বেমানান!
পর্ব ৭) গোপনে তোমারে সখা কত ভালোবাসি!
অষ্টমীর রাত…..
সন্ধি পুজোর আরতির শেষে ঈশানি ঘরে ঢুকতেই মিসেস দত্ত ঈশানি কে জানালো কৌশানি অনেকক্ষণ থেকে খুঁজছে ঈশানিকে……
ইদানিং বছর দুয়েক হলো সন্ধ্যে বেলায় সন্ধি পুজোর লগ্ন পরে! একদিকে ভালোই হয় তাতে ঈশানির, মাঝরাত অবধি উপোষ করে থাকতে হয়না আর ঈশানিকে….
ঈশানীরা উত্তর কোলকাতার একটা কমপ্লেক্সের বাসিন্দা,,,,,,
মধ্যবিত্ত্ব গোছের কমপ্লেক্স হলেও শেষ পনেরো বছর থেকে দূর্গা পুজো হয় ওদের কমপ্লেক্সে,,,তাই ঈশানীরা কমপ্লেক্সের মধ্যেই থাকে পুরো পুজোটা,
কৌশানি যদিও জোর করে সবাই কে নিয়ে একদিন বেড়োয় নবমীর বিকেলে!
*****************************************************
মিসেস দত্তর কথা শুনে ঈশানি আবার সদর দরজাটার দিকে এগোলো, দরজাটা খুলতেই দেখলো লিফ্ট থেকে বেড়োচ্ছে কৌশানি!
“দিভাই!! কোথায় ছিলিস? আয় আমার সাথে” বলেই ঈশানির হাতটা ধরে হনহন করে টানতে টানতে নিয়ে গেলো ওদের ঘরে,,,,
ঈশানি ও কৌশানির ঘরটা ঈশানি চলে যাবার পর এখন শুধু কৌশানির ঘর……
শুধু এই পুজো পার্বনেই একসাথে থাকার সুযোগ পায় ওরা দুজন!
“কি হলো এভাবে টানতে টানতে নিয়ে এলি কেন?”
“কিছু খেয়েছিস? নাকি এখনো চলছে তোর সন্ধির উপোষ?”
“না সবাইকে ভোগটা বেড়ে একটু ওপরে এলাম, তারপর মা বললো,,,,,”
“সিরিয়াসলি দিভাই,,,,তুই পারিসও ,,,,,প্লিজ এবারে চোখ মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে নে,,,আমি জলদি সে, তোর ভোগটা ওপরে নিয়ে আসছি,,,,,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে কিন্তু! তুই জানিস তো আমি রেগে গেলে ……………” বলতে বলতে কৌশানি বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে!
ঈশানী জানে,,,,,কৌশানি আসতে আসতে রেডি হওয়া শুরু না করলে তার আর রক্ষে নেই!
চোখ মুখ ধুয়ে এসে ঈশানি দেখলো, কৌশানির হ্যান্ডলুমের শাড়িটা খাটের ওপর রাখা এক সাইডে, সঙ্গে ব্লাউজ, পেডিকোট ও একটা ছোট চিরকুট! চিরকুটে লেখা –
“এটা পরে নিশ!”
ঈশানি আর দেরিনা করে শাড়িটা পড়তে শুরু করলো…
মনেই মনেই ভাবতে শুরু করলো কৌশানি নিজের শাড়িটা ঈশানিকে কেন পড়তে বলে গিয়েছে!
“ওহ্হো! দিভাই প্লিজ,,,,অভাবে প্লিট করিসনা,,,,,,বোট নেকটা তো বোঝাই যাচ্ছেনা!”
বলেই কৌশানি ঈশানির সামনে পুরো প্লিটটা খুলে শাড়িটা ছেড়ে দিয়ে কাঁধের কাছে একটা সেফটি পিন লাগিয়ে দিলো নিমেষেই……
“দিভাই তাড়াতাড়ি এবারে এখানে বোস তো দেখি…….” বলেই কৌশানি মেকআপ লাগাতে শুরু করলো ঈশানির মুখে,,,,
“একটু চোখটা বন্ধ কর এবারে, লাইনার লাগাবো! ……হমম ঠিক আছে,,,,,নানা খুলিসনা চোখের পাতা,,,,,এবারে ঠোঁটটা খোল! লিপস্টিকটা লাগাবো….”
“কৌশানি তুই কি করছিস বলতো? এরম হঠাৎ আমাকে সাজাতে বসে গেলি কেন? আর কোথায় বেড়োবো আমরা?”
“উউউফ! দিভাই একটু চুপচাপ বসনা……দেখলি তো তোর এখনো খাওয়া হয়নি এদিকে লিপস্টিকটা লাগিয়ে ফেললাম! ধুর! আমার আর ভালো লাগেনা……”
বলেই ছুটে গেলো বাইরের ঘরের দিকে,,,তারপর একটা ছোট্ট বাটিতে একটু ভোগ নিয়ে এলো!
“নে-নে,,,,জলদি কর!
তাড়াতাড়ি শেষ কর দেখি!একদম অল্প এনেছি…..বাকিটা এসে খেয়ে নিশ! এখন প্লিজ তাড়াতাড়ি কর!”
সত্যি কৌশানি আর একদম পাল্টালোনা…….মনে মনেই ভাবলো ঈশানি! এরম দুমদাম মাথায় ভুত চাপে ওর! আবার সব জায়গাতে তে তার দিভাই কে নিয়ে যেতেই হবে! এসব ছোট থেকে চলে আসছে……
“দিভাই হাসছিস কেন? তাড়াতাড়ি শেষ কর না!”
