বেমানান,পর্ব:৩

0
674

বেমানান!
পর্ব ৩) “তুই অল্প হলেও আমার সঙ্গে চল!”
©মৌপর্ণা

মাস দশেক কেটে গিয়েছে এরই মধ্যে,,,,স্নিগ্ধ ও ঈশানির একটু আধটু বন্ধুক্তও তৈরি হয়েছে শেষ কয়েক মাসে…….

ঈশানি প্রথমদিন স্নিগ্ধ কে বলেছিলো তার সেরকম ভালো কোনো বন্ধু নেই ব্যাংকে…..স্নিগ্ধর কথাটা শুনে একটু খটকা লেগেছিলো,,,,,বন্ধু কেন নেই?
মানে পাশাপাশি দুটো মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি একসাথে বসে, তাও বনিবনা হয়না! কেন?

এখন অবশ্য ব্যাপারটা অনেকটাই পরিষ্কার,,,,,ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা অনেকটাই কম এখানে,,,,,,আবার ঈশানির বয়সটাও কম,,,,,,এতো অল্প বয়েসের একটা মেয়ে তাদের ডেসিগনেশনে কেমন সুন্দর গুছিয়ে কাজ করছে তালে তাল মিলিয়ে, আবার কখনো তাদের না মেলা হিসেব গুলোও মিলিয়ে দিচ্ছে খুব সহজেই! তাতেই ওদের এতো সমস্যা!
কিছু মানুষের এই চিন্তা ভাবনা গুলোর জন্যেই সমস্ত পুরুষজাতি কে দোষারোপ করা হয়!

অল্প বিস্তর সমস্যা ওদের স্নিগ্ধ কে নিয়েও হয়, কারণটা সেই একই, ওদের চেয়ে এতটা কম বয়েসী ছেলেটা ওদের বস! কিন্তু এই ‘বস’ বলেই বোধহয় ওদের মনের জমানো ক্ষোভ গুলো প্রকাশ পায়না মুখে!

*************************************************

সেদিন শুক্রবার, বেলা প্রায় চারটে,,,,বিজনেস আওয়ার্স শেষ হয়েছে খানিকক্ষণ হলো ,,,,,হঠাৎ স্নিগ্ধ নিজের বসার ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে হুড়হুড় করে নেমে এসে প্রশ্ন করে –
“মিস্টার সান্যাল এর ডেঙ্গু ডিটেক্ট হয়েছে,,,, প্লেটলেটস সংখ্যা অনেকটাই কম,,,,,,ব্লাড লাগবে,,,,,,,কে কে ব্লাড ডোনেট করতে পারবে?”

কথাটা শোনা মাত্রই ঈশানি বলে ওঠে –
“কোন ব্লাড গ্রুপ?”

“যে কোনো গ্রুপ! কারণ ব্লাড ব্যাংক বলছে ওদের কে মিনিমাম তিন ইউনিট ব্লাড ডোনেট করতে”

“ওকে …..আমি যাচ্ছি…….আরও তো দুজন লাগবে কারণ এক ইউনিটের বেশি ব্লাড ডোনেট করা হবেনা”

“বেশ চল তাহলে”

“এখন?”

“হমম এক্ষুণি.. ”

“আচ্ছা পাঁচ মিনিট দাও,,,,অলমোস্ট সব হয়েই গিয়েছে,,,,আমি একটু গুছিয়েনি,,,,,ততক্ষণ আরো কেউ যদি ডোনেট করতে চায়” – বলে ঈশানি চারপাশটা তে একবার দেখে নিলো! ঈশানি দেখলো বাকিরা মন দিয়ে কাজ করছে মাথা নীচু করে,,,,,যেন সব কাজ এক্ষুণি মনে পরে গিয়েছে,,,,কেউ কেউ আবার স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে এক্সপ্লেইন করতে শুরু করেছে সে কেন ব্লাড ডোনেট করতে পারবেনা!”

*************************************************

স্নিগ্ধ মিনিট দশেক হলো ব্যাংকের বাইরে দাঁড়িয়ে,,,,,মেয়েটা পাঁচ মিনিট বলে প্রায় পনেরো মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখেছে,,,,,,একটু বিরক্ত হয়ে ঘুরে তাকাতেই দেখলো তাড়াহুড়ো করে ঈশানি বেরোচ্ছে ব্যাংক থেকে,,,,

“কি রে কত দেরি করলি?” বলেই স্কুটারে চাবিটা ঢুকিয়ে হেলমেট টা মাথায় গলিয়ে নিলো স্নিগ্ধ…

“স্যার! স্কুটার টা কার?” বিস্মিত গলায় বললো ঈশানি!

