#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_২৯
#নবনী_নীলা
” বর পাইসি এমন একখানা, একে নিয়ে যে কি হবে আমার। জানিস অংটি পড়ানোর দিন আমি জিজ্ঞেস করেছি শাড়ি পড়লে আমাকে দেখতে কেমন লাগে। বেতের চেয়ারে বসে ছিলো আমার কথায় পুরো পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। আহ আমি কি খুশি এক্ষুনি প্রসংশা শুনবো। বেটা নিরামিষ কি বললো জানিস? হুঁম মেয়ে মেয়ে লাগছে। ইচ্ছে করছিলো ছাদে নিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই। নিরামিষ কোথাগার! বিয়েটা হতে দে, এক বছরের মধ্যে যদি এই নিরামিষকে বাচ্চার বাপ না বানাইতে পারি আমার নাম লামিয়া না।”
রুহি লামিয়ার কথা শুনছিল এমন সময় সেখানে জয় উপস্থিত হয়। শেষের কথাটা,”বিয়েটা হতে দে, এক বছরের মধ্যে যদি এই নিরামিষকে বাচ্চার বাপ না বানাইতে পারি আমার নাম লামিয়া না।” ঠিক সেই সময়ে সেখানে পৌছে নির্বিকার দৃষ্টিতে লমিয়ার দিকে তাকালো জয়। পুরোটাই সে শুনেছে। রুহি একটু কেশে হাতের ইশারায় লামিয়াকে থামানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কে শোনে কার কথা। এ মেয়ে কি শোনার পাত্র? আহান পর্যন্ত সেখানে পৌছে যায়। বাচ্চার বাপ কথাটা শুনে আহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেয়েগুলো কি নিয়ে কথা বলছে?
আহানকে দেখে রুহি কপালে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
” কার বাচ্চা?”, অর্ধেক কথা শুনলে যা হয়। আহান প্রশ্ন করে বসলো।লামিয়া চমকে পিছনে তাকালো। বাহ্ কি সৃতিমধুর দৃশ্য। এই দুটোকে এখনই আসতে হলো। জয় এসেছে ঠিক আছে এসব তার শোনার দরকার কিন্তু আহানকে দেখে চুপ করে অন্যদিকে তাকালো লামিয়া। রুহি তো মুখ লুকানোর জায়গা খুজছে।
আহান প্রশ্নের জবাবে কিছু না পেয়ে বললো
” আমি আর জয় একসাথেই বের হচ্ছি। ওর কিছু কাজ আছে বললো। তোমরা থাকো।”
” আসছি।”, লামিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো জয়।
তারপর দুজনেই একসাথে বেরিয়ে গেলো। ওরা চলে যেতেই রুহি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” তুই না একটা…. এই জন্যে বলি একটু আস্তে কথা বল।”
লামিয়া মুখ কালো করে বললো,” ধুর শুনেছে ভালো হয়েছে। খালি তোর জামাইটা না আসলেই হইতো।”তারপর মুখ কালো করে রুহির দিকে তাকাতেই রুহি হেসে ফেললো। লামিয়ার চেহারা দেখার মতোন হয়েছে। রুহির হাসি দেখে লামিয়া নিচের ঠোঁট উল্টে মুখ বাকালো।
______________
রাত দশটার উপরে বাজে আহান এখনও ফিরেনি। আটটার দিকে জয় এসে লামিয়াকে নিয়ে গেছে বাসায়। রুহি পুরো বাসায় একা, বিছানার উপর পা তুলে বসে আছে রুহি। আহানকে কখনো এতো দেরী করতে দেখেনি সে। লোকটা কি রাগ করে এমন করছে। কিন্তু সেই শার্টের কথা মনে পড়তেই রুহির মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। রুহি কাবাড খুলে আবার সেই শার্টটা খুজতে লাগলো। এইতো পেয়েছে সেই শার্ট। শার্টটা হাতে বিছানায় নিয়ে বসলো।
রুহি যদি প্রশ্ন করতো তাহলে আহান কি বলে তাকে বুঝ দিতো? সকালে তো খুব জোর করছিল যাতে তাকে জিজ্ঞেস করে। রাগেই কিছুই বলেনি রুহি।
