#বেসামাল_প্রেম
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪৬
ভেজা চুল শুঁকিয়ে মাথার ওপর ঝুঁটি করল হৈমী। গায়ে ওড়না জড়িয়ে তাকাল রুদ্রর দিকে। উল্টো হয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে। কোমর অবধি কম্বলে ঢাকা। ধবধবে ফর্সা, পেশিবহুল পিঠ দৃশ্যমান। সাদা চামড়ায় থেকে থেকে লালচে দাগগুলো আচমকা খেয়াল হলো। লজ্জায় বুকটা ধক করে ওঠল নিমিষেই। গালদ্বয়ে রক্তিম আভা ভেসে ওঠল। দুরুদুরু বুকে এগিয়ে এসে কম্বল টেনে পিঠ ঢেকে দিল সে। ঢোক গিলে নিজের দু-হাত সম্মুখে রাখল। নখ গুলোতো ঠিকি আছে। কিঞ্চিৎ বিচলিত হলো। পরোক্ষণেই মনে পড়ল গতকাল নখ কেটেছে সে। ফলশ্রুতিতে নখগুলো ধারালো ছিল! ইস ভীষণ মায়া হলো তার। নিজেকে অপরাধী লাগল খুব। কিন্তু তারই বা কী করার ছিল? মুখটা ছোটো হয়ে গেল খুব। মাথা নিচু করে ধীরপায়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। সময় গড়িয়েছে অনেক৷ সকাল দশটা ছুঁই ছুঁই। সূচনা এসে দু’বার ডেকে গেছে। তাদের ঘুম ছাড়তে দেরি হওয়াতে দরজা খুলতে পারেনি। লজ্জা দ্বিধা নিয়ে চটজলদি নিচে নামল সে। ছোটো কাকি টিভি দেখছিলেন৷ তাকে দেখে সাউন্ড কমিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-” ঘুম ভাঙল? বাব্বাহ নতুন বউ কোথায় সাতসকালে ওঠবে তা না। বেলা দশটায় ঘুম থেকে ওঠছ! তাও যদি রুদ্রটা সুস্থ থাকত। তাকে তো ঠিক সময় খাবার ওষুধ দিতে হবে। তুমি তো দেখি ভালো মন্দ কিছুই বোঝো না। ”
আমতা আমতা করতে লাগল হৈমী। ঠিক কী উত্তর দেবে খুঁজে পেল না। আশপাশে নজর ঘোরাতে লাগল। সূচনাকে খুঁজতে। কিন্তু নাহ সে নেই। তাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে গেল। ছোটো কাকিকে বলে গেল,
-” গত দু’দিন ঠিকভাবে ঘুম হয়নি তো তাই আজ ঘুম ছাড়ছিল না৷ কাল থেকে তাড়াতাড়ি ওঠার চেষ্টা করব। ”
ছোটো চাচি রিনা মুখ ভেঙচি দিয়ে টিভির সাউন্ড বাড়াল। হৈমী রুদ্রর জন্য খাবার বাড়ল। কিন্তু সেগুলো একা কীভাবে নিয়ে যাবে? তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ বাড়ির কাজের মহিলাটা কাজ ছেড়ে দিয়েছে। নতুন কাজের লোক এখন পর্যন্ত আনা হয়নি। চিন্তান্বিত হয়ে ডাইনিং থেকে বেরিয়ে ছোটো কাকিকে জিজ্ঞেস করল,
-” কাকি ভাবি কোথায়? ”
-” কেন? ”
বিব্রতবোধ করল হৈমী। কিছু না বলে পুনরায় চলে গেল ডাইনিংয়ে। সিদ্ধান্ত নিল একবারে না পারুক দু বার বা তিন বারে নিয়ে যাবে। এক হাতে ভাতের প্লেট অন্য হাতে জগ নিয়ে বের হতেই ছোটো কাকি ক্রোধের স্বরে বলল,
-” তুমি তো খুব বেয়াদব মেয়ে! বড়োরা প্রশ্ন করলে সে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় জানো না? ”
হতভম্ব হয়ে গেল হৈমী। ভিতর ঘর থেকে দাদিন বেরিয়ে এলো। চোখমুখ কুঁচকে বড়ো গলায় বলল,
-” ছোটো বউ আস্তে কথা বলো। তোমার তো দেখি ষাঁড়ের গলা এখনো কমল না। ”
শাশুড়ির কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠল রিনা৷ চোখ কটমট করে বলল,