“স্কুটারটা বিষ্ণু বাবুর,,,,,উনি বললেন স্কুটারটা নিয়ে যেতে,,,,,তাড়াতাড়ি হবে,,,,এমনিও ওনার বাড়িটা হাসপাতাল থেকে বেশ কাছে,,,তাই আমরা স্কুটারেই যাবো”

“আমরা মানে?”

“আমি আর তুই….”

“আপনার মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছে! আমি স্কুটারে উঠতে পারবোনা,,,আমার ভয় লাগে!”

“হ্যাঁ!! কি?” বলেই স্নিগ্ধ হাসতে শুরু করে…..
তারপর বেশ গুছিয়ে বলে – “ওরে পাগল,,,এটা বাইক নয়,,,,,স্কুটার,,,পরে গেলেও কিচ্ছু হবেনা”

“আমি রিক্সা, অটো যা পাবো,,ভেঙে ব্রেক করে চলে যাবো,,,,আপনি এগোন না!”

এবারে স্নিগ্ধ বেশ গম্ভীর গলায় বলে – “ঈশানি অনেক হয়েছে,,,,পাঁচ মিনিট বলে তুই প্রায় কুড়ি মিনিট নষ্ট করলি,,,এখন আবার বলছিস পার্ট করে যাবি,,,,,তোকে নিশ্চই আর্জেন্সিটা আমাকে বুঝিয়ে বলতে হবেনা!”

ঈশানি আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো স্কুটারের কাছে…..
স্নিগ্ধ স্কুটার স্টার্ট দিয়ে হেলমেট এর বেল্টটা লাগিয়ে ঈশানি কে ইশারা করলো উঠে বসতে!

“একি এক পাশে পা দিয়ে কেন বসছিস? দুটোপা দুদিকে দিয়ে বস…..”

“না,,,প্লিজ ওভাবে অসুবিধে হয়”

“তাহলে একটু আমার দিকে চেপে বস,,,,অতটা পিছিয়ে বসলে তো ব্যালেন্স রাখতে পারবিনা!”

“উউফ,,,,আমি পারবো বলছিতো আপনাকে,,,,চলুননা!”

গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে স্নিগ্ধ এগিয়ে চললো হাসপাতালের দিকে,,,,হঠাৎ একটা বেশ বড়ো বাঁক পেড়িয়েই, গাড়িটা কে সাইড করলো রাস্তার ধারে,,,,,তারপর জোরে একটা ব্রেক কোষে দিলো,,,,হেলমেটটা খুলে, ঈশানির দিকে ইশারা করে বললো – “নেমে পর! যে ভাবে খুশি সে ভাবে যা!”

“কি হলো?”

“একদম নেকামি করবিনা!”

“আমি ঠিকঠাকই বসেছি তো! ধরে নিয়েছি সিটের এপাশটা,,,,,,পড়িনি তো!”

“পড়িনি তো মানেটা কি? সিট গুলো ফোমের তৈরী ঈশানি,,,এখুনি একটা কেলেঙ্কারি ঘটে যেত,,,,অনেকক্ষণ থেকে বলছি তোকে…..” বেশ চিৎকার করে কথাগুলো বলে চললো স্নিগ্ধ…

“কিন্তু কিচ্ছু হয়নি তো!”

এবারে খানিকটা ঈশানির দিকে মাথাটা ঘুরিয়ে বেশ ঝাঝিয়ে স্নিগ্ধ বললো – “আর তুই পরে গেলে কি হতো??? আজ কিছু একটা হয়ে গেলে কি হতো! শোন বসতে হলে দুদিকে পা দিয়ে বস, নয়তো আমার দিকে একটু চেপে আমার কাঁধটা ধরে বস,,,,আর নয়তো নেমে যা,,,,,মাঝে একটা লোক ঢুকে যাবে,,,,,যতটা গ্যাপে বসেছিস,,,,আরে এতই প্রব্লেম ছিল যখন,,,,,”

স্নিগ্ধর কথাটা শেষ হবার আগেই ঈশানি বেশ খানিকটা চেপে বসলো স্নিগ্ধর দিকে,,,,,,

স্নিগ্ধ আর কথা না বাড়িয়ে স্কুটারে স্টার্ট দিলো আবার! হেলমেটটা পরে এবারে বেশ শান্ত গলায় বললো – ” পেছনের রড টা ধরে বস,,,,,দরকারে আমার কাঁধটা তে সাপোর্ট নিবি, বিশেষ করে টার্নিংয়ে ,,,,,দয়া করে প্লিজ সিট ধরবেননা ম্যাডাম!,,,,,,আপনার আবার ব্যালেন্সটা খুব ভাল-কিনা!”

