#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১২
#নবনী_নীলা
” কি শুরু করলে তুমি ? বিছানায় এভাবে বালিশের পিরামিড বানিয়েছো কেনো? এক্ষুণি এগুলো সরাও।”, রেগে গিয়ে বললো আহান।
” নাহ্ সরাবো না। এইটা হলো বিপদ রেখা এইটার এদিকে না আপনি আসবেন আর না ওদিকে আমি যাবো।”, বালিশ গুলোর উপরে আরেকটা বালিশ চাপা দিয়ে বললো রূহি।
আহান বুঝতেই পারছে না এতটুকু জায়গায় সে কি করে ঘুমাবে ভ্রূ কুচকে বললো,” আমি এইটুকু জায়গায় ঘুমাবো কি করে? সরাও এগুলো, নাহলে আমি এসব নিয়ে বাইরে ফেলবো।” বোলে এগিয়ে আসতেই, রুহি দু হাত দিয়ে বালিশগুলো আগলে ধরলো তারপর শাসিয়ে বলল,” একদম এই বিপদ রেখা নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। একে তো সোফা গায়েব করে দিয়েছেন। নবাব সিরজউদ্দৌলার বংশধর আসছে নতুন ডিজাইনের সোফা লাগবে উনার। আপনার জন্যে এতো সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
” আচ্ছা তাই বুঝি? আমি সমস্যা করছি নাকি তুমি করছো। হোটেলে তো সোফা ছাড়া ঠিক থেকেছ এখন আবার এই নাটক শুরু করেছো।”, একদম রুহির সামনে এসে বললো আহান।
” ভুল, ওটাই মস্ত বড়ো ভুল করেছি। সেই একি ভুল আমি আর করবো না। ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়, আমিও শিখেছি।”, হাত নেড়ে বললো রুহি।
আহান ডান হাতে কপালটা ডলে বললো,” সমস্যাটা কি তোমার?”
” সে আমার অনেক সমস্যা আছে। আপাদত এই সমস্যা মিটলে আমি বাঁচি। বালিশশুলোর সাথে টাচ লাগলেই যদি কারেন্ট খাওয়ার ব্যবস্থা থাকতো তাহলে বেশ মজবুত একটা নিরাপত্তা পাওয়া যেতো।”, কারেন্টের বেবস্থা করা যাবে না ভেবেই নীচের ঠোঁট উল্টে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
” আর ইউ ক্রেজি ওর হোয়াট? পুরো পাগল হয়ে গেছো? স্টপ দিস ড্রামা রাইট নাও।”, রাগী গলায় বলল আহান।আহানের ইচ্ছে করছে এইসব বিছানা থেকে ছুড়ে ফেলতে।
” না না, এগুলো থাকুক আমি আপনাকে আরো ২সেন্টিমিটার জায়গা এক্সট্রা দিবো তাও এগুলো সরাবেন না।”, বিনতি করে বললো রুহি।
” এসব অদ্ভুত বুদ্ধি তোমাকে কে দেয়। কোথা থেকে পাও এসব।”, বোলে মাথার নিচে হাত রেখে শুয়ে পড়লো আহান।
রুহি উকি মেরে আহানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। তারপর নিজের পাশে শুয়ে বোলো,” আর বেশি দিন না আর মাত্র পাঁচ মাস ২০দিন। আচ্ছা আপনি না বললেন বিয়ের একমাস পর দিদা চিকিৎসার জন্য যাবে কিন্তু কই দিদা রাজি হচ্ছে না?”