-” কী বললেন আমার ষাঁড়ের গলা! ভাতিজা বউয়ের সামনে এভাবে অপমান করলেন। আমি এক্ষুনি আপনার ছেলেকে ফোন করছি। ”
বলতে বলতে নিজে ঘরে চলে গেল রিনা। হৈমী দাদিনের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে। দাদিন বলল,
-” শোন ওর কথা ধরবি না। ওর স্বভাব একটু খারাপ আছে। আমার ছেলেটা কোন পাপে এমন খাস ঝগরাটে বউ পাইছে উপরওয়ালা জানে। ভাসুরের ছেলের বউয়ের সাথেই কাল থেকে যা শুরু করছে। নিজের দুই ছেলের বউয়ের সাথে যে এই মেয়ে কী করবে ভাবতেই আমার প্রেশার বাড়ছে। ”
আচমকা ঠোঁট টিপে হাসল হৈমী। বলল,
-” আমি রাগ করিনি দাদিন। আমি একটু চিন্তায় আছি তোমার নাতিকে নিয়ে। কাকির কথা ধরতে হলে তাকে নিয়ে ভাবতে হবে৷ কিন্তু আমার তো এখন তাকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। ”
মাথা দুলিয়ে হাসল দাদিন। বলল,
-” বাহ। খুব বুদ্ধি খাঁটিয়ে কথা বললি তো। ”
হৈমী কিছুটা ঝুঁকে এলো দাদিনের দিকে। চুপিচুপি বলল,
-” আমার মাথায় যে বুদ্ধি আছে এই কথা কি তুমিও বিশ্বাস করো না? ”
শব্দ করে হেসে ওঠল দাদিন। হৈমীর চিবুক ছুঁয়ে বলল,
-” আমার দাদু ভাইয়ের চোখে কি যে সে সোনা ধরা দিছে নাকি? আমি জানি তুই খাঁটি সোনা। ”
প্রশংসা পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে গেল হৈমী। বলল,
-” আচ্ছা যাই আমি উনাকে আবার ওষুধ দিতে হবে।”
______________
সোহান, রোশানের সঙ্গে বাড়ির পেছনের ফাঁকা জায়গাটায় রেকেট খেলছিল সূচনা। হঠাৎ শাশুড়ির ফোন পেয়ে খেলা থেকে বিরতি নিল। হামিদা ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে বলল,
-” আমাদের পাশের বাড়িতে এক ভাবি আছে। উনার মেয়ের গতমাসে ছেলে হয়েছে। শুনেছি বাচ্চা ধরছিল না। অনেক চিকিৎসা করার পর অবশেষে ধরেছে। শেষ যে ডাক্তার দেখিয়েছে সেই ডাক্তারের ঠিকানা নিয়েছি। মাহেরের কাছে দিয়ে দিব। তুমি নিয়ে একদিন যেও ডাক্তারের কাছে। ”
হামিদা থেকে এমন কথা শুনে আশ্চর্য হলো সূচনা। তীব্র রাগে শরীর কাঁপতে শুরু করল। এ মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে হামিদা খুব নিচু মনের একজন মানুষ। পরোক্ষণেই সে মাহেরের মা এটুকু মনে করে শান্ত হলো। ঢোক গিলে স্বাভাবিক গলায় বলল,
-” আমার তো কোনো সমস্যা নেই মা। আমার বিয়ের বয়সও বেশি নয়। তাহলে কেন এসব করব। ”
-” সমস্যা না থাকলে দুই দুই বার ফলাফল শূন্য হতো? আমি যা বলছি তোমার ভালোর জন্যই বলছি। ডাক্তার দেখাও। ”
সূচনা নিজেকে সংযত করে কোনোরকমে বলল,
-” আচ্ছা। ”
-” মনে করে যেও আগামী কয়েক মাসে যেন সুখবর পাই আমি। আর হৈমীকে ফোন করলাম ধরল না। ওকে বলো আমাকে ফোন দিতে। ”
ফোন কেটে দিয়ে রুদ্ধ শ্বাস ছাড়ল সূচনা। ভাইদের বলে চলে এলো বাড়ির ভিতরে৷ নিজের রুমে গিয়ে ফোনটা ছুঁড়ে মারল বিছানায়। ঘর্মাক্ত কপাল দু’হাতে মুছে ধীরস্থিরে বসল বিছানার একপাশে। এরপর ফোন নিয়ে কল করল মাহেরকে। ফোন রিসিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে বলল,