স্কুটার এগিয়ে চললো হাসপাতালের দিকে আসতে আসতে…..
ঈশানি অনেকদিন বাদে কারো কাছে এরম বকা খেলো! তবুও ঈশানির মনটা বেশ ভালো লাগছে,,,,,সত্যি ঈশানির ভালো-মন্দ নিয়ে আজ অব্দি বাড়ির লোক ছাড়া আর কেউ কখনো বকা দিয়েছে! ইদানিং এরকম শাসন শুনে ভালোই লাগলো ঈশানির,,,,লুকিং গ্লাসের কাঁচে মাঝে মাঝে স্নিগ্ধর কাঁপা কাঁপা মুখটা দেখতে পাচ্ছিলো ঈশানী…….

হাসপাতালে যখন ওরা পৌঁছলো তখন প্রায় পাঁচটা,,,,কিছু ফর্মালিটির ডক্যুমেন্ট সাইন করে ওরা এগিয়ে গিয়ে পাশাপাশি বসলো গিয়ে একটা সোফাতে,,,ইতিমধ্যেই ওদের দেখা হয়েছে সান্যাল বাবুর পরিবারের লোকজন দেড় সাথে,,,ওদের মুখেই শুনলো এক ইউনিট ব্লাড জোগাড় হয়েছে ওরা এসে পৌঁছনোর আগেই,,,,তবে এখনো চায় দু ইউনিট …..

“স্যার! আপনি শুনলেন তো, এক ইউনিট পাওয়া গিয়েছে,,,,যাক তাহলে আল্টিমেটলি ম্যানেজ হয়ে গেলো কিন্তু!”

“কোথায় আর ম্যানেজ হলো?” ফেকাসে মুখে কথাটা বলেই পকেট থেকে ফোন টা বেরকরে ফেসবুকের পাতা স্ক্রোল ডাউন করতে শুরু করলো স্নিগ্ধ….

“মানে? ম্যানেজ হোলতো! আর দু ইউনিট ব্লাড লাগবে,,,এক ইউনিট আমি দেব আর এক
ইউনিট আপনি….”

“হমমম,,,সেটাই তো সব চেয়ে বড়ো সমস্যা!!”
ফোনটার পাশের বোতামটা টিপে ফোনটা লক করে ,, ফেকাসে মুখটা নিয়ে মাথা নীচু করে চুপচাপ বসে রইলো স্নিগ্ধ!

“কি সমস্যা? আমি কিন্তু বুঝলামনা”

“কি আবার! আমাকে সেই দিতেই হবে!”

“কি ব্লাড?”

“হ্যাঁ! ধুর! বাড়ির লোকেরা কি করছে! দুটো ডোনার জোগাড় করতে পারছেনা…..আমার ভয় করছে ভীষণ ….”

ঈশানি হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠলো, তারপর হাসি থামিয়ে বললো – “এতো ভয় লাগে তো এলেন কেন!”

“তো! কি করবো! এখন ডোনার পাওয়া যাচ্ছেনা!” একটু বিরক্ত গলায় বললো স্নিগ্ধ…

একজন নার্স এসে ওদের ভেতরে ঘরে ঢোকাতেই স্নিগ্ধর মুখটা আরো ফেকাসে হয়ে গেল…….

ওরা আবার পাশাপাশি বসে …..

“ম্যাডাম! এগিয়ে আসুন! প্লিজ এই চেয়ার টা তে এসে বসুন!”

ঈশানি চেয়ার ছেড়ে উঠতেই স্নিগ্ধ বলে উঠলো
“ঈশানি,,,রিলাক্স কিচ্ছু হবেনা ওকে? একদম একটু লাগবে!”

ঈশানি ভ্রু কুঁচকে বললো – “ভয় কেন লাগবে?আমি রেগুলার ডোনার!” বলেই ঈশানি হাসি হাসি মুখে গিয়ে বসে পড়লো নার্সটার সামনে!

“আমি কিন্তু রেগুলার ডোনার – নার্স দিদি!”

