ব্লাক ডেভিল,( পর্ব-০১)

0
1841

ব্লাক ডেভিল,( পর্ব-০১)
লেখক- Riaz Raj

– স্যার, দরজা কেনো বন্ধ করছেন?
– কাজ আছে।
– কিসের কাজ?
– দেখে যাও।
– স্যার এইটা ঠিক না। প্রাইভেট পড়ানোর বদলে আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন।বাকি ছাত্রীরা কোথায়।
দরজা বন্ধ করে ব্রাউনেল সুমার দিকে এগিয়ে আসতেছে। গতিপথেই ব্রাউনেল বলল,
– সবাইকে আজ ছুটি দিয়ে দিয়েছি। বাসায় কেও নেই৷ থাকলেও তারা ঘুমন্ত ঘুঙুর হয়ে আছে।
– স্যার স্যার, আপনি কি করতে যাচ্ছেন বলবেন?
সুমার জবাব না দিয়ে ব্রাউনেল পকেট থেকে একটা ইনজেকশন বের করে। আর সুমার ডান ঘাড়ে হাত দিয়ে বাম ঘাড়ে সুই বসিয়ে দেয়৷ সুমা যেনো এক নিমিষেই স্তব্ধ হয়ে যায়৷ হটাৎ স্যার কি করলো তার সাথে। সুমার চোখে ঝাপসা চিত্র ভেসে উঠে। মাথা চক্কর দিয়ে উঠে তার। নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে যায় সে।

– শুনো রিয়াজ। ব্লাক ডেভিল খুব ভয়ংকর।আর তার প্রহরী কত ভয়ংকর। তা তুমি নিশ্চয় জানো।
চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে রিয়াজ চায়ের স্বাদ গ্রহন করে।এরপর চায়ের কাপ টেবিলে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে রিয়াজ এস্টুম্যানকে বলতে লাগলো।
– হ্যা,আমি এইটাও জানি ব্লাক ডেভিল এক অদৃশ্য মানব। অর্থাৎ আজ অব্দি কেও তাকে দেখেনি। সে ডিওএমএম এর শত্রু।গত ৩২ বছর থেকে ডিওএমএম কে শেষ করতে চাচ্ছে৷ মালদ্বীপ আমাদের ৬ জন এজেন্ট নিখোঁজ। তাদের ব্লাক ডেভিল অপহরণ করেছে। আমার কাজ হচ্ছে ৬ জন এজেন্টকে উদ্ধার করা। রাইট?
– আর ব্লাক ডেভিলের ব্যাপারে কি ভেবেছেন?
– কি ভাববো। সে তো অনেক শক্তিশালী। তার প্রহরী এতো পাওয়ারফুল। সে তো পাওয়ারফুল ম্যাক্স প্রো হতে পারে।
– এসব কি যা তা বলে যাচ্ছেন।
– ও আপনারা তো বর্তমান সম্পর্কে কম জানেন।মানে এখন ছেলে মেয়েদের দিন যাচ্ছে অনলাইনে। সেখানেই তাদের ডায়লগ এইটা।
– ওসব ডায়লগ আপনার মুখে মানায় না মিষ্টার রিয়াজ।
– কেনো।আমি কি প্রতিবন্ধী নাকি। সবাই বলে,আমি বললে কি হবে?
– সবাই আপনি নন,আর আপনি সবাই নন। আপনি কে,তা আপনি নিজেও জানেন না।
– তো বলুন? কে আমি?
– সময়ে সব বলে দিবে। তবে উপস্তিত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিচ্ছি আপনাকে। বর্তমান অনলাইন বলতে আমরা বেশিরভাগ ফেসবুকিং, হোয়াটসঅ্যাপ,আর ইয়্যুট্যাব বুঝি। ফেসবুকে হাজারো ব্যবসা হচ্ছে।কিন্তু সেখানে মানুষ অলস হচ্ছে। তাদের নিজের কোনো ক্ষমতা নেই। একাউন্ট হ্যাক হলে কিংবা হাতের যন্ত্রটা নষ্ট হলে তিনি নিস্তার হয়ে যাবে। অনলাইন দেশ উন্নতি করার জন্য বা সুবিধার জন্য তৈরি।মানুষ তার অপব্যবহার করে সকল পরিকল্পনা বিপরীতে নিচ্ছে।
– যেমন?
– প্রেম করেছেন কখনো?
– না। মেয়েরা পাত্তা দেয়না।
– অনলাইনে?
– না,অনলাইনে একটা মেয়ে আমাকে রোজ মেসেজ করতো।আমি নাকি তার ক্রাশ।
– পেয়েছেন উত্তর? বাস্তবতা আর অনলাইন কতটা আলাদা বুঝেছেন? মানুষ দিন দিন নিজের সত্বা হারাচ্ছে। কেও নিজের জীবন মানে অনলাইন বুঝায়। মানব নিজেকে যান্ত্রিক বানাচ্ছে।হয়তো কিছুদিন পর সবাই কারো কন্ট্রোলে চলে যাবে। নিজের ইচ্ছা শক্তি তখন একটুও কাজে আসবেনা।
– এখানে বসে আমার মাথা খাবেন নাকি কাজ সম্মন্ধে কিছু বলবেন।
– মালদ্বীপ ৬ জন এজেন্ট নিখোঁজ।গিয়ে আনতে হবে তাদের। সাথে তাদের অপহরণ কারীদের বন্দি করতে হবে।
– হুম,আমাকে প্রস্তুত করান।

