ব্লাক ডেভিল,( পর্ব-২)

0
813

ব্লাক ডেভিল,( পর্ব-২)
লেখক- Riaz Raj

অন্যদিকে রিয়াজ মালদ্বীপ এয়ারপোর্টে নেমে বের হবার সময় কোনো একজন ব্যাক্তি রিয়াজের পিঠে ইনজেকশন মেরে দেয়৷ সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজ সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলো৷ কে যেনো রিয়াজকে নিয়ে যাচ্ছে। রিয়াজও তার সাথে চলে যাচ্ছে।কেনো যাচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারেনা।

চলতে চলতে হটাৎ রিয়াজের ঘোর ভেঙ্গেছে।এ যেনো অধিক পথ পাড়ি দেওয়া হয়ে গেছে তার। চোখের পাতা টনটন করছে। চোখ মেলে তাকানোর শক্তি নেই তার। পুরো শরীরে অবশ করার ওষুধ দিয়েছে ওরা। রিয়াজ সব বুঝতে পারছে ঠিকই,কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা নেই। চোখ বন্ধ করেই অনুভব করলো সে একটা রুমে বন্ধি আছে। যার চারপাশে গ্লাসের দেওয়াল। ভিতরে লাইটিং অনেক হাই কোয়ালিটি। চারপাশে কয়েকজন লোক দাড়িয়ে আছে। যারা রিয়াজের হুশ ফিরে আসার অপেক্ষা করছে।রোগীর মতো সবার মাঝে একটা বেডে পড়ে আছে রিয়াজ।কিন্তু এইটা কিভাবে সম্ভব। রিয়াজ চোখ বন্ধ করেই এসব জানতে পারছে কিভাবে। কিছু না দেখেই কল্পনায় সব দেখছে কিভাবে। চোখ বন্ধ করে রিয়াজ যা দেখছে,আসলেই কি তা আছে? নাকি মনের ভুল তার। শিওর হবার জন্য রিয়াজ ধীরে ধীরে চোখ মেলার চেষ্টা করে।ঝাপসা চিত্র ধীরে ধীরে ক্লিয়ার হতে লাগলো। চোখ মেলেই রিয়াজ চমকে উঠে। ঠিক যেমনটা ভেবেছিলো,রুমটা তেমনি।গ্লাসের দেওয়াল আর চারপাশ জুড়ে কিছু মানুষ। যাদের গায়ে সাদা জামা।তাও একই রকম। রিয়াজ কিছু বলার আগে একজন বলল,
– হাই, আমি ডঃ জাহিদ।
– তো আমি কি করবো।
– অদ্ভুত। আপনার সম্মন্ধে যা শুনেছি,তাতে মনে হয়েছিলো আপনি অতি ভদ্র একজন লোক। এখন তো তার উল্টো হলো।
– একেই তো আমাকে বন্দি করে রেখেছেন।একি? আমার হাতে লোহার শিকড় কেনো? আবার অপহরণ করে এনেছেন। এর মধ্যে আপনি আমার কাছে ভালো কিছু কিভাবে আশা করেন?
– আমরা আপনার শত্রু না মিষ্টার রিয়াজ। আমি ডঃ জাহ…
– হয়েছে।আগে আমার হাত খুলে দিন।এরপর আপনার কথা শুনবো।
ডঃ জাহিদ এর ইশারায় একজন এসে রিয়াজের হাতের শিকড় খুলে দেয়। রিয়াজ বেডে বসে পড়ে।আগের থেকে হালকা লাগছে এখন। রিয়াজ ডক্টর জাহিদের উদ্দেশ্যে বললেন,
– বলুন এইবার।আমাকে কেনো এনেছেন?
– আপনি ডিওএমএম এর একজন এজেন্ট। আর অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা আপনার কাজ।আপনার জন্মইটা এই কারণে৷
– আমার জীবনে কি কোনো সাদ আহ্লাদ নেই? একজনের পর একজন এসে আমাকে শুধু কাজ আর জ্ঞান দিচ্ছে।
– কারণ আপনার অনেক কিছু করা বাকি এখনো। এখন আপনি বুঝতে পারছেন না আপনি কি। কিন্তু এমন একটা সময় আসবে,যে সময়ে আপনি কান্না করতে চাইলেও পারবেন না। কারণ তখন আপনার টার্গেট থাকবে কান্নার কারণ কি হতে পারে।রহস্যের পিছু ছুটবেন আপনি। আপনার রক্তের সাথে মিশে আছে এই রহস্য।
– বুঝেছি।আমি সব বুঝেছি। এইবার বলুন আমাকে এখানে কেনো আনা হয়েছে।
– আমাদের এই অফিসের নাম ডিএএমপি। অর্থাৎ Discovering miraculous powers।
– অলৌকিক শক্তি আবিষ্কার হয় এখানে?
– হুম। ঠিক ধরেছেন।আপনার শরীরে আমরা Violent blood প্রবেশ করিয়েছি।
– এইটা কি?
– গত ৭ বছর থেকে আমার এই ল্যাবে Violent blood নিয়ে গবেষণা করছি। অনেক হিংস্র পশুর ব্লাড এক করে এই মেডিসিন তৈরি করা। তোমার সম্মন্ধে ডিওএমএম আমাদের জানিয়েছে। এই Violent blood সবার দেহে কাজ করেনা। এর আগে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।কিন্তু আপনার দেহ অনেক মজবুত। আর আপনি আমাদের জন্য অতি অসাধারণ একজন ব্যাক্তি। আপনার এই শক্তিটা দরকার।আপনাকে আরো হিংস্র হতে হবে। ভয়ংকর সেই ব্লাক ডেভিলকে শেষ করতে হলে আপনাকেও ভয়ংকর হতে হবে। অনেক ভয়ংকর।
– ওয়েট ওয়েট।আগের দুজন মৃত্যু মানে?
– অর্থাৎ তাদের দেহে এই মেডিসিন প্রয়োগ করিয়েছিলাম।কিন্তু তারা সহ্য করতে পারেনি৷ তাই মারা গেছে।
– অর্থাৎ আপনি শিওর না,এই মেডিসিন আমার দেহে কাজ করতেও পারে,আবার নাও করতে পারে।তাইতো?
– হুম।ঠিক ধরেছেন।
– আরেহ,আপনাদের মধ্যে কি কোনো কমন সেন্স নেই নাকি। এখন যদি আমি মারা যাই? কে নিবে এই দায় ভার? বাসায় আমার আম্মু একা। শিওর না হয়ে আপনারা কিভাবে একজন মানুষকে মৃত্যুর পথে হেলে দিতে পারেন। আপনারা মানুষ নাকি ডাকাত।

