#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২৫
সময় বিকাল চারটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। সূর্যের আলো ধীরে ধীরে মলিন হয়ে আসছে৷ হিম শীতল বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠছে। সিটে মাথা রেখে জড় বস্তুর মতো পড়ে ছিল হৈমী৷ কখন যে চোখ লেগেছে টেরও পায়নি। রুদ্রকে তার বাবা ফোন করেছিল। বাবার সাথে কথা বলার পর ফোন এসেছে রাদিফের। রাদিফের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা চলছিল। কথার ফাঁকে হৈমীর দিকে নজর পড়তেই আঁতকে ওঠে সে। হড়বড়ে হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলে হৈমীকে। ঘুমের ঘোরে গা ছেড়ে দিয়েছিল মেয়েটা। আর একটু হলেই মাথাটা গিয়ে জানালার কাঁচে লাগত! ভাগ্যিস সে দেখেছিল। সংবিৎশক্তি ফিরে পেয়ে দুর্বল চোখে তাকাল হৈমী। রুদ্র রাখছি বলে রাদিফের সঙ্গে কথার সমাপ্তি ঘটাল। রাশভারি কণ্ঠে হৈমীকে বলল,
-” ঘুমাচ্ছ কেন? ”
কিঞ্চিৎ নড়ল হৈমী৷ কিন্তু উত্তর দিল না। রুদ্র ধরে রাখা বাহু ছেড়ে দিলে সে পূর্বের ন্যায় সিটে গা এলিয়ে দিল। রুদ্র মুখ ফিরিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে রইল। হৈমীর চোখ মুখের অবস্থা দেখে অস্বস্তি হচ্ছে তার। হৈমী আবারো ঘুমে ঢুলুঢুলু। মাথা সিট থেকে বার বার পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। অবস্থা বুঝে চিন্তা হলো রুদ্রর। ফিরে তাকিয়ে কাছে টেনে আনল ছোট্ট, নরম, দুর্বল শরীরটাকে। বুকের কাছটায় মাথা রেখে ভরাট স্বরে বলল,
-” এভাবে থাকো। ”
হৈমী কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। চুপচাপ পড়ে রইল। শীত লাগছে তার শরীর মৃদু কাঁপছে। রুদ্রর বক্ষস্থলের উষ্ণতায় আরাম পেল বেশ৷ সে আরামে
এক সময় বিভোর ঘুমে তলিয়েও গেল। চারদিকে যখন মাগরিবের আজান ধ্বনি শোনা গেল, তখন রুদ্রর ফোনে কয়েকটি একটি ম্যাসেজ এলো। ম্যাসেজগুলো সূচনার। সে লিখেছে,
-” ভাইয়া তুমি হৈমীকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছ? যেখানেই যাও মাথা ঠান্ডা রেখ, মেজাজ শান্ত করো। হৈমীকে বুঝিয়ে কাছে রেখ। ও অনেক সহজসরল, শান্তভাবে বুঝিয়ে বললে সব শুনবে৷ রেগে বললে ভয় পাবে। মাহের খুব চিন্তা করছে, মায়েরও প্রেশার বেড়ে গেছে৷ প্লিজ তুমি হৈমীর খেয়াল রেখ৷ এমনিতেই বয়স কম তারওপর অতিরিক্ত বোকা। এমন একটা মেয়েকে যখন তুমি নিজের সঙ্গে জড়িয়েছ তখন তোমাকেও ধৈর্য্যশীল হতে হবে৷ বুঝিয়ে, শুনিয়ে, গুছিয়ে নিতে হবে। ইমম্যাচিওর মেয়ে বিয়ে করে প্লিজ তুমি ম্যাচিওরিটি আশা করো না। পারলে ম্যাচিওর করে নাও। একটা ছোট্ট বাচ্চাকে যেমন কোলেপিঠে করে মানুষ করতে হয় ধরে নাও হৈমীকেও তোমায় ওভাবে বুঝদার মানুষ করে নিতে হবে। আমাদের কালো অতীতের প্রভাব যেন ওর ওপর না পড়ে ভাইয়া। মাথায় রেখ ও আমার স্বামীর আদরের বোন। ওর কিছু হলে তার প্রভাব আমার ওপরও পড়বে৷ যতই আজ মা রেগে থাকুক কাল অবশ্যই মেয়ের দিকে ফিরে তাকাবেন। ভালো থেক তোমরা, রাগটা কমিও। মেয়েটা সকালে ঠিকভাবে খায়নি, ও আবার বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারে না। খেয়াল রেখ ওর নিজের খেয়ালও রেখ। আমি সময় করে ফোন দিব আল্লাহ হাফেজ। ”
