#বেনেবউ
#পর্ব_১৬
#তানজিলা_খাতুন_তানু
নিভ্র কলিং বেল বাজিয়েই চলেছে কিন্তু দরজা খোলার নাম নেই। নিভ্রের টেনশান হচ্ছে, রিয়ার বলা কথাগুলো মনে পড়ছে বারবার। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। তখনি মনে পড়ল ওর কাছে বাড়ির ডবল চাবি আছে, তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। নিভ্র অপেক্ষা না করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল, বিছানার দিকে তাকাতেই সমস্ত চিন্তা, কষ্ট নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। ইপ্সিতা এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে, ফ্যানের বাতাসে সিল্কি চুলগুলো বারবার মুখে এসে লাগছে। নিভ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলল,
– ‘আমি ওনার চিন্তায় অস্থির আর উনি আরামে ঘুম যাচ্ছে।’
নিভ্র ইপ্সিতার পাশে গা এলিয়ে দিলো। ক্লান্ত শরীরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সে খেয়াল নেই। ঘুম ভাঙলো ইপ্সিতার ডাকে।
– ‘আপনি কখন আসলেন? আর এই কাপড়ে ঘুমাচ্ছেন কেন, শরীর ঠিক আছে তো।’
– ‘হুমম। আগে বলো তোমার ফোন কোথায় ছিল?’
– ‘পাশে ছিল। কেন?’
– ‘কতবার ফোন করেছি দ্যাখো একবার।’
ইপ্সিতা ফোন হাতে নিয়ে দেখল অনকে গুলো মিস কল।
– ‘সরি আসলে সাইলেন্ট করা ছিল।’
– ‘ঠিক আছে। তবে এইরকম কাজ আর কখনোই করবে না।’
– ‘হুম। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।’
বিকালটা সকলের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কেটে যায়। সন্ধ্যায় ইপ্সিতা আর নিভ্রের মা দুজনে নীচে তলায় মাঝে ইপ্সিতার বাপের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল গোটা বাড়িতে নিভ্র একাই ছিল। ইপ্সিতা ফিরে এসে দেখল নিভ্র ফোনে কারোর সাথে প্রচন্ড রাগারাগি করছে। তারপর থেকে কিরকম একটা অধৈর্য হয়ে উঠেছে।
– ‘কি হয়েছে আপনার? আপনাকে এইরকম দেখাচ্ছে কেন?’
নিভ্র কিছু না বলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। ইপ্সিতা অবাক হলো, বিষয়টা ওর কাছে নতুন। আগে কখনোই নিভ্র এইভাবে ওকে ইগনোর করেনি কিন্তু তাহলে আজকে করলো কেন? ইপ্সিতা একবার ভাবল নিভ্রের কাছে যাবে কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো থাকুক না নিজের মতো। কিন্তু নিজের মনকে শাসন করে রাখতে পারল না, ধীর পায়ে নিভ্রের পাশে দাঁড়াল। নিভ্র দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, ইপ্সিতা নিজের হাতটা রেলিং এর উপরে রাখা নিভ্রের হাতের উপরে রাখল। নিভ্র চমকে উঠে ইপ্সিতার দিকে তাকাল, ওর এই রূপ নিভ্রের কাছে একদম নতুন।
দুজন দুজনের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল, ভালোবাসার আদান প্রদান হলো তবুও কেউ কারোর মনের কথা প্রকাশ করল না।
– ‘কি হয়েছে আপনার?’
– ‘কিছু না।’
– ‘বলবেন না তো।’
নিভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– ‘আমরা মানুষরা এইরকম কেন? কেন নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বুঝি না। জীবনে কি টাকাই সবকিছু।’
– ‘হঠাৎ এই কথাগুলো বলছেন?’
– ‘আমাদের রাইভাল কোম্পানি আমাকে নিতে চাইছে।’
– ‘কেন?’
– ‘আমাদের কোম্পানির যাবতীয় তথ্য জানার জন্য। নতুন প্রোজেক্টটা আমিই সামলাচ্ছে তাই ওর চাইছে আমি যেন ওদের কোম্পানি জয়েন করি কিংবা প্রোজেক্টটা ওদের হাতে টাকার বিনিময়ে তুলে দিই।’
– ‘কিন্তু এটা তো অন্যায়।’
– ‘হ্যাঁ জানি। সেই কারনেই রাজি হচ্ছি না। স্যার আমাকে অনেক বিশ্বাস করে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন আমি কখনোই সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা করব না। আমি নিজের সবটা দিয়ে প্রোজেক্টটা কমপ্লিট করব। এই প্রোজেক্টটা কমপ্লিট হলে কোম্পানি অনেক টাকা প্রফিট পাবে, কোম্পানির উন্নতি হবে।’
ইপ্সিতা মুগ্ধ নয়নে নিভ্রকে দেখে চলে, ছেলেটার তুলনা হয় না। চাইলেই কিন্তু অনেক টাকার মালিক হয়ে যেতে পারত, টাকার বিনিময়ে প্রোজেক্টটা বিক্রি করতে পারত কিন্তু সেটা না করে কোম্পানির ভালো দেখছে।
– ‘এখন তাহলে টেনশন কি?’
