#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৯
#নবনী_নীলা
রুহির দিকে ফিরতেই রুহির ঠোঁটের দিকে চোখ পড়লো আহানের। সঙ্গে সঙ্গে কাল রাতের ঘটনা চোখে ভেসে উঠলো। আহান রুহির থেকে চোখ সরিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। মাথা থেকেই কিছুতেই ঘটনাটা বের করতে পারছে না সে। সারারাত ঘুমাতে পারেনি আহান আর এদিকে আহানের ঘুম উরিয়ে রুহি আরাম করে ঘুমাচ্ছে। আহান কখনো এমন কোনো অনুভূতির মাঝে দিয়ে যায় নি। নিজের কাছেই তার অবাক লাগছে সামান্য এই ঘটনাটা সে কেনো ভুলতে পারছে না। একটা মেয়ের স্পর্শ আর আগে তার উপর কখনো এতোটা ইমপ্যাক্ট ফেলেনি।
আহান খুব সাবধানে রুহির হাতটা নিজের হাতের উপর থেকে সরিয়ে উঠে পড়লো। আহান ঘর থেকে বেড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে সবটা ভুলতে চাইছে কিন্তু কাল রাতের ঘটনাটা যেনো আহানের মাথায় গেঁথে গেছে। আহান উফ শব্দে বিরক্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
রুহির ঘুম তার কিছুক্ষণ পরই ভেঙ্গে গেলো সূর্যের আলোয় চোখ খুললো রুহি। পুরোপুরি ভাবে তাকাতে পারছে না সে মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে তার। রুহি এক হাতে মাথা ধরে উঠে বসলো। কতক্ষণ চুপ করে বসে রইলো তারপর আসে পাশে তাকিয়ে নিজেকে একটি কুড়ে ঘরে আবিষ্কার করলো রুহি। রুহি এক হাতে মাথার একপাশ ধরে বেড়িয়ে এলো। বেড়িয়ে এসে দেখলো আহান একটা কাঠের চেয়ারে হাঁটুর উপর দুই হাত মুষ্টি বন্ধ করে রেখে মাথা নিচু করে বসে আছে।
কারোর আসার শব্দ পেয়ে আহান ঘাড় কাত করে তাকালো দেখতে পেলো রুহি মাথা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
” আমার না কেমন জানি লাগছে? নেশাখোরদের মতোন লাগছে নিজেকে।”, বলে আহানের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল রুহি। আসলেই রুহির মনে হচ্ছে সে নেশাটেসা করে পরে ছিলো।
আহান রুহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,” সে তো লাগাই উচিৎ। কাল যা করেছো এর পর তোমার নিজেকে বদ্ধ উন্মমাদ বলে দাবি করা উচিৎ।”
আহানের কথা শুনে রুহির ভ্রু কুঁচকে গেল। কি এমন করেছে সে? তার তো কিছুই মনে পরছে না। আর এই অসহ্য মাথার যন্ত্রণার জন্য কিছু মনেও করতে পারছে না। রুহির চুলের ভিতর দিয়ে আঙ্গুল চালালো কিছুই তো মনে পরছে না।
” আমি? কি করছি আমি? আমার তো কিছু মনে পড়ছে না। হ্যা? আমার কি মেমোরি লস হয়েছে।”, চিন্তিত হয়ে বললো
রুহি।
” হুম তা মনে পড়বে কেনো? মদ খেয়ে মালতামি করেছ যে সেটা তো মনে থাকার কথা নয়।”, বলতে বলতে উঠে দাড়ালো আহান।
” আমি!”, কথাগুলো শুনে রুহি যেনো আকাশ থেকে পড়লো। তারপর এলেনের দেওয়া সেই ড্রিংকস এর কথা মনে পড়লো তারপর হা করে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” ওটা বুঝি এসব ছিলো?”
আহান বুকের কাছে হাত গুজে হা সূচক মাথা নাড়ল। রুহি একটা ঢোক গিললো। মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু মনে তো কিছু পড়ছে না। কি এক মহা মুশকিল রে বাবা!