________
রুদ্রর ডাকে ঘুম ভাঙল হৈমীর। চোখ মেলে রুদ্রর মুখটা দেখে চমকে ওঠল, হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে চোখ কচকালো। মাথা চেপে ধরে চারদিকে সচেতন দৃষ্টি বুলাল। মনে পড়ে গেল তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা। সেই সাথে খেয়াল করল সে রুদ্রর কোলে শুয়ে আছে। শুনতে পেল গুরুগম্ভীর মানুষটার শান্ত কণ্ঠস্বর,
-” আমাদের পৌঁছাতে আরো সময় লাগবে। খাবার আনিয়েছি হাত, মুখ ধুয়ে খেয়ে নাও। ”
ধীরেধীরে ওঠে বসল হৈমী। অমনি গায়ে জড়ানো শাড়ির অর্ধেক পড়ে গেল নিচে। বিস্মিত হয়ে দু’হাতে শাড়ি চেপে ধরল। রুদ্রর দিকে কাচুমাচু হয়ে একবার তাকিয়ে নিজের সিটে গিয়ে বসল। রুদ্র খেয়াল করল হৈমীর শাড়ির কুঁচি পুরোটাই খুলে গেছে। ঠিকঠাক হওয়ার জন্য চোখ ফিরিয়ে নিল সে বিরবির করে বলল,
-” ঘুমের ঘোরে এত যুদ্ধ করার পরও আঁচল টুকু ঠিক আছে এটাই মাথা সমান। এতেই আমি ধন্য! ”
শাড়ির বেহাল দশা দেখে হৈমী ত্বরান্বিত হয়ে খুলে যাওয়া কুঁচি কোনরকমে কোমরে গুঁজে দিল। রুদ্র অন্যপাশে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করল,
-” সব ওকে? ”
হৈমী মৃদুস্বরে জবাব দিল,
-” হুম। ”
গাড়ির ডোর খুলে ঝিনুককে আসতে বলল রুদ্র। ঝিনুক এক লিটারের পানির বোতল এগিয়ে দিল। রুদ্র সেটা নিয়ে হৈমীকে দিল বলল,
-” ডোর খোলার প্রয়োজন নেই। জানালা দিয়ে মাথা বের করে মুখে পানি দাও। ”
মাথা নাড়িয়ে সম্মত হলো হৈমী৷ রুদ্র তার হাতে বোতল দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ডোর আটকাতে উদ্যত হলো। শঙ্কিত হয়ে হৈমী বলল,
-” কোথায় যাচ্ছেন! ”
চোখ বন্ধ করে আবার মেলে তাকাল রুদ্র। দৃঢ় স্বরে বলল,
-” এখানেই আছি। ”
-” দরজা খোলা থাকুক। ”
ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল রুদ্র। এত ভয়! সিগারেট খাওয়ার জন্য কিছুটা দূরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু যাওয়া হলো না। খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়েই দ্রুততার সঙ্গে সিগারেট ফুঁকতে হলো। হৈমীও রুদ্রকে চোখে চোখে রেখে হাত, মুখ ধুয়ে বলল,
-” শেষ। ”
রুদ্র ঝিনুককে ইশারায় টিস্যু বক্স দিতে বলল। ঝিনুক টিস্যু বক্স এগিয়ে দিলে হৈমী তা নিয়ে হাত, মুখ মুছে চুপ করে বসে রইল। দু’টো সিগারেট শেষ করে পনিরের হাত থেকে খাবারগুলো নিল সে। বলল,
-” আশপাশে ঘুরে আয়। ফোন করলেই চলে আসবি।”
ওরা চলে যেতেই সে খাবারের প্যাকেট নিয়ে গাড়িতে বসল। ডোর লক করে হৈমীর দিকে খাবারের প্যাকেট দিয়ে বলল,
-” খেয়ে নাও। ”