ঈশানি মৃদু হেসে বললো – “সত্যি তুই আর পাল্টালিনা! আর তোর নাকি দুমাস পর বিয়ে! পুরো পাগল তুই!”
****************************************************
“ওহ! কৌশানি এবার তো বল আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“তোকে বললাম না চুলটা কানের পাশে ঢোকাবিনা! তুই আবার হাত কেন দিলি চুলে?”
ভ্রু কুঁচকে দাঁতটা কিড়মিড় করে বললো কৌশানি!
“সরি! সরি! আর কিছু করবোনা! আর একবার ঠিক করে দে!”
“হমমম গাড়িতে উঠে ঠিক করছি!”
মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ক্যাব এসে দাঁড়ালো ওদের কমপ্লেক্সের বাইরে,,,,,ঈশানি ক্যাবে উঠেই বুঝলো বাগবাজার অব্দি গাড়ি বুক করা!
“এখান থেকে এইটুকুর জন্যে, গাড়ি কেন বুক করলি?”
“একটু চুপচাপ বস না দিভাই” বলেই কৌশানি ঈশানির সামনের দিকের চুলটা ঠিক করতে শুরু করলো!”
ব্যাগ থেকে একটা অক্সিডাইস্ড কানের দুল বের করে বললো – “নে পরে নে!”
“আচ্ছা এবারে তো বল! প্লিজ”
এতক্ষণে কৌশানির মুখে হাসি দেখলো ঈশানি……কিন্তু তবুও কিছু বললোনা,,,,,শুধু বললো –
“আর মিনিট পাঁচেক চুপচাপ বস….একটা সারপ্রাইজ আছে!”
“কৌশানি! তুই কি রাজ্ কে ডেকেছিস? কৌশানি আমি তোদের মধ্যে গিয়ে কি করবো?…..”
“উউউফ! দিভাই,,,,একটু চুপচাপ বস না! আর প্লিজ তোর প্রেডিকশন স্কিলটা আমার সামনে Use করিসনা….”
***************************************************
ক্যাব রওনা হলো বাগবাজারের পথে,,,,
ক্যাব ছুটে চললো রাস্তার দু ধারের বড়ো বড়ো হার্ডিং পেরিয়ে! গোটা শহর তখন সেজে রয়েছে আলো রোশনাইতে! বিভিন্ন প্যান্ডেলের বিভিন্ন গান মিলেমিশে তৈরী করেছে অদ্ভুত এক ছন্দ! পুজো পুজো ছন্দ ……..
ক্যাব এসে দাঁড়ালো বাগবাজারে! ঈশানি তখনও বুঝে উঠতে পারছিলোনা কৌশানি এক্সাক্টলি কি করতে চাইছে?
ভাড়াটা মিটিয়ে ক্যাব থেকে বেরোতেই ঈশানি দেখলো স্নিগ্ধ দাঁড়িয়ে! স্নিগ্ধর মুখে মৃদু হাসির রেখা! ঠিক দেখেছে তো ঈশানি?
খানিকক্ষণের জন্যে হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে শুধু স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে রইলো ঈশানি,,,,,,,মন জুরে অদ্ভুত সেই ভালোলাগায় মেশানো ভয়ের ঝড় বয়ে গেল,,,,,চেয়েও কিছু বলতে পারলোনা!!
হৃদস্পন্দন বেড়ে দুগুণ, হাতটা কেমন যেন কাঁপছিলো ঈশানির……
“কিরে দিভাই? কেমন লাগলো সারপ্রাইস?” ফিসফিস করে বললো কৌশানি!
এতক্ষণে ঈশানি স্নিগ্ধর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে চেয়ে দেখলো কৌশানির দিকে,,,,,,,
“তুই কি ভাবে…..”
“কি ভাবে আবার?
তোর ফোনটা ওপরে রেখে নীচে চলে গেলি সন্ধি পুজোর অঞ্জলি দিতে,,,,এদিকে সমানে স্নিগ্ধ দার ফোন! একবার, দুবার নয় দিভাই,,,,,আটটা মিসড কল ছিল,,,,তাই পরের বারের রিংটাই আমি ফোনটা ধরি,,,, স্নিগ্ধ দা আমাকে বলে তোর সাথে দেখা করতে চায়,,,,আমি বললাম ঘন্টা দুই লাগবে হয়তো, বললো রাজি!
আর স্নিগ্ধ দা, আমরা কিন্তু পনেরো মিনিট আগেই পৌঁছে গিয়েছি……. সো……. আমার কিন্তু ট্রিট লাগবে!”
“আঃ! কৌশানি! আমি তোকে পরে খাওয়াবো!”
“কেন? আমি কি বেকার ছেলে নাকি?” স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বললো…..
“নাঃ স্যার! মানে!”
“আআবার ……….. ফর্মালিটি করছিস! বল কৌশানি কি খাবি?”
“আপাতত আইসক্রিমেই কাজ চালিয়ে নেবো! ”
“আচ্ছা কি আইসক্রিম ?”
“Anything! আইসক্রিম হলেই হলো! ওঃ! আচ্ছা স্নিগ্ধ দা দিদি কিন্তু বাদ!”
“কেন??”
বলে স্নিগ্ধ তাকালো ঈশানির দিকে!
“ও ঠিকই বলছে স্যার, আজ বাইরের কিছু খাবোনা!”
