বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_৩১

0
1086

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩১
#নবনী_নীলা

” আমি ছাড়া কেউ তোমার দিকে তাকালে আমার সহ্য হয় না, বুঝেছো?”, রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো আহান। রুহি চোখ পিট পিট করে তাকালো আহানের দিকে। বাপরে, কি হিংসুটে জামাই হয়েছে তার! আহান কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রুহির কোল থেকে রুহির হাতটা ধরে বসলো। রুহি অপ্রস্তুত হয়ে আশে পাশে তাকাচ্ছে। ইস সবাই কিভাবে দেখছে। রুহি ফিসফিসিয়ে বললো,” এভাবে হাত ধরে আছেন কেনো? সবাই দেখছে তো।”

” দেখুক, দেখানোর জন্যেই ধরেছি।”, হালকা হেসে বললো আহান।

আহান কাজ কারবার মাঝে মধ্যেই রুহির মাথায় ঢুকে না। রুহি আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” মানে?”

আহান ধরে রাখা হাতটা কাছে এনে কিস করতেই রুহির চোখ ছানবড়া হয়ে গেলো। গেছে লোকটার পুরো মাথা খারাপ হয়ে গেছে। পুরো লোকভর্তি জায়গায় এসব শুরু করেছে। রুহি আশেপাশে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিরবে দাতে দাত চেপে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আহান তো ছাড়ার পাত্র নয়। শেষমেষ রুহি দাতে দাত চেপে বললো,” ছাড়ুন তো। হাত ধরার জন্যে বাকি জীবন পরে আছে। এখনই ধরতে হবে হাত?”

” এই সময়টা তো আর ফিরে আসবে না। এমন সুন্দর সন্ধ্যা কেনো আমি ওয়েষ্ট করবো।”, আহানের এই কথার পর রুহি আর কিছু বললো না। এনাকে বলেও লাভ নেই।

অনুষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেছে। আহান রুমে ঢুকে দেখে রুহি নিজের গলার হার খুলতে ব্যাস্ত। আহান দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে পকেটে হাত ভরে এক দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে রুহি গলার হাত খুলতেই পারছে না। রুহির দ্বারা হবেও না তাই আহান এগিয়ে এসে রুহির হাত ধরে আয়নার সামনের টুলটায় বসালো। রুহি চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতন বসলো। আহান রুহির সামনে হাটু ভাজ করে বসে রুহির হাতের চুড়িগুলো আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো। রুহি আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে কেনো জানি তার কাছে এসব নিছক স্বপ্ন মনে হয়। কেউ তাকে ভালোবেসে এতোটা আগলে রাখবে কল্পনা পর্যন্ত করেনি সে। আহান এর ফাকে রুহির দিকে তাকাতেই দেখলো রুহি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আহানের চোখে চোখ পড়তেই রুহি চোখ পিট পিট করে অন্যদিকে তাকালো।

আহান নিরবে হাসলো তারপর রুহির হাতের চুড়িগুলো খুলে রেখে উঠে দাড়ালো তারপর রুহির গলার হার আর কানের দুল নিজ হাতে খুলে দিলো। তারপর বুকের কাছে হাত গুজে রুহিকে দেখতে লাগলো আহান। রুহি উঠে চলে যেতে নিতেই আহান রুহি হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে এলো। রুহি আহানের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিললো। রুহির মুখের সামনের ছোটো চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,” আমার কাছে আসলেই এমন চোরের মতন করো কেনো?”

রুহি মুখ কালো করে একবার আহানের দিকে তাকালো। আহান রুহির খোঁপার পিনটা খুলে দিতেই চুলগুলোর বাঁধন খুলে যায়। খোলা চুলে রুহির পিঠ ঢেকে গেছে।। রুহি হতভম্ব হয়ে আহানের দিকে তাকালো। রুহি হাত ছাড়াতে বললো,” গরম লাগছে তো চুল খুলে দিলেন কেনো? হাত ছাড়ুন আমি চুল বাধবো।”

আহান হাত ছেড়ে এবার রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরলো। তারপর রুহির গায়ের ওরনাটা টান মেরে সরিয়ে দিতেই রুহি চমকে তাকালো। বুকের ভিতরে আবার দ্রিম দ্রিম করতে লাগলো।
” আ.. আপনি কি করছেন?”, জড়তা নিয়ে বলল রুহি।