-” আপনি কোথায় মাহের? ”
-” কলেজে কেন এনি প্রবলেম? ”
-” একটু আসতে পারবেন? ”
-” কী হয়েছে কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? ”
-” ডাক্তার দেখাতে যাব। আসার সময় মায়ের থেকে ডাক্তারের ঠিকানা নিয়ে আসবেন। ”
-” মানে! কীসের ডক্টর কী হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে? ”
-” মায়ের থেকে শুনে নেবেন। রাখছি। ”
ফোন কেটে দিল সূচনা। কিছু সময় পর মন শান্ত হলো তার। সহসা মনে হলো মাহেরকে এভাবে ফোন করে সে ঠিক করেনি। কিন্তু কী করবে সে? আচমকা নিজেকে পাগল পাগল লাগল তার। বিয়ের এক বছর পূর্ণ হয়নি তার আগেই তাকে বাচ্চা কেন হচ্ছে না? নিজের কোনো সমস্যা আছে কিনা সেজন্য ডক্টর দেখাতে হবে! এটাকে কী হিসেবে নেবে? অপমান নাকি তার ব্যর্থতা।
______________
রুদ্রকে নিজহাতে খাইয়ে দিল হৈমী। রুদ্র পুরো সময়টাই নির্নিমেষে হৈমীর দিকে তাকিয়ে ছিল। হৈমীর মন কিঞ্চিৎ খারাপ কারণ রুদ্রর মনের ভেতর কী চলছে? সে ঠিক কি নিয়ে চিন্তিত? এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারেনি সে। রুদ্র তাকে হয়তো বলবে এমন আভাস পাচ্ছে। কিন্তু কখন বলবে? সে যে আর ধৈর্য্য ধরতে পারছে না। সে কতটা ব্যাকুল হয়ে আছে। অথচ রুদ্র তার দিকে তাকিয়ে শুধু মিটিমিটি হাসছে।
গতরাতের কথা স্মরণ করে মনে মনে হাসছে রুদ্র। প্রগাঢ় ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে হৈমী আবারো জব্দ করেছে তাকে। বাধ্য হয়ে বশে এসেছে সেও৷ স্ত্রীকে কথা দিয়েছে সে আর কখনো নেশা করবে না৷ শুধু মাঝেমধ্যে তার অনুমতি নিয়ে দু চারটে সিগারেট খাবে। সে যেমন হৈমীর বশ্যতা স্বীকার করেছে। হৈমীও তার বশ্যতা মেনে নিয়েছে। কিন্তু ভুল তো হয়ে গেল! হৈমী বা সে কোনো প্রকার সুরক্ষা ছাড়াই ঘনিষ্ঠ হয়েছে। সহসা বিছানা ছাড়ল রুদ্র। হৈমী ততক্ষণে নিচে চলে গেছে। সকালের খাবার খায়নি মেয়েটা৷ এখন নিশ্চয়ই খাবার খাবে? আর কিছু না ভেবে ধীরেধীরে পোশাক পরিবর্তন করল সে। অসুস্থতার জন্য বা হাতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। তবুও সে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আগে হৈমীর খোঁজ করল। ডাইনিং রুমে তখন হৈমী সবে খেতে বসেছে। ছোটো চাচি রোশানের জন্য পাস্তা বানাচ্ছে। রান্না ঘর আর ডাইনিং পাশাপাশি। কোনো দেয়াল নেই এই দু ঘরের মধ্যিখানে। রান্নার পাশাপাশি মুখটা ভালোই চলছে রিনার।
-” কাল থেকে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠবে বুঝেছ? বাড়ির বউরা এত সকালে ঘুম থেকে ওঠার বিষয়টা খুব খারাপ। ”
