বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_৩৫

0
1105

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩৫
#নবনী_নীলা

রাত বারোটা, রুহি নিজের রুমে ঢুকলো। রূমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে ফেললো। কিছুক্ষণ সে একা থাকতে চায়, নানু হয়তো একটু পর এসে খাবার জন্য জোড় করবে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। চুলের বাঁধনটা খুলে দিলো রুহি। রূমের লাইটাও জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না তার। জানালায় তাকাতেই রুমাদের বারান্দার লাইটা দেখা যাচ্ছে। রুহি জানালার দিকে এগিয়ে যেতেই কেউ একজন পিছন থেকে রুহির মুখ চেপে ধরতেই ছটফট করতে লাগলো রুহি। রুহির প্রচন্ড রাগ লাগছে। তার জীবনে কি কম যন্ত্রণা চলছে যে এখন চোর জ্বালাতন করতে এসেছে। হাতের কাছে পেলে ব্যাটাকে এমন ধোলাই দিবো। মেরে নাস্তানাবুদ না করেছে তার নাম রুহি না। রুহি খুব জোড়ে কামড় বসিয়ে দিলো, সব রাগ যেনো সেই হাতের উপর গিয়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে রুহির মুখের উপর থেকে হাত সরে যেতেই রুহি দৌড়ে লাইট অন করে গাছ থেকে আম পাড়ার লাঠি হাতে নিয়ে পিছনে ঘুরতে ঘুরতে বললো,” কতো বড়ো সাহস আমার মুখ চেপে ধরে, আমার বর থাকলে তোকে পিটিয়ে শিধে…” এতটুকু বলেই পিছনে তাকিয়ে রুহি থ মেরে দাড়িয়ে গেলো। এমন কিছুর আশা সে একদমই করেনি।

রুহি হাতের লাঠিটা ফেলে নিরবে সামনে তাকালো। সে অবাক হয়েছে কিন্তু সামনে থাকা লোকটাকে দেখে রুহির আরো রাগ হচ্ছে। চোর হলে তাকে পিটিয়ে রাগ কমানো যেতো বরকে তো পিটানো যাবে না।

” তুমি এতো সাংঘাতিক কেনো? হাতে এটা কি নিয়েছিলে, মাথা ফাটানোর শখ জেগেছে নাকি তোমার?”হাতটা ডলতে ডলতে বললো আহান।

রুহি ভ্রু কুচকে আহানের দিকে এগিয়ে গিয়ে আহানের হাতটা মালিশ করে দিতে লাগলো গম্ভির মুখে। আহান রুহির রাগমাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। খোলা চুলগুলো যেনো রাগমূর্তি মেয়েটিকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। রুহি আহানের হাত থেকে হাত সরিয়ে বললো,” সব সময় এভাবে চোরের মতন মুখ চেপে ধরেন কেনো?”

” যারা জিনিসপত্র চুরি করে তারা কখনো মুখ চেপে ধরে না কিন্তু মানুষ চুরি করতে আসলে আমার মতন মুখ চেপে ধরে।”, বলে রুহির মুখের সামনের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলো। রুহি আড় চোখে জানালার দিকে তাকালো। জানালার তালাটা ভেঙে ঢুকেছে আহান। একবার একটা চোর জানালার গ্রীল কেটে ঢুকায় নানাভাই তালা মেরে দিয়েছিলো। এই বর নামক চোরটা সেই তালাও ভেঙে ফেলেছে।

রুহি আড় চোখে তাকালো। আহান রুহির কোমড় জড়িয়ে কাছে এনে চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। দিন শেষে এই মুখটি দেখলো সে। আহান নিরবতা ভেঙ্গে বললো,” তোমার নানাভাইয়ের কি অবস্থা? উনি এখন ভালো আছেন?”

” হুম, এখন একটু ভালো আছে। বুকে ব্যাথা কমেছে কিন্তু পেসার হাই হয়ে আছে।”, মলিন চোখে বললো রুহি।

” সবটা আমার বেখেয়ালির জন্যই হয়েছে। আমি ভুলেই গেছিলাম আমাদের এগ্রিমেন্টের কথা। এতো তাড়াতাড়ি সাত মাস শেষ হবে ভাবিনি।”

” হ্যা এগ্রিমেন্ট করার সময় তো ঠিক মনে ছিলো। তার ওপর জুটিয়েছেন একটা কপালে একজন যে আপনার প্রেমে বিভোর। যত্তসব। শাকচুন্নি একটা, আপনার পিছুই ছাড়ছে না। প্রেমে একবারে পাগল করে দিয়েছেন তাকে।”, প্রচন্ড রেগে বললো রুহি। সামিরার বার বার এভাবে তাদের মাঝে আসাটা রুহির একদম পছন্দ হচ্ছে না। এবার তো সামিরা বাড়াবাড়ি রকমের ঝামেলা শুরু করেছে। তারওপর আহানের উপর খালি নজর দেয়। রুহি নিজের কিছুর উপর কারোর নজর সহ্য করতে পারে না।

“হ্যা সেটা ঠিক। খালি তুমি ওমন পাগল হলে আমার কষ্ট কম হতো।”, ঠোঁট এলিয়ে বললো আহান।

রুহির রাগটা চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। রুহি কোমড় থেকে আহানের হাত সরিয়ে বললো,” ঠিক আছে কষ্ট করতে হবে না, ডিভোর্স তো হয়ে গেছে ঐ শাকচুন্নিকে গিয়ে বিয়ে করে ফেলুন।”, বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো রুহি।

” বলছো তাহলে।”, নিচের ঠোঁট কামড়ে বললো আহান কথাটা বলতেই রুহি রাগে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আহান এগিয়ে এসে রুহিকে নিজের দুই বাহুতে জড়িয়ে ধরে বললো,” রাগ হচ্ছে নাকি?”

” ছাড়ুন আমাকে। এইখানে এসেছেন কেনো?”, নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে রুহি।

” তোমায় দেখতে।”, ঘোর লাগা চোখে বললো আহান।

” আমাকে দেখতে হবে না। গিয়ে শাকচুন্নিটাকে দেখুন।”, কড়া গলায় বললো রুহি।

” তুমি এতো হিংসুটে আমার জানা ছিলো না। তবে তোমার হিংসাটা আমার ভালো লাগছে।”

রুহি কড়া চোখে বললো,” ছাড়ুন আমাকে।”

আহান রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। হটাৎ রুহির সাথে অন্য কারোর বিয়ে, নানুর বলা কথাটা মনে পরতেই আহান রুহিকে টেনে জড়িয়ে ধরে রুহির নিশ্চুপে রুহির কাধে মাথা রাখলো। রুহি থমকে তাকালো আহানের দিকে। তারপর কি ভেবে জড়িয়ে ধরলো আহানকে। আহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,” রুহি যাবে আমার সাথে? আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।” বলেই আহান মাথা তুলে রুহির দিকে তাকালো।

আহানের কথাটা শুনে রুহির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। রুহি না সূচক মাথা নাড়লো। এমন কিছু সে করবে না। নানুকে সে আর কষ্ট দিতে পারবে না।
” নানু অনেক অভিমানী সভাবের। উনি এমনিতেই অনেক কষ্ট পেয়েছেন। ওনার মনে হচ্ছে বাবার মতন এবারও তিনি মানুষ চিনতে ভূল করেছেন। রাগটা আসলে নানুর নিজের উপরই তাই তিনি এতোটা শান্ত হয়ে আছেন। আমি নানুকে আর আঘাত দিতে পারবো না।”

” কিন্তু উনি যে বলছে তোমার আবার বিয়ে দিবে। এমন তো না যে আমি তোমায় চাচ্ছি না কিংবা তুমি আমায় চাচ্ছো না। যেখানে আমারা দুজনই একসাথে থাকতে চাই। উনি একটা সুযোগ না দিয়ে আলাদা করে দিতে চাইছেন। আবার বলছে বিয়ে দিবে তোমার। শুনে আমার ইচ্ছে করছিলো সব কিছু ভেঙ্গে ফেলি।”, বলতে বলতে চোখ লাল হয়ে এলো আহানের।

” আবার বিয়ে! বিষয়টা ভেবে দেখতে হচ্ছে তোর।”, আগ্রহ দেখিয়ে আহানকে রাগিয়ে দিয়ে বললো রুহি।

” ঠিক কি ভেবে দেখবে তুমি?”, চোয়াল শক্ত করে বললো আহান।

” কিছুই না। খালি আবার বিয়ের ভালো দিকের সাথে খারাপ দিকের তুলনা করতাম।
এমনিই বলেছি। রাগ করছেন কেনো?”, বলে একটু হাসার চেষ্টা করলো রুহি। কিন্তু আহানের কড়া চোখ দেখে হাসি,আসছে না।

“খুব বিয়ে করার শখ না তোমার?”, গম্ভীর গলায় বলতেই রুহি না সূচক ঘন ঘন মাথা নেড়ে বললো,” একদমই না। আমি কি সেটা বলেছি নাকি! একবারে করেই শখ মিটে গেছে।”

” একটু আগে তো খুব লাফাচ্ছিলে বিয়ে নিয়ে। তুমি যতবারই বিয়ে করো না কেনো তোমার বর কিন্তু একজনই থাকবে, কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নেও।”, মুখটা একদম রুহির কাছে এনে বলতেই চোখ পিট পিট করে বললো,” আমি কি বলেছি আমার শত শত বর হবে? এতো বেশি বুঝেন কেনো আপনি? আর আমি এখন কুমারী মেয়ে আমার থেকে দুরে দুরে থাকবেন। এতো কাছে আসবেন না।”বলেই আহানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।

” হোয়াট? কুমারী!”, ভ্রু কুঁচকে বললো আহান।

” হ্যা কুমারী। আর আজ থেকে আপনি আমার বর না আমি আপনার বউ না। তাই ডিসটেন্স মেইনটেইন করবেন। বুঝেছেন?”, কটাক্ষ করে বললো রুহি।

” আচ্ছা তাই বুঝি?”, ঠোঁট চেপে হাসতে হাসতে আহান বিছানায় বসলো।

” আমি কি আপনাকে কৌতুক শুনিয়েছি? আপনি হাসছেন কেনো?”, দাতে দাত চেপে বললো রুহি।

” তা একটা কুমারী মেয়ের ঘরে আমার মত যুবক এতো রাতে কি করছে?”, বলেই ঠোঁট এলিয়ে হাসলো আহান।

আহানের প্রশ্নের উত্তরে রুহি বললো,” যুবক বিছানায় বসে কুম্ভকর্ণের মতন হাসছে।”

” আচ্ছা তোমার না বয়ফ্রেন্ডের খুব শখ ছিলো? বাহ্ সেই শখ পূরণের সময় এসে গেছে দেখছি।”, আহানের কথা শুনে রুহি আড় চোখে তাকালো আহানের দিকে। লোকটার মাথা পুরো গেছে। রুহি ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমি কবে বলেছি এসব উল্টা পাল্টা কথা?”

” ড্রিংকস করে কি কি করেছো আর বলেছো মনে করাবো?”, রুহি নিচের ঠোঁট কামড়ে তাকালো আহানের দিকে। এসব কথা শুনলেই রুহির বলার কিছুই থাকে না। কারন মাতাল হয়ে কি কি অকাজ সে করেছে তার কোনো সীমা নেই।

আহান রুহির দিকে তাকিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,”সুইট হার্ট।” শব্দটা কর্ণগোচর হতেই রুহি ভূত দেখার মতো করে আহানের দিকে তাকালো। আহান তাকে সুইট হার্ট বলছে। কি দৃশ্য কি দৃশ্য! রুহি দৃষ্টি একই রেখে একটা ঢোক গিললো। আহান ঠোঁট এলিয়ে বললো,” সুইট হার্ট আমার খিদে পেয়েছে।”

রুহি একটা ঢোক গিলে বললো,” খিদে পেয়েছে মানে? আপনি না খাওয়া এতক্ষণ!”বোলেই রুহি চিন্তায় পড়ে গেলো। এতক্ষণ খাবো না খাবো না বোলে কি না করলো সে। এবার নীচে গিয়ে খাবার আনবে কিভাবে? চুলের ভিতর হাত চালাতে চালাতে রুহি ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ।একমুহুর্ত অপেক্ষা করলো না। কারণ অসময়ে খাবার খাওয়া আহানের জন্য ভালো না। এসিডিটির সমস্যা হয়। এমনিতেই রাত একটার কাছাকাছি। রুহি পা টিপে টিপে কিচেনে ঢুকলো। বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। নানুর ঘর কিচেনের কাছাকাছি। ওদিকে আহান কি করছে কে জানে? মামা যদি রুমে বাতি জ্বলছে দেখে রুমে যায়। ভেবেই আত্তা কেপে উঠছে রুহির। রুহি খুব সাবধানে প্লেটে খাবার গুলো নিয়ে ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই থমকে গেলো। এমনভাবে ধরা খাবে কে জানতো। এবার কি হবে? নানু সামনে দাড়ানো, রুহির আত্মাটা যেনো বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। কিভাবে সামলাবি রুহি? রুহি চোখ বন্ধ করে একটা ঢোক গিললো।

[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here