#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩৭
#নবনী_নীলা
রুহির আহানের কথা খুব মনে পড়ছে। দুদিন হলো আহানের কোনো দেখা নেই, রুহির ফোনটাও নানুর কাছে। রুহি ছটফট করতে করতে ঘড়ি দেখছে।রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেছে আজও বুঝি আসবে না কুম্ভকর্ণটা। ভুলেই গেছে আমাকে। আসুক খালি একবার আমার সামনে, কথা বলবো না তো। রুহি ওয়ার্ডরোব থেকে আহানের শার্টটা নিয়ে শার্টটা পড়ে ফেললো। শার্টটা পড়লেই যেনো মনে আহান তাকে জড়িয়ে আছে। লোকটাকে এতো মিস করবে কে জানতো সব সময়ে তো কাছেই থাকতো এভাবে উধাও তো হয়ে যায় নি, যে বুঝবে। রুহির অসহ্য লাগছে, ইচ্ছে করছে ছুটে যায় আহানের কাছে।
রুহি ঠোঁট উল্টে আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করার চিন্তায় স্থির হলো। যদি আসে সেই কুম্ভকর্ণ।
প্রতিদিনের মতন অপেক্ষা করতে করতে রুহি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে।
রাত দুটো বাজে, আহান বাইক নিয়ে রুহিদের বাড়ির পিছনটায় রুহির জানালা বরাবর দাড়িয়ে আছে। রুহির ঘরের আলো নিভছে না। অদ্ভুত! রুহি এতো রাত জেগে করছে কি! নাকি লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে? উফ এই মেয়েটা পারেও বটে। আহান চারপাশটা ভালো করে দেখলো। কেউ নেই আপাদত।
আহান জানালা দিয়ে ভিতরে এসে দেখলো সে যা ভেবেছে তাই হয়েছে রুহি লাইটটা জ্বালিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। আহান এক দৃষ্টিতে রূহিকে দেখছে। রুহির গায়ে নিজের শার্টটা দেখে আহান ঘাড় কাত করে রুহির মুখের দিকে তাকালো। ম্যাডাম তাহলে মিস করছিলো তাকে।
বাহিরে খুব বাতাস বইছে। বাতাসে আবছা হলুদ রঙের পর্দা গুলো উড়ছে। আহান বাতাসের শব্দে বাহিরের দিকে তাকালো, ঝড় হবে মনে হচ্ছে। আহান রুহির দিকে চোখ ফিরাতেই দেখলো সামনের ছোটো চুলগুলো রুহির মুখের সামনে এসে পড়েছে। আহান ঝুকে এসে রুহির মুখের সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে রুহির কপালে আদর মেখে দিলো। তারপর রুহিকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে একপাশে শুয়ে পড়লো।
বাতাসের ঠান্ডা হাওয়ায়, ঘুমের মাঝে উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে রুহি গুটিয়ে এসে আহানের বুকের ভিতরে গুটিয়ে ফেললো নিজেকে। আহান নিরবে হেসে রুহিকে জরিয়ে রাখলো। ঘন ঘন বিদ্যুতের শব্দে রুহির ঘুম ভাঙলো। ঘুম ভাঙতেই রুহি নিজেকে কারোর খুব কাছে আবিষ্কার করলো। মন তো বলছে আহান কিন্তু অন্ধকারে কিছুই বুঝতে পারছে না রুহি। বুকের ভিতরের ধুক ধুক শব্দ যেনো সে নিজেই শুনতে পাচ্ছে। রুহি নড়ে চড়ে উঠে যেতে নিলো কিন্তু আহান ঘুম ঘুম চোখে রুহিকে শক্ত করে ধরে নিজের পাশে শুইয়ে দিয়ে বললো,” ঘুমের মাঝেও এতো ছটফট করা লাগে তোমার?”
আহানের কণ্ঠ শুনে যেনো রুহির ধুকপুকানি আরো বেড়ে গেছে। রুহি হাত বাড়িয়ে দিলো আহানের গাল ছোঁয়ার জন্য। রুহির এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আহান তার পাশে। রুহি হাত বাড়িয়ে প্রথমে আহানের গলায় স্পর্শ করলো। তারপর আস্তে আস্তে মুখের দিকে হাত যেতেই রুহির হার্টবিট অসম্ভব রকমের বেড়ে গেছে। রুহির স্পর্শে আহানের চোখের ঘুম উড়ে গেছে। জানালা দিয়ে হালকা আলোয় রুহিকে দেখতে পাচ্ছে আহান। কিন্তু রুহি চোখ বন্ধ করে আহানের সাড়া গলা থেকে মুখ পর্যন্ত হাত দিয়ে কি বোঝার চেষ্টা করছে?
” রুহি, তুমি ঠিক কি ফিল করার চেষ্টা করছো আমাকে একটু বলবে? হোয়াট আর ইউ ট্রিং টু ডু?”, আহানের কথায় রুহির হুশ ফিরতেই রুহি হাত নামিয়ে আস্তে করে চোখ খুললো। রুহি এতক্ষণ কি করছিলো সে নিজেও জানে না। সবটাই একটা ঘোরের মাঝে করে ফেলেছে রুহি।
রুহি কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলো। তারপর জড়ানো গলায় বলল,” আমি আপনাকে বোঝার চেস্টা করছিলাম খালি।”
” আমাকে বোঝার চেষ্টা করছিলে মানে? তা এভাবে ছুয়ে ছুঁয়ে কি বুঝলে?”, রুহি ভীষন লজ্জায় পরে গেলো এবার। মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো সে।
আহান রুহির গলার কাছে মুখ এনে বললো,” সে তুমি চাইলে ছুয়ে দেখতেই পারো। আফটার অল অ্যাম অল ইউর্স।”
রুহি চোখ পিট পিট করে আহানের দিকে তাকালো। তারপর রুহি অভিমানী গলায় বললো,” আচ্ছা তাই বুঝি! তাহলে এতদিন কোথায় ছিলেন। এখন খুব একেবারে ডায়লগ দিচ্ছেন।”
” কেনো আমায় খুব মিস করেছো বুঝি?”, আরেকটু এগিয়ে আসতেই আহানের নিঃশ্বাস রুহির গলায় পড়তেই কেপে উঠে চোখ বন্ধ করলো রুহি। তারপর একটু সরে আসার চেষ্টা করে বললো,” একদমই না।”
” আচ্ছা তাহলে আমার শার্ট গায়ে দিয়েছো কেনো? আমার শার্ট তাহলে ফেরত দেও।”, আহানের কথা শুনেই রুহি চমকে উঠে শার্টটা চেপে ধরলো। তারপর রেগে বললো,” একে তো দুদিন আসেন নি এখন আবার এসব বলছেন?”
আহান রুহিকে জড়িয়ে ধরে শান্ত গলায় বললো,” দিদাকে সবটা জানিয়ে দিয়েছি।”রুহি চিন্তিত হয়ে তাকালো।
” দিদাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে সামলাতে সময় লেগেছে তারপর সমিরার একটা ব্যাবস্থা করলাম। এবার একটু নিশ্চিত আছি বাকিটা দিদা সামলে নিবে।”, বলেই রুহির কাধে মাথা রাখলো।
” সব ঠিক হয়ে যাবে তো?”, বলেই উদাস হয়ে বলল রুহি।
” আমি আছি তো।”, আহানের কথায় রুহি একটু সাহস পাচ্ছে।
______________
সকালে রুহির ঘুম ভাঙলো দরজার টোকা শুনে। রুহি হুড়মুড়িয়ে উঠে যেতেই আহান আরো শক্ত করে ধরে বললো,”রুহি বিরক্ত করো না। আমাকে ঘুমাতে দেও।”
” ধুর কিসের ঘুম আপনি উঠুন। রহিমা খালা দরজায় টোকা দিচ্ছে। ভোর হয়ে গেছে, এবার আপনি যাবেন কি করে দেখে ফেলবে তো।”, আস্ফাস করে বললো রুহি। আহান বিরক্ত হয়ে রুহির দুই বাহু চেপে বিছানার সাথে মিশিয়ে দিয়ে রুহির দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,” গত দুই দিন আমার ঘুম হয়নি। আমাকে ঘুমাতে দেও।” বোলেই রুহির গলায় মুখ ডুবিয়ে শুয়ে পড়লো আহান।
” আচ্ছা আপনি ঘুমান। আমি দরজাটা বাহিরে দিয়ে লাগিয়ে দিয়ে যাবো। আমাকে যেতে দিন।”, দরজার দিকে তাকিয়ে বললো রুহি।
” তোমায় ছাড়া আমার ঘুম আসে না।”, আহানের কথা শুনে রুহি চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। আহান শান্তিতে চোখ বন্ধ করে আছে। দরজায় আবার টোকা পড়লো। রহিমা খালা আবারও বললো,” দিদিমনি উঠেন। আর কতো ঘুমাইবেন। নানী ডাকে তো।”
আহান শব্দে বিরক্ত হয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” ওনাকে এইখান থেকে যেতে বোলো এক্ষুনি। তখন থেকে ডিস্টার্ব করে যাচ্ছে।”
রুহি আড় চোখে তাকালো। তারপর বললো,” খালা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমি যাও।”
” তারাতারি আইসেন।”, বোলে চলে গেলেন তিনি।
রুহি আহানকে ঠেলতে লাগলো তারপর নিজের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,” উফ কি শুরু করেছেন? সরুন আমার জামা বদলাতে হবে।”
রুহি বিছানা থেকে নেমে গেলো।
আহান মাথার পিছনে হাত রেখে গা হেলিয়ে দিয়ে বললো,” কেনো? আমার শার্ট মানিয়েছে তোমায়। হট লাগছে।”
রুহি আড় চোখে তাকিয়ে নিজের জামা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল।কিছু বললো না কারন বললেই কথা বাড়িয়ে তাকে আটকে রাখতে চাইবে। রুহি জলদি ফ্রেশ হয়ে বের হলো। বের হয়ে দেখে আহান আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। রুহি দরজাটা বাহির দিয়ে লাগিয়ে ভয়ে ভয়ে নিচে নামলো। নিচে নেমে খাবার টেবিল থেকে নিজের নাস্তার প্লেটটা নিয়ে কেটে পড়তে নিলেই নানু সামনে পড়লো। রুহির বুকটা আতকে উঠলো।
” শরীর কি বেশী খারাপ তোমার? এতো দেরী করে উঠলে যে!”, রুহির মাথায় হাত দিয়ে বললেন নানু।
” মাথাটা কেমন করছে তাই শুয়ে ছিলাম।”, একটা ঢোক গিলে বললো রুহি। এর মাঝে নিজের রুম থেকে রহিমা খালার চিৎকার শুনে রুহির আত্তা বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো। আয়হায় উনি আবার কখন উপরে গেলো। আহানকে দেখে ফেলেছে মনে হয়। নানু উপড়ে যেতেই রুহি নানুকে আটকে দিয়ে বললো,” আরে আরে! নানু তোমার হাটুর ব্যাথা সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে না। আমি দেখছি। রহিমা খালা তো পোকা মাকড় দেখলে এমন করেই”
বলে নানুকে আটকে রুহি দৌড়ে উপরে এলো। উপরে এসে নাস্তার প্লেট টেবিলে রেখে দেখে রহিমা খালা ইস্তম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। রুহি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুলিয়ে ঘরটা দেখে নিলো আহান আছে কিনা, না নেই। রুহি হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তারপর রহিমা খালাকে বললো,” এমন চিৎকার করলে কেনো? কি হয়েছে।”
তিনি শঙ্কিত হয়ে বলল,” ঝাড়ু দিতে আসছিলাম, তারপর কিসের জানি ছায়া দেখলাম ঐদিকে।”
রুহির বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। এর মাঝে নানু উপড়ে চলে এলেন। শেষ এবার সব শেষ।
” কি হয়েছে রে রহিমা?”, নানু জিজ্ঞেস করতেই রহিমা খালা ফর ফর করে সব বোলে দিলো।
রুহি ঘামতে লাগলো।
” আচ্ছা দাড়া, দেখছি। তুই দিনে দুপুরে ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছিস? বলদ মাইয়্যা।”, বোলেই নানু আলমারির দিকটায় এগিয়ে যেতে লাগলো। রুহি এবার কি করবে? ওইখানে যদি আহানকে দেখে কিংবা আহান যদি ঐখানেই লুকিয়ে থাকে। কি হবে! শেষ সব শেষ।
[ #চলবে ]
{ Don’t be a silent reader}