অতিরিক্ত খিদে পাওয়াতে গা গুলাচ্ছিল হৈমীর। তাই খাবার পেয়ে আর টু শব্দটিও করল না। ভদ্র মেয়ের মতো খাবার নিয়ে খেতে শুরু করল। অর্ধেক খাওয়ার পর রুদ্রর দিকে তাকাল। নরম সুরে জিজ্ঞেস করল,
-” আপনি খাবেন না? ”
রুদ্র আড়চোখে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-” না। ”
-” আমি এতগুলো কীভাবে খাব? আপনি এই প্যাকেট নিন। ”
-” খাও তুমি। ”
-” খাবারের সাথে রাগ করতে নেই। জানেন টিশার জামাই খেতে না চাইলে টিশা জোর করে করে, গল্প শুনিয়ে, ছড়া কেটে খাওয়িয়ে দেয়। ”
দীর্ঘ একটা সময় পর হৈমীর মুখে কথা ফুটেছে। ফলশ্রুতিতে রুদ্রর বিরক্ত লাগল না। বেশ ভালোই লাগল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
-” ওকে খাচ্ছি। ”
ঈষৎ হাসল হৈমী। খাওয়া শেষ করে জিজ্ঞেস করল,
-” ভাবি ফোন করেছিল? ”
খেতে খেতে রুদ্র জবাব দিল,
-” না। ”
মনটা আবারো বিষন্ন হয়ে গেল হৈমীর। বলল,
-” আমি কবে আসব? ”
-” জানি না। ”
আর কোনো প্রশ্ন করল না সে। চুপসে গেল পূর্বের মতোই। ঢাকা পৌঁছাতে রাত সাড়ে দশটা বাজল। হৈমী তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রুদ্র বুঝল, লম্বা জার্নি করার অভ্যাস নেই ওর। পুরো পথ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল। এবার ঘুম ভাঙাতে হবে। তাই ডাকল, একবার, দু’বার, তিনবার। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। ঝিনুককে ডেকে চাবি বের করে দিল। বলল,
-” গেট খুলে চারতালায় চলে যা। লক খুলে রাখ। ”
ঝিনুক চলে গেল পনির ড্রাইভিং সিটে বসেই গুণগুণ করে গান গাইছে। রুদ্র সন্তর্পণে হৈমীকে পাঁজাকোল করে নিয়ে গেটে ভিতরে প্রবেশ করল। মুখোমুখি হলো, দোতলার ভাড়াটিয়া আংকেলের সঙ্গে। লোকটার মুখে ভয়ের ছাপ। রুদ্র বুঝতে পেরে এগোতে এগোতে বলল,
-” আংকেল বউ নিয়ে এলাম। লং জার্নিতে শরীর খারাপ করেছে তাই ঘুমে ডিস্টার্ব করলাম না। ”
এবার লোকটার চোখ, মুখের আকৃতি পরিবর্তন হলো। বিস্ময় নিয়ে বলল,
-” বিয়ে করেছ কই কিছু শুনলাম না তো। ”
বাঁকা হেসে রুদ্র বলল,
-” আস্তেধীরে শুনে যাবেন, আসি। ”
________
রুদ্র যখন ঢাকায় আসে একাকী সময় কাটাতে উত্তরার এই বাসাতেই থাকে। তেরো শতাংশ জায়গা জুড়ে নির্মিত পাঁচতলা বিশিষ্ট বিল্ডিং। চারতলা ব্যাতীত বাকি সবগুলোই ভাড়া দেয়া। নিজের ফ্ল্যাটটি আগে থেকেই বেশ সাজানো গোছানো। তবে সংসার করার মতো সাজানো গোছানো নয়। এবার একটা ছোট্ট সংসার তৈরি করতে হবে । হৈমীকে নিজের বেডরুমে শুইয়ে দিয়ে ঝিনুক আর পনিরকে দায়িত্ব দিল আগামীকালকের ভিতরেই একটা সংসারে যা যা লাগে সব কিছুর ব্যবস্থা করতে। ওরা ব্যবস্থা করে ফেলবে এই নিশ্চয়তা দিয়ে জড়তার সঙ্গে জিজ্ঞেস করল,
-” বস ফুলের দোকান খোলাই আছে। আপনি বললে ঘন্টা খানিক সময়ের মধ্যেই বাসর ঘর সাজিয়ে ফেলব! ”
হকচকিয়ে গেল রুদ্র। চাপাস্বরে ধমক দিল ওদের। বলল,
-” বিয়ে করেই আধমরা বানিয়ে ফেলেছি, বাসর করে পুরোপুরি মেরে ফেলব নাকি! যা ফোন রাখ। ”