“কিন্তু আইসক্রিম তো নিরামিষ!”
“সরি! আসলে…..”
“ওকে ম্যাডাম! নো প্রব্লেম! আমি ফোর্স করবোনা! কৌশানি জাস্ট দু মিনিট…………………..”
**********************************************************
“কিরে দিভাই! কতদিন চলবে তোদের এই সাইলেন্ট লাভ!”
“উউফ কৌশানি! বিরক্ত করিসনা,,,,ঘুমোতে দে এখন! অনেক রাত হয়ে গিয়েছে! ”
“ওহ্হো! তাই নাকি! তাহলে বারবার ফোন চেক করছিস কেন? ঘুম পেলে ঘুমো………..
এরম ফোনটা নিয়ে খুটখুট করছিস কেন?”
“কোথায় ফোন চেক করেছি রে!” বলেই ফোনটা লক করে বালিশের পাশে রেখে দিলো ঈশানি…..
“ওহঃ প্লিজ দিভাই,,,,, এতো লুকোনোর কিছু নেই! শোন আমি আজকে যেটা বুঝলাম শুধু তোদের ব্যাপারটা অফিসিয়াল হয়নি এই যা,,,,নয়তো টানা পোনে দু ঘন্টা কেউ অপেক্ষা করেনা!
আর তারপর
তুই খেলিনা বলে আইসক্রিম টাও খেলনা! এতো ভিড়ের মধ্যেও অন্য কোনো মেয়েকে দেখছিলোনা! শুধু তোর দিকে বারবার তাকাচ্ছিলো…..উউফ! কি কেমিস্ট্রি……”
“বাজে বকিসনা একদম! ও তো বললো ওর বন্ধুরা ছিল,,, তাইতো ও ছিল!”
“বাহ! ও বললো আর তুই বিশ্বাস করলি!! যেন তুই কিছুই বুঝিসনা! ……
এই দিদি! শোন না তোদের কেমিস্ট্রি টা কিন্তু সেই….. জানিস,,,, Damn হ্যান্ডসম কিন্তু স্নিগ্ধ দা! জাস্ট হিরো লুক!”
“এতো ফালতু বকিস না….. তুই…..!” এবারে বেশ খানিকটা হাসি হাসি গলায় বললো ঈশানি!
“ওই দিভাই সত্যি বল!”
“কি?”
“তোর পছন্দ নয়!”
ঈশানি কোনো জবাব দিলোনা! হাতে ফোনটা নিয়ে আবার হোয়াটস্যাপ চেক করতে শুরু করলো,,,,ফোনের আলোয় কৌশানি দেখলো ঈশানির হাসি মুখটা!
“ওই দিদি! বললিনা কিন্তু তুই……”
“উউফ! বললাম তো তোকে সেরম ………” ঈশানি কথা শেষ করার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো,,,স্ক্রিনে স্নিগ্ধর নাম!
ঈশানির ফোনটা বাজতে দেখেই কৌশানি মুচকি হেসে বললো – “আমি এবারে ঘুমোই! আর কি সময় হবে কারুর! ”
ঈশানি ফোনটা রিসিভ করে মৃদু স্বরে বললো – “হমম হ্যালো…..”
“শোন না! জেগে আছিস তো? আর পাঁচ মিনিট অনলাইন থাক………জাস্ট পাঁচ মিনিট…….আমি অনলাইন আসছি!”
“আচ্ছা ওকে!”
ঘন্টা দুয়েকেরও বেশি কথা হলো ওদের সেদিন রাতে!
স্নিগ্ধ সেদিন ঈশানিকে শোনালো – স্নিগ্ধর ছেলেবেলার প্রথম দূর্গা পুজোর গল্প,,,,ভাই বোনদের সাথে মামার বাড়ি থাকতে যাওয়ার গল্প,,,,স্নিগ্ধর দুষ্টুমির গল্প,,,,,তারপর কথায় – কথায় শুরু হলো বন্ধুদের সাথে পুজো দেখতে যাওয়ার গল্প,,,,ইত্যাদি,,,,ইত্যাদি,,,কি ভাবে যে ঘন্টা দুয়েক কেটে গেলো ঈশানি টেরও পেলোনা!
গল্পের শেষে, ফোনটা লক করে চোখ দুটো বুঝলো ঈশানি,,, কালো পাঞ্জাবিতে স্নিগ্ধর মুখটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে!
বারবার মনে পড়ছিলো স্নিগ্ধর সেই মায়াভরা গলায় ঈশানকি বলা কথাটা – “হ্যাঁ রে ঈশানি! তোর খুব কষ্ট হলো না! সারাদিন উপোষ করে আবার আমার সাথে দেখা করতে এলি বলে! সরি রে! আমি বুঝিনি জানিস তোর এতোটা কষ্ট হবে!”
স্নিগ্ধর কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ঠিক যেন কোনো বাচ্চা কে কথাগুলো বলছে স্নিগ্ধ! ….
চোখ দুটো অজান্তেই জলে ভোরে এলো ঈশানির!
এতো সুখ কপালে সইবে তো!…….
…………………………………………….
ভাবতে ভাবতে ঈশানির চোখ দুটো বুজে এলো ঘুমে………………….,…………………..
(চলবে……)
বেমানান!
পর্ব – ৮) কথা ছিল সাথে তোর, বলা হলো শেষ না!
আরও মাস দুয়েক পরের কথা, ডিসেম্বরের শুরুর দিক!
