গল্পঃ বেপরোয়া ভালোবাসা। ( #বেপরোয়া_ভালোবাসা )
লেখকঃ মনা হোসাইন
Part : 1
স্কুল ড্রেসের সাদা স্কাটে পিরিয়ডের ছোপ ছোপ দাগ নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আদিবা। চোখ মুখে ভয়ের ছাপ কারন তার সামনেই হাতের মুট শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে তার চাচাত ভাই আদি।আদি আদিবার চেয়ে মাত্র একবছরের বড় কিন্তু আদিবা তাকে যমের মত ভয় পায় অবশ্য ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারন আছে । আদিবাকে সমসময় আদির কথা শুনে চলতে হয়। কথার একটু এদিক ওদিক হলেই ভয়ংকর শাস্তি পেতে হয়। যদিও আজ সে কোন ভুল করে নি তবু আজকেও তাকে শাস্তি পেতে হবে মনে হচ্ছে।
আদি চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে এমন একটা ভাব যেন পারলে এখনী খুন করে ফেলে আদিবাকে। কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে চোখ মুখ শক্ত করে আদি প্রশ্ন করল,
আদিত্যঃ কি রে কি বলেছিলাম তোকে?আমার সাথে স্কুলে আসবি চুপচাপ ক্লাস করবি তারপর আবার আমার সাথে ফিরে যাবি এর বাইরে তুই কিচ্ছু করবি না। বলি নি আমি?(ধমক দিয়ে) যেকোন দরকারে আমার ক্লাসে গিয়ে বলবি আমি সবকিছু করে দিব। তোকে আমি ক্যান্টিনে পর্যন্ত যেতে দেই না. নিজে তোর ক্লাসে গিয়ে টিফিন দিয়ে আসি। তবুও তুই ব্যাথা পেলি? কী করে পেলি বল।ক্লাস বাদ দিয়ে কি করেছিলি? ছুটাছুটি না করলে তো ব্যাথা পাস নি তাই না? বলেই এগিয়ে আসল আদি
সাথে সাথে ভয়ে পিছিয়ে গেল আদিবা। আদির দিকে তাকাতে পারছে না সে নিচে তাকিয়ে চুপ করে আছে,
আদিত্যঃ ব্যাথা পাওয়ার সময় মনে ছিল না? এখন ভয় পাচ্ছিস কেন? জবাব দে ব্যাথা পেয়েছিস কি করে…?
আদির এই প্রশ্নের কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না আদিবা। ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়ে কি করে তার প্রায় সমবয়সী ভাইকে বলবে পিরিয়ডের কথা? তবে প্রশ্নের উত্তর না দিলে আদি থামবে না সেটাও সে জানে তাই কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে জবাব দিল,
আদিবাঃ ব্যাথা পাইনি ভাইয়া…
উত্তর দেয়ার সাথে সাথে আদিত্য আদিবার গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে বলে উঠল,
আদিঃ এমনি এমনি ব্লিডিং হয়? তুই এখন আমার সাথে মিথ্যে বলাও শুরু করেছিস। আজ একবার বাসায় চল তারপর তোর কি অবস্থা করি দেখে নিস।
বলেই টানতে টানতে নিয়ে বাইকে উঠতে বলল। গালে হাত দিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলতে ফেলতে আদির পিছনে বসল আদিবা।
থাপ্পড়ে আদিবা ব্যাথা পেয়েছে বেশ ভালই ব্যাথা পেয়েছে কিন্তু আদিত্যর মুখে মুখে কথা বলার সাহস তার নেই।
আদিত্য চোধুরী ডাক নাম আদি। আদিবার বড় চাচার ছেলে। ক্লাস টেনে পড়ে। আদিত্য তাদের পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী। পরিবারে ৩ চাচার ৫ মেয়ের মধ্যে ওই একমাত্র ছেলে তাই বয়সে ছোট হলেও পারিবারিক সব ব্যাপারে তার মতামতের গুরুত্ব দেয়া হয় সবার আগে। সবার চোখের মণি যেন সে।
