হয়। তাই তোমাকে কেউ কিছু বলেনি।”
মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিছু কিছু স্বার্থপর মানুষের জন্য চোখের পানি ফেলার কোনো মানেই হয় না । এই মানুষ গুলো একদম ডাষ্ট বিনের ময়লায় মতো হয় যার জিবনেই ঢোকে তার জিবন টাকেই নষ্ট করে ফেলে।দুজনেই বেশ অনেকক্ষন চুপ রইলো। তারপর হঠাৎই মেঘের মেঘের মনে পড়লো ওরা শপিং এ কেনো এসেছে সেটাই তো জিঙ্গেস করা হইনি। মেঘ বললো
“আমরা হঠাৎ সবাই মিলে শপিংএ কেনো এসেছি? এমন তো তখনই হয় যখন আমাদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হয়।”
আহান চেহারায় একটু বিরক্তি ভাব ফুটিয়ে বললো
“আরে তোমার ওই চাচাতো ভাই ইফাত না কি নাম? কয়েক দিন পর ওর বিয়ে না,, সেই উপলক্ষ্যে শপিং করা হচ্ছে। তোমরা সবাই সেখানে কি ড্রেস পড়বে, কি জুয়েলারি পড়বে,পাএীকে কি কি দেওয়া হবে সেইসব ।”
মেঘ নিজের মুখটা গোল করে বললো
“ও ও ও ও”
____________________
ভার্ষিটির মাঠের একপাশে বসে আছে দিশা, মেঘ, সাড়িকা , সাঈফা। রিজা আজকে ভার্ষিটিতে আসেনি। ওদের ক্লাস শুরু হতে আরো অনেক দেরি আছে। তাই মাঠে বসে বসে চারজন খাতার কাগজ ছিরে নৌকা বানাচ্ছে। চারজনই এমন ভাবে মনোযোগী হয়ে কাজটা করছে যেনো এই মূহুর্তে ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেলেও ওরা কিছু টের পাবে না। অলরেডি চল্লিশটার মতো নৌকা বানিয়েও ফেলেছে। হটাৎ শা করে দুইটা বাইক ভার্ষিটির গেট দিয়ে প্রবেশ করলো। বাইক দুটো এতো স্পিডে আসায় মেঘদের কাগজের নৌকা গুলো সব বাতাসে উড়ে গিয়ে পাশের পুকুরে পরে গেলো। আচমকা এমনটা হওয়ায় মেঘ, দিশা, সাড়িকা ,সাঈফা হতবম্ভ হয়ে গেলো। ওরা চার জনই রাগি মুড নিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে যেখানে বাইক দুটো থেমেছে ষেদিকে তাকালো। বাইক থামতেই হেলমেট খুলে বাইক থেকে নামলো আহির আর মিহির । দুজনের পড়নেই ব্লাক জিন্স, সাদা টি সার্ট, সাথে ব্লাক লেদারের জ্যাকেট । চুল গুলো স্পাইক করা, দুজনের পিঠেই গিটার ঝুলানো, টিশার্টের সাথে সান গ্লাস টা ঝুলিয়ে রেখেছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুজন টুইনজ ।ভার্ষিটির অনেক মেয়েরা হা করে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে । ওরা বাইক থেকে নামতেই ওদের বন্ধুরা এসে ওদের ঘিড়ে ধরলো। সাঈফা রাগে গজগজ করতে করতে বললো
“এদের দেখে কে বলবে এরা ভার্ষিটিতে এসেছে। এমন ভাবে সেজে এসেছে যেনো লেখাপড়া করতে না কনসার্ট করতে এসেছে। যএসব! এদের ভাব দেখলে মনে হয় এক বাটি পানিতে ডুবে মরে যাই ।আর মেয়ে গুলোকে দেখো এমন ভাবে হা করে তাকিয়ে আছে যেনো জিবনে কোনো দিন ছেলে দেখেইনি।ওরে বইন নিজেদের মুখটা একটু বন্ধ কর নাহলে তো মুখে মশা ঢুকে যাবে”
“ওদের ভাব নেওয়া আমি বের করছি।”
বলেই মেঘ বসা থেকে উঠে গিয়ে মিহির আর আহিরের সামনে দাড়ালো ।ওরা দুজন এতোক্ষন ওদের বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো। মেঘকে এভাবে ওদের সামনে এসে দাড়াতে দেখে দুজনেই ভ্রু কুচকে মেঘের দিকে তাকালো। আহির বললো
“কিরে এভাবে ফুলে বেলুন হয়ে আছিস কেনো?”
মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“তোমরা আমাদের এতো কষ্ট করে বানানো নৌকা গুলোকে উড়িয়ে পানিতে কেনো ফেলে দিলে?”
আহির কনফিউসড হয়ে বললো
“যাহ বাবা! আমরা আবার কখন নৌকা উড়িয়ে পানিতে ফেলে দিলাম? মিহির কখনো শুনেছিস কাঠের নৌকা উড়িয়ে পানিতে ফেলা যায়?”
মিহির মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তুই কাঠ মিস্থিরির কাজ কবে থেকে শুরু করলি রে। আমাদের বলিসনি তো।”
মেঘ চেচিয়ে বললো
“একদম বাজে বকবে না। তোমরা আমাদের কাগজে তৈরি নৌকা গুলো উড়িয়ে পুকুরে ফেলে দিয়েছো। জানো?কতো কষ্ট করে ওইগুলো বানিয়েছি।”
মেঘের কথা শুনে আহির মিহির হা হা করে হেসে দিলো। সাথে ওদের বন্ধুরাও মুখ টিপে হাসছে। মিহির হাসতে হাসতে বললো
“এতো বড় মেয়ে কাগজ দিয়ে নৌকা বানিয়েছে।ভাবা যায়। ওহ গড, কেউ আমাকে একটা কচু গাছ এনে দে আমি সেটায় ঝুলে পড়ি।”
আহির এসে এক হাত মেঘের কাধে রেখে বললো
“নৌকা গুলো নিশ্চয়ই পানিতে ভাষানোর জন্যই বানিয়েছিলি। যেটা তোরা পরে করতি সেটা আমরা আগে করে দিয়েছি। পরে একটা একটা করে কষ্ট করে নৌকা গুলো তোদের পানিতে ভাষাতে হতো,এতে তোদের শক্তি আর সময় দুটোই নষ্ট হতো। এখন তোদের কাজটা আমরা সহজ করে দিয়েছি। এবার চুপচাপ ক্লাসে চলে যা।”
মেঘ ওর কাধ থেকে আহিরের হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে হন হন করে সেখান থেকে চলে গেলো।মিহির অবাক গলায় বললো
“এটা কি হলো?ও কিছু না বলেই চলে গেলো। আজকে সূর্যটা কোন দিক থেকে উঠলো বলতো।”
“প্রত্যেক দিন সূর্য যে দিক থেকে উঠে আজও সেদিক থেকেই উঠেছে। ”
মেঘের কথা শুনে ওরা সবাই মেঘের দিকে তাকালো ।দেখলো মেঘ আর দিশা দুজন দুহাতে দুইটা পানির বোতল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আহির আর মিহির চোখ ছোট ছোট করে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে, ওরা কি করতে চাইছে। মেঘ আর দিশা আহির মিহিরের সামনে এসে বোতলের সব পানি ওদের মাথায় ঢেলে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো । মিহির আর আহির জোড়ে একটা চিৎকার দিলো। মিহির বললো
“ইউ ইডিয়েট! এটা কি করলি?”
মেঘ মিহিরের বুকে ঝুলানো সানগ্লাস টা নিয়ে নিজের চোখে দিয়ে বললো
“তোদের কাজটা সহজ করে দিলাম। দেখ তোরা বাড়িতে গিয়ে এমনিতেও সাওয়ার নিতি । যেটা তোরা একটু পর করতি সেটা আমি এখন করলাম। তেদের বাড়িতে গিয়ে কতো কষ্ট করৈ সাওয়ার নিতে হতো আমি তোদের কষ্টটা একটু কমিয়ে দিলাম আরকি।”
চলবে