বেসামাল প্রেম পর্ব ১১

0
2624

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১১
রুদ্রর সঙ্গে কথোপকথন শেষে বিদায় নিল মাহের৷ রুমের বাইরে এসেই মুখোমুখি হলো সূচনার৷ সূচনার থমকে যাওয়া দৃষ্টি দেখে কিঞ্চিৎ বিচলিত হলো সে। কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই বাঁধ সেধে অবিশ্বাস্য, অভিমানী কণ্ঠে সূচনা বলল,
-” আপনি আমার ভাইয়াকে বখাটে বললেন!”

হকচকিয়ে গেল মাহের। দৃঢ় দৃষ্টিতে সূচনার মুখশ্রীতে কয়েক পল তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। দু’হাত বাড়িয়ে সূচনার কাঁধের দুপাশে স্পর্শ করে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বলল,
-” সত্যি যত তিক্ত এবং কঠিনই হোক আমি তা মেনে নিতে পারি, স্বীকার করতেও জানি, আবার চোখে আঙুল দিয়ে মানুষকে দেখিয়ে দিতেও কুণ্ঠা বোধ করি না।”

অপমানে মাথা নিচু হয়ে গেল সূচনার। কাঁধ থেকে ডানহাত সরিয়ে আলতো করে সূচনার চিবুক স্পর্শ করল মাহের। বলল,
-” চোখ তুলুন সূচনা। ”

নত মস্তক নতই রইল সূচনার। মাহের দৃঢ় স্বরে বলল,
-” আপনি যথেষ্ট ম্যাচিওর সূচনা, এসব ছেলেমানুষী আপনাকে মানায় না। অযথা ভুল বুঝে কষ্ট পাবেন না। খাবার রেডি করবেন বললেন? চলুন নয়তো দেরি হয়ে যাবে আমার। ”
__
টানা সাতদিন বাইরে বেরুতে দেয়া হলো না রুদ্রকে। বোনের অভিমানী কড়া নিষেধ তাকে মানতেই হলো। সাত পেরিয়ে আটদিনের মাথায় রুদ্র বাড়ি থেকে বের হলো৷ এর মধ্যে মাহের দুদিন এসেছিল সূচনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সূচনা রাজি হয়নি। কখনো রাত বিরেতে হুটহাট মাহের যখন তাকে ম্যাসেজ করতো,
-” আপনাকে মিস করছি সূচনা। বিছানার বা’পাশটা ফাঁকা রয়েছে। দেখতে ভালো লাগছে না। ”

উত্তরে সূচনা দিতো,
-” তাও ভালো বিছানার বা’পাশে ফাঁকা, বুকের বা’পাশে নয়! ”

উত্তর দেয়ার মতো কিছু খুঁজে না পেয়ে কিছুই বলতো না মাহের। কখনো যদি ম্যাসেজ দিতো,
-” কবে আসবেন? মা আপনার কথা বলে। ”

সূচনা উত্তর দিতো,
-” আমার বখাটে ভাইয়ের জন্য আপনার মায়া না থাকলেও আমার আছে। তাই তার পরিপূর্ণ সুস্থতা দেখে তবেই যাব। ”
____
হৈমীর পা ঠিকঠাক হতে সাতদিন লেগে গেল। এরপর বাড়ি ফিরল সে। ফেরার পর মায়ের মুখে রুদ্রর অবস্থা জানতে পেরে ভীষণ মায়া হলো। আবার তার করা আচরণবিধি স্মরণ হতেই বুকের ভিতরের মায়াগুলো উড়ে গিয়ে ভয় জেঁকে বসল। ভাবতে চাইল না আর রুদ্র নামক তুমুল ঝড়টির কথা৷ তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও অন্তঃকোণে চেপে রইল। কারণ হিসেবে দাঁড় করাল কিছু কথা। যেমন,
-” গুন্ডাটা তো আর ডিস্টার্ব করেনি, হতে পারে সে এক্সিডেন্ট করে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। ভুলে টুলে গেছে আমাকে। আবার হতে পারে এক্সিডেন্ট করে হেব্বি একটা শিক্ষা হয়েছে। তাই নিজে নিজেই শুধরে গেছে। আগ বাড়িয়ে আর ঝামেলা টামেলার প্রয়োজন নেই। আমার দয়ার শরীর দয়া করেই ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দিলাম হুহ! ”