আহান চোখ খুলে আড় রুহির দিকে তাকালো তারপর দৃষ্টি সামনে রেখে বললো,” যে পরিমাণের ঝগড়া তুমি করো এরপর কি করে দিদা তোমার আর আমার হ্যাপি ফ্যামিলি আশা করবে।”
” এইটা সত্যি কথা বলেছেন। আপনি হচ্ছেন বুনো ওল আর আমি বাঘা তেতুঁল। কিন্তু কিছু তো একটা করা লাগবে। কালকে থেকে মিশন শুরু। দিদাকে আমি ইমপ্রেস করেই ছাড়বো। আপনি শুধু দেখে যান।”, একেবারে কনফিডেন্ট নিয়ে বলল রুহি। আহান হা না কিছু বললো না। ঘুমানোর সময় বেশী কথা তার পছন্দ নয়। তারপর আবার কিসব বিপদ রেখা, যত্তসব।
কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে রুহি একবার মাথা তুলে দেখলো। আহান চোখ বন্ধ করে আছে। রুহি আবার নিজের বালিশে মাথা রাখলো। ” সাধে কি আর কুম্ভকর্ণ বলি? বালিশে মাথা দিতে না দিতেই ঘুম।”, বির বির করলো রুহি তারপর চোখ বন্ধ করলো।
সকালে ঘুম ভাঙতেই রুহি এদিক সেদিক তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। একি বিপদ রেখা কোথায়? আহানকে কথা শুনাচ্ছিল, আর এদিকে সে নিজে বিছানার এ প্রান্তে এসে আহানের বাহুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। রুহি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তার গড়াগড়ি করে ঘুমানোর সভাব আছে কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর লেভেলের গড়াগড়ি করে সেটা তার জানা ছিলো না। আহানের ঘুম ভাঙ্গার আগেই কেটে পড়তে হবে তাকে, নইলে মুখ দেখাবার মতো কিছু থাকবে না। রুহি আস্তে করে উঠে বসলো তারপর যেই নামতে যাবে। আহান রুহির হাত ধরে টান দিতেই আহানের বুকে এসে পড়লো রুহি। আহানের ঘুম আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিলো রুহির ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষায় শুয়ে ছিলো এতক্ষণ। রুহি আহানের বুক থেকে মাথা তুলে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।
” পালাচ্ছিলে কোথায়,হুম? কোথায় তোমার রেখা? কি যেনো নাম বিপদ রেখা। তা ম্যাডাম আপনি বিপদ রেখা পেরিয়ে আমার বাহুতে কি করছিলেন?”, বলেই হালকা ঘাড় কাত করে রুহির চেহারার দিকে তাকালো। রুহির পট পট করা বন্ধ, ঠোঁটে তালা মেরে মুখ কালো করে আছে সে। রুহি উঠে যাবার জন্য হাত ছাড়াতেই আহান হাত ধরে ফেললো।
” সবসময় আমার বেলায় আমি অসভ্য, আমি অভদ্র আর নিজের বেলায়? তোমাকে কি করবো বলো। তোমার সাথে একটু অসভ্যতা করি? অসভ্যতা কি জিনিস বোঝাবো?” কথাটা কর্নগোচোর হতেই চোখ বড়ো বড়ো করে রুহি আহানের দিকে তাকালো।
“নিজের ইচ্ছে মতন আমার কাছে আসবে আবার ইচ্ছে মতন চলে যাবে আর আমাকে টর্চার করবে এমনটা আর হচ্ছে না। এবার আমি যখন চাইবো তখন…”, বলে আহান রুহির আরো কাছে আসতেই রুহি চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে উঠে বলল,” আমি আর কখন, কোনোদিন এসব বলবো না আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আর কোনোদিন দিন এমন হবে না। সত্যি বলছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন।”বলে আহানের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললো।
আহান রুহির কানের কাছে গিয়ে বললো,” বলছো তাহলে? কিন্তু একটা শর্তে ছাড়তে পারি।”
রুহি আড় চোখে একবার আহানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। আবার কিসের শর্ত? কি আর করার গোড়ায় গলদ হলে এমন অবস্থাই হওয়ার কথা।
” আজ সারাদিন আমার কথা মতোন থাকতে হবে তোমায়। আমি যা বলবো সেটা করতে হবে।”, সুযোগের সৎ ব্যাবহার কিভাবে করতে হয় আহানের থেকে ভালো কেউ জানে না। তারওপর একজন সফল বিসনেস ম্যান বলে কথা।
রুহি জন্মের ফাঁসা ফেসে গেছে। বাধ্য হয়ে রাজি হতেই হলো। রুহির অবস্থা দেখে আহান হেসে ফেললো।
??
আহান গোসল সেরে বেড়িয়ে এসেই রুহিকে ডাকতে লাগলো। আজ অনুষ্ঠান তাই প্রচুর চেঁচামেচি শুরু হয়েছে নীচে। যদিও অনুষ্ঠান সন্ধায় তবে কাজিনরা সবাই চলে এসেছে আগেই। যদিও আহান রুহিকে ডেকেছে রুহির পিছু পিছু তন্বী, শিফা আর অরিব এসেছে। রুহি এসে রূমের এক পাশে দাড়ালো। আহান কিছু বলার আগেই একে একে তন্বী, শিফা আর অরিব ঢুকলো।
অরিব ঘরে এসেই আহানকে বললো,” আমরা তখন থেকে এসে নীচে বসে আছি। আমাদের একবার ডাকলো না আর বউকে ডাকতে ডাকতে গলা শুকিয়ে ফেলেছে একদম। এতো প্রেম, ওয়াহ্।”
