বোনু
সিজন_০২
Part_18
#Writer_NOVA
নিবরাজ, মিহুকে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই অবাক চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে সবাই এক মুহুর্তে কথা বলতে ভুলে গেছে। কেউ টু শব্দও করেনি।
সুমনঃ কি ব্যাপার? তোমরা সবাই হা করে কি দেখছো?রুমের থেকে বের হচ্ছো না কেন?
সায়েমঃ কিন্তু স্যার মিহু—
সুমনঃ কোন কথা শুনবো না তোমাদের। নাউ লিভ মি।যদি বের না হও তাহলে আমি অন্য ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।(রেগে)
টিম রেইনবোর সবাই বের হয়ে গেলো।প্রিন্সিপাল সকল স্যার ও ম্যাডামদের উদ্দেশ্যে বললো।
সুমনঃ স্যার আপনারা আপনাদের ক্লাশে চলে যান।আইজান বাবা, তুমি গিয়ে দেখোতো নিবরাজ কোথায় গেলো?ওর যে রাগ ও জিদ।কে জানে কি করে মেয়েটার সাথে।
আইজানঃ জ্বি স্যার দেখছি।
আইজান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।টিম রেইনবোর সকল সদস্য চিন্তিত মুখে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
আভাঃ কি হলো এটা?
রিমঃ কিছুই বুঝতে পারলাম না।
কিরনঃ NK মিহুকে নিয়ে কোথায় গেলো?
রুশানঃ জানি না।
সায়েমঃ কী হবে এবার?আঙ্কেল কে কল দিবো?
আইজান ওদের কথা শুনতে পেয়ে পেছন থেকে বলে উঠলো।
আইজানঃ কাউকে কল দিতে হবে না। ও ঠিকমতো ওর বাসায় পৌঁছে যাবে।
আফরাঃ কিন্তু AK—
আইজানঃ কোন কিন্তু না।বাসায় যাও।
সবাইঃওকে।
যে যার যার বাসায় চলে গেল। এতক্ষণ ধরে পুরো ঘটনাটা খুব নিখুঁতভাবে সি.সি. টিভি ফুটেজ দেখছিলো ধূসর চোখের ছেলেটি। মিহুর ওপর নজর রাখার জন্য সারা কলেজের বিভিন্ন রুমে ও জায়গায় অগণিত সি.সি. টিভি লাগিয়েছে সে জিহানকে দিয়ে। যা তারা ব্যতীত অন্য কোন মানুষ জানে না।
—– অনেক বড় ভুল করে ফেললি নিবরাজ খান।তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস।তোকে আমি দেখে নিবো।
কথাটা বলে সামনে থাকা বিশাল বড় দেয়াল টিভিটাকে সজোরে ঘুষি মেরে ভেঙে ফেললো।রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।হাত কেটে টপটপ করে রক্ত পরছে। তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই তার।
নিবরাজ গাড়িতে উঠেই প্রথমে মিহুর বাবা ফাহিম মির্জাকে কল করলো।
নিবরাজঃ আসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।
ফাহিমঃ ওয়ালাইকুম আস সালাম। কে বলছেন?
নিবরাজঃ আঙ্কেল আমি নিবরাজ।
ফাহিমঃ কোন নিবরাজ?
ফাহিমঃ কেমন শ্বশুর মশাইয়ের বাবা?একমাত্র মেয়ের জামইকে চিনে না। (বিরবির করে)
ফাহিমঃ হ্যালো কথা বলছেন না কেন?
নিবরাজঃ আঙ্কেল আমি নিবরাজ খান। আপনার বন্ধু নিবীড় খানের ছেলে।
ফাহিমঃ ও এবার চিনতে পেরেছি। রাজ বাবা।কি হয়েছে? হঠাৎ আমায় কল করলে যে।তোমার বাবা ঠিক আছে তো?
নিবরাজঃ হ্যাঁ আঙ্কেল বাবা ঠিক আছে। আজকে মিহুর আসতে দেরী হবে।
ফাহিমঃ কেন?
নিবরাজঃ কলেজে কিছু কাজ আছে।কাজ শেষ হলে আমি নিজে গিয়ে ওকে বাসায় দিয়ে আসবো।
ফাহিমঃ আচ্ছা বাবা কোন সমস্যা নেই। একটু দেখে রেখো।
নিবরাজঃ হ্যাঁ আঙ্কেল দেখেতো রাখবোই।একদম চোখে চোখে। যাতে আমার নজর থেকে পালাতে না পারে।(মিহুর দিকে তাকিয়ে)
রাজ কল কেটে দিলো।এতক্ষণ ধরে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কথা বলছিলো।এক হাতে মোবাইল আরেক হাতে শক্ত করে মিহুর হাত ধরে রেখেছে। মোবাইল পকেটে রেখে মিহুর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো।
মিহুঃ এমন ভাব করছেন যেনো আমাকে তুলে নিয়ে এসে সারা বিশ্ব জয় করে ফেলছেন।
নিবরাজঃ তার থেকেও বেশি।
মিহুঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?