জীবন চলতে শুরু করল জীবনের গতিতেই। এরই মধ্যে রুদ্র একদিন সূচনাকে জানালো, সে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা যাবে। নিজের শহর, টাঙ্গাইল শহরের পরিচিত হাওয়াতে শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। এবার তার হাওয়া বদল প্রয়োজন। সূচনা চিন্তিত হয়ে পড়ল। সেদিন মাহেরের বলা কথাগুলোতে বেশ পরিবর্তন ঘটেছে রুদ্রর। কিন্তু এই পরিবর্তন স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক বুঝতে পারছে না সূচনা৷ তাই তার চিন্তাটা গভীর হলো। বিচলিত হয়ে বলল,
-” রাদিফ ভাইয়াদের ওখানে যাবে? ”

রাশভারী কণ্ঠে রুদ্র বলল,
-” সিয়র না বাট ইচ্ছে হলে যেতেও পারি। চল বিকেলে ও বাড়িতে দিয়ে আসি তোকে। আর সময় পাবো না। ”

সূচনা সম্মতি দেয়। বিকেলবেলা ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসে শশুর বাড়িতে। তার শাশুড়ি হামিদা ভীষণ খুশি হয়। রুদ্রকে আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ড্রয়িংরুমে সোফায় স্বভাবসুলভ গম্ভীর হয়ে বসে রুদ্র। সূচনা রুমে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে ভাইয়ের জন্য সরবত নিয়ে এলো৷ রুদ্র সরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে হামিদা বেগমের বলা কথাগুলো শুনে হু হা করছিল। এমন সময় ঝড়ের গতিতে বাইরে থেকে ড্রয়িংরুমে এসে আকস্মাৎ থমকে গেল হৈমী। কয়েক পল গোল গোল চোখ করে রুদ্রকে দেখে নিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলল,
-” ওমা এটা কে? বেয়াইয়ের মতো লাগছে না? ”

হ্যাঁ রুদ্রর মতোই তো লাগছে কিন্তু রুদ্র নয়৷ তার তো এমন ফ্রেশ মুখ, ফ্রেশ মাথা নয়! কপালে ভাঁজ ফেলে
বিস্মিত চোখে সূচনার দিকে তাকাল সে। উত্তেজিত হয়ে বলল,
-” আরেহ ভাবি তুমি এসে গেছ! এটাও তোমার ভাই? আরেহ তোমার আরেকটা ভাই আছে? কিন্তু এত্তো মিল কেন? জমজ টমজ নাকি! ”

হামিদা ওঠে এসে মেয়েকে কড়া চোখে শাসন করলেন। সূচনা কিঞ্চিৎ ভীতু হয়ে রুদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র স্থির বসে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে চঞ্চলিত হৈমীর পানে। হৈমী শান্ত, স্থির রুদ্রকে ড্যাবড্যাব করে দেখে নিয়ে হঠাৎ চিন্তিত হয়ে বলল,
-” তুমি তো বলেছিলে তোমরা দুভাই বোন। জেরিন আন্টিও তাই বলেছিল তাহলে উনি কোথা থেকে আসলো! এই যাহ মুভির মতো কাহিনী টাহিনী আছে নাকি? ঐ যে দু’টো জমজ বাচ্চা হলে একটাকে চুরি করা হয়৷ বহুবছর পর আবার চুরি হয়ে যাওয়া ছেলের খোঁজ পাওয়া যায়। ইস সিনেম্যাটিক কাণ্ড ঘটে গেল নাকি! ”

হামিদা এবার ধমক দিলেন। সূচনা বিরক্ত হয়ে বলল,
-” তোমার মাথা মনে হয় পুরোটাই খারাপ হয়ে গেছে হৈমী। কী আবল তাবল বলছো? ”

মাকে পাশ কাটিয়ে রুদ্রর সামনে এসে দু-হাত কোমরে রেখে পিটপিট করে তাকিয়ে হৈমী বলল,
-” দেখতে একদম সেম পার্থক্য এটাই উনার দয়াল বাবাদের মতো চুল, দাঁড়িতে তো ছোটোখাটো বেনি হয়েই যাবে মনে হয়! ”

রুদ্র শান্ত চোখে তাকিয়েই রইল৷ তার অমন গভীর চোখদুটোতে কিছু একটা ছিল যা হৈমীর মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করল। চুপসে গেল সে। ধীরেধীরে পিছিয়ে গিয়ে মা, ভাবির দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আচ্ছা উনাকে কে মেরেছে থুতনিতে আর মাথায় কীসের ব্যান্ডেজ? উনি কি কথা বলতে পারে না। ”