“ওঃ আচ্ছা! কিন্তু আমাদের তো কিছু নিয়ম কানুন….”

“হ্যাঁ হ্যাঁ! নিশ্চই,,,,”

এক মিনিটের মধ্যেই ওরা সিরিঞ্জে একটু খানিক ব্লাড তুলে পাঠিয়ে দিলো ভেতর ঘরে,,,,,ঈশানি কে আবার নিজের জায়গাতে গিয়ে বসতে বলে ডাকলো স্নিগ্ধ কে…..

স্নিগ্ধ এসে বসেছে নার্স দিদির সামনে, ঈশানী দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধর পাশে! ঈশানি বোধহয় স্নিগ্ধর মুখটা দেখেই আরও নিজের জায়গাতে গিয়ে বসতে পারলোনা তখনও……

“স্যার হাতটা শক্ত করুন…মুঠো করুন….ম্যাডাম আপনি ওখানে গিয়ে বসতে পারেন”

“হমম ওকে!”

“ঈশানি একটু দাঁড়া না!”

ঈশানি স্নিগ্ধর পাশে দাঁড়িয়ে কিছু একটা হিসেব না মেলা নিয়ে কথা বলতে থাকে……স্নিগ্ধই যতই বলে পরে শুনবো,,,,ঈশানি ততই বলে চলে! ঈশানির দিকে চেয়ে দেখতে দেখতে কখন যে ব্লাড কালেক্ট হয়ে যায়, স্নিগ্ধ বুঝতেও পারেনা!

“স্যার হয়ে গিয়েছে!”

“মানে স্যাম্পল কালেক্ট হয়ে গিয়েছে!”

এক মিনিট বাদে স্নিগ্ধ কেও বসতে বলে ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে ভেতরের ঘরে ঢুকে যায় বাকিরা…..

“সরি ঈশানি! কি বলছিলিস কি পেপারস? কিসের হিসেব মিলছেনা?”

“কোন হিসেবে! ধুর ও তো আমি এমনি বলছিলাম!! যাতে আপনি ভয় না পান!” বলেই ঈশানি আবার হাসতে শুরু করে!

স্নিগ্ধর মুখে এতক্ষণে হাসির রেখা ফুটে ওঠে……হাসি হাসি মুখে বলে “বুঝলাম! এই শোন না ওরা যখন আবার আসবে…..মানে পুরো ব্লাড কালেক্ট করবে,,,তখন অল্পক্ষণ হলেও থাকবি আমার সাথে!”

“হমম থাকবো তো!”

“অনেকক্ষণ লাগবে না এক ইউনিট নিতে?”

“না! না! একদম একটুখানি……”

এতক্ষণে হাসপাতালের স্টাফ এসে আবার দাঁড়ালো ওদের সামনের…..ওরা আসতেই ঈশানি বলে উঠলো –
“দাদা আগে উনি ডোনেট করবেন! আমি একটু থাকতে পারি ওনার সাথে? তারপর ওনার হয়ে গেলে আমি ডোনেট করবো…..”

“ওকে ম্যাডাম ভেতরে আসুন! স্যার আপনিও!”

*************************************************

হাসপাতাল থেকে ওরা যখন বেরোলো তখন আকাশটা লালচে হয়ে এসেছে,,,
পাখিরা দলবেঁধে ফিরছে আপন বাসাতে,,,,,, পাতাঝরার মরশুমের শেষে গাছে লাল হলুদ সবুজ কচি পাতা পড়ন্ত বিকেলে আরো ঝলমল করছিল ,,,,,কোনো এক দূরের ঘর থেকে ভেসে এলো শঙ্খধনি, বোধহয় সন্ধ্যে দিচ্ছে কেউ দূরের কোনো এক ঘরে,,,,

“কিরে কি ভাবছিস ঈশানি?”

“কই কিছুনা তো!”

“আচ্ছা শোন না, মিনিট পাঁচেক ওই চায়ের দোকানটা তে দাঁড়া,,,আমি স্কুটারটা বিষ্ণুদার বাড়ি ছেড়ে দিয়েই ফিরে আসছি! তারপর একসাথে ফিরবো….”

“কিন্তু স্যার, আমি তো আর ব্যাংক ফিরবোনা,,,মানে ব্যাগ পত্র নিয়েই বেরোলাম তো!সবটা গুছিয়েই এসেছি!”