রাজ কোন কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।গাড়ি এসে থামলো খান ভীলায়।অন্য দিকে সায়েম বাসায় গিয়ে মিহুর বাবাকে কল করলো।মিহুর বাবা ওকে চিন্তা করতে না করলো।ও যেহেতু রাজের সাথে আছে ঠিক বাসায় পৌঁছে যাবে।
সায়েমঃ যেমন মেয়ে তেমন বাপ।কখন কি মতলব থাকে কিছুই বুঝি না।
☘️☘️☘️
খান ভীলা…….
কোলিং বেল বাজতেই আইরিন আহমেদ দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে রাজকে দেখে সে তো অবাক।নিবরাজ কখনো এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে না।আজ দুপুর ১টায় বাড়িতে।ঘটনা কি?মিহু রাজের মা ও জানের মাকে অনেকবার দেখেছে।কিন্তু তারপরেও দুজনকে গুলিয়ে ফেলে।ওর কাছে দুজনের চেহারায় একরকম লাগে।দরজা খুলতেই মিহু আইরিন আহমেদ কে রাজের মা ভেবে জড়িয়ে ধরে মিথ্যা কান্নার ভান শুরু করলো।
মিহুঃ আন্টি ই ই-ই ই-ই। (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
আইরিনঃ আরে মিহু,তুমি এখানে?
মিহুঃ আন্টি আপনার ছেলে আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে আসছে।এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ ?।
আইরিনঃ রাজ সত্যি? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
মিহুঃ হ্যাঁ আন্টি।আমি সত্যি কথা বলছি।আমি গুড গার্ল।আর গুড গার্ল তো মিথ্যে কথা বলে না। আপনি তো ওর মা।ওকে কিছু বলতে পারেন না।
আইরিনঃ আমি ওর ছোট মা।
কান্নার শব্দ শুনে রোজনি বেগম কিচেন থেকে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
রোজনিঃ কি হয়েছে আইরিন?কে কাঁদছে? মিহু মা-মণি কখন এলে তুমি?
মিহু এবার আইরিন আহমেদকে ছেড়ে রোজনি বেগমকে জরিয়ে ধরে মরা কান্না শুরু করলো।
মিহুঃ আন্টি ই ই-ই ?।আপনার ছেলে—
রোজনিঃ কি হয়েছে?রাজ তোমায় কি করছে?রাজ কি হয়েছে?
নিবরাজঃ কিছু না মম।আসলে কলেজের কিছু কাজ ছিলো।কাজগুলো করতে মিহুকে দরকার। তাই আমি ওকে নিয়ে এলাম।
মিহুঃ মিথ্যে কথা।আমাকে তুলে নিয়ে এসেছে।
—- তোকে তুলে আনার সাধ্য কারো আছে?তুই নিজে ওর সাথে এসেছিস।আর এখন আমার ভাই কে ফাঁসাচ্ছিস।
সবাই পেছন দিকে ঘুরলো।আরুহি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কথাটা বললো।
নিবরাজঃ আরে আরুহি?কেমন আছিস?কখন এলি?
আরুহিঃ সকালে ভাইয়া।কেমন আছো তুমি?
নিবরাজঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। খালামণি, খালু কেমন আছে?
আরুহিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
মিহুঃ আন্টি আমি বাসায় যাবো।
নিবরাজ মিহুর হাত ধরে টেনে সিঁড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো।
নিবরাজঃ অনেক অভিনয় করেছো।এবার চল।দেখো আমি তোমার কি হাল করি?
আরুহি,রাজের মা,জানের মা সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। তাদের মাথার ওপর সবকিছু গেল।
আরুহিঃ তোকে আমি ছাড়বো না মিহু।তুই আমার রাজের দিকে হাত বাড়িয়েছিস।(রেগে)
কথাটা বলে আরুহি উপরে উঠে গেল। ও রাজের রুমে ঢোকার আগেই নিবরাজ ওর মুখের ওপর দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো।
আরুহিঃ কি হলো এটা?
☘️☘️☘️
রুমের দরজা লাগাতেই মিহুর বুকটা কেঁপে উঠলো। ছেলেটা করবে কি?কেন এনেছে এখানে?উল্টো পাল্টা কিছু করবে না তো?নিবরাজ একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ওর দিকে এগুতে লাগলো।এবার মিহু ভয় পেয়ে গেল। এক পা দু পা করে পেছাতে শুরু করলো।
নিবরাজঃ কি ব্যাপার মেহরুন মির্জা?তুমি নাকি কাউকে ভয় পাও না। তাহলে পেছনে যাচ্ছো কেন?