আদিবার ২ চাচা আদিত্যের বাবা বড় আর ছোট চাচা দেশের বাইরে থাকেন। ৩ ভাইয়ের মধ্যে আদিবার অবস্থা একটু খারাপ ছিল তাই আদিবারা এতদিন গ্রামে থাকতো কিন্তু হটাৎ বাবা মারা যাবার পর থেকে আদিবা আর তার ছোট বোন সাদিয়া আদিত্যের বাসায় থাকে তবে আদিবার মা গ্রামে থাকেন। আদিত্যের বাসার সবাই আদিবাদের ভালবাসেন তবে তাদের মধ্যে আদিত্য আদিবাকে একটু বেশিই আদর করে আর এই আদর করাটাই আদিবার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতিরিক্ত কেয়ারিং যেটাকে বলে। খেতে দেরি হলে বকা। ঘুমাতে দেরি হলে বকা এমন কি আদিবা কার সাথে বন্ধুত্ব করবে আর কার সাথে করবে না সেটাও আদি সিধান্ত নেয়। বাসার কেউ এতে বাধা দেয় না কারন বাসার মোটামুটি সবারেই ইচ্ছে আদি আদিবা বড় হয়ে জীবনসংগী হোক।
আদি আদিবাকে নিয়ে বাসায় ফিরে দেখল বাসায় কেউ নেই। আদিত্যের বোন অরিন আর সাদিয়া স্কুলে গিয়েছে তাদের নিয়ে গেছেন আদিত্যের মা আর বাবা অফিসে তাই বাসা খালি।
আদিত্য বাইক থেকে নেমেই আদিবাকে টানতে টানতে নিয়ে বাসায় ঢুকল। আদিবা জানে এখন তাকে শাস্তি পেতে হবে,কঠিন শাস্তি তাই নিরুপায় হয়ে বলতে লাগল,
আদিবাঃ আমি ব্যাথা পাইনি ভাইয়া ছেড়ে দাও প্লিজ আর কখনো এমন হবে না।
আদি আবারো চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
আদিঃ এই এক কথা শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গেছে বুঝেছিস? তুই ভাল কথার মেয়ে না তাই আজ শাস্তি তোকে পেতেই হবে। একবার শান্তি পেলে ২য় বার এমন করার সাহস হবে না।
বলেই আদিবাকে নিয়ে গিয়ে বাথরুমে আটকে দিল আদিত্য।আদিবা এবার কেঁদেই দিল।কাঁদতে কাঁদতে বলল,
আদিবাঃ ভাইয়া আমি সত্যি ব্যাথা পাইনি। আমাকে আটকে রেখো না প্লিজ।
বলার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিল আদিবা চোখ মুছে আদির দিকে তাকাল ভাবল হয়ত ক্ষমা করে দিয়েছে কিন্তু আদিবার সেই আশায় জল ঢেলে দিয়ে আদিবার হাতে ব্যান্ডেজ,এন্টিসেপটিক আর জামাকাপড় দিয়ে বলল,
আদিঃ ভাল করে বেন্ডেজ করে জামা বদলে নিবি। আমিই করে দিতাম কিন্তু এমন জায়গায় ব্যাথা পেয়েছিস সেটা সম্ভব না তাই নিজেই করে নে। আমি স্কুলে যাচ্ছি সামনেই এক্সাম তাই স্কুল মিস দেয়া যাবে না।ম্যাডাম বলেছে তোকে বাসায় রেখে যেন ফিরে যাই তাই আপাতত ২ ঘন্টা তুই বাথরুমেই থাকবি আমি স্কুল থেকে ফিরে খুলে দিব। বলেই দরজাটা লক করে দিয়ে আদিত্য বেরিয়ে গেল।
আদিবা ভিতর থেকে চেঁচাতে লাগল,
-আমাকে রেখে যেও না প্লিজ ভাইয়া.এখানে থাকব কি করে? যেও না প্লিজ।
কে শুনে কার কথা আদি বাইরে চলে গেল।
এদিকে, প্রায় ১ ঘন্টা পর আদিত্যের মা মিসেস মিনা বেগম বাসায় ফিরলেন সাথে অরিন আর সাদিয়াও ফিরেছে। অরিনের রুম আদির রুমের পাশেই তাই রুমে ঢুকতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল অরিন সাথে সাথে দৌড়ে মায়ের ঘরে গেল।অরিনের অবস্থা দেখে মিনা বেগম বলে উঠলেন,
মিনা বেগমঃ কি হয়েছে অরিন..? এভাবে ছুটে আসলি কেন?
অরিন হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,
অরিনঃ বাসায় তো কেউ নেই তাই না মা? ভাইয়া আর আদিবা আপু স্কুলে তাহলে ওই রুমে কে…?
মিনা বেগমঃ ওই রুমে মানে..?
অরিনঃ ভাইয়ার রুমে কে যেন কাঁদছে মা আমি স্পষ্ট শুনেছি। কিন্তু রুম তালা বন্ধ।
মিনা বেগমঃ কি যাতা বলছিস? আদিবা আদি ২ জন একসাথে স্কুলে গেল এখনো ফিরার সময় হয় নি তাছাড়া আমরা তালা খুলে ভিতরে ঢুকলাম. একে তো বাইরে তালা থাকেই তাছাড়া
আদি বাইরে যাওয়ার সবসময় নিজের ঘর তালাবন্ধ করে যায় তাহলে ওর রুমে কে থাকবে? তুই হয়ত ভুল শুনেছিস।
এই সেই বলে অরিনকে শান্তনা দিয়ে নিজের ঘরে পাঠিয়ে দিলেন মিনা বেগম।এবার আর কান্নার শব্দ পায় নি তাই এই নিয়ে আর কেউ বাড়াবাড়ি করল না।
চলবে…