রিয়াজ বেড থেকে উঠেই রেগে যায়। রিয়াজের অদ্ভুত আচরণ দেখে ডক্টর জাহিদ বললেন।
– শান্ত হোন।আর ১ মিনিট পরেই মেডিসিন কাজ করতে থাকবে। তখন দেখা যাবে আপনি বেচে থাকেন নাকি মারা যান।
– আপনাদের মনে কি দয়া মায়া বলতে কিছু নেই? আমার মরার সময় গুনছেন আপনারা? এই ডিওএমএম কে বেচে থাকলে আমি দেখে নিবো। আর আপনাদেরও ছাড়ছিনা আমি।
– প্লিজ অপেক্ষা করুন।আর ২৫ সেকেন্ড পরেই মেডিসিন কাজ করবে।
– অদ্ভুত মানুষ তো আপনারা? আমার মৃত্যুর জন্য আমাকেই অপেক্ষা করতে বলছেন? তাড়াতাড়ি এই ওষুধ বের করুন।নয়তো খারাপ হয়ে যাবে। আর আমি য…..

রিয়াজ কথা শেষ না করতেই হটাৎ সোজা হয়ে যায়। সবাই ভয়ে থমকে দাড়ায়। দাড়ানো অবস্থায় রিয়াজ হুট করে ফ্লোরে পড়ে যায়। ভয়ে আতংক হয়ে আছে ডিএএমপির সকল ডক্টর৷ রিয়াজ ফ্লোরে পড়ে শান্ত হয়ে শুয়ে আছে।ডক্টর জাহিদ জীবনের ঝুকিতে আছে।রিয়াজের কিছু হয়ে গেলে ডিওএমএম তাকে জিন্দা রাখবেনা। এদিকে রিয়াজ ফ্লোরে পড়ে পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে। কোনো নাড়াচাড়া নেই তার। গুনতে গুনতে ২ মিনিট পার হয়ে গেছে। রিয়াজ মারা গেছে।এইটা সবাই ভেবে নিয়েছে।
ডক্টর জাহিদ হাতে একটা লোহার দন্ড নিয়ে গ্লাসে আঘাত করে। ক্ষিপ্ত হয়ে যান তিনি।তার এতোদিনের পরিশ্রম মাটিতে মিশে গেলো। জাহিদ সাহেব এক এক করে কাচের সব টেবিল আর কম্পিউটার ভাঙতে শুরু করে। সবাই উনাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।এরই মধ্যে একটা গোঙরানির শব্দ সবার কানে বাধে। কোনো পশু যেনো রেগে যাচ্ছে।জাহিদ সাহেব হাতের দন্ডটা ফেলে দেয়। সবার চোখ রিয়াজের উপর ফোকাস করে। রিয়াজ ধীরে ধীরে নাড়াচাড়া করছে। জাহিদ সাহেব থরথর করে কাপতে লাগলো। রিয়াজ গোঙ্গানি শেষে হটাৎ এক লাফ দেয়।আর শুয়া থেকেই রিয়াজ সোজা উপরের সিলিং এ আটকে যায়।সবাই থ হয়ে গেছে ভয়ে। বাদুড়ের মতো ঝুলে আছে রিয়াজ।হাতের আঙ্গুলের মধ্যে কৃত্রিম কোনো আঁইশ জন্মেছে।যার দ্বারা রিয়াজ সিলিং এ আটকে থাকার শক্তি পাচ্ছে। সবাই খেয়াল করলো রিয়াজের মুখ দিয়ে দুটো বড় দাত বের হয়ে এসেছে।