আহান এদের কথায় মোটেও অবাক হয়নি কারণ এরা এমনই। আহান কিছু বলার আগেই শিফা এগিয়ে এসে বললো,” তুমি এতো কিপটে আমার জানা ছিলো। হুট করে বিয়ে করে ফেললে এর শোধ আমরা আজ তুলেই ছাড়বো। না পারলাম একটু সাজুগুজু করতে, না পারলাম খেতে, না পারলাম বাসর ঘরে ঢুকে টাকা আদায় করতে।”
” তোরা আর বদলালি না। তা ভেড়ার দলের বাকিরা কোথায়?”, পিছে আর কেউ আছে কিনা চেক করে বললো আহান।
রুহি একপ্রান্তে দাড়িয়ে ভদ্র মেয়ে সেজে আছে। মনে মনে সে বড়ই খুশি কারণ আজ আহানের সব কথা তাকে শুনতে হবে। এরা এসেছে বলে এ যাত্রায় বেঁচে যেতেও পারে সে।
কথাটা খুব তাড়াতাড়ি ভুল মনে হলো রুহির কারণ আহান খুব সহজেই ওদের হ্যান্ডেল করতে পেরেছে। পরে আসবে বলে সবাই কেটে পড়েছে।
রুহি এবার বলির পাঁঠা, ভদ্র ভাবে দাড়িয়ে আছে। আহান রুহির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। তারপর বললো,” আজ তোমার দিকে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করছে। কি নিষ্পাপ ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছো। একেবারে শান্ত ভদ্র মেয়ে। কিন্তু এসবে লাভ নেই। যাও আমার জন্য চা নিয়ে এসো।”
রুহি দাতে কিরমির করে বেরিয়ে গেলো। নিজেকেই নিজের মারতে ইচ্ছে করছে রুহির। রুহি নীচে গিয়ে চায়ের কাপ হাতে উপরে এলো। সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলো যেনো ভুত চা হাতে উপরে যাচ্ছে। রুহি চা খায় না তার মানে আহানের জন্য নিয়ে যাচ্ছে এটা ভেবেই সবাই তাকিয়ে ছিলো। রূমে ঢুকার আগে রুহি দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে মাথাটা ঠান্ডা করলো। তারপর রুহি এগিয়ে গিয়ে আহানের সামনে চা রেখে চলে আসতে নিতেই আহান ডেকে বসলো। রুহি গম্ভীর মুখে পিছনে ফিরলো। আহান চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে রুহির দিকে তাকালো। রুহিকে জ্বালাতে বেশ মজাই লাগছে আহানের।
” আমার কাধে একটু ব্যাথা হচ্ছে, একটু ম্যাসাজ করে দেও।”, একটু গা হেলিয়ে বসে বললো আহান।
“হ্যা আমি তো স্পা খুলেছি। যত্তসব। একদিন আমারও দিন আসবে। তখন এই কুভকর্ণকে আমি বুঝাবো মজা।”, দাতে দাঁত চেপে বির বির করে বললো রুহি।
” এসো দেরী করো না। আমার অফিস আছে।”,বলে নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসি থামলো আহান।
রুহি গাল ফুলিয়ে আহানের পিছনে এসে হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে দাড়ালো। কাধ ম্যাসাজ করার জন্য আহানের সাদা শার্টটা কাধের পাশটা খোলা রাখলো। রুহি হাতে ম্যাসাজ অয়েল নিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো তারপর কাধে হাত দিতেই রুহির মনে হলো এ কাধ এতো শক্ত কেনো? এ কুম্ভকর্ণ জিম টিম করে নাকি। করতেও পারে মেয়ে পটাতে হবে না তার, মনে মনে বলেই মুখ বাকালো রুহি । রুহি ম্যাসাজ বেশ ভালোই করতে পারে নিজের নানুকে করে দিতো। আহানের বেশ ভালোই লাগছে তবে রুহির বক বক করাটা দরকার। তাহলে কথা বলে একটা মজা পাওয়া যায়। আহান ইচ্ছে করে পুরো শার্টটা খুলে ফেললো।
” কি করছেন কি আপনি? শার্ট খুললেন কেনো?”, ছিটকে সরে এসে বললো রুহি।
” Uncomfortable, লাগছিলো। তুমি থামলে কেনো?”, রুহির দিকে তাকালো আহান। রুহি অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। আহান এগিয়ে গিয়ে বললো,” কি ব্যাপার ওদিকে কি দেখছো?”
” আমি আর ম্যাসাজ দিতে পারবো না, অনেক হয়েছে।”, বলে চলে যেতেই আহান রুহির হাত ধরে ফেললো।
” এতো সহজ নাকি? কি কি বলেছিলে তুমি? ভুলে গেলে।”, কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলো আহান। রুহি কেপে উঠলো,রুহি চেঁচিয়ে উঠতে নিলো। কেউ না কেউ রুমে তো আসবেই উচিৎ শিক্ষা দেওয়া যাবে এনাকে। কিন্তু চেঁচাতে সে আর পাড়লো না কারন জানালা দিয়ে দিদা আসছে দেখা যাচ্ছে। রুহি চোখ নামিয়ে ফেললো। এভাবে দাড়িয়ে থাকাতে তার খুব লজ্জা লাগছে। তারওপর বুকের ভিতরটা অস্থির লাগছে। আহান রুহির কানের কাছে মুখ এনে বললো,” এতো লজ্জা পাচ্ছো কেনো? লজ্জা পাওয়ার মতন তো আমি কিছু করিনি।”
[ চলবে ]
? কালকে বড়ো পর্ব দিবো।?