-” কী সব বলছো রুদ্র ভাইয়াকে তুমি চেনো না। অদ্ভুত! ”

সূচনার কথা শুনে হামিদা কঠোর স্বরে বলল,
-” হৈমী রুমে যা, রুমে যা বলছি। ”

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। হৈমী ঘাড় ফিরিয়ে তাকে ওঠতে দেখেই বারকয়েক ঢোক গিলে তড়াক করে চলে গেল নিজের রুমে। বিরবির করে বলল,
-” খাইছেড়ে সর্বনাশ ! ”

হৈমীর সঙ্গে সর্বনাশের মতো একটি ঘটনাও ঘটল না। মাহেরের সঙ্গে দেখা করে চলে গেল রুদ্র। হৈমীর চোখে ভাসিয়ে দিয়ে গেল পরিচিত মানুষ অপরিচিত রূপ। দ্বিতীয় রূপ। কিন্তু সে কী জানে? মানুষ বড়ো বিচিত্র। তার থেকেও বেশি বিচিত্র রুদ্র নামক এই শক্তিশালী পুরুষটি। একই মানুষের দু’টো রূপ তাকে যতটুকু দিয়েছে তার থেকে অধিক কিছু দেবে দুই রূপের এই এক মানুষের তৃতীয় রূপটি। সামলাতে পারবে তো ছোট্ট মেয়েটা? সহ্য করতে পারবে তো অপ্রত্যাশিত কিছু অনুভূতিদের? একজন পুরুষের জীবনে আসা নতুন অধ্যায় পাল্টে দেবে না তো তার ভবিতব্য?
___
ক্লান্ত বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ অপরিচিত এক ব্যক্তি পেছন থেকে জিজ্ঞেস করল,
-” আপনি মাহের, সূচনার হাজব্যান্ড?”

বাইক স্টার্ট দিতে গিয়েও থেমে গেল মাহের। পেছন ঘুরে শ্যাম বর্ণীয় হ্যাংলা, পাতলা লম্বাটে ছেলেটিকে দেখে সাবলীল ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,
-” ইয়েস, কে বলছেন? ”

ছেলেটা হাত বাড়িয়ে দিল। বাইক থেকে নেমে মাহেরও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করল। ছেলেটা বলল,
-” আমি লিমন। সূচনার এক্স! ”

সহসা চমকে ওঠল মাহের৷ নিজেকে ধাতস্থ করে নিল মুহূর্তেই। এক্স শব্দটা শুনতেই কান গরম হয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠল৷ বলল,
-” সো? ”

-” আপনার সঙ্গে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। একটা ছেলে হিসেবে আমি মনে করি এসব আপনাকে জানানো উচিৎ। কীভাবে আপনাকে ঠকানো হয়েছে, বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে এর পুরোটাই আপনার জানা উচিৎ। ”

তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে গেল মাহের৷ আশপাশে তাকিয়ে লোকজনকে দেখে নিল। বলল,
-” সরি? ”

-” এখানেই বলব নাকি আড়ালে কোথাও বসবেন? আপনি সম্মানিত মানুষ রাস্তাঘাটে এসব আলোচনা করা ঠিক না। বলা তো যায় না কী থেকে, কার মাধ্যমে কী রটে কী ঘটে যাবে। ”

গম্ভীর স্বরে মাহের বলল,
-” আপনি আমার সঙ্গে আসুন। ”

চলবে…
(অনুমতি ছাড়া কপি নিষেধ)
বিঃদ্রঃ ১- এই গল্পের মূল চরিত্র চারটি মাহের, সূচনা, রুদ্র, হৈমী। তাই চারজনকে নিয়েই সমানতালে গল্প চলবে।
বিঃদ্রঃ ২- গল্প নিয়ে এত ম্যাসেজ পেয়ে হাঁপিয়ে গেছি। আজ একটা ফিক্সড টাইম বলে দিই। নির্দিষ্ট সময়ে গল্প আসবে তাই কেউ আর গল্প নিয়ে ইনবক্সে নক দেবেন না। সপ্তাহে তিন দিন গল্প দেব। সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা এনি টাইম ডেট দিয়ে দেবে। অথচ আমার কিছুই পড়া হয়নি। এবার কিছুটা সময় পড়াশোনাতে দেব ইনশাআল্লাহ। নয়তো লেখালেখি বন্ধ করে দেবে ফ্যামিলি থেকে!!! আশা করি প্রিয় পাঠকরা আমার সমস্যা বুঝবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here