– ‘কিছু না। এমনি ভাবছি প্রোজেক্টটা কিভাবে তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করা যায়।’
– ‘চেষ্টা করুন। তবে প্রোজেক্টের যাবতীয় তথ্য এমন কোনো জায়গা রাখুন যাতে তারা অসৎ পথ অবলম্বন না করেও কিছু না পাই।’
– ‘হুমম।’
নিভ্র ইপ্সিতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
– ‘আমার ভয় যে তোমাকে আর মাকে নিয়ে, ওরা আমার দূর্বল জায়গাতেই আঘা’ত করার চেষ্টা করবে আমি শিওর।’
– ‘কি ভাবছেন?’
– ‘কিছু না।’
সময় আগিয়ে যেতে লাগল, কয়েকদিন রিয়া নিভ্রের আশেপাশেও যায়নি বিরক্ত করা তো দূর। বিষয়টিতে নিভ্র অবাক হয়েছে রিয়া এত সহজে ওর পেছন ছাড়বে সেটা আশা করেনি মনে একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। ঝড় আসার পূর্ব মুহূর্তে যেমন সবকিছু থমকে থাকে ঠিক তেমনি রিয়া থমকে গেছে, এটা আবার নতুন কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস নয় তো!
নিভ্র প্রোজেক্টটা নিয়ে অফিসের হেডের সাথে মিটিং করছে, তখনি ওর কাছে একটা কল আসে,
– ‘নিভ্র রায়হান। কেমন আছেন।’
– ‘আপনি কেন আবার ফোন করেছে? আমি আমার সিদ্ধান্ত তো জানিয়ে দিয়েছি।’
– ‘আরে রাগ করছেন কেন, আগে কথাটা শুনে নিন।’
– ‘কি তাড়াতাড়ি বলুন।’
– ‘যদি নিজের স্ত্রীকে সু’স্থ ফিরে পেতে চান তাহলে প্রোজেক্টের প্ল্যান আমাদের হাতে তুলে নিন।’
– ‘মানে?’
– ‘মানে এটাই আপনার স্ত্রী আমাদের কব্জায়।’
নিভ্র কেঁপে উঠল, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। ফোনটা কেটে গেল, নিভ্রকে এইরকম দেখে স্যার বললেন,
– ‘কি হয়েছে নিভ্র? এনিথিং রং।’
নিভ্র উত্তর দেবার পরিস্থিতিতে নেই, ইপ্সিতাকে কল লাগিয়ে চলেছে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না। কিছু সময় কেটে যাবার পর ফোনটা রিসিভ হলো।
– ‘কি মিষ্টার রায়হান, আপনার বিশ্বাস হয়নি তাই না। আপনার স্ত্রী আমার কব্জায় আশা করি আর অবিশ্বাস করবেন না।’
নিভ্র কি করবে বুঝতে পারছে না। স্যার বারবার কথাটা জিজ্ঞেস করতে লাগল, নিভ্র সংক্ষেপে সবটা বলল। স্যার সবটা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
– ‘নিভ্র তুমি চিন্তা করো না, আমি দেখছি কি করা যায়। আমার কোম্পানির কারনে তোমাকে এতটা হ্যারাস হতে হচ্ছে, সরি।’
– ‘স্যার আপনি এইরকম বলবেন না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
– ‘তাই যেন হয়।’
অন্যদিকে,
ইপ্সিতা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। নিভ্র অফিস বেড়িয়ে যাবার কিছুক্ষন পরেই ওর কাছে একটা ফোন কল আসে, নিভ্রের নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে। ইপ্সিতা কোনো দিক না ভেবেই কাউকে কিছু না বলেই তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় একটা গাড়ি ওর সামনে রাস্তা আটকে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে আসে রিয়া,
– ‘কি ব্যাপার তুমি রাস্তা আটকে দাঁড়ালে কেন?’
– ‘কথা আছে।’
– ‘কোনো কথা নেই আমাকে যেতে দাও।’
– ‘আরে কোথায় যাবি, নিভ্রের তো কোনো এক্সিডেন্ট হয়নি। ওহ তো অফিসেই আছে।’
– ‘মানে?’
– ‘মানে তোকে বাড়ির বাইরে বের করার জন্য ছোট একটা প্ল্যান।’
– ‘এইসবের মানে কি?’
ইপ্সিতা আর কিছু বলতে পারল না। পেছন থেকে কেউ একজন মুখে রুমাল চেপে ধরল, তারপর সেন্সলেস হয়ে যায়। আর কিছুই মনে নেই।
বর্তমান,
রিয়া ইপ্সিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
– ‘আগেরবার তুই বেঁ’চে গেলেও এইবার আর তুমি বাঁ’চবি না। এইবার তোকে আমি শে’ষ করেই ছাড়ব।’
#চলবে…