শার্টটা কি অন্য কারোর? না না শার্টটা আহানেরই মনে হচ্ছে। সিওর এইটা আহানেরই শার্ট। রুহি ভালো করে মনে করার চেষ্টা করলো। এই শার্টটা আহান লাস্ট কবে পরেছে। গতকাল তো গাঢ় সবুজ রঙের শার্ট পড়েছিল। এই শার্টটা কবে? ভাবতে ভাবতে রুহির মনে পড়লো। আহানের বাড়িতে সেদিন যে গেট টুগেদার হলো সেদিন ব্লু কোর্টের সাথে এই শার্টটা পড়েছিল। সেদিন তো রুহি সারাদিন আহানের সাথেই ছিলো। সামিরা তো ছিলো না আহানের সাথে। আবার থাকতেও পারে চোখের আড়ালে কত কিছু হয়। আচ্ছা সেদিনের ছবি গুলোতো রুহির ফোনে আছে। এই লিপস্টিকের সাথে সামিরার লিপস্টিকের মিল পাওয়া যায় কিনা দেখলেই তেলে জলে আলাদা হয়ে যাবে। রুহি অনেক্ষন ফোন হাতে দেখলো কিন্তু কোনো মিল পেলো না।
রুহি হতাশ হয়ে বললো,” উফ আমার মতন এমন হালকা রঙের লিপস্টিক আবার কে ইউজ করে।”খুজতে খুজতে বিরক্ত হয়ে বললো রুহি।
শার্টের দিকে তাকিয়ে হটাৎ রুহির মাথায় এলো সেদিন রাতে তো রুহি অলমোস্ট ড্রাংক ছিলো। ভাবতেই চোখগুলো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো রুহি।” এ অকাজ আমার নাতো?”, বলেই মুখ চেপে ধরলো। সন্দেহটা রুহির এবার নিজের উপরই হলো। রুহি তাড়াতাড়ি শার্টটা কাবাডে রাখলো। নিজের উপর থেকে তার বিশ্বাস উঠে গেছে। অকাজটা রুহি যে করেছে সেটা নিয়ে রুহির সন্দেহ নেই এখন। ওসব খেয়ে না জানি আর কতো কি করেছে। এসব তার সাথেই হতে হবে। আহান তার মানে রেগেই আছে। রাগটা করাও স্বাভাবিক। উফ এবার সে মশাইয়ের রাগ ভাঙ্গবে কিভাবে?
আহান সাড়ে দশটার পর এলো। বাহির থেকেই চাবি দিয়ে ভিতরের লক খুললো আহান। দরজা খোলার শব্দে রুহির বুকের ভিতরটা দ্রিম দ্রিম করতে লাগলো। তারপর বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে গেলো। আহান গায়ের কোর্টটা খুলে হাতে নিয়ে রুমে আসতেই রুহির দিকে একবার তাকালো। তারপর সোজা কাবাড খুলে নিজের টিশার্ট আর ট্রাজারটা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। বাবারে ভালোই ক্ষেপে আছে মনে হচ্ছে। এই রাগ কিভাবে ভাঙাবি তুই রুহি।
রুহি মুখ কালো করে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আহানের বেড়িয়ে আসার অপেক্ষা করতে লাগলো। সকালে কি না বলেছি রাগের মাথায় এর জন্যে এখন ভুগতে হচ্ছে। আচ্ছা লোকটা কি আর আমার সাথে কথা বলবে না? বেশী রাগ দেখালে আমিও বলবো না।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে আহান বেরিয়ে এলো। খাবার টেবিলেও আহান কোনো কথা বলল না। রুহি দু একটা কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হলো না। প্রয়োজনের চেয়ে বেশী একটা শব্দও আহান বললো না। আহানের এই আচরণ রুহির একদম ভালো লাগছে না। রুহির না পারছে সইতে না পারছে বলতে।
খাওয়া দাওয়া সেরে আহান রুম থেকে লেপটপ নিয়ে সোফায় বসে কাজ করতে লাগলো কিন্তু অন্যসময় সেটা আহান রুমে বসেই করতো। রুহির দিকে একবার ভালো করে তাকালো পর্যন্ত না।
রুহি অনেক রাত পর্যন্ত আহানের রুমে আসার অপেক্ষা করলো। শেষে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসতেই রুহি ঘুমিয়ে পরে। সকালে চোখ খুলে রুহি আরো অবাক কারণ আহান তার পাশে নেই। কোথায় লোকটা? রুহি হকচকিয়ে উঠে পরে। আহানকে