চোখ দুটো প্রচন্ড লাল বর্ণ ধারণ করেছে। হ্যাঁ, ভ্যাম্পায়ার রুপে রুপান্তর হয়েছে রিয়াজ। ডক্টর জাহিদ তড়িঘড়ি করে বেডের নিছ থেকে একটা বক্স বের করে। রিয়াজ ডক্টর জাহিদের দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ডক্টর জাহিদ ভয়ের মধ্যেও বক্সটা খুলে ফেলে। বক্স খোলার সাথে সাথে ভিতর থেকে বরফের ধোয়া গড়গড় করে বের হচ্ছে। রিয়াজের চোখ যায় সোজা বক্সের ভিতর৷ ভিতরে একটা লাশ পড়ে আছে।জাহিদ সাহেব লাশটা বের করে বেডের উপর রাখে।তখনি রিয়াজ সিলিং থেকে এক লাফ দিয়ে বেডের উপর বসে পড়ে।ঠিক লাশটার মুখোমুখি । ডক্টর জাহিদ রিয়াজকে বলল, ” খেয়ে নিন এই দেহের সব রক্ত।এইটা তাজা লাশ।আপনার জন্যেই রাখা হয়েছে।আপনি এখন রক্ত তৃষ্ণায় আছেন। খেয়ে নিন সব রক্ত”। ডক্টর জাহিদের কথা শেষ না হতেই রিয়াজ তার কৃত্রিম দাত দুটো লাশের ঘাড়ে ফুটিয়ে দেয়। লাশের চাড়মা গুলো গুছিয়ে আসছে।কারণ রিয়াজ তার সমস্ত শক্তি দিয়ে রক্ত টেনে নিচ্ছে। সবাই তাকিয়ে আছে রিয়াজের দিকে। কিছুক্ষণ পর রিয়াজ বেড থেকে নেমে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে।কৃত্রিম দাত গুলো ধীরে ধীরে রিয়াজের মুখে ঢুকতে লাগলো৷ চোখ দুটো পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে।তবে চোখের মনি কিছুটা লালসে রয়ে যায়।ডাক্টর জাহিদ বলল,
– আপনি আরো একটি শক্তির মালিক হয়েছেন।শত্রুর সামনে আপনার দানবীয় আর ভ্যাম্পায়ার রুপ ধারণ করলেই হবে।হিংস্র হয়ে গেছেন আপনি।
– কিন্তু আমাকে এতো হিংস্র কেনো করেছেন? যদি রক্তের নেশা উঠা অবস্থায় সাথে আপনজন থাকে?
– সরি,আমি এর সমাধান দিতে পারবোনা।আমি এস্টুম্যানকে জানাচ্ছি।তিনি এর সমাধান দিবে।
– আমাকে এখন ৬ জন এজেন্টকে খুজতে হবে। যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
– হুম উঠুন।
– একটা কথা।কিডন্যাপ করে আনার কি দরকার ছিলো? এস্টুম্যান এর কথা বললেই তো আসতাম আমি।
– আপনার মধ্যে দানবীয় সত্বা আছে। যে আমাদের উপর যেকোনো সময় আঘাত করতে পারতো।আপনার রাগ হলেই আপনি দানবীয় সত্বায় যেতে পারেন।তাই অজ্ঞান করতে হয়েছে।
– আমি রাগ কেনো করতাম?
– অলরেডি করেছেন।মেডিসিন এর কথা শুনে। আমি ভয়ে ছিলাম কখন আপনি দানব হয়ে যান।
– যাইহোক, যাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