” তুমি তো বললে তোমার গরম লাগছে।”, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল আহান। তারপর রুহির বাহু ধরে রুহিকে সামনে ঘোরালো। এক হাত কোমড়ে জড়িয়ে অন্যহাতে ঘাড়ের চুল গুলো সরিয়ে দিলো। রুহির হাত পা একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে। হার্টটা মনে হয় একটু পর লাফিয়েই বের হয়ে আসবে। আহানের নিশ্বাস ক্রমাগত ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে রুহি নিচের ঠোঁট কামড়ে নিজেকে শান্ত করে রেখেছে। আহান হাত বাড়িয়ে লাইটের সুইচ বন্ধ করে দিতে রুহি আর শান্ত থাকতে পারলো না। অস্থির হয়ে উঠলো। টেবিল ল্যাম্পের হালকা আলোয় রুমটা আলোকিত। হটাৎ জামার চেইন খোলার শব্দে রুহি আতকে উঠে চলে যেতেই, আহান রুহিকে কোলে তুলে নিলো।

রুহি আহানের শার্ট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আহান ঘোর লাগা চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর রুহির কানের কাছে মুখ এনে বললো,” লাইট তো বন্ধ করে দিয়েছি এবার কিসের লজ্জা?”

কথাটা শুনে রুহি আরো জোড়ে আহানের কাধ খামচে ধরলো। ব্যাথায় আহান ভ্রু কুচকে ফেললো। তারপর রুহিকে বিছানায় শুইয়ে টেবিলে ল্যাম্পটা বন্ধ করে দিতেই অন্ধকারে সবটা ছুয়ে গেলো। চাঁদের আলোটা হালকা এসে রাতটা আরো সুন্দর করে তুললো।

_________________

বিয়ে বাড়িতে হটাৎ কেউ রুহির হাত ধরে টেনে একটা ফাকা রুমে নিয়ে এসে আলতো করে মুখ চেপে ধরতেই, রুহি হাতটায় একটা কামড় বসিয়ে দিলো। রুহি কাছে এসেই বুঝেছে এটা আহান। ব্যাথায় আহান ঠোঁট চেপে হাত সরিয়ে নিলো। রুহি কড়া চোখে পিছনে তাকালো। আহান মুগ্ধ হয়ে রুহি দিকে তাকিয়ে আছে। মেরুন রঙের শাড়িতে অপরূপা লাগছে রুহিকে। খোলা চুল, আর কপালের ছোটো টিপটা যেনো তাকে আরো সুন্দর করে তুলেছে।
রুহি কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে বললো
,” আচ্ছা আমি আপনার বউ নাকি অন্যকিছু?”

রুহির কথায় আহান নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,”অন্যকিছু মানে?”

” অন্যকিছুই তো। নিজের বউয়ের সাথে কে এমন করে? অদ্ভুত মনে হয় যেনো আমাদের বিয়ে হয় নি।আমরা প্রেমিক প্রেমিকা। আপনি এমন ভাবে আমার মুখ চেপে নিয়ে এলেন যেনো প্রেমিকার সাথে শত বছর পর দেখা।”, গর গর করে কথাগুলো বললো রুহি।

” থ্যাংকস ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট।”, বোলেই ঠোঁট এলিয়ে বললো আহান।

” এটা কমপ্লিমেন্ট মনে হলো আপনার কাছে। আশে পাশে এতো লোকজন কি ভাববে বলুন তো?”,

আহান রুহির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,” আই ডোন্ট কেয়ার।”

রুহি পিছাতে পিছাতে একদম দেওয়াল ঘেষে দাঁড়ালো। তারপর আহানের দিকে চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে বললো,” উফ, আপনি আমাকে এইখানে এনেছেন কেনো বলুন তো?”

” আমার তোমাকে বউ সাজে দেখতে ইচ্ছে করছে।”, এক পাশের দেওয়ালে হাত রেখে বললো আহান।

” কেনো আমাদের বিয়েতে কি আপনি চোখে পট্টি বেধে ছিলেন। তখন দেখেন নি?”, কটাক্ষ করে বললো রুহি।

” তখন খেয়াল করিনি।”,

” হ্যা তো আমি কি করবো? এখন বউ সেজে আপনার জন্য বসে থাকবো?”, তীক্ষ্ণ চোখে বললো রুহি।

আহান রুহির মুখের সামনে উড়ে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,” হুম্। নিজের বরের জন্য এতটুকু পারবে না?”

