#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৪৭
#মনা হোসাইন
-” আমি এসেছি থেকে যা যা করেছি সব ইচ্ছে করেই করেছি। অযথা আপনাকে জাগিয়ে রাখা, রান্না করানো,বার বার ফোন করে বিরক্ত করা সবি বুঝে শুনে করেছি…আর সবচেয়ে বড় কথা আপনি অফিসে যাওয়ার পর পরেই আপনার আংকেল আর বোনরা এসেছিল। তারা সারাদিন এখানেই ছিল। তাদের সাথে আমি কোন খারাপ আচারন করিনি। ভালভাবে সময় কাটছিল হটাৎ আপনার বোন জেসমিন জানতে চায় আমাদের এভাবে বিয়ে হল কেন? কেন সোজা প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে হল না আপনি এত নাটক করে বিয়ে করলেন কেন ? তখন আমি তাদের সব ঘটনা খুলে বলি। আপনারা বাড়ি ছাড়ার কারন, আমার প্রতি রাগ, এখনকার মনমালিন্য সবকিছুই খোলে বলি। সব শোনে ওরাই প্লেন করে আপনি যেভাবে আমাকে সন্দেহ করে ছয়টা বছর মৃত সেজে পার করে দিয়েছেন আমিও ঠিক সেইম কাজটাই করব। সন্দেহ করে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাব তারপর এক্সিডেন্টের অভিনয় করব আর আপনাকে বুঝাব অতিরিক্ত শাসন করলে কেমন লাগে। করলামও তাই হাসপাতালের সমস্ত ব্যবস্থা আংকেল করে দিয়েছিলেন।
আদিবার কথা শুনে আদি স্থীর চোখে তাকিয়ে বলল,
-“তারমানে তুই আমাকে আমার ভুলের শাস্তি দিতে চেয়েছিলি?
“আমি আপনাকে শাস্তি দিতে চাইনি আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছিলাম।
-” কি বুঝাতে চেয়েছিলি আমি তোকে ভালবাসি না তাই তো…?
-“নাহ ভালবেসেও যে অ*ত্যাচার করা যায় সেটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম। আমি যে সেদিন আপনাকে সারারাত জাগিয়ে রেখেছি জোর করে নয় ভালবেসে… আপনাকে প্রেসার দিয়েছি সেটাও ভালবেসেই। কিন্তু এই ভালবাসায় ভাললাগা ছিল না,ছিল বিরক্তি।
আদিবার কথা আদি একটু হাসল তবে এই হাসি মন খোলা হাসি নয়, তাছিল্যের হাসি।
-“আপনি হাসছেন?
-“মিথ্যা বলব না তোর উপড়ে বিরক্ত হয়নি সেটাও বলব না। তবে আমি যে আদিবাকে ভালবাসি তার উপড় বিরক্ত হয়নি। বিরক্ত হয়েছি বদলে যাওয়া আদিবার উপড়। আমি বদলে যাওয়া বিষয়গুলোকে বড্ড ঘৃনা করি। তুই যদি ছোট থেকেই এমন থাকতি আমি বিরক্ত হতাম না এতদিনে মেনে নিতে শিখে যেতাম। আমি পুরানোতে সীমাবদ্ধ তাই নতুনত্ব আমাকে ছুঁতে পারে না।
-“মানে বুঝলাম না।
-“দেখ আমি ছয় বছর আগেও যে আদি ছিলাম এখনো তাই আছি। এই ছয়বছরে অনেক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে কিন্তু আমি এখনো আদিবাতে আটকে আছি আগেও ছিলাম আমার আচারনে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি বদমেজাজি, জেদি তবে আগের আদিই। তুই ছোট থেকেই চুপচাপ কখনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি। আর ভালবাসা সেটা তো আমার জন্য কখনো ছিলই না।আমি যাই করতাম তোর কাছে ভুল মনে হত। তোর কাছে যাওয়াকে তুই ভয় পেতি কিন্তু বিয়ের দিন তুই ইচ্ছে করেই আমাকে নিজের কাছে টানলি। আমি জানতাম এটাও তুই মন থেকে করিস নি। যা করছিস তার পিছনে নিশ্চুই কোন কারন আছে তবে আমার ভুল বোঝানোর জন্য এতটা সেক্রিফাইস না করলেও হতো…
-“ম ম মানে…?