ব্যাংক থেকে ফিরে কোনোরকমে জুতোটা বাইরে ছেড়ে, হাত পা না ধুয়েই ঈশানি ঘরের খাটে গিয়ে বসে পড়লো……
ডাইনিং এর একটা টিমটিমে আলো ছাড়া পুরো কোয়াটারের আর কোনো ঘরে আলো জ্বালালো না ঈশানি, ক্লান্ত বিদ্ধস্ত চোখে মুখে,, বাইরের জামা কাপড়েই বসে রইলো খাটে……
তারপর আসতে আসতে গা টা এলিয়ে দিলো খাটের ওপর! অনুভব করলো বুকটা যেন কেমন একটা চাপ ধরে আছে!
চাপা কান্নায় মুখ থেকে একটা শব্দও বেরোলোনা ঈশানির, তবু চোখ বেয়ে জল নেমে এলো অঝোরে!
অথচ দুদিন আগেও সবটা ঠিক ছিল ওদের মধ্যে!
গত পরশু রাতেও ঘন্টা খানেক কথা হয়েছিল দুজনের,,,
ঈশানির কেমন যেন বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, স্নিগ্ধ মুখে সোজাসোজি কিছুনা বললেও ভালোবাসে ঈশানি কে! সবকথা গুলো হয়তো স্নিগ্ধ গুছিয়ে বলতে পারেনি কখনো!
আবার কখনো কখনো মনে হয়েছিল কোথায় কিছু বলেনি? মাঝে মাঝেই তো বলে মিস করছিলাম তোকে! মিস করছিলাম মানে কি? সব ভালোবাসার প্রপোজ তো সমান হয়না! আবার মাস দুয়েক আগের সেই মেসেজ টা – “ঈশানি….তোকে কিছু বলতে চাই , আর পারছিনা….” যেটা নিমেষেই ডিলিট করে দিয়েছিলো, সেগুলো কি ভালোবাসার অভিপ্রকাশ ছিলোনা?
গত পরশু দিন রাতের ট্রেন ছিল স্নিগ্ধর, কলকাতায় যাওয়ার, স্নিগ্ধর কাকুর মেয়ের বিয়ে, স্নিগ্ধ দেড় জয়েন্ট ফ্যামিলি, কাজেই পুরোটাই ছিল স্নিগ্ধদের বাড়ির অনুষ্ঠান! ঈশানি তো বটেই, ব্যাংকের সব স্টাফ দেড় নিমন্ত্রণ ছিল স্নিগ্ধদের অনুষ্ঠানে!
গত পরশু রাত অব্দিও ঈশানি বুঝতে পারছিলোনা স্নিগ্ধদের বাড়ির অনুষ্ঠানে ঈশানির যাওয়া টা ঠিক হবে কিনা? কারণ অফিসের এক মাত্র মহিলা কর্মী মাধবী দেবী যাচ্ছিলেন না সেই অনুষ্ঠানে, এদিকে দিন দশেক পর আবার ঈশানির বোন কৌশানির বিয়ে,,,, তখন আবার ছুটি লাগবে দিন সাতেকের,,,,
কাজেই স্নিগ্ধর বাড়ির অনুষ্ঠানের শেষে যে, দিন দুয়েকের ছুটি নিয়ে সরাসরি নিজের বাড়ি গিয়ে দু-চার দিন ছুটি কাটাবে তারও উপায় ছিলোনা ঈশানির!
স্নিগ্ধ গত পরশু দিন বলেছিলো – “দেখ কি করবি, বুধবার রাতে এলে এখান থেকে সোজা বাড়ি চলে যাস,, মানে ওদের সাথে অত রাতে ট্রেনে আর মিদনাপুর ফিরতে হবেনা! ইন ফ্যাক্ট আমি ঠিক শান্তি পাবনা! শুনছিস রে?”
গত পরশু রাতের এই কথাটাই ওদের বলা শেষ কথা ছিল! তারপর থেকেই স্নিগ্ধর একটা ফোন ও আসেনি এখনো পর্যন্ত!
******************************************************
গতকাল ব্যাংকে গিয়ে ঈশানি দেখলো বাকিরা মত্ত স্নিগ্ধর বাড়ির অনুষ্ঠানে যাবে বলে, সুদীপ্ত বাবু পান চিবোতে চিবোতে ঈশানি কে জিজ্ঞেস করলো – ” কি রে শুনলাম তুই যাচ্ছিস না কাল, কি ব্যাপার? তুই না গেলে স্নিগ্ধর কত মন খারাপ হবে বলতো!” বলেই ওরা হো-হো হাসতে শুরু করলো!
প্রতিবারের মতন চুপচাপ বসে রইলো ঈশানি!
ইদানিং ওদের টন্ট টা অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো ঈশানির, আজ কথাটা শুনে সেরম খারাপ লাগলোনা তাই আর,,,,
তবে একটু মনটা খারাপ ছিল এমনিই, যদিও কারণ টা ছিল অন্য!
ঈশানির গল্পের ম্যাজিকম্যান যে ছুটিতে ছিল বেশ কিছুদিন ,,,,,সকালের মর্নিং ওয়াক টাও তাই সারতে হয়েছিল একাই ,,,,,
ম্যাজিকম্যান মানুষ টা সত্যি নিমেষে ম্যাজিক করে মুছে ফেলে ঈশানির সব কষ্ট, দুঃখ! আর সেই মানুষটার সাথে একটাবারও কথা হয়নি সকাল থেকে ,,,,এতক্ষণে তো নিশ্চই পৌঁছে গিয়েছে ঘরে! তবে পৌঁছে ফোন করলোনা যে এবার!
“তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ঈশানি? কিছু মনে করবিনা তো!” মাধবী দেবীর ডাকে ঈশানি বেরিয়ে এলো চিন্তার জগৎ টা থেকে,,,,,মৃদু হেসে বললো –
“বলোনা কি বলবে? ”
স্নিগ্ধর পর মাধবী দেবীই তো ছিল এই ব্যাংকে যে ঈশানির একটু হলেও খেয়াল রাখতো! যদিও স্নিগ্ধর বারণের জন্যেই আর সেরকম ব্যক্তিগত কথা ইদানিং ঈশানি বলতো না মাধবী দেবীকে …
মাধবী দেবী গলাটা বেশ নীচু করে প্রশ্ন করে ঈশানি কে – “বাড়ি থেকে আর ছেলে দেখছেনা তোর?”
ঈশানি একটু …..না…. মানে….. কিন্তুর… পর বলে – “আপাতত নয়, কিন্তু এই বছরের শেষে……”
“এই বছরের শেষে কি! বিয়ে? পাত্র কই?”
ঈশানি কিছু উত্তর দেয়না, চুপচাপ ফাইল, খাতা পত্র গুলো বের করে আসতে আসতে গোছাতে থাকে টেবিলের ওপর…..
মাধবী দেবী গলাটা পরিষ্কার করে আবার বলা শুরু করে – “এই মেয়ে,,,, আমি তোর মায়ের মতন, তাই তোর ভালোর জন্যেই বলছি স্নিগ্ধ কে নিয়ে স্বপ্ন দেখিসনা!”
ঈশানির বুকের ভেতর টা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো! হাত-পা গুলো নিমেষেই যেন মনে হলো কেমন অসার হয়ে এলো!
ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো মাধবী দেবীর দিকে কিছুক্ষণ …..
খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো স্বপ্ন দেখবনা কেন?
তারপর নিজেকে একটু সামলে, একটা মিথ্যে হাসি দিয়ে নিমেষেই বললো –
“নাহ! মাধবী দি সেরম কিছু নয়!”
ঈশানি নিজেও বুঝলোনা কেন এরমটা মুখ দিয়ে বেরোলো ঈশানির……
“না হলেই ভালো! নয়তো কোথায় ডাক্তার শুভঙ্কর ব্যানার্জির পরিবার আর কোথায় আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার! ….
ওদের স্ট্যাটাসের সাথে কি আর আমাদের মেলে?”
ঈশানি হতবম্ব দৃষ্টি তে মাধবী দেবীর দিকে চেয়ে বললো –
“শুভঙ্কর ব্যানার্জি মানে? কার্ডিও শুভঙ্কর ব্যানার্জি, মিসেস শর্মিলা ব্যানার্জি? সেই শুভঙ্কর ব্যানার্জির কথা বলছো কি তুমি?”
“হ্যাঁ! কার্ডিও শুভঙ্কর ব্যানার্জি ও শর্মিলা ব্যানার্জি – ফেমাস কার্ডিওলজিস্ট! ওদেরই তো একমাত্র ছেলে স্নিগ্ধ ব্যানার্জি!
কেন তুই জানতিস না, স্নিগ্ধর সাথে তোর এতো কথা হয় তুই এটা জানতিস না?
স্নিগ্ধও তো মেডিক্যাল কলেজে এক বছর পড়েছিল, তারপর বোধহয় কিছু একটা শারীরিক অসুস্থতার কারণে আর পড়তে পারেনি, তারপর তো বোধহয় ফিজিক্সে মাস্টার্স করে এই চাকরিতে…..
তুই জানতিস না এটা?”
এক অদ্ভুত ঝড় বয়ে যায়,,,, ঈশানির মন জুড়ে! কিছুতেই হিসেব মেলাতে পারেনা! স্নিগ্ধ শুভঙ্কর ব্যানার্জির ছেলে! কই বলেনি তো কখনো!!
ঈশানি কিছু উত্তর দেয়না! ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে মাধবী দির দিকে ,,, মাধবী দি বলে চলে –
বড় বড় লোকের বড়ো বড়ো ব্যাপার! আইটিসি রয়েল বেঙ্গল না কি বেশ নাম বললো! কার্ডের ওপর লেখা ছিল, ঠিক মনে পড়ছেনা! ওখানেই তো ওর খুড়তোতো বোনের বিয়ে,,,,ফ্যামিলি তে সবাই ডাক্তার! দিদি জামাইবাবু তো লন্ডনে থাকে!
ওরাও দুজনেই শুনেছি ডাক্তার! তারপর আবার ব্রাহ্মণ! আমাদের সাথে কি আর মিল খায়? তাও যদি তুই খুব সুন্দরী হতিস তাও না হয় ……!” কথাটা শেষ না করেই হঠাৎ থেমে যায় মাধবী দেবী…..
ঈশানির বহু চেষ্টা সত্ত্বেও এক ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো চোখের কোল বেয়ে!
কোনোরকমে চোখের জলটা মুছে ফেলে, কম্পিউটারে একটু আগে ওপেন করা এক্সেল ফাইলটা খুলে এক মনে চেয়ে রইলো ঈশানি…. মাউসটা নিয়ে এদিক ওদিক নাড়াচাড়া করতে থাকলো কোনো কারণ ছাড়াই!
