বোনু
সিজন_০২
Part_17
#Writer_NOVA
৮ দিন পর…..
পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজ ৮ দিন হলো।সামনে রেজাল্টও দিয়ে দিবে।মাঠের এক পাশে বসে বাদাম খাচ্ছে ও আড্ডা দিচ্ছে রেইনবো টিম।তখনই ওদের সামনে কলেজের পিয়ন এলো।
পিয়নঃ তোমাদের মধ্যে মেহরুন,সায়েম, আভা,রুশান, আফরা,রিম কে?
সবাইঃ আমরা কেন?
পিয়নঃ প্রিন্সিপাল স্যার তোমাদের ডাকছে।
মিহুঃ জানি না। এখুনি যেতে বলেছে।
সায়েমঃ আপনি যান, আমরা আসছি।
রুশানঃ কি ব্যাপার হির?তুই কি কিছু করছোত?
মিহুঃ আমি যদি কিছু করতাম তাহলে স্যারে আমারেই একলা ডাকতো।তোগো সহো ডাকবো কেন?
আফরাঃ আমরা আবার কি করলাম?
মিহুঃ সেটা গেলেই বুঝতে পারবি।
কিরনঃ তোদের ছয়জনকে ডাকছে।আমারে ডাকে নাই কেন?
রিমঃ জানি না।
আভাঃ চল সবাই।
মিহুঃ কিরন তুই এই জায়গায় থাক।আমাদের সাথে একদম যাবি না।
প্রিন্সিপালের রুমে…….
স্যারের রুমে গিয়ে দেখলো প্রিন্সিপাল সুমন রহমান সহ আরো অনেক স্যার বসে আছে। সাথে ওদের সেই টাকলু স্যার ও কুচুটে বুড়ি ম্যাডাম।নিবরাজ,আইজান পাশের চেয়ারে বসা।
মিহুঃ মে আই কাম ইন স্যার?
সুমনঃ ইয়েস কাম ইন।
ওরা ছয়জন রুমে ঢুকলো। কিরন জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে বোঝার চেষ্টা করছে কেস টা কি?
মিহুঃ স্যার আমাদের ডেকেছেন?
সুমনঃ হ্যাঁ।
মিহুঃ কেন স্যার? আমরা কিছু করেছি।আমরাতো কারো সাথে মারামারি করিনি।
সুমনঃ তার জন্য নয়।রাফিজা ম্যাডাম।
রাফিজাঃ জি স্যার।
সায়েমঃ এই হির কুচুটে বুড়ি ম্যাডামরে ডাকে কেন?(আস্তে করে)
মিহুঃ আমি জানি না।(নিচুস্বরে)
সুমনঃ খাতাগুলো বের করুন।
আইজানঃ ভাই, কিসের খাতা?(ফিসফিস করে)
নিবরাজঃ পরীক্ষার খাতা মনে হয়।
আইজানঃ কেন কি হয়েছে?
নিবরাজঃ জানি না। চুপচাপ দেখতে থাক।
হঠাৎ করে মিহুর মোবাইল বেজে ওঠে। ডোমেটা কুসিটা আ আ আ ডেমেটা কুসিটা আ আ আ।ওর মোবাইলের রিংটোন শুনে সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মিহু মোবাইল নিয়ে বের হয়ে গেলো।
আইজানঃ ভাই, এটা কি ছিলো?
সায়েমঃ ওর মোবাইলের রিংটোন ?।
মিহু ফিরে এলো।রাফিজা ম্যাডাম ওরফে মিহুদের কুচুটে বুড়ি ম্যাডাম পরীক্ষার খাতা বের করলেন।ওদের প্রত্যেকের গলা শুকিয়ে গেছে। এবার ওরা বুঝে গেছে কেন ওদের ডেকেছে? সুমন রহমান খাতাগুলো হাতে নিয়ে প্রত্যেককে একবার দেখলেন।ছয়জন মাথা হালকা করে নিচু করে রেখেছে।
সুমনঃ সায়েম কে?
সায়েমঃ জ্বি স্যার আমি।
সুমনঃ কি লিখেছো খাতায়?
সায়েমঃ (নিশ্চুপ)
সুমনঃ উত্তর দিচ্ছো না কেন?
রাফিজাঃ কিভাবে দিবে স্যার?উত্তর দেওয়ার মতো কিছু লিখেছে নাকি।
টাকলু স্যারঃ কি লিখেছে স্যার?
☘️☘️☘️
সুমন রহমান সবাইকে খাতাটা দেখিয়ে বললো।
সুমনঃ ১ম পৃষ্ঠায় বড় করে ম্যাডামের ছবি এঁকেছে। আর নিচে লিখেছে “” ম্যাডাম দীর্ঘ ২ টা ঘন্টা ব্যয় করে মনের মাধুরি মিশিয়ে আপনাকে এঁকেছি। আশা করি আমার তিন ঘন্টা আপনি বৃথা করবেন না।পাস নাম্বার দিয়ে দিয়েন।কেউ জানবে না।শুধু আপনি আর আমি।”” কলেজে এসব করতে আসো তোমরা?রাফিজা ম্যাডাম ২য় খাতাটা দিন।
রাফিজাঃ এই যে স্যার নিন।
সুমনঃ রুশান কে?