“হ্যাঁ তো ঠিক আছে! অর্ধেক রাস্তা তো যেতেই পারিস,,,,,,,,মানে চৌমাথার মোড় থেকে তুই ডান দিক নিয়ে নিশ,,, অবশ্য যদি আমার সাথে যেতে আপত্তি না থাকে তবেই!” স্নিগ্ধর মুখে আবার সেই ছেলেমানুষির হাসি……
“কি রে কি ভাবছিস? চলনা…..অল্প রাস্তা হলেও চলনা আমার সাথে….”

“আচ্ছা! ওকে,,,,যাও এবারে,,,,দশ মিনিট কিন্তু এখানেই নষ্ট করে দিলে তুমি,,,,,” ঘন্টা দুয়েক আগে স্নিগ্ধর বলা একিই কথা স্নিগ্ধর মতোই করে বললো ঈশানি….

“আচ্ছা! তাই নাকি!!”

ঈশানির মুখে আবার হাসির রেখা – “হমম তো!”

“ফাইন ম্যাডাম! আমি চললাম, কোথাও যাবেননা! দশ মিনিটের জায়গা পনেরো মিনিট হলেওনা! এখানেই থাকবেন,,,,আর প্লিজ এখন চা খাবেননা! আমি এলে চা বিস্কিট খেয়ে একসাথে বেরোবো এখন থেকে! কেমন?”

স্নিগ্ধ চলে গিয়েছে মিনিট দুয়েক হলো!
ঈশানি একা এক বসে রইলো চায়ের দোকানের পাশের এক বেঞ্চিতে!
তবুও ঈশানির একা লাগছিলোনা একদম,,,,,অপেক্ষা করতে কখনো এতো ভালো লাগেনি এর আগে ঈশানির! কেউ কখনো এই ভাবে অপেক্ষা করতে বলেনিতো! ব্লাড ডোনেশনের সময় স্নিগ্ধ কে ছেলে ভোলানোর গল্প গুলোর কথা ভেবে নিজের মনে মনেই হাসছিলো ঈশানি!
আচ্ছা এরম “ম্যাডাম! ম্যাডাম! আপনি আপনি, সুরে স্নিগ্ধ কথা বলে কেন মাঝে মাঝে! এই সুরটা যেন কেমন একটা টিপিকাল হিরো হিরোইনের মনে হয় ঈশানির! কিন্তু স্নিগ্ধ দক্ষিণ কলকাতার ছেলে, যাদবপুর পাসআউট ,,,,,স্মার্ট, হ্যান্ডসম ,,,,কনভেন্ট এডুকেটেড,,,,,এরম হয়তো অনেক মেয়ে কেই বলে!
সে আরো যাকে বলে বলুক,,,,ঈশানির ওই সুরে কথাগুলো স্নিগ্ধর মুখ থেকে শুনতে বেশ লাগে!

বিকেলের সেই স্কুটারে বসা থেকে শুরু করে, স্নিগ্ধর সেই কাঁদো কাঁদো মুখ গুলোর কথা ভাবতে ভাবতে লালচে আকাশটার দিকে তাকিয়ে রইলো ঈশানি!

“কিরে? পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি? একা একা হাসছিস কেন?” বেশ ইয়ার্কির ভঙ্গি তে বললো স্নিগ্ধ…..

“একিইই! তুমি কখন এলে?”

“যখন থেকে তুই একা একা হাসছিলিস তখন থেকে!” কথাটা শেষ করতে করতে স্নিগ্ধ বেঞ্চিতে ঈশানির পাশে বসে, ঘাড় ঘুরিয়ে চায়ের দোকানের মালিকের দিকে চেয়ে বললো – “বস! দুটো চা আর দুটো বিস্কুট,,,,,”

স্নিগ্ধর বলার ধরণটা শুনে আবার ঈশানির চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো….
এই ছাপোষা আর সহজেই সবাইকে আপন করে নেওয়ার ব্যাপারটাই তো ঈশানিকে মুগ্ধ করে বারবার! অথচ লোকটা নাকি, যাদবপুর স্কলার, ওদের ব্রাঞ্চের মোটমাট তিরিশ জন লোকের বস!

চা যখন এলো, তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছে,,,,আকাশের তারাগুলো একসাথে ঝলমল করে উঠলো বৃহৎ কালো আকাশটা জুড়ে ………
…………………………………………………………….
সন্ধ্যের ঠান্ডা হাওয়া নিমেষেই উড়িয়ে নিয়ে গেলো ওদের সারাদিনের ক্লান্তি…………

(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here