এদিকে সুমাকে ব্রাউনেল Cerebral cortex দিয়ে এক অদ্ভুত মানব বানিয়ে ফেলেছে। মস্তিষ্কের মধ্যে কন্ট্রোল করার যন্ত্র বসায় উনি। যা কন্ট্রোল করবে উনি একটা রিমোট থেকে।আর এই রিমোট ব্রাউনেল লুচি নিজের মস্তিষ্কে কানেক্ট করতে চায়। এরপর তিনি ইশারায় সেসব মানুষকে নিজের হাতের নাগালে আনতে পারবে,যাদের মস্তিষ্কে Cerebral cortex থাকবে। আর এই কাজটা তিনি স্মার্ট ফোন থেকে আরো সহজভাবে করতে চায়।যারা স্মার্ট ফোনে অহেতুক কাজে আসক্ত৷ ফেসবুক সহ যেসব সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বর্তমান ছেলে-মেয়েরা আসক্ত হচ্ছে।তাদের একটা লোগোর দ্বারা Subdued ( বশীভূত) করে নিবে। এতে তাদের মস্তিষ্ক Cerebral cortex এর কাজ করবে।যা নিয়ে অনেক বড় পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডক্টর ব্রাউনেল লুচি। সুমাকে এখন তিনি কাজে নামিয়ে পরিক্ষা করবেন।

এদিকে রিয়াজ ল্যাব থেকে বের হবার সময় দেখে রনি সামনের একটা রুমে বসে বসে আপেল খাচ্ছে। রিয়াজকে দেখে রনি অপেলটা পাত্রে রেখে দেয়। রিয়াজ বুঝেছে রনি সব জানে।তাই শুধু বলল,” চলো।মিশনে যেতে হবে”। ডঃজাহিদ এর লোকরা নিজেদের গাড়িতে উঠায় তাদের। এখন তারা যাবে সব চেয়ে ভয়ংকর দ্বীপে।যার নাম এখানকার মানুষ দিয়েছে Terrible island ( ভয়ংকর দ্বীপ) । সেখানে যারা গিয়েছে,কেও নাকি জীবিত ফিরে আসেনি। রিয়াজ ভাবছে,দেহে দানবীয় সত্বা আর ভ্যাম্পায়ার সত্বা নিয়ে মিশন কমপ্লিট করতে পারবে তো? ৬ জন এজেন্টকে তো বাচাতেই হবে।কে জানে,তারা এখনো জীবিত আছে কিনা। আর এই ব্লাক ডেভিলকে তো বের করতেই হবে।কিন্তু সে কে? নামটা ছাড়া আজ অব্দি তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কে হতে পারে সে?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here