ফোন কেটে চাপা হাসল রুদ্র। বিরবির করে বলল,
-” বিয়ে করেছি মনের খোরাক মেটাতে ব্যস। ”
শীতের রাত তবুও লম্বা সময় নিয়ে গোসল করল রুদ্র। বাথরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় ঘুমন্ত হৈমীকে দেখে মনে পড়ল, ওরও গোসল করা উচিৎ। লম্বা জার্নি, ধুলাবালিতে অবস্থা শোচনীয়। গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে হৈমীকে ডাকতে গেল সে। ডাকতে ডাকতে বিরক্ত হয়ে বেশ কড়া গলায় ডাক শুরু করল। একটা মানুষের ঘুম এত গভীর কী করে হয়! গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেও মেয়েটার ঘুম ভাঙাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে! শেষে বিরক্ত হয়ে ধৈর্য ধরতে না পেরে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত হৈমীকে একটানে বসিয়ে দিল। মুখ দিয়ে অল্প শব্দ করে ঢুলুঢুলু চোখে তাকাল হৈমী। রুদ্র একহাতে ওর কাঁধ ধরে বসল। বলল,
-” আমরা পৌঁছেছি অনেকক্ষণ। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। ”
কর্ণে স্পষ্ট গুলো শব্দ ঢুকতেই ঘুম ছেড়ে গেল। চোখ বড়ো বড়ো করে প্রথমে সদ্য গোসল করে আসা রুদ্রকে দেখে স্থির হলো দৃষ্টিজোড়া। দীর্ঘ আকৃতির সুঠাম দেহখানা দেখে এক ঢোক চিপল। উন্মুক্ত বক্ষে দৃষ্টি পড়লে নিমিষেই লজ্জায় দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। মনে মনে রুদ্রকে নির্লজ্জ বলে গালি দিল৷ এরপর পূর্ণ দৃষ্টিতে পুরো রুমটা নিরীক্ষণ করল। ধবধবে সাদা দেয়াল, সাদা টাইলস, বিশাল বিছানা, ডানপাশে কাউচ, বামপাশে কাভার্ড, ছোট্ট একটি টেবিল বেলকনির দরজা, দু’টো জানালা, সবমিলিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। সাদা সাদাতে আলোকচ্ছটা চোখে বিঁধল খুব। রুদ্র তার চাহনি খেয়াল করে বলল,
-” এসব দেখার অনেক সময় পাবে। যাও গিয়ে শাওয়ার নাও এবার। ”
পায়ের কাছে কম্বলটা টেনে গায়ে জড়িয়ে সে বলল,
-” ওমা কী বলছেন! এই শীতে রাত করে শাওয়ার নিব কেন? ”
-” বাইরের ধুলাবালি মাখিয়ে বিছানা নষ্ট করেছ। বেডশিট পাল্টাতে হবে। পরিষ্কার বেডশিটে ময়লা শরীরে থাকতে দিব না! ”
সর্বনাশ! এই লোক বলে কী? তাহলে সে কোথায় থাকবে? বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল সে। রুদ্র আবারো বলল,
-” সময় নষ্ট করো না গরম পানি আছে গোসল করে নাও। ”
হৈমী ঠোঁট উল্টে কিছুক্ষণ বসে থেকে হঠাৎ বলল,
-” কিন্তু আমি কী পড়ব! আমার জামাকাপড়… ”
সহসা চৈতন্য ফিরল রুদ্রর। সত্যি তো এতকিছুর মাঝে এদিকটা তো খেয়ালই করা হয়নি! চিন্তান্বিত হয়ে ওঠে দাঁড়াল সে। বিব্রত মুখে কয়েকবার তাকাল ঘড়ির দিকে। রাত অনেক হয়েছে এ সময় শপিংমল গুলোও খোলা নয়। তার চিন্তান্বিত গম্ভীর মুখ দেখে হৈমী বলল,
-” আজ থাক কালকে না হয় জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করে লম্বা গোসল দিব। ”
ভ্রু কুঁচকে তাকাল রুদ্র। হৈমীর ঠোঁটে ভর করল দুষ্টু হাসি। রুদ্র সে হাসি দেখে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
