#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৪১
#নবনী_নীলা।
” হ্যা সে আমাকে বিয়ে করার সংগ্রামে আপনি সফল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে আপনি কিন্তু আমার প্রথম বয়ফ্রেন্ড আর আমি আপনার?”, বলেই ভ্রু কুচকে রাগী রাগী চোখে তাকানোর চেষ্টা করছে রুহি।
” তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা।”, আহানের উত্তরে রুহির চেহারায় এক ঝিলিক হাসি ফুটে উঠলো। রুহি নিচের ঠোঁট কামড়ে আহ্লাদি গলায় বললো,” সত্যি!”
আহান রুহির একদম কাছে এসে বলে,”হুম সত্যি।”রুহির গাল দুটো লাল আভায় ঢাকা পড়লো। আহান রুহির কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিতেই তন্বী সেখানে উপস্থিত হয়।
দুজনকে একসাথে দেখে তন্বী পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে বললো,” আজ আমি সিঙ্গেল বলে কপালের এলোমেলো চুলগুলো নিজেকেই ঠিক করতে হয়। আর এদিকে দেখো দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে যাচ্ছে তাও প্রেম কমছে না এদের।”
তন্বীর কণ্ঠ কানে আসতেই রুহি ছিটকে সরে দাড়ালো। তারপর আশেপাশে তাকাতেই রুহি একদম লজ্জায় পরে গেলো। কেউ জানালা দিয়ে নয়তো কেউ বারান্দা দিয়ে তাকিয়ে আছে। মুখ লুকানোর জায়গা খুজছে রুহি। আহান মুখ দিয়ে তিক শব্দ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তন্বীর দিকে তাকালো। তারপর বললো,”তুই উপরে এসেছিস কেনো?”
” কেনো ডিস্টার্ব করে ফেললাম বুঝি?”, ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো তন্বী।
” বুঝতেই যখন পেরেছিস তখন দাড়িয়ে থাকিস না, নীচে যা।”, তীক্ষ্ণ চোখে বললো আহান।
রুহি খালি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, এই লোকটার জন্য এইসব শুনতে হচ্ছে। তন্বী এগিয়ে এসে রুহির পাশে দাড়ালো তারপর বললো,” নীচে তো যাবো কিন্তু একা যাবো না রুহিকে সঙ্গে নিয়ে যাবো।” রুহির হাত ধরে বললো,” ডিস্টার্ব যখন করেছি একটু ভালোভাবে করি। চলো রুহি নিচে চলো।”
আহান বেগ্রা দিয়ে বললো,” রুহি যাবে না।” আহানের কথায় রুহি বড়ো বড়ো চোখে করে তাকালো। তন্বী বাকা হাসি দিয়ে বললো,” তাহলে আমি কি নীচে গিয়ে বলবো যে আহান রুহির সাথে প্রেম করবে তো তাই রুহিকে আসতে দেয় নি।”
আহান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো তন্বীর দিকে। তন্বী রুহিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,” তোমার রোমিওর চেহারা দেখেছ? মনে হচ্ছে এক্ষুনি আমাকে গিলে খাবে।” তন্বীর কোথায় রুহি খিল করে হেসে ফেললো।
________________________
আজ গায়ে হলুদ;
সন্ধ্যা থেকে লামিয়া রুহিকে সাজাতে ব্যাস্ত। রুহি বিরক্তি নিয়ে আয়নার সামনে বসে আছে। এতো বিরক্তি সে আগে কখনো হয় নি। শেষমেশ খুব বিরক্ত হয়ে বলল,” লামিয়া তোর হয়নি। বোন আমার থাম একটু, আর কতো?”
” আরে চুলটা পারফেক্ট হতে হবে। আমি তোকে সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছি মান সম্মানের একটা ব্যাপার আছে না। তারপর হুট করে সাজ নষ্ট হলে তখন কি হবে?”, খুব মনোযোগ দিয়ে রুহির চুলে চিকন ক্লিপ বসিয়ে বললো লামিয়া।
” ধুরো এতো পারফেক্ট হতে হবে না। ভাল্লাগছে না আর।”, ঠোঁট উল্টে বললো রুহি।
” হ্যা, বর তো আজ দেখবে না। ভালোলাগবে কি করে? বর এতো ইম্পর্ট্যান্ট আমাদের থেকে?”,
” উফ আমি কখন এসব বললাম!”