মিহুঃ দে দে দে দেখুন ভালো হবে না কিন্তু। আমি আমার তিন ভাইয়ুকে দিয়ে আপনাকে আচ্ছা করে গণপিটুনি খাওয়াবো।একদম, আপনি আমার দিকে এগুবেন না।
হঠাৎ নিবরাজ ওর শার্টের বোতামগুলো খুলতে শুরু করলো। যা দেখে মিহুর চোখ জোরা কপালে উঠে গেলো।ছেলেটার মাথা ঠিক আছে তো?
মিহুঃ এই এই আপনি শার্টের বোতাম খুলছেন কেন?
নিবরাজঃ রোমান্স করবো তাই।
মিহুর কানের সামনে এসে লো ভয়েজে কথাটা বললো নিবরাজ। মিহুর সারা শরীর হিম শীতল বাতাস বয়ে গেল। হাত-পায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।সারা শরীর কাঁপছে। তা দেখে নিবরাজ মিটমিট করে হাসছে।
মিহুঃ আপনি একদম শার্ট খুলবেন না।আপনি শার্ট কেন খুলছেন বলুন তো?
নিবরাজঃ আমার ইচ্ছে তাই। আমার রুম আমি যা খুশি তা করবো।
মিহুঃ যা খুশি তা করবো মানে।মামাবাড়ির আবদার নাকি।
নিবরাজ, মিহুর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। মিহুর অস্বস্তি লাগছে। ভয়ে ঘামতে লাগলো। মিহুর কানের কাছে গিয়ে নিবরাজ বললো।
নিবরাজঃ এই রুমে যা আছে সব আমার।এমনকি তুমিও।
মিহুঃ আম আম আমি আআআপনার না।
নিবরাজঃ তুমি আমার মানে শুধু আমার।আর কারো না।আমি তোমাকে অন্য কারো হতে দিবো না। (রেগে)
হঠাৎ মিহুর মাথার পেছন ধরে নিবরাজ ওকে নিজের মুখের সামনে নিয়ে এলো।মিহুর মুখে রাজের গরম নিশ্বাস পরছে।মিহু চোখ মুখ খিঁচে জামা হাতে মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছে।মিহু নিবরাজের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না।কারণ সারা মুখ রাগে কঠিন হয়ে আছে।
নিবরাজঃ ইউ আর মাই ফার্স্ট এন্ড লাস্ট লাভ।কথাটা খুব ভালো করে নিজের মাথায় ঢুকিয়ে নেও।
রাজ মিহুকে ছেড়ে দিলো।তারপর কাবার্ড থেকে অনেকগুলো ফাইল বের করে মিহুর সামনে রাখলো।
নিবরাজঃ এক ঘন্টার মধ্যে ফাইলগুলো কমপ্লিট করবে।তা না হলে আজকে তোমার বাড়ি যাওয়া হবে না। সারাদিনতো আমার সাথেই থাকবে সঙ্গে রাতেও।ইউর টাইম ইজ স্টার্ট নাও।
কথাটা বলে মিহুকে একটা চোখ মারলো।তারপর শার্ট খুলে কাবার্ড থেকে টাউজার,টি-শার্ট নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেল।
মিহুঃ লুচু কোথাকার? বাপ রে!!!?কি যা তা বলে?আমারতো দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।জানটাই বোধহয় চলে যেতো।এখন আমি এতগুলো ফাইল এক ঘন্টার মধ্যে কিভাবে শেষ করবো?ব্যাটা বজ্জাত,হাতির নাতি,তেলাপোকার দুলাভাই, চামচিকার শালা,নেংটি ইন্দুরের ভাই,টিকটিকির ছাও।তোরে আমি ছারমু না।সবগুলির শোধ একটা একটা কইরা নিমু।
নিবরাজ ওর সব কথাই শুনতে পেয়েছে।ওয়াস রুম থেকে চিৎকার করে বললো।
নিবরাজঃ আমাকে বকার জন্য পরেও সময় পাবে।তোমার সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে। ১ ঘন্টার মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলে, আজ আর বাড়ি যাওয়া হবে না।কথাটা মাথায় রেখো।
কথাটা বলে শাওয়ার নিতে দাঁড়িয়ে গেল নিবরাজ।আজ মিহুকে বড্ড ভয় দেখিয়েছে।ওর মুখটা দেখার মতো ছিলো।ওর মুখটা দেখার মতো ছিলো।মিহুর মুখের ছবি চোখে ভেসে উঠতেই রাজ নিজের মনে হাসতে লাগলো।নিজের মনে বিরবির করে শুধু বললো,”পাগলী একটা।”
#চলবে
দেরী করে দেওয়ার জন্য দুঃখীত।আজকে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। তারপরেও আপনাদের কথা ভেবে দিয়ে দিলাম।
#Part_17
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/3022836007945131/