-” অপরিচ্ছন্ন মানুষ আমি পছন্দ করি না। ”
বলতে বলতেই কাভার্ডের সামনে গিয়ে কপাট খুলে টিশার্ট ঘাটতে লাগল। বেশ সময় নিয়ে খুঁজে খুঁজে হলুদ রঙের একটি লম্বা হাতা টিশার্ট, সাদা রঙের ট্রাউজার বের করল। টের পেল ঐ দেড় ফিট শরীরে এসব ফিটিং হবে না৷ তবুও রাত আর সকাল টুকু এগুলো দিয়েই পার করতে হবে। হৈমীকে ওগুলো দেয়ার পর সে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
-” আপনি আর কত নিষ্ঠুর হবেন? এই রাতে এভাবে আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন? ”
-” শাস্তি! সেটা তো শুরুই হয়নি। ”
থতমত খেয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে টিশার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে বাথরুমে চলে গেল হৈমী। রুদ্র বাঁকা হেসে বেডশিট পাল্টালো। গোসল শেষ করে ঢোলা পোশাকগুলো পড়ে, ভেজা চুলে কাঁপতে কাঁপতে বের হলো হৈমী। রুদ্র ফোন থেকে দৃষ্টি ওঠিয়ে একবার দেখল ওকে। বেছে বেছে সবচেয়ে ছোটো টিশার্ট বের করেছিল সে, যেটা তার কোমরের ওপর থাকে, অথচ হৈমীর কোমর ছেড়ে হাঁটুর একটু উপর পর্যন্ত হয়েছে। তা দেখে রুদ্র হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। হৈমীর মুখটাও দেখার মতো হয়ে আছে। একদিকে টি-শার্টের লম্বা হাতা টেনে হাত বের করতে বেগ পেতে হচ্ছে। অপরদিকে ইয়া লম্বা ট্রাউজার পরে পা বের করতে মুশকিল হচ্ছে। খুব কষ্টে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছিল সে৷ রুদ একটি কাজে ঘরের বাইরে যেতে উদ্যত হয়েছে। এমন সময় হৈমীর মৃদু আর্তনাদ ‘না’! শুনতে পেল। চমকে ওঠে ঘুরে দাঁড়িয়ে যা দেখল এতে তার ছোটোখাটো এট্যাক হলো।
হৈমীর পরিহিত সাদা ট্রাউজার খুলে নিচে পড়ে গেছে। হাঁটু থেকে গোড়ালি অবধি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হাঁটুর একটু উপরে ধবধবে ঊরুর একটু অংশও দৃশ্যমান। হতভম্ব, আতঙ্কিত হৈমী লজ্জিত হয়ে কী করবে বুঝে ওঠতে না পেরে লম্বা টিশার্ট নিচের দিকে টেনে হাঁটু মুড়িয়ে বসে পড়ল। কাঁদো কাঁদো মুখে একবার তাকাল রুদ্রর দিকে আবার তাকাল নিজের করুণ অবস্থার দিকে। এহেন দৃশ্য দেখে আকস্মাৎ রুদ্রর যেন কী হয়ে গেল। সে বাম হাত বুকে ভাঁজ করে ডানহাতে চোখজোড়া চেপে ধরে উচ্চশব্দে হেসে ওঠল। ক্রমেই তার হাসির মাত্রা এতটা বেড়ে গেল যে হাসির শব্দেই হৈমীর হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেল রুদ্রর। বুঝবান হবার পর থেকে এভাবে কোনোদিন হাসেনি সে। এ প্রথম নিজের এমন হাসি পাওয়া দেখে নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেল। অনেক সময় পর তার হাসি থামল। বেচারি হৈমী তীব্র লজ্জায় ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতে আরম্ভ করেছে। মনে মনে হাজারবার রুদ্র সম্পর্কে মন্তব্য করেছে,
-” লোকটা কত খারাপ, কত নির্দয়! ”
চলবে…