” আমি কি করেছি কাল রাতে, মানে কাউকে কি মেরেছি? নাকি খুন করেছি।”, বলেই চোখ বড়ো বড়ো করে মুখ চেপে ধরলো রুহি। এসব খেলে মানুষের হুস থাকে না সে শুনেছে।
” বাহ্। কি কনফিডেন্ট নিজের উপর।”, বলেই হাত তালি দিলো আহান।
” কি করেছি আমি বলুন না।”, তাড়া দিয়ে বললো রুহি। চোখ মুখ চিন্তায় ডুবে আছে তার।
” আবার জানতে চাচ্ছো কি করেছ? আমি বলতে পারবো না নিজে থেকে মনে করে নাও।”, বলেই হাটা শুরু করলো আহান।
” আরে আরে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? এলেন কোথায়?”, বলেই আহানের পিছু পিছু ছুটতে লাগলো রুহি।
” এলেন নিজের কাজে বেরিয়ে গেছে। আর কোথায় যাচ্ছি মানে? তুমি কি এই জঙ্গলে বাকি জীবন কাটাতে চাও।”, গাছের লতা পাতা সরিয়ে এগুতে এগুতে বললো আহান।
রুহির আহানকে ধরতে বেশ জোরে জোরে হাঁটতে হচ্ছে। তাও অনেকটাই পিছনে পরে আছে সে।
” আচ্ছা আপনি বলুন না আমি কি করেছি? আমার তো কিছু মনে পড়ছে না।”, গাছপালার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে বলল রুহি।
” নিজের মাথায় প্রতি ঘণ্টায় একটা করে বাড়ি দেও আস্তে আস্তে সব মনে পড়বে।”, উপহাস করে বললো বললো আহান। যদিও এই উপহাস রুহি বুঝলো না। সত্যি ভেবে বললো,” কিসের সাথে বাড়ি দিতে হবে মাথায়?”
আহান হাটা থামিয়ে পিছনে ঘুরে রুহির দিকে আড় চোখে তাকালো তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” আমার মাথার সাথে বাড়ি দেও। তাহলে বেশি উপকার হবে।”
রুহি আহানকে ধরতে তাড়াতাড়ি হেটে এসে আহানের পাশে দাড়ালো। পুরো হাপিয়ে গেছে রুহি। হাঁটুর উপর দুই হাতের ভর দিয়ে হাপাচ্ছে রুহি তারপর ঘাড় কাত করে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” আপনার মাথার সাথে বাড়ি দিতে হবে? কিন্তু একটা বাড়ি দিলে তো আমার মাথায় শিং গজাবে।”
আহান নিশব্দে রুহির দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর বললো,
” আনবিলিআভেল! এগুলো তোমার দ্বারাই সম্ভব।” তারপর আবার হাটা দিতেই রুহি আহানের হাত ধরে থামলো তারপর হাপিয়ে হাপিয়ে বললো,” একটু আস্তে হাঁটুন না।”
আহান এবার রুহিকে আগে আগে হাঁটতে দিয়েছে। পিছনে হাঁটতে হাঁটতে আবার অন্য কোথাও চলে গেলে সমস্যা। আহান রুহির পিছু পিছু হাটছে। রুহি এদিকে সেদিকে দেখতে দেখতে হাঁটছে।
” তুমি কখনো গাছ দেখোনি?”, বিরক্ত হয়ে বলল আহান।
“দেখেছি কিন্তু এইগুলো ভিন্ন।”, একটা গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে বললো রুহি।
“এখানে কি শিক্ষা ভ্রমণে এসেছো? জলদি হাটো। গাছ যেনো নতুন দেখছে।”
রুহি পিছন তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আহানকে বললো,” অনেক সাধারণের মাঝেও অসাধারণ লুকিয়ে থাকে, সেটা শুধু খুজে নিতে হয় বুঝলেন?”বলতে বলতে একটা গাছের সাথে মাথায় বাড়ি খেলো রুহি।
তারপর রুহি কিছু না বলে মাথা ডলতে ডলতে এগিয়ে গেলো। এঘটনায় আহান আর অবাক হলো না। এইসব এই মেয়ের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। আহান হাত পকেটে ভরে রুহির পিছু পিছু হাটছে।
ওরা জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে কটেজের সামন আসতেই ফাহাদের সামনে পড়লো আমার। যদিও রুহি ওনাকে চিনে না তাই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলো। ফাহাদ জগিং কস্টিউমে ছিলো জগিং করেই ফিরছিলো। রুহিকে দেখে তিনি নিজে থেকেই এগিয়ে গিয়ে বললেন,” হেলো মিসেস রহমান।”
