#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩০
নিরিবিলি রুমটা হৈমীর কান্নার শব্দে থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি করল। রুদ্রর বক্ষপটে অনুভূত হলো অদ্ভুত এক ব্যথা। তার হৃদয়ের গভীরে সুক্ষ্মভাবে দাগ টানল এই কান্নার সুর। বুকের বা’পাশের পাঁজর যেন কেউ দুমড়ে, মুচড়ে দিচ্ছে। অকারণ এই ব্যথাযুক্ত ক্রন্দনধ্বনি এলোমেলো করে দিল শ্বাস-প্রশ্বাস। মেয়েটা তবুও থামল না। রুদ্র কিয়ৎকাল থম ধরে থাকার পর হৈমীর কোমরে চেপে রাখা হাতটা দৃঢ় করল। মাথায় চেপে রাখা হাতটি দিয়ে ধীরেধীরে স্পর্শ করল ওর সিক্ত, নরম গালটায়। হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনরায় প্রশ্ন করল,
-” এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার? কাঁদছ কেন এভাবে? বাড়ির কথা মনে পড়লে ফোন নিয়ে কল করতে পারো তাদের৷ প্রয়োজনে ভিডিয়ো কলে কথা বলো। তাই বলে এভাবে কেঁদে আমার কাজে ডিস্টার্ব করো না। ”
কথা গুলো বলার সময় ওর কণ্ঠ জড়িয়ে যাচ্ছিল। নিশ্বাস ভারী। তীব্র শীতেও শরীর উষ্ণ হয়ে আসছে। কান দু’টো কেমন লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। অথচ হৈমী একই ভাবে কেঁদে চলেছে। কীভাবে মেয়েটার কান্না থামাবে? প্রচণ্ড চিন্তায় পড়ে গেল। চিন্তান্বিত স্বরেই বলল,
-” চকোলেট খাবে? তোমার তো প্রিয়। ”
হৈমী নিরুত্তর। রুদ্র পুনরায় বলল,
-” আচ্ছা ধরো কাল যদি ফুচকা খেতে নিয়ে যাই? ”
এত লোভ দেখিয়েও মানাতে পারল না। ধীরেধীরে অসহ্য লাগতে শুরু করল। হয়ে পড়ল অধৈর্য্য। নিমিষেই মেজাজ ক্ষিপ্ত করে ঘাড় চেপে ধরে মুখোমুখি হলো। চোয়াল শক্ত করে, দৃঢ় চোখে তাকিয়ে বলল,
-” কান্না থামাও। ”
হৈমী ঠোঁট উল্টে বলল,
-” আপনি ঐ নিশিতার সঙ্গে বিজনেস করবেন না। ”
আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেল রুদ্র। কপাল কুঁচকে ফেলল মুহুর্তেই। হৈমী অশ্রুসিক্ত নয়নে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আমি আপনার বউ হই, আপনার প্রতি আমার অধিকার আছে, আপনাকে ভালোবাসি আমি। আমার সব কথা শুনবেন, এখন থেকে আমি সব ধরনের অধিকার ফলাবো। আপনি আমাকে বঞ্চিত করতে চাইলে আমি থানা পুলিশ করব। মামলা করব আপনার নামে। বলব ঘরে সুন্দরী বউ থাকতেও আপনি বাইর মুখী! ”
ক্রন্দনরত কণ্ঠে হৈমীর বলা কথাগুলো শুনে তাজ্জব বনে গেল রুদ্র। কথার খেই হারিয়ে রাগ করতেও ভুলে গেল। হৈমী দু’হাতে তার গলা জড়িয়ে গালে গাল ঠেকিয়ে দিল। আহ্লাদী স্বরে আবদার করল,
-” আমাকে একটু আদর করবেন? ”
প্রশ্নটা করে মনে মনে ভাবল স্বামীর আদর পাওয়াও বউদের অধিকার। তাহলে সে কেন প্রশ্ন করল? সে আদর অর্জন করে নেবে। জোর খাঁটিয়ে, সর্বোচ্চ ব্ল্যাইকমেল করে!
-” একটু আদর করুন না… কান্না করতে আর ভালো লাগছে না, আপনারো তো কান্না শুনতে ভালো লাগছে না৷ তাহলে আদর করে দিন। ”
রুদ্র হতভম্ব হয়ে রইল। হৈমীর ভেজা, নরম গালটা তখনো তার খসখসে দাঁড়ি ভর্তি গালের সঙ্গে মিলিত হয়ে আছে। এক হাত রয়েছে কোমর জড়িয়ে। হৈমীর হুমকি, আবদার শুনে তার নিশ্বাস আঁটকে যাওয়ার উপক্রম হলো। কী সাংঘাতিক বউ তার! বউয়ের অধিকার না দিলে, আদর না করলে পুলিশের কাছে যাবে মামলা করবে। ভাবা যায়? আর নিশিতা! তার কথা হঠাৎ এলো কেন? সে তো অলরেডি ম্যারেড।
রয়েসয়ে দু’হাতে হৈমীকে জড়িয়ে নিল সে। গম্ভীর হয়ে বলল,
-” নিশিতা ম্যারিড হৈমী। তার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আমার৷ এই নিয়ে দ্বিতীয় বার যেন কোনো কথা না শুনি। ”
মাথা তুলে পিটপিট করে তাকিয়ে রইল হৈমী। জড়োসড়ো হয়ে রুদ্রর কোলে মিলিয়ে বসে বলল,
-” আর শুনবেন না এবার আমাকে একটা চুমু দিন। ”
-” এবার সিরিয়াস বিরক্ত হচ্ছি হৈমী৷ আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি, তুমি যাও ঘুমাও। ”
হৈমীর ভীষণ ঘুম পেলেও সে শক্ত হয়ে বসে রইল। চুমু না দেওয়া অবধি এক চুলও নড়বে পন করল। রুদ্র তার মতিগতি বুঝে ভরাট সুরে বলল,
-” আমাকে ক্ষ্যাপাচ্ছ তুমি। পরে আফসোস করতে হবে। ”
পাত্তা দিল না সে উলটো বক্ষপটে নাক ডলতে শুরু করল। তার নাকের কাঁচা পানি ভিজিয়ে দিল রুদ্রর টিশার্ট। মুখ বিকৃতি করল সে, টের পেয়ে হৈমী বেশ ভালো করেই নাক মুছল। তৎক্ষনাৎ রুদ্র তাকে কোল থেকে সরিয়ে ত্বরিত গতিতে টিশার্ট খুলে ফেলল। মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
-” কী সব নোংরা কাজ কারবার হৈমী। এক থাপ্পড় লাগাবো। ”
থাপ্পড়ে গুরুত্ব না দিয়ে হৈমী রুদ্রর লোমশ ভর্তি বলিষ্ঠ বুকটায় ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। গালে হাত দিয়ে অবাক কণ্ঠে বলল,
-” আপনি কি জিমে যান? কী হট বডি! ”
কথা শুনে বিরক্ত হয়ে রুদ্র কাউচ থেকে ওঠতে উদ্যত হয়েছে অমনি তার বুকের মাঝখানটায় টোপ করে একটি চুমু দিল হৈমী। সহসা বিদ্যুৎ চমকানোর মতো করেই তার পুরুষচিত্ত চমকে ওঠল। ঘাড় কিঞ্চিৎ বাঁকা করে আড়চোখে তাকাল হৈমীর নিরীহ মুখটার দিকে। হয়তো সে ঝোঁকের বশে আবেগাপ্লুত হয়ে কিসটা করে ফেলেছে। কিন্তু রুদ্রর কিছু করার নেই। তার ভেতরে যে ঝড়ের সৃষ্টি হলো এই ঝড়ে হৈমীকেও তোলপাড় করে ছাড়বে। পরিস্থিতির বেড়াজালে আঁটকে মুহুর্তেই কিছু নরম অনুভূতিতে, অসংলগ্ন স্পর্শে, হৈমীকে ছারখার করে দিল সে। বদ্ধ উন্মাদের মতো ওর ছোট্ট, নরম দেহটা পুনরায় নিজের অধীনে নিয়ে নিল। মেয়েটা কিঞ্চিৎ ভীতু হলেও বুকে অদম্য সাহস নিয়ে ঠাঁই রইল। এই সাহস যেন রুদ্রর প্রতি তার ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। যা রুদ্রর পুরুষ সত্তাকে দ্বিগুণ উৎসাহিত করল। তার পুরুষালি ওষ্ঠজোড়া একে একে হৈমীর পুরো মুখশ্রীতে আদর মাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মেয়েটাকে তীব্র ছোঁয়ায় মাতাল করতে, বেসামাল করে তুলতে, বহু বৎসরের তৃষ্ণার্তের ন্যায় নরম অধর জোড়ায় পান করতে লাগল অমৃত সুধা। এ সুধা সেই সুধা যে সুধা যুগ যুগ ধরে প্রেমিকারা তাদের প্রেমিক পুরুষদের জন্য উৎসর্গ করে আসছে। ব্যাকুল দেহে, ব্যাকুল নিশ্বাসে হৈমী রুদ্রর থেকে ছাড় পাবার বৃথা চেষ্টা করল। কিন্তু বদ্ধ উন্মাদ সে রুদ্র একটুও ছাড়ল না। হৈমীর বৃথা চেষ্টাতে নরম ঠোঁটে জ্বলন বাড়িয়ে মুক্তি দিল কিয়ৎকালের জন্য। বিরক্তি সুরে বলল,
-” তোমার যে লিপ কিস করার যোগ্যতা নেই সেটা আমি জানি। তাই শান্ত থেকে আমার যোগ্যতা অনুভব করো। ”
অপমান গায়ে মাখানোর অবস্থা এ মুহুর্তে হৈমীর নেই। সে দিশেহারা হয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে মুখ ফিরিয়ে নিল। মিনমিনে স্বরে বলল,
-” আর আদর চাই না। ”
রুদ্র শুনল না। গায়ের জোর বাড়িয়ে ওকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে নিল। মুখ ফিরিয়ে থাকায় আচমকা কোমল গ্রীবাদেশে নাক, মুখ ডুবিয়ে দিল। সর্বাঙ্গে এক ভয়ানক কম্পন সৃষ্টি হলো হৈমীর। ছটফটিয়ে ওঠল সে। তার তীব্র ছটফটানি রুদ্রর অনুভূতি আরো বেশি গাঢ় করে তুলল। তৎক্ষনাৎ কোমল গ্রীবাদেশে অসংখ্য লাভ বাইটে ভরিয়ে দিল। মৃদু ব্যথায় আর্তনাদ করল সে। তাদের এই বেসামাল অনুভূতি আরো বেশি দীর্ঘ হতে পারত কিন্তু হলো না। সহসা রুদ্রর সেলফোন বেজে ওঠল। কৌশলে হৈমীকে একহাতে জড়িয়ে অপর হাতে পকেট থেকে ফোন বের করল সে। বড়ো ভাই রাদিফের কল। রিসিভ করার পূর্বে হৈমীকে কঠিন আদেশ করল,
-” চুপ করে শান্ত হয়ে থাকবে, একদম নড়বে না। ”
হৈমী আলগোছে তার বুকে মাথা রেখে বড়ো বড়ো নিশ্বাস ফেলতে লাগল। নিভৃতে তার দু-চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দুফোঁটা অশ্রু। বুকের ভিতরটায় শব্দ হতে লাগল ঢিপঢিপ ঢিপঢিপ। রাদিফের সঙ্গে বিজনেসের বিষয়ে কথা বলতে বলতে সময় পেরিয়ে গেল দশ মিনিট পঞ্চান্ন সেকেন্ড। কথা শেষে হৈমীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে গেল তার। ত্বরিৎ ফোন সাইটে রেখে গালে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে ডাকল,
-” হৈমী, হৈমী। ”
সাড়া দিল না সে। দশমিনিটের মাঝেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। ব্যর্থ মনে লম্বা করে নিশ্বাস ফেলল রুদ্র। প্রথমে মেজাজ খারাপ করল, ইচ্ছে করল থাপড়িয়ে ঘুম থেকে তুলতে। পরোক্ষণে আফসোসের সাথে বিরবিরিয়ে বলল,
-” তোমার দ্বারা অসম্ভব কিছুই নেই! সবচেয়ে বেশি সম্ভব আমাকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া। ”
চলবে…