চোখের সামনেটা আবার ঝাপসা হয়ে এলো!
************************************************
মিনিট দশেকের মধ্যেই শুরু হলো ব্যাংকিং আওয়ার্স…..
হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও ঈশানির মনটা পরে রইলো ফোনের দিকে!
প্রাণটা কেমন যেন ছটফট করছিলো স্নিগ্ধর সাথে একটাবার কথা বলার জন্যে!
বেলা তখন তিনটে, তখনও অবধি স্নিগ্ধর ফোন এলোনা!
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো ঈশানির! মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলো অনেক কিছু!
মাধবী দি হঠাৎ আজই কেন এতো গুলো কথা বললো ঈশানি কে!
আবার আজকেই স্নিগ্ধ ফোন করলোনা একটাও! হিসেব মতন তো ভোর বেলায় ফোন করার কথা ছিল! সবটাই প্ল্যান? কি প্ল্যান?
নিজের মনটা কে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে অনেক শান্ত করার চেষ্টা করলো ঈশানি –
“বাড়িতে বিয়ে, হয়তো লোকজন আছে অনেক, তাই একটু দেরি হতেই পারে!”
তবু মাথা তর্ক করে চললো মনের সাথে –
“……তাই বলে বেলা তিনটের পরও ও ব্যস্ত! এতো কিসের ব্যস্ততা! নাকি আমি মানুষটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নই…..”
মনটা ভীষণ ছটফট করছিলো ঈশানির! মাধবী দেবীর চোখ এড়িয়ে কোনো রকমে ফোনটা ঈশানি নিয়ে এলো ওয়াশরুমে,,
সত্যি তো ঈশানীরও তো বন্ধুক্তের কিছু কর্তব্য আছে! মনে মনেই ভাবলো শেষ বার ঈশানি জন্মদিনে ফোন করেনি বলেই স্নিগ্ধর রাগ হয়েছিল! অন্য কিছুনা হোক, শুধু বন্ধু হিসেবে একটা ফোন করা যেতেই পারে! তারপর টেনশনও হচ্ছে ভীষণ! ছেলেটা ঠিকঠাক পৌঁছলো কিনা?
বুকের ভেতর টা কেমন ঢিপঢিপ করছিলো ঈশানির, তবুও স্নিগ্ধর নম্বরটা ডায়াল করলো ওয়াশরুমের বন্ধ দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে!
অটোমেটেড ভয়েস বারেবারে বলে গেলো এক কথা – “যে নম্বরটি তে আপনি যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন, সেটি এখন বন্ধ আছে, দয়া করে কিছু সময় বাদে আবার চেষ্টা করুন!”
Switched Off! পৌঁছে একটা ফোন করার প্রয়োজন বোধ করলোনা স্নিগ্ধ?
একবার, দুবার, আটবার, দশবার করতে করতে রাত দশটার ভেতরে নেই নেই করে উনচল্লিশ বার ডায়াল করে ফেললো স্নিগ্ধর নম্বরটা!
বারবার ওই একই অটোমেটেড ভয়েস সেই একেই কথা শুনিয়ে গেলো ঈশানি কে!
রাতভর জেগে রইলো ঈশানি! ফোন এলোনা, ফোন লাগলোনা,,, ভেতরে ভেতরে ভীষণ টেনশন হচ্ছিলো ঈশানির! স্নিগ্ধ ঠিক আছে তো?
মনের ভেতর আজে বাজে চিন্তা আসছিলো ঘুরে ফিরে! সারারাত ফোনেই নিউস চেক করতে থাকলো ঈশানির! সেরকম বাজে খবর তো কিছুনেই! কিন্তু স্নিগ্ধর কিছু হলোনা তো!
********************************************************
ভোর সাড়ে চারটে……
হোয়াটস্যাপে এখনো স্নিগ্ধর লাস্ট সীন দেখাচ্ছিলো দুদিন আগেকার তারিখ!
মনে মনেই ভগবানের কাছে কাতর প্রার্থনা করতে থাকে ঈশানি! মনে মনে বলে চলে – “ভগবান কিচ্ছু চায়না,, ওকে ভালোবাসতে হবেনা আমাকে,,, শুধু একটা খোঁজ দাও! শুধু যেনতেন প্রকারে একবার একটা খোঁজ দাও যে ও ভালো আছে! ব্যাস!”
এসব ভাবতে ভাবতেই অবচেতন মনেই ঈশানির আঙ্গুলটা পরে যাই ফেসবুক আইকনে…
,,, আর ফেসবুক খুলতেই একটা বড়ো গ্রূপের সাথে স্নিগ্ধর একটা হাসি মুখের ছবি!
“যাক! বাবা,,, এই তো ও ঠিক আছে! ও….ভালো আছে!”
মনটা এক মিনিটের জন্যে শান্ত হলেও পরক্ষণেই ঈশানির মাথাতে নাড়া দেয় প্রশ্ন – “সব ঠিক আছে তো স্নিগ্ধ ফোন করলোনা কেন এখনো! মাধবী দেবীই বা কালই এই সব কথা কেন বললো? স্নিগ্ধ বলেছে কিছু? কি বলেছে? আর স্নিগ্ধর ফোনটাই বা বন্ধ কেন?
ঈশানি আবার হাতে ফোনটা নিয়ে আরও একবার ডায়াল করলো স্নিগ্ধর নম্বর……সেই একই কথা বলে যাচ্ছিলো অটোমেটেড ভয়েস!