আদিবার কথায় আদি শান্ত চোখে তাকিয়ে জবাব দিল,
-” ঘুরানো ফিরানো কথা আমার পছন্দ না আদিবা তাই সরাসরি বলছি তুই আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিস আমি তোর উপড় অ*ত্যাচার করেছি।আমিও বুঝেছি। তবে এটা আমার সাথে বেড শেয়ার করার আগে সেটা বুঝালে ভাল হত।
যাইহোক ব্যাগ গোছা আমি টিকিট নিয়ে আসছি।
আদির কথা শুনে আদিবা প্রচন্ড অবাক হল। প্রশ্নবোধক চাহনীতে তাকাল।
-” কিসের টিকেট..?
-” চিন্তা করে দেখলাম আমি আসলেই ভুল করেছি।যা করে ফেলেছি সেটা তো আর ফিরে আসবে না তবে তোর জীবনটা নষ্ট করার অধিকার আমার নেই। একজন ভুলে ভরা মানুষের সাথে জোর করে আটকে রেখে তোর সারাটা জীবন নষ্ট করার মানে হয় না। তাই আমি তোকে মুক্তি দিব। জোর করে আর যাইহোক ভালবাসা হয় না। তাই তোকে দেশে পাঠিয়ে দিব। চিন্তা করিস না আমি তোর ভরণ পোষনের দায়িত্ব এড়িয়ে যাব না। শুধু তোকে আমার শাসন থেকে মুক্তি দিচ্ছি যদি সঠিক কাউকে পাস তার কাছে চলে যাস আর যতদিন না পাচ্ছিস নিজের স্বাধীন মত জীবন কাটা।
বলেই আদি উঠে গেল। আদিবা কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু সুযোগ পাই নি। আদি এই রাতের বেলাতেই বেরিয়ে গিয়েছে আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
আদি ফিরতে ফিরতে ভোর রাত আদি আসতেই আদিবা ছুটে গেল। আদিবা কিছু বলতে যাবে তখনী আদি বলে উঠল,
-“সকাল দশটায় টিকিট রেডি হয়ে নে।
-“বলছিলাম কী…
-“আদিবা ২ দিন হল আমি ঘুমাই না। একটু ঘুমাতে দিবি প্লিজ। তোকে তো একা একা পাঠাতে পারব না গিয়ে দিয়ে আসব।
বলতে বলতে আদি ঘরে গিয়ে দরজা লক করে দিল আদিবা জানলা দিয়ে দেখল আদি সত্যিই ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আদিবার চোখে ঘুম নেই সে তো এমন কিছু চায় নি। শুধু আদিকে তার ভুল গুলো বুঝাতে চেয়েছিল। কিন্তু আদি তো সব ভুল বুঝল এই ছেলেটা এত ত্যাড়া কেন? কখনো মনের কথা বুঝেনা ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গেল আদিবা বুঝতে পারেনি।
সকালে আদির ডাকে ঘুম ভাংগল আদিবার।
-“আদিবা ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছে তাড়াতাড়ি উঠ…কিরে উঠ।
আদিবা কোন রকম চোখ মেলে তাকাতেই আদি তাকে টেনে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে দিল। সে বিশাল ব্যাস্ত কথা বলারেই যেন সুযোগ নেই। সে নিজেই কথা বলে চলেছে।
-“সোফায় কেউ ঘুমায়? অন্যরুমে ঘুমাতে পারলি না..?
-“বলছিলাম কী…?
-“এখন কিছু শোনার সময় নেই টেবিলে খাবার রাখা আছে গিয়ে খেয়ে নে আমি তোর ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছি।যা যা…
আদিবা এবারেও কিছু বলার সুযোগ পেল না।
কিছুক্ষন পরেই আদি এসে আদিবাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল আদিবা খায় নি সেটা হয়ত আদি লক্ষ্য করেনি।
আদি ড্রাইভ করছে আদিবা শুধু ছটফট করছে কিছু বলার জন্য কিন্তু আদি একেবারেই সুযোগ দিচ্ছেনা। গাড়ি যতই এগুচ্ছে আদিবার অস্থিরতা ততই বাড়ছে…আদিবার ছটফট দেখে আদি এবার প্রশ্ন করল কিছু বলবি?
বলতে দেরি হলেও আদিবার উত্তর দিতে দেরি হল না।
-“আমি ফিরে যাব কেন..? আপনি আমাকে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
-“তুই এখানে কার কাছে থাকবি আমি ছাড়া কাউকেই তো চিনিস না।
-“আমি অন্য কারো সাথে থাকব কেন? আমাদের বিয়ে হয়েছে আমরা একসাথে থাকব তাই না?