” নাহ্ পারবো না। ইস শখ কতো ওনার জন্য এখন আমি বউ সেজে বসে থাকবো। তখন দেখেননি কেনো? খুব তো মুখে পানি ঢেলে দিয়েছিলেন! মুখে পানি ঢেলে ঘুম থেকে উঠানোর সময় মনে ছিলো না।”, রেগে বললো রুহি।

” তখন কি জানতাম নাকি যে এই মেয়েটা আমায় এতো পাগল করে ফেলবে।”,

রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকালো। আহান রুহির আরেকটু কাছে এসে বললো,” তুমি চাইলে আমি তোমায় সাজিয়ে দিতেই পারি।”

” নাহ্ এতো দরকার নেই। কুম্ভকর্ণগিরি করেছেন না আমার সাথে, সেগুলো এতো সহজে ভুলে যাবো ভেবেছেন? হবে না আমি আপনার জন্যে বউ সাজতে পারবো না।”, কটাক্ষ করে বলতেই আহান রুহির কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললো,” আচ্ছা আর যে ভালোবাসি সেটা মনে থাকে না? বার বার কি মনে করিয়ে দিতে হবে।” বলে মুখ এগিয়ে আনতেই রুহি হাত দিয়ে আহানের ঠোট চেপে ধরে বললো,” একদম উল্টা পাল্টা কিছু করবেন না। আমার সাজ যদি নষ্ট হয়েছে আপনাকে আমি…..”, বলতে থাকতেই আহান, ঠোঁটের উপর থাকা রুহির হাতে কিস করতেই রুহি হাত সরিয়ে নিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকালো আহানের দিকে।

রুহি আহানকে সরিয়ে দিয়ে বললো,” আপনি একদম যা তা। কোথায় আছেন মাথায় আছে আপনার? কেউ এসে পড়লে কি হবে?”
বলেই আহান ধরার আগে রুহি দরজার কাছে পৌঁছে দরজাটা খুলে ফেললো। দরজাটা খুলতেই রুহির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। প্রমা আর লাবণ্য দাড়িয়ে আছে। দেখে তো মনে হচ্ছে এতক্ষণ দাড়িয়ে বদমাইশগুলো সব শুনেছে। রুহি কড়া গলায় বললো,” তোরা দুটো এখানে কি করছিস?”

” কিছুই না, আমরা তোকেই খুঁজতেছিলাম। পরে দেখি তোমাকে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলো। ব্যাস এতটুকুই দেখেছি।”, সাভাবিক ভঙ্গিতে বললো লাবণ্য।

রুহি শক্ত চোখে ওদের দিকে তাকালো। এই ফাকে প্রমা হাত দিয়ে ঠেলে দরজাটা সরিয়ে দিতেই আহানকে দেখে হেসে উঠে বললো,” হেলো জিজু।”

প্রমার কথায় রুহি পিছনে তাকিয়ে দেখে পুরো দরজাটা খুলে ফেলেছে প্রমা। এমন চুন্নি মার্কা যে তারাই বান্ধুবিগুলো সেটা তার জানা ছিলো না।

প্রমা আহানের উদ্দেশ্যে বললো,” চাইলে আমরা রুহিকে বউ সাজিয়ে দিতেই পারি।”

আহান হেসে ফেললো, তারপর বললো,”আমি নিজেই পারবো।”

রুহি রাগে গজগজ করে আহানের দিকে তাকালো। সাধে কি আর নিলোজ্য বলি?
প্রমা আর লাবণ্য অদ্ভুত দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে হাসলো।

” আমাকে খুজতে এসেছিস কেনো সেটা বল।”, আড় চোখে তাকিয়ে বললো রুহি।

” আরে ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। কবুল বলা শেষ তাই তোকে খুঁজছিলাম। লামিয়া খোজ করছে।”,

” কি কবুল বলা শেষ!”, সেখানে উপস্থিত থাকতে না পেরে আফসোস করে বললো রুহি। সব হয়েছে ঐ কুম্ভকর্ণের জন্য।

” আমরা গেলাম তুই আয়। জলদি।”, বলে প্রমা আর লাবণ্য মিটমিট করে হেসে চলে গেলো।

রুহি আর চোখে আহানের দিকে তাকালো। ঠোট এলিয়ে হাসছে সে। রুহি বির বির করে বললো,” কুম্ভকর্ণ ” বলেই হন হনিয়ে চলে গেলো।

[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here