এখনো অফ? কিন্তু কেন?
******************************************************
আজ সকালে একটু আগেই পৌঁছলো ঈশানি ব্যাংকে!
অনেক ফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে বের করলো স্নিগ্ধর বাড়ির ল্যান্ড লাইন নম্বরটা! শুধু একটা বার স্নিগ্ধর সাথে কথা হলেই মনটা অনেকটা শান্ত হয়ে যেত ঈশানির…..
মনের ভেতরের ছটফটানি টা বেড়েই চলেছিল প্রতি ঘন্টার সাথে,,,,
কাঁপা কাঁপা হাতে ডায়াল করলো স্নিগ্ধর ল্যান্ডলাইন নম্বর……
রিং বেজে গেলো,,, কেউ ধরলোনা ফোনটা……!!
********************************************************
ঘড়িতে ঠিক ৫:০০….
মনটা কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলোনা ঈশানি!
বিকেলে আজ বাকিরা একটু আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলো স্নিগ্ধর বাড়ির অনুষ্ঠানে যাবে বলে! ঈশানির একবার মনে মনে ইচ্ছে হলে ওদের সাথে যেতে,,, কিন্তু কোনো রকমে নিজের মন কে বুঝিয়ে চুপচাপ বসে রইলো সিটেই………
আজ মাধবী দেবীও ও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়েছে অফিস থেকে!
তাই স্নিগ্ধ কে বারেবারে ফোন করতে কোনো বাঁধা রইলো না ঈশানির!
কাল সকাল থেকে আজ সন্ধ্যের মধ্যে মোটমাট প্রায় নব্বই বার ফোন করেও যোগাযোগ করতে পারলোনা ঈশানি!
এমনকি ল্যান্ডলাইনে নেই নেই করে পাঁচ বার ফোন করে ফেলেছিলো আজ সকাল থেকে….একটা শেষ চেষ্টা করবে?
একটা শেষ চেষ্টা করবে বলে ঈশানি আবারো ডায়াল করলো স্নিগ্ধর বাড়ির ল্যান্ডলাইন নম্বরটা,,,, দু চারটে রিং হতে না হতেই ঈশানি ওপাশ থেকে একটি মেয়ের গলা পেলো –
“হ্যালো…..”
এক মিনিটের জন্যে ঈশানি কিছুতেই বুঝতে পারলোনা কি বলবে এবার!
ফোনটা কেটে দিলো সাথে সাথে!
মিনিট দুয়েক পর মনে মনে একটা হিসেবে কোষে আবার ডায়াল করলো ল্যান্ডলাইন নম্বর টা, এবারে একটা রিঙের পরেই ঈশানি শুনলো একই ভদ্রমহিলার গলা –
“হ্যালো কে বলছেন?”
“স্নিগ্ধ স্যার কে একটু দেওয়া যাবে? আমি ঈশানি….”
“হ্যালো একটু জোরে বলুন,,,,,কাকে চায়?”
“স্নিগ্ধ স্যার আছে? ”
“কি দরকার স্নিগ্ধর সাথে?” বেশ কাটকাট গলায় প্রশ্ন করলেন ভদ্রমহিলা?
“ওই কিছু লোনের ব্যাপারে……”
“না! না! লোন লাগবে না এখন! আপনি রাখুন…”
“হ্যালো ম্যাডাম!……”
আর কোনো উত্তর এলোনা ফোনের ওপাশ থেকে,,,,শুধু ঈশানি শুনলো ভদ্রমহিলা খুব সম্ভবত তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে বললো –
“যত সব ফালতু ফোন! স্নিগ্ধ যে কেন এতো এন্টারটেইন করে এই ধরণের মেয়ে গুলোকে আমিতো বুঝিনা!…….”
“এই ধরণের মেয়ে” ও “মেয়ে গুলো” এই দুটো কথা শোনার পর ঈশানি আর বসে থাকতে পারলোনা নিজের সিটে,,,,ব্যাগ নিয়ে সোজা হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে!
সারাটা পথে একিই কথা ভেবে গেলো ঈশানি,, এই ধরণের মেয়ে মানে ঠিক কোন ধরণের মেয়ে!
নীচু স্টেটাস! আর ভদ্রমহিলা ওভাবে কেন কথা বললেন?
আর মেয়ে গুলোকে এন্টারটেইন করে মানে কি? কটা মেয়েকে এন্টারটেইন করেছে স্নিগ্ধ!
কোয়াটারে ঢোকার আগেই চম্পার মা কে ফোন করে বললো সেই রাতে না আসতে, বাড়িতে কোনো রকমে একটা ফোন করে কোয়াটারের ঘরের বাইরে জুতো খুলেই বসলো গিয়ে অন্ধকার ঘরের খাটে…..
আসতে আসতে শরীরটা খাটে এলিয়ে দিয়ে ভাবতে থাকলো শেষ দুদিনের কথা!
আর তারপর ফোনটা অফ করে চুপচাপ শুয়ে রইলো বিছানার ওপর চিৎ হয়ে! আজ জামা কাপড় ছাড়ার বা মুখ হাত ধোয়ার মতন ও শক্তি ছিলোনা ঈশানির!
নিজেকে দোষ দিতে থাকলো ঈশানি মনে মনেই!কি ভাবে আর কবে থেকে এই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো সে! স্নিগ্ধ তো বরাবরই একটা চাওয়া পাওয়ার হিসেব ছাড়া মনের এক কোণায় লুকিয়ে রাখা একটা ভালোলাগা মাত্র! তাহলে? অনাহূতের মতন কাল রাত থেকে কেন ডায়াল করে চলেছে স্নিগ্ধর নম্বর! ছি! একশো বার ডায়াল করেছে কাল থেকে আজ অবধি সেই নম্বর!