এই মিসেস রহমান নামে এর আগে তাকে কেউ ডাকে নি। তাই খুবই অদ্ভুত দৃষ্টিতে রুহি ফাহাদের দিকে তাকালো।
” আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।”, বললো রুহি।
আহান কিছুটা পিছনে দাড়িয়ে সবটা দেখছে আহান যে পিছে আছে সেটা ফাহাদ ঠিক খেয়াল করেনি। আহান ইচ্ছে করেই পিছনে দাড়িয়ে আছে দেখা যাক লোকটা কতদূর যেতে পারে।
ফাহাদ হেসে উঠে বললো,” আমাকে চেনার কথাও নয় তবে আমি আপনাকে দেখেছি। আমি মিস্টার আহানের একজন ক্লাইন্ট।”
রুহি মুখ দিয়ে শুধু ও শব্দ করলো।
” আপনার নামটা এখনও জানা হলো না কিন্তু।”,
” ওহ, আমার নাম রুহি।”, এতটুকু বোলেই চুপ করে গেলো রুহি। এই লোকটিকে তার মহা বিরক্তিকর লাগছে।
” আপনি জগিং এ বেরিয়েছিলেন বুঝি?”, ফাহাদের এমন প্রশ্নে রুহি কিছু বলার আগেই আহানের গলা শোনা যায়। রুহি পাশে তাকিয়ে দেখলো আহান এগিয়ে আসছে। আহান রুহির পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,” মর্নিং ওয়াকে গিয়েছিলো।”
আহানকে দেখে ফাহাদ চমকালো কিন্তু তিনি ঠিক কথা চালিয়ে যেতে লাগলো।
” বাহ্ বেশ ভালো। আমি তাহলে যাই, পরে দেখা হচ্ছে।”, বলে চলে গেলেন ফাহান। যাকে অনেকটা কেটেই পড়লেন বলা যায়। আহানকে দেখে ভালোই বুঝেছেন এসবের ফল তার জন্য আশাসরুপ হবে না।
আহানের রাগের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যে কেউ দেখলেই বুঝবে আহান প্রচন্ড রেগে আছে। আহান রুহিকে রূমে যেতে বলে রাতুলকে খবর দিলো। হটাৎ এমন থমথমে পরিবেশের কারণ যে রুহি সে সেটা নিজেই জানে না। রুহির মাথায় একটাই চিন্তা সে কি করেছিলো কাল রাতে।
রাতুল চশমার ফ্রেম ঠিক করতে করতে পানির গ্লাসটা হাতে নিতেই আহান তার সামনের চেয়ারটায় এসে বসে পড়ল। রাতুল সঙ্গে সঙ্গে গ্লাসটা রেখে দাড়িয়ে পড়লো।
” আরে দাড়িয়ে পড়লে কেনো বসো।”, হাতের ইশারায় রাতুলকে
বসতে বলল।
রাতুল বসতে বসতে বললো,” স্যার আপনি এভাবে আমায় ডাকলেন? আমি সত্যিই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি ম্যাডামের দিকে নজর রাখতে ব্যার্থ হয়েছি।”
” রাতুল স্টপ দিস। একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা শুনো মিস্টার ফাহাদের সাথের ডিল টা ক্যান্সেল করছি আমি।”, আহানির এতটুকু কথা শুনেই রাতুলের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
” স্যার উনি তো ইনভেস্ট করে ফেলেছেন। আর এই জন্যই তো আমরা এখানে এসেছি। আর এটা ক্যান্সেল করছেন আপনি।”, হতভম্ব হয়ে বললো রাতুল।
” সো হোয়াট? ওনার ইনভেস্ট এর টাকা আমরা ওনাকে ফেরত দিয়ে দিবো। দরকার পড়লে ওনাকে ফাইভ পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট সহ দেওয়া হবে ফর টেকিং হিজ টাইম। কিন্তু ঐ লোকটাকে আমি আমার আসে পাশে দেখতে চাই না সেটা ওনার জন্যও ভালো হবে না। আমি কোনো ঝামেলা করতে চাই না। এটাই ফাইনাল”, বোলে প্যান্টের পকেট থেকে চেক বের করলো আহান তারপর রাতুল থেকে পেন নিয়ে টাকার অঙ্ক বসিয়ে রাতুলকে চেকটা ধরিয়ে দিলো তারপর উঠে দাঁড়ালো।
রাতুল উঠে দাঁড়াতেই আহান বললো,” আমি আর রুহি বেরিয়ে যাবো একটু পর তারপর তুমি ওনাকে চেক টা ধরিয়ে দিবে। আর আগে যেনো কেউ কিছু না জানতে পারে। ইজ দেট ক্লিয়ার?”