হৈমী মাথা নাড়িয়ে খেতে মনোযোগ দিল। এই ছোটো চাচিকে মোটেই পছন্দ হচ্ছে না তার৷ রুদ্র অসুস্থ, তাদের সম্পর্কটাও অনেকটা নড়বড়ে। রুদ্রর অসুস্থতায় একটা জিনিস সে খুব ভালো করে অনুভব করেছে। তা হলো সে রুদ্রকে খুব ভালোবাসে। দু’টো দিন তার বুকের ভিতর কী চলেছে একমাত্র সেই জানে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের সেই করুণ মুখ মনে পড়েছে বারবার। মস্তিষ্কে চাপ এসেছে খুব। মনে সব সময় একটি কথাই ঘুরপাক খেয়েছে। তার বাবা চলে যাবার পর মা তাকে আর ভাইকে আঁকড়ে বেঁচেছে। কিন্তু রুদ্রর কিছু হলে সে কী আঁকড়ে বাঁচবে? তার ছোট্ট হৃদয়ে তো শুধু ঐ মানুষটারই বিচরণ। তার শরীর, মন জুড়ে রুদ্র ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। সে খুব আবেগি মেয়ে। ভালোবাসার মানুষ ছাড়া বেঁচে থাকা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। যার অসুস্থতাতেই তার বুকে খুব ব্যথা হয়েছে। তাকে হারানোর যন্ত্রণা কতখানি ভয়ানক হতে পারে! ভাবতেই গা শিউরে ওঠে হৈমীর। কথায় বলে মানুষ ঠেকে শেখে। রুদ্রর হঠাৎ অসুস্থতাও তাকে গড়ে পিঠে নিল। আজ এ বাড়িতে যে যা খুশি বলুক কিচ্ছু গায়ে লাগছে না। তার কেবল রুদ্রকেই চাই৷ সে রুদ্রর সঙ্গে থাকতে পারছে, রুদ্রকে ভালোবাসতে পারছে, রুদ্রর ভালোবাসা দেহে, মনে জড়াচ্ছে এতসুখে ছোটো চাচির কিছু তিক্ত কথা গায়ে মাখানোর মতো ভুল সে কেন করবে? এই ভুল সে করব না। উনি যা খুশি বলুক। এক কানে ঢুকিয়ে আরেক কানে বের করে দেবে।
রিনা একা একাই বকবক করে গেল। হৈমী কিছু বলছে না বলে বিরক্তও হলো। মেয়েটা কি এতই ছোটো, অবুঝ যে তার কথায় একটুও কষ্ট পাচ্ছে না? কষ্ট না পাক চাচি শাশুড়ির ওপর রাগ তো করতেই পারে। রিনা আচমকা কেশে ওঠল। বলল,
-” হৈমী এক গ্লাস পানি দাও তো। ”
রিনা কাশছে! এই দেখে ত্বরিত গ্লাসে পানি ভরে নিয়ে এলো হৈমী। কিন্তু রিনা তার থেকে গ্লাস না নিয়ে সহসা গর্জন ছাড়ল,
-” এই তোমার শিক্ষা। আমি তোমার চেয়ে বয়সে কত বড়ো জানো? বাম হাতে পানি দিচ্ছ ছিঃ ছিঃ। কী ধরনের বেয়াদব তুমি। তোমার মা কি তোমাকে কিছু শিখিয়ে শশুর বাড়ি পাঠায়নি? ওওও শিখিয়ে পাঠাবে কীভাবে তার আগেই তো ভেগেছ! ইঁচড়েপাকা মেয়ে কোথাকার! ”
হৈমীর হাতটা কেঁপে ওঠল। দু-চোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রুও গড়াল। ডাইনিং রুমের দরজার বাইরে শক্ত মুখে দাঁড়ানো রুদ্র। আচমকা সে ডাকল,
-” হৈমী। ”
চমকে ওঠল হৈমী৷ চমকাল রিনাও। চপল পায়ে রুদ্রর সামনে এসে দুঃখী মুখে বলল,
-” ও বাবা তুমি ওঠে এলে কেন? কিছু লাগবে আমি পাঠাচ্ছি কী লাগবে বলো? ”
ভ্রু কুঁচকে ছোটো কাকির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল রুদ্র। কয়েক পল পর গম্ভীর হয়ে, হৈমীকে ইশারায় দেখিয়ে বলল,
-” ওকে কী যেন বলছিলেন? ”
-” আর বলো না এই হৈমী কিছুই বুঝে না। জানো কী করেছে? বা হাতে পানি খেতে দিয়েছে আমাকে। বুঝো কী বেয়াদবি কাণ্ড! এমন কেউ করে। আজ যদি আমার জায়গায় বাইরের কেউ থাকত কী অপমানটাই হতো বলো। তাই একটু শাসন করলাম।”
ভ্রু উঁচিয়ে রুদ্র বলল,
-” ওও আচ্ছা। ”
এরপর হৈমীকে শক্ত কণ্ঠে ডাকল,
-” হৈমী। ”