রুশানঃ জ্বি স্যার।(ভয়ে ভয়ে)
সুমনঃ তুমি কি লিখছো?তা একটু সবাইকে পড়ে শোনায়।কি বলো?
রুশানঃ (নিশ্চুপ)
সুমনঃ প্রথম পৃষ্ঠায় —Title : অপরাধী গান
” ও ম্যাডাম ও ম্যাডামরে আপনি অপরাধীরে,
আমার পাস করনের নাম্বার দিয়ে দিয়েন রে।”
২য় পৃষ্ঠা —- Title : কুচুটে বুড়ি
” একে তো কুচুটে বুড়ি, তার ওপর ঢোলের বারি,
আপনার এসব ছলচাতুরী থামবে কবে বলেন?
আপনার ক্লাশেও আমি নাই,
আমার মনেও আপনি নাই
আপনাকে পারমানেন্টলি ডিলেট করতে চাই। ”
৪র্থ, ৫ম পৃষ্ঠা ভর্তি হিন্দি ও বাংলা গান।শেষে কি লিখছে তা শুনবেন না।শেষে লিখছে,
” ম্যাডাম সময়ের অভাবে এখানে বেশি লিখতে পারলাম না।একদিন সময় করে আমাদের বাসায় এসেন। আপনাকে গিটার বাজিয়ে শুনাবো।”
রাফিজাঃ দেখছেন স্যার কতবড় বেয়াদব? ওরা আমার একটা ক্লাশও করিনি।
সুমনঃ আভা কে তুমি? (রিমের দিকে তাকিয়ে)
রিমঃ না স্যার ও।(আভাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে)
সুমনঃ এই আভার কথা কি বলবো?ইনিতো সুন্দর করে খাতার পৃষ্ঠা ভরে ভালোবাসার গল্প লিখেছেন।
সায়েমঃ কি লিখছে স্যার?যদি আমাদেরটার মতো একটু কষ্ট করে পড়ে শুনাতেন।
সুমনঃ সেটা তোমার ফ্রেন্ডের থেকে শুনে নিও।(দাঁতে দাঁত চেপে) রিম কে?
রিমঃ আমি।
সুমনঃ কি ম্যডামকে রক ডান্সের প্রশিক্ষণ দিবা?
রিমঃ হ্যাঁ মানে না না স্যার।
সুমনঃ যা লিখছে রিম খাতায়।আমি পড়ে শুনাচ্ছি।
” রক ডান্স শিখতে ম্যাডাম আপনাকে বেশি কষ্ট করতে হবে না। শুধু ফাল পারলেই হইবো।এজন্য আপনাকে শুধু নিউ মার্কেট থেকে একজোড়া শক্ত দেখে কেডস জুতা কিনতে হবে। অন্য জায়গায় থেকে কিনতে পারবেন।তবে ততটা টেকসই নাও হতে পারে।
এটা পরে রোজ জোরে গান ছেড়ে ১ ঘন্টা ফাল পারবেন।তাহলেই আপনি রক ডান্স শিখতে পারবেন।”
নিবরাজ ও আইজান মুখ চেপে হাসছে।সত্যি মিহু যেমন ওর ফ্রেন্ডরা তেমন।
সুমনঃ ৫ম খাতা।আফরা বিনতে মাসুদ।
আফরাঃ ইয়েস স্যার।
সুমনঃ আফরা বিনতে মাসুদের খাতাটাও আমি পড়ে শুনাচ্ছি,” ম্যাডাম আমি একজন বিউটিশিয়ান।আমি পার্লারের সব কাজ পারি।আপনার মুখে নাকি অনেক ওয়েল।ঐটার সমাধান আমি জানি।আপনি প্রতিদিন নরমাল আটা কিংবা চালের গুঁড়া দিয়ে মুখ ধুবেন।তাহলে মুখে আর ওয়েল থাকবে না। আপনার বাম গালে যে পিম্পাল হয়েছে সেটার সমাধানও আমার জানা আছে।তবে বলবো না। আপনি যদি আমাকে পাস করিয়ে দেন তাহলে আপনার পুরো মুখ আমি ফ্রেশ করে দিবো,কথা দিলাম।”
রাফিজাঃ স্যার ৭ নাম্বার খাতা।ওদের নাটের গুরু।
সুমনঃ মেহরুন মির্জা।
মিহুঃ খাইছে রে, আমি গেছি।কেন লিখতে গেলাম এসব?খালি খাতা জমা দিলেই তো ভালো হইতো।
সুমনঃ মেহরুন মির্জা।(চিৎকার করে)
মিহুঃ জ্বি জ্বি জ্বি স্যার।(তুতলিয়ে)
সুমনঃ কি লিখেছো খাতায়?