রাতুল ভয়ে ভয়ে রোবটের মতন মাথা নাড়ালো। যেনো আজ তার ফাঁসির রায় দিয়েছে। আহান সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লো। নিজের রুমের দিকে যাবে এমন সময়ে দেখা যাচ্ছে একজন স্টাফ হলুদ গোলাপের একটা বুকে নিয়ে ওদের পাশের রুমের দিকে যাচ্ছে। আহান হাতের ইশারায় স্টাফকে দরজায় নক দেওয়ার আগেই থামতলো। তারপর কপাল এক হাত দিয়ে ডলতে ডলতে এগিয়ে গেলো।
” এই ফুলগুলো আমাকে দেও।”, বলে হাত বাড়িয়ে ফুলগুলো হাতে নিলো আহান।
“স্যার এটা তো ওনাদের জন্য। আপনাকে কিভাবে দেই।”, বলতে বলতেই আহান ওয়ালেট থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে লোকটার হাতে ধরিয়ে বললো,” এটা রাখো।” তারপর ফুল হাতে নিজের রূমে চলে গেলো।
আহান দরজা আটকে প্রথমে চেক করে নিলো রুহি কোথায় আছে। রুহি রূমে নেই তারমানে নিশ্চই শাওয়ারে গেছে। আহান ফুলগুলো বেডের পাশে রাখলো তারপর গায়ের শার্টটার বোতাম খুলে ফেললো। অসস্তি লাগছে এটা পরে থাকতে।
শার্টটা পুরোটা খুলে ফেলার আগেই রুহি মাথার পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো। আহানকে হটাৎ এমন আধ খালি গায়ে দেখে রুহি আতকে উঠলো।
” একি আপনি কি করছেন?”, বোলেই অন্যদিকে ঘুড়লো রুহি।
” শার্ট খুলছি।”, পুরো শার্টটা খুলে ফ্রেশ হতে এগিয়ে গেলো আহান।
” আপনার লজ্জা করে না সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আপনি এসব করছেন?”, কটাক্ষ করে বললো রুহি।
” কাল যদি তোমার লজ্জা না করে থাকে তাহলে আজ আমার লজ্জা করতে যাবে কেনো? এমনিতেও আমি তোমার মতো লজ্জার ব্যাগ নিয়ে ঘুরি না।”, বলেই সাথে সাথে ওয়াশরুমের দরজা আটকে দিলো আহান।
আহানের কথা শুনে রুহির বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। কাল লজ্জা করেনি মানে? কাল সে কি এমন কাজ করেছে যার জন্য লজ্জা হবে। শার্ট খোলা নিয়েই তো কথাটা বললো আহান। তারমানে কি রুহি আহানের শার্ট? না না আর ভাবতে পারছে না সে। বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে অনেক। কি একগোলক ধাঁধা আটকে গেলো সে।
তারপর বিছনায় তাকাতেই হলুদ গোলাপ দেখে অবাক হয়ে গেলো রুহি। এটা এখানে এলো কি করে। কে রেখেছে এই হলুদ গোলাপ?
[ চলবে ]
?Don’t be a silent reader. ভালো লাগলে কমেন্টে জানাবেন, ভূল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন, তাহলে আরো ভালো লিখতে উৎসাহিত হই।?