কেঁপে ওঠল হৈমী। রিনা ভীষণ খুশি হলো। রুদ্র যেই ছেলে নিশ্চিত এই বেয়াদবির জন্য হৈমীকে বকবে। তার কাছে সরিও বলতে বলবে। মনে মনে এসব কল্পনা করতে করতে হৈমী এসে তার পাশে দাঁড়াল। আর রুদ্রর সামনে। হৈমীর টলমল চোখ দুটোতে কঠিন চোখে দেখে নিল রুদ্র। এরপর চোখ নামাল হৈমীর হাতের দিকে। ডান হাত এঁটো, বা’হাতে পানির গ্লাস। এ দৃশ্য দেখে তার চোয়ালদ্বয় শক্ত হলো। দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করল,
-” আর কখনো এঁটো হাতে কাউকে কিছু দেবে? ”
আচমকা হৈমীর চোখ বেয়ে আরো দুফোঁটা অশ্রু গড়াল। রুদ্রর রাগ আরো তীব্র হলো। সে পুনরায় চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” যাও খেতে বসো। ”
কিছু বলতে উদ্যত হয়েও চুপ করে গেল হৈমী। আজ দু’দিন হলো সে প্রাণখুলে কথা বলে না। বলতে পারে না। এখনো বলতে ইচ্ছে করল না। মাথা নিচু করে চুপচাপ চলে গেল খেতে। রুদ্র ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। রিনার হাসিহাসি মুখে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কিঞ্চিৎ দমে গেল রিনা। বলল,
-” আমি যাই পাস্তা বানাচ্ছি রোশানের জন্য। ”
রুদ্র সে কথায় গুরুত্ব না দিয়ে কিছু মনে করার ভঙ্গি করল। তর্জনী দিয়ে কপাল চুলকে বলল,
-” কী যেন বলছিলেন? আমার বউ বেয়াদব। ইঁচড়েপাকা। ”
হকচকিয়ে গেল রিনা৷ চমকে তাকাল হৈমী। রুদ্র বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে কাঠকাঠ গলায় বলল,
-” আমার বউ সত্যি ইঁচড়েপাকা। ঠিক এজন্যই আপনার অসুবিধার কথা ভেবে সে নিজের আধখাওয়া খাবার রেখে, এঁটো হাতেই আপনাকে পানি দিয়ে উপকার করতে চেয়েছে। সে যদি ইঁচড়েপাকা না হতো তাহলে এটা না করে নিজে পেটপুরে খেতে ব্যস্ত থাকত। কারণ সামান্য কাশিতে মানুষ নিজেই পানি ভরে খেতে পারে। এটা আহামরি সমস্যা না। ”
দমে গেল রিনা৷ হৈমীর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল নোনাপানির ধারা। রুদ্র এত সহজে ছাড়ার পাত্র নয়। তাই আরো কঠিন হয়ে রিনাকে বলল,
-” আমার বউ যদি বেয়াদব হতো ছোটো কাকি, তাহলে আপনি ক্ষানিক পূর্বে যেসব কথা বললেন। তার যোগ্য জবাব দিত। কারণ সে কারো সঙ্গে ভেগে যায়নি। আমি তাকে বাধ্য করেছি আমার বউ হতে। ”
হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রিনা৷ ঢোক গিলল ঘনঘন। মনে মনে তীব্র বিদ্বেষে ফেটে পড়ল সে। রুদ্র খোঁচা দিয়ে আবারো বলল,
-” ভাগ্যিস দাদিনের মতো কপাল আপনাদের হয়নি। তার ছোটো ছেলের বউয়ের মতো আমার বউটা বেয়াদব হলে আপনাদের কপাল পুড়তো। ”
চোখ দু’টো বড়ো করে ফেলল রিনা। চাপা আর্তনাদে বলল,
-” রুদ্র! ”
বাঁকা হেসে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হৈমীর দিকে তাকাল রুদ্র। বলল,
-” দশমিনিট এর জন্য বেরুচ্ছি। ”
রুদ্র চলে যেতে উদ্যত হলো। দু পা বাড়িয়েও পিছন ফিরে তাকাল। হৈমীর উৎকণ্ঠিত মুখ দেখে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
-” প্রয়োজনেই যাচ্ছি। ”
চলবে…