মিহুঃ বেশি কিছু না স্যার।শুধু কিভাবে ক্লাসিকাল ডান্স করতে হয় তাই লিখছি?।
☘️☘️☘️
প্রিন্সিপাল স্যার খাতা পড়তে শুরু করলে নিবরাজ তাকে থামিয়ে দেয়।
নিবরাজঃ আপনি না স্যার।যার খাতা সে পড়ে শোনাবে।
মিহুঃ আআআআমমমি!!!
মিহুঃ স্যার পড়ুক না।আমি নিজের প্রশংসা নিজে করতে চাই না।আমার সরম করে?।
সবাইঃ ??
নিবরাজঃ তোমাকে পড়তে বলছি।তুমি পড়বে।
(ধমক দিয়ে)
মিহুঃ পড়ছি,এতো ধমকাচ্ছেন কেন?
নিবরাজঃ তুমি যে ভালো তাই। তাড়াতাড়ি —
মিহুঃ ” অপ্রিয় ম্যাডাম, আপনাকে আমি একটুও সহ্য করতে পারি না।তারপরেও আমি আপনাকে শিখাবো কি করে ক্লাসিক্যাল ডান্স করতে হয়।তবে এখন নয়।আমাকে পাস করিয়ে দিলে।আমি এই ডান্সে খুব ভালো। হাইস্কুলে থাকতে উপেজালা ও জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়ে ছিলাম।বিভাগে গিয়েও ভালো করেছিলাম।তবে ফাইনালে ভালো করিনি।কারণ পা কেটে গিয়েছিল।আপনি যদি আমাকে পাস করে দেন তাহলে আপনাকে আমাদের বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে খাওয়াবো।সাথে ডান্স তো ফ্রি-তে শিখাবো।আপাতত এই পর্যন্ত থাক।আমার হাত ব্যাথা করতাছে।আপনি যদি আমাকে পাস করিয়ে দেন তাহলে তাহলে আমি আমার প্রশিক্ষণ শুরু করবো।তা না হলে করবো না হু হু হু।নিজ দায়িত্বে যেখান থেকে খুশি সেখান থেকে শিখে নেনগা।আমার কি??যদি এই কথা কোনভাবে প্রিন্সিপাল স্যারের কানে যায়। তাহলে আপনাকে আমি আমর হির(হকি স্টিক) দিয়ে মাথা ফাটিয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি করে রাখবো।টাকার কথা চিন্তা করেন না।ঐ টা আমার বাপি দিয়ে দিবে।”
রাফিজাঃ তোমাদের কি লজ্জা শরম বলতে কিছু আছে?
মিহুঃ না থাকলে ড্রেস পরছি কে??
রাফিজাঃ আবার মুখে মুখে কথা বলছো?(রেগে)
মিহুঃ আপনিই তো বললেন আমাদের লজ্জা শরম বলতে কিছু আছে কিনা।লজ্জা শরম না থাকলে তো আর ড্রেস পরতাম না।
রাফিজাঃ স্যার দেখছেন কি বেয়াদব? (রেগে)
মিহুঃ সেটা আপনি আজকে জানলেন?।
মিহু কখনো কারো সাথে এরকম বেয়াদবি করে না।কিন্তু সবার সামনে এভাবে ওদের অপমান করায় মিহু বেশ চটে আছে।তাছাড়া কুচুটে বুড়ি ম্যাডামকে তো ও একদমি সহ্য করতে পারে না।আর যাকে মিহু পছন্দ বা সহ্য করতে না পারে।তার সাথে ত্যাড়ামি করবেই।
নিবরাজঃ এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি?
মিহুঃ কোন সমস্যা নেই।
সুমনঃ তুমি কি কাউকে ভয় পাও না।
মিহুঃ মোটেও না।
রাফিজাঃ তোমার সব ফ্রেন্ড মাথা নিচু করে রেখেছে। আর তুমি টাস টাস কথা বলেই যাচ্ছো।
নিবরাজঃ ম্যাম আপনি শান্ত হোন।ওকে আমার ওপর ছেড়ে দিন।ওর ব্যবস্থা আমি করছি।ও ভয় পাবে না ওর ঘাড়ে পাবে।(রেগে দাঁতে দাঁত চেপে)
কথাগুলো বলে নিবরাজ মিহুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।মিহু কিছুতেই যেতে চাইছিলো না। তাই সোজা ওকে কাঁধে উঠিয়ে হাঁটতে লাগলো গাড়ির দিকে।মিহুতো রাজের পিঠে ইচ্ছেমতো কিল-ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাতে নিবরাজের কোন রিয়েকশন নেই। সে নিজের মতো হেঁটে চলছে।
#চলবে
#Part_16
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/3021977058031026/