অন্যদিকে ব্রাউনেল সুমাকে ঘুমন্ত ঘুঙুর বানিয়ে নিয়ে যায় তার ল্যাবে। চলুন ব্রাউনেল এর ব্যাপারে কিছু জানা যাক। উনি মাষ্টার ব্রাউনেল নামে পরিচিত হলেও, আসলে তিনি টিচার না।উনার পুরো নাম হচ্ছে ডঃ ব্রাউনেল লুচি। এই ব্রাউনেল কয়েক বছর ধরে মানব দেহ নিয়ে পরিক্ষা করে আসছে। একজন মানুষের মস্তিষ্ক সারাজীবন এর জন্য কিভাবে একটা রিমোটে স্থাপন করা যায়।তা নিয়েই গবেষণা চালিয়ে আসছে। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে,মানব দেহে যান্ত্রীয় মেশিন প্রবেশ করিয়ে নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে আসা।একজন রোবট শুধুমাত্র মস্তিষ্কযন্ত্র( Brain apparatus) দ্বারা চালিত হয়৷ কিন্তু মানব দেহে সেই Brain apparatus যুক্ত করা হলে নিজস্ব জ্ঞান আর যান্ত্রিক পাওয়ার দিয়ে সে অনেক শক্তিশালী হতে পারে। এই শক্তি ডঃব্রাউনেল নিজের দেহে প্রবেশ করাতে চায়। যার ফলে সে অনেক শক্তিশালী হতে পারবে। আর এই গবেষণা তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের দেহ নিয়ে করে আসছে। প্রাইভেট পড়ানোর নাম করে তাদের বাসায় ডাকা হয়। এরপর ইনজেকশন ব্যবহার করে তাদের ঘুমন্ত ঘুঙুর বানিয়ে ফেলে৷ নিয়ে যায় ল্যাবে,আর শুরু করে তার গবেষণা। এই অব্দি অনেকগুলো দেহে এই পরিক্ষা চালিয়ে এসেছেন উনি।বরাবরের মতো সব জায়গায় ব্যর্থতা অর্জন করে। কিন্তু আজ উনি নতুন এক প্রোজেক্ট বানিয়েছে। যার ব্যবহারে ৯০% জীত লাভ করার চান্স আছে৷ সুমাকে ল্যাবে নিয়ে ডক্টর ব্রাউনেল শুরু করে তার বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।