আদি একবার আদিবার দিকে তাকাল,
-“দুজন মানুষের মনে কোন মিল নেই শুধুমাত্র বিয়ে হয়েছে বলে সারাজীবন একসাথে থাকতে হবে এর কোন মানে নেই। তুই তোর মত করে জীবনটা সাজিয়ে নে। যেভাবে থাকতে ইচ্ছে হয় যা যা করতে ইচ্ছে হয় তাই কর। তোর জীবন যাপনের জন্য যত টাকা প্রয়োজন আমি দিব।
-“আমি কি বলেছি আমি দেশে ফিরে গিয়ে স্বাধীনভাবে জীবন কাটাতে চাই..?
-“বলিস নি তবে আমার ভুল গুলো চোখে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিস।
-“ভাইয়া হাজার হোক আমাদের বিয়ে হয়েছে…
আদি কোন উত্তর দিল না । আদিবা তাকে এত করে বুঝানোর ট্রাই করল তবুও কাজ হল না।আসলে আদি খুবি ত্যাড়া টাইপের ছেলে নিজে যা বুঝে সেটাই করে। কোন কারনে তার সিধান্ত বদলায় না।
।
।
।
।
আদি আদিবারা বাসায় পোঁছাল রাতের বেলা। তাদের দেখে বাসার সবাই অবাক। আদিবার চোখ মুখে বিষন্নতা থাকলেও আদির আচারনে কোন রকম কষ্টের ছাপ নেই। সে বাসায় ঢুকেই বলল,
-“আমি খুব ক্লান্ত কেউ আমাকে বিরক্ত করো না প্লিজ।
আদির কাছে পাত্তা না পেয়ে সবাই আদিবাকে ঝেঁকে ধরল কি হয়েছে আদিবা কিছু বলতে পারছে না তার শুধু কান্না পাচ্ছে। সে বেশ জোরেই কেঁদে ফেলল। আদি বিরক্তিভরে পিছনে ঘুরল,
-“কি হচ্ছে কী মা? ওর কাছে এভাবে জবাবদিহি চাইছো কেন? নিজের বাসায় কী আসতে পারবে না নাকি? ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে এসেছে এতে এত প্রশ্নের কী আছে?যাইহোক আদিবা তুই আমার সাথে আয় যা বলার সকালে বলো।
আদিবা এই সুযোগটা মিস করতে চায় না তাই আদি বলার সাথে সাথে আদির ঘরে চলে গেল।
আদি ড্রেস চেঞ্জ করছে আদিবা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আদি বিষয়টা লক্ষ্য করা একটু থেমে বলল,
-“লাজ লজ্জা কী সব বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিস..?
-“আ আ আমি মানে…
-“ঘটনা কি বলতো…? যা বলার সরাসরি বল।
-“আপনি সত্যি আমাকে রেখে চলে যাবেন?
-“কেন তোর কি মনে হয় তামাশা করার জন্য একদিনের ব্যবধানে দেশে এসেছি।
আদিবা আবারো কেঁদে দিল।
-“আশ্চর্য তুই এত কাঁদুনি হলি কবে থেকে.? সমস্যাটা কোথায় সেটা বল।
আদিবা কেঁদে কেঁদেই বলল,
-“বিয়ের দিন আ আ আপনি বলেছিলেন যাই হয়ে যাক আমাকে কখনো ডিভোর্স দিবেন না। জোর করে আটকে রাখবেন। তাহলে আজ কেন বদলে গেলেন?
-“তারমানে আমার বদলে যাওয়াটা তুই মেনে নিতে পারছিস না.? কেন পারছিস না? আমি যা করছি তোর ভালর জন্যই করছি। জোর করা ছেড়ে দিয়েছি এটা তো তোর জন্য সুখবর..
-“আমি কি আপনাকে জোর করা ছেড়ে দিতে বলেছি..?
-“তুই তো বড্ড ঝামেলার মেয়ে যখন জোর করতাম তখনো আপত্তি ছিল এখন জোর করব না বলছি তাতেও আপত্তি তাহলে আমি করব টা কি?
-“আপনি আগে যেমন ছিলেন তেমনি থাকুন বদলে যাবেন না প্লিজ।
আদি এবা ভিলেনি হাসি দিয়ে বলল,
-” তুই কি বুঝতে পারছিস তুই নিজের মুখে স্বীকার করছিস তুই আমার জোর করাটাকে পছন্দ করিস..?
।
।
।
চলবে..!!