কত স্বপ্নই না দেখেছিলো ঈশানি শেষ কয়েক মাসে, এই বুঝি আজই স্নিগ্ধ বলবে সব মনের কথা!
অথচ সে – কি স্বার্থপর! এক নিমেষেই কেমন পর করে দিলো ঈশানিকে!
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আর স্নিগ্ধর সাথে এক মুহূর্ত নয়,,,,,,, শুয়ে শুয়েই ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে ব্লক করে দিলো স্নিগ্ধর হোয়াটস্যাপ, মোবাইল সব নম্বর! আর তারপর ফোনটা সুইচ অফ করে শুয়ে রইলো বিছানায়….
সত্যি তো স্নিগ্ধ আর ঈশানি সব দিক থেকেই বড্ডো বেমানান! স্টেটাস, লুক্স, কাস্ট,,,,,,,, কোনো দিক থেকেই ঈশানির সামর্থ ছিলোনা স্নিগ্ধর পাশে দাঁড়ানোর! আর স্নিগ্ধ বোধহয় এবার সবটা বুঝেই ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে!
বা – ওখানে হয়তো অন্য কোনো গার্ল ফ্রেন্ড আছে, হয়তো মাধবী দি সেটা জানে! তাইতো বললো কাল ও কথা!
হ্যাঁ না জানার কিছুই নেই! স্নিগ্ধর বাবা যে শুভঙ্কর ব্যানার্জী সে খবরও তো জানা ছিলোনা
ঈশানির, অথচ বাকিরা তো দিব্বি জানে সব, হয়তো একিই ভাবে স্নিগ্ধর গার্ল ফ্রেন্ডের কথাও জানে ওরা!
স্নিগ্ধ কে না বলা কথাগুলো মনে মনেই কবর দিয়ে ফেললো ঈশানি!
স্নিগ্ধ কেন, আর কেউ জানবেনা কখনো – যে ঈশানি প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলো স্নিগ্ধ কে – এতটা যতটা হয়তো আজ অবধি কেউ কাউকে বাসেনি!
আজ অংশুমানের কথাও একবার মনে পড়লো ঈশানির!
অংশুমানের সময় সবাই বলেছিলো ঈশানিকে যে অংশু ভালোবাসেনা তাকে !
শুধুই জড়িয়ে ছিল কিছু স্বার্থ! ঠিক যেমনটা সবাই বলেছিলো ঠিক তেমনটাই হয়েছিল কিছুদিন বাদে!
ছোটবেলার একটা লাইন মনে পরে গেলো ঈশানির – “History repeats itself!”
ভাবতে ভাবতে ঈশানির কখন যে চোখ দুটো বুঝে এলো সে নিজেও জানলোনা!
মাঝ রাতে ঘুমটা যখন একটু আলগা হয়ে এলো মাথাটা ভীষণ ভারী লাগছিলো ঈশানির যেন মাথায় একটা বড়ো বাটখারা বাঁধা! ভীষণ শীত শীত করছিলো ঈশানির, শরীরে জোর নেই যে কম্বলটা টেনে গায়ে বিছিয়ে নেবে নিজের, ভীষণ দুর্বল শরীরে সিঁটিয়ে পরে থাকলো কুঁকড়ে খাটের উপর! গলাটা শুকিয়ে এলো, তবু আসে পাশে জলের বোতল দেখতে পেলোনা ঈশানি আধ- খোলা চোখে অন্ধকার ঘরে!….
হঠাৎ খানিক বাদে ঘুমের ঘোরে মনে হলো যেন ঈশানির ম্যাজিকম্যান ঈশানির পাশেই বসে!
ঈশানির মনে হলো যেন কেউ খুব আলতো স্পর্শে আসতে আসতে গলায় জড়ানো ওড়নাটা খুলে ফেললো, আর তারপর কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলো ঈশানির কুঁকড়ে যাওয়া শরীরটা কে, মনে হলো যেন জলের সাথে মিশিয়ে কিছু একটা খাবার নামলো খাদ্য নালী বয়ে, তারপর আরও একটু জল! তেতো জল!
মনে হলো খুব যত্নে কেউ খুব একটা ঠান্ডা স্পর্শ করছিলো ঈশানির কপালে বারবার, মনে হচ্ছিলো যেন এক কুচি বরফ পড়লো ঈশানির চোখের পাতায়! ভীষণ ভারী লাগছিলো চোখের পাতাটা! ঈশানি তাকাতে পারলোনা চোখ খুলে!
ঘুমের ঘরেই ঈশানির মুখ থেকে বেরিয়ে এলো – “স্নো কুইন!”
তুষার রানী বা স্নো কুইন – রূপকথার এমন এক চরিত্র যে আঘাত করতো সহজ সরল মানুষদের বরফের কুচি দিয়ে, সেই বরফের কুচি চোখ দিয়ে প্রবেশ করে পৌঁছতো হৃদয়ে আর তারপর সেই বরফের কুচি সেই মানুষটির হৃদয় থেকে মুছে ফেলে দিতো সব ভালোলাগা, সব ভালোবাসা, শুধু রেখে যেত ঘৃণা ও বিকৃত চিন্তা ভাবনা!
(চলবে …..)