এদিকে এস্টুম্যান রিয়াজকে ডিওএমএম এর বাপারে সব তথ্য দিতে লাগলেন। কোথায় কোথায় তাদের এজেন্সি আছে তা রিয়াজের জানা উচিৎ৷ বিপদগ্রস্ত হলে রিয়াজ তাদের সাহায্য পেতে পারে। এস্টুম্যান রিয়াজকে বলল,
– মালদ্বীপ নামার পর হেরি আপনাকে রিসিভ করবে। সে নিয়ে যাবে আমাদের আরেকটা অফিসে। ওখানেও আমাদের এজেন্ট আছে৷ মনে রাখবেন,প্রতিটি পদে পদে বিপদ হতে পারে৷ মোকাবেলা করে জয়ী হতে হবে আপনাকে। আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন।
– আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো৷ যেভাবেই হোক আমি সেই ৬ জন এজেন্টকে সাথে নিয়ে আসবো। আর তাদের অপহরণ কারীদের বন্দি করবো৷
– আশাকরি আপনার এই আত্মশক্তি কাজে আসবে।
– আমি কি একাই যাবো?
– আপনার সাথে আরেকজন যাবে।নাম রনি।
– সেও কি এজেন্ট?
– হুম। সে আপনাকে প্রতিটি পদে খবর দিবে।ব্যস্ততার মাঝে আপনি আমাদের কথা শুনার সময় পাবেন না।তাই আমরা সব খবর রনির কাছে পাঠাবো৷ সে আপনার কাছে তথ্য দিবে।
– হুম যাত্রা শুরু করা যাক৷ আকাশযান বের করুন।
– না,আপনাকে এয়ারপোর্ট থেকে যেতে হবে। সেখানে কোনোরকম ঝামেলা আমি চাচ্ছিনা। সব আইনি ভাবেই হোক।কোনোভাবে কেও আপনাকে আকাশযান সহ দেখে ফেললে এলিয়েন কিংবা শত্রু ভাববে। যার ফলাফল ভয়ংকর হতে পারে।
– হুম। আমি সেখানে নাচতে যাচ্ছি।আসছে ঝামেলা মুক্ত করতে( মনে মনে বলল রিয়াজ)

রিয়াজের দিকে এস্টুম্যান একটা কালো ব্যাগ এগিয়ে দিলো। ব্যাগ কাধে নিয়ে রিয়াজ বের হবার সময় খেয়াল করে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। মাথার চুল গুলো অনেক লম্বা আর পেচানো। অর্থাৎ জঙ্গলের মতো হয়ে আছে। গায়ে লাল একটা গেঞ্জি আর কালো প্যান্ট পড়ে আছে। চোখে ইয়া বড় সাদা চশমা। এস্টুম্যান বলল,
– এর নাম রনি৷ সে যাচ্ছে তোমার সাথে।
– এক জঙ্গল নিয়ে আরেক জঙ্গলে প্রবেশ মুসকিল হবে নাতো?
রিয়াজের কথা শুনে রনি বলল,
– আমার মাথার চুলকে অপমান করবেন না। এগুলো চুল নয়,এক একটা বুদ্ধি। আমি গর্ব করি আমার চুল নিয়ে।
– জ্বে হা বুঝিয়াছি।চলেন এইবার।
– আমার সাথে লাগতে আসে হাহাহা

এদিকে ব্রাউনেল সুমার দেহের মধ্যে Brain apparatus প্রবেশ করায়৷ সুমা নিথর হয়ে পড়ে আছে। ব্রাউনেল সুমার দেহের সাথে কানেক্টে করা সুইচ অন করে দেয়। সাথে সাথে সুমার কপালের চামড়াগুলো গড়গড় করতে লাগলো৷ যেনো গরম পানি ওতরাচ্ছে।

অন্যদিকে রিয়াজ মালদ্বীপ এয়ারপোর্টে নেমে বের হবার সময় কোনো একজন ব্যাক্তি রিয়াজের পিঠে ইনজেকশন মেরে দেয়৷ সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজ সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলো৷ কে যেনো রিয়াজকে নিয়ে যাচ্ছে। রিয়াজও তার সাথে চলে যাচ্ছে।কেনো যাচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারেনা।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here