” তুই বলিসনি কিন্তু আমি বুঝেছি ঠিকই।”
” কচু বুঝেছিস।”রুহির কথার মাঝে লামিয়ার ফোন বেজে উঠলো। রুহি তাকিয়ে দেখে ফোনের স্ক্রিনে নাম উঠেছে জয়। রুহি একটু কেশে উঠে বললো,” তোর নিরামিষ ফোন করেছে।”
কথাটা শুনেই লামিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে সুইচ অফ করে দিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারলো। রুহি হকচকিয়ে তাকালো,” ওমা! এমন করলি কেনো তুই?”
” কথা বলবো না ওনার সাথে। খুব যখন কাজ তখন ফোন করে কেনো? আমি যখন ফোন করেছিলাম, আমি ব্যাস্ত আছি বোলে তো ঠিক ফোনটা কেটে দিলো। এখন আমিও ব্যাস্ত আছি।”লামিয়ার রাগী চেহারা দেখে রুহি হেসে ফেললো। লামিয়া রাগী চোখে তাকাতেই রুহি ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো,” আচ্ছা আগে না নামটা নিরামিষ লিখে সেইভ করা ছিলো হটাৎ জয় লেখা?” বলেই রুহি ভ্রু তুলে আবার নামালো।
” কি করবো বেহায়া লোকটা সেদিন যা করলো।”এতটুকু বলেই চুপ করলো লামিয়া। রুহি আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,” কি করলো?”
” আরে দেখে ফেলেছিলো আমি যে ওনার নাম নিরামিষ সেইভ করে রেখেছি। তারপর হুট করে কি হলো? আমায় কোলে তুলে ধুমধাম কিস করলো। আরেকটু হলে দম আটকে মারা যেতে নিচ্ছিলাম। তারপর বেহায়া লোকটা বললো, এতটাও নিরামিষ না আমি। খুব জলদি তুমি সেটা টের পাবে।”
” টের পেয়েছিস বুঝি?”, একগাল হাসি নিয়ে বলল রুহি।
” নাহলে কি সাধে বেহায়া বলছি? নিজে নামটা সে নিজেই বদলে দিয়েছে।”
” বাহ্ ভালোই তো। তোর তো নিরামিষ পছন্দ ছিলো না।”
” কে বলেছে? নিরামিষ ভালো ছিলো। কি সুন্দর টিজ করা যেতো।” রুহি লামিয়ার কথায় খিল খিল করে হাসতে লাগলো।
” উফ! বাদ দে তো। দেখি তোর চুলটার খোঁপা ঠিক করে দেই।”বললো লামিয়া
লামিয়া আরো আধাঘন্টা নিয়ে রুহির চুলের খোপা করলো। এই মেয়েটা সাজগোজ নিয়ে মারাত্মক সিরিয়াস। রুহি নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলো। লামিয়ার রুহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,” এমনি এমনি কি আর জিজু আবার বিয়ে করছে তোকে? এভাবে একবার দেখলে কি করে বসে?” বলেই মিট মিট করে হাসলো লামিয়া।
রুহি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো,” ওনাকে দেখাচ্ছে কে?”
কথার মাঝেই ঘরে রুহির নানু আর নুড়ি আসলো। রুহিকে যেনো চেনাই যাচ্ছে না। রুহির নানু যেনো নিজের মেয়ের প্রতিচ্ছবি দেখছে। চোখ ভিজে আসতেই তিনি একটু কাজল নিয়ে রুহির কানের পিছনে দিয়ে বললেন,” সবাই বসে আছে তো। চলো।”
গান, হইহুল্লোড় শেষ হতে হতে রাত একটার উপরে হয়েছে। একে একে সবাই চলে গেছে। রুহি নিজের রূমে এলো, পুরো গায়ে তার হলুদে মাখামাখি। হলুদ এভাবে কেউ মাখে? রুহি আয়নার সামনে দাড়িয়ে টিসু দিয়ে মুখ পরিস্কার করছিলো। হটাৎ পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরতেই রুহির বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। আয়নায় দিয়ে তাকিয়ে পিছনে আহানকে দেখে রুহির মুখ হা হয়ে গেলো। রুহি হা করেই পিছনে তাকালো। প্রত্যেকদিন আসে সেটা এককথা তাই বোলে আজও! সারা বাড়ি ভর্তি এখনো মানুষজন আছে। রুহি বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আহান হাত দিয়ে রুহির মুখের হা বন্ধ করে দিয়ে বললো,” এভাবে হা করে থাকলে মুখ ব্যাথা করবে তো।”
রুহি চোখ পিট পিট করে তাকালো। সে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। তারপর বিস্ময় নিয়ে বললো,” আপনি…! আজ…! এইখানে..! কেনো!”
” তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছিল।”, বলেই রুহিকে জড়িয়ে ধরলো আহান।
” কেনো? কালকে দেখতে পারবেন না? কতো মানুষ আছে বাড়িতে। কেউ এসে পড়লে? আমি তো দরজাও শুধু চাপিয়ে এসেছি। ছাড়ুন, ছাড়ুন।” বলেই আহানকে সরিয়ে দেয় রুহি।
আহান বুকের কাছে দুই হাত ভাজ করে রুহির দিকে তাকালো। রুহি কড়া চোখে তাকিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই আহান রুহির হাত টেনে কোমড় জড়িয়ে ধরে, কোমড় থেকে শাড়ির কিছু অংশ সরে যেতেই আহানের স্পর্শে চোখ বন্ধ করে কেপে উঠলো রুহি। আহান রুহির সামনে মুখ এনে বললো,” আমি এতো কষ্ট করে পাইপ বেয়ে উপরে উঠলাম আর তুমি মানুষ দেখলে কি বলবে? কি হবে? কেউ দেখে ফেলবে এইসব নিয়ে পরে আছো।”
” পাইপ বেয়ে উপরে উঠেছেন তো কি হয়েছে? এতে নতুন কি আছে? প্রতিদিন তো একই ভাবে আসেন। আমার তো মনে হয় আপনি নিজের রুমেও এখন জানালা দিয়ে ভিতরে যান। কি দরকার ছিলো বলুন তো আজকে আসার? একদিন না দেখলে কি হতো?”, শেষের কথাটা ঠোঁট উল্টে বললো রুহি।
আহান হাতের কাছে একটা হলুদের বাটি দেখলো। আহান রুহির দুই হাত পিছনে নিয়ে একহাতে শক্ত করে ধরলো। রুহি ছটফট করতে লাগলো। আহান হাত বাড়িয়ে একটু হলুদ নিয়ে রুহির নাকে হালকা মাখিয়ে দিয়ে বললো,”তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গেছো, এ অভ্যাস আমি বদলাতে পারবো না, আর চাইও না। আজ রাতে হয়তো আমার ঘুমও আসবে না। যদিও এসবে তোমার কি তুমি তো দিব্যি কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমাবে।”
” কেনো আপনার বুঝি এবার আমার কোলবালিশকেও হিংসে হয়? সমস্যা কি? আপনিও একটা কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন।”, ঠোঁট এলিয়ে বললো রুহি।
” উহু,তোমার চুলের ঘ্রাণ না পেলে আমার ঘুম আসে না। আজকেও থেকে যাই কি বলো?”, আহানের কথায় রুহির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। রুহি আহানকে ঠেলতে লাগলো তারপর বললো,” আপনার মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেছে। এক্ষুনি আপনি যান। আজকে লামিয়া থাকবে আমার সাথে, যখন তখন চলে আসবে কিন্তু লামিয়া।”
জয় সেই কখন থেকে এসে বসে আছে কিন্তু লামিয়া জয়কে এড়িয়ে যাচ্ছে। মেজাজ বিগড়ে আছে লামিয়ার। লামিয়া রুহির রূমের দিকে যাচ্ছিলো। জয় পিছু পিছু এসে বললো,” লামিয়া দাড়াও।”
লামিয়া আরো হনহণিয়ে হাঁটতে লাগলো। রুহির রুমের ভিতরে যাবে তার আগেই জয় লামিয়ার হাত ধরে দেওয়ালের সাথে শক্ত করে ধরলো। লামিয়া আড় চোখে তাকালো জয়ের দিকে তারপর মুখ বাকালো।
” ফোন ধরছো না, কথাও বলছো না।একবার বলবে তো কি হয়েছে?”, শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো জয়।
” কি হয়েছে? আমার চাচির খালাতো বোনের ছেলের মেয়ে হয়েছে।”, বলে আবারও মুখ বাকাল লামিয়া।
” তোমার চাচির খবর আমি জানতে চাই নি। তুমি এমন করছো কেনো জানতে চাইছি।”, শান্ত গলায় বললো জয়।
” আমার কি হবে? আমার বেস্টফ্রেন্ড এর বিয়ে আমি অনেক ব্যাস্ত আছি।”, অন্য দিকে তাকিয়ে বললো লামিয়া।
” উফ, আচ্ছা সরি। এবার থামাও প্লিজ এইসব।”, একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো জয়।
” কেনো আমি কেনো থামাবো? ঐ মেয়ে যখন স্যার স্যার বলছিলো তখন তো তাকে বললেন না কিছু উল্টো আমাকে বললেন ব্যাস্ত আছেন। হুহ! বুঝিনা ভেবেছেন?”
” আচ্ছা, বাসায় চলো। সেখানে গিয়ে ঝগড়া করা যাবে।”
” আমি কোথাও যাচ্ছি না আমার আমি রুহির সাথে থাকবো। আপনি বাসায় গিয়ে আমার ছবির সাথে ঝগড়া করেন।” , বলে জয়ের হাতের নীচ দিয়ে বেরিয়ে দরজা ঠেলতেই দেখলো রুহি আহানের খুব কাছে। লামিয়া আর জয়কে দেখে রুহি ছিটকে সরে দাড়ালো। আহান বুঝতে পারছে না সবাই খালি তাদের ডিস্টার্ব করতে চলে আসে কেনো?
দুজনকে একসাথে দেখে লামিয়া বেশ চমকালো। জয় আস্তে করে বললো,” তোমার মনে হচ্ছে না ওদের মাঝে হাড্ডি হওয়ার দরকার নেই।”
লামিয়া আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” একদমই মনে হচ্ছে না।” বলেই লামিয়া ভিতরে এলো তারপর বললো,” জিজু আপনি এইখানে কি করছেন বলুন তো? কাল বিয়ে একদিন বুঝি সহ্য হয় না?”
আহান কিছু বললো না। রুহি ফিসফিসিয়ে বললো,” আপনি এখন যান।”
” এই হিসেবটা তাহলে তোলা রইলো বাসর রাতের জন্য।”, রুহির কানে বলে সোজা হয়ে দাড়ালো আহান। আহানের কথা শুনে রুহির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো। রুহি একটা ঢোক গিললো।
আহান জয়কে হাত দেখিয়ে বললো,” জয় চলো। এরা দুজনেই আজ জোট বেঁধেছে।”
লামিয়া আজ মানবে না বোঝাই যাচ্ছে তাই জয় ব্যার্থতার নিঃশ্বাস ফেললো। আহানকে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে রুহি চমকে উঠে বললো,” একি আপনি দরজা দিয়ে বের হচ্ছেন কেনো? সবাই দেখবে তো।”
আহান রুহির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে জয়ের সাথে বেরিয়ে পড়লো। রুহি আর লামিয়া বিছানায় বসে একে অপরের কাধে মাথা রাখলো। বরগুলো একেকটা জুটেছে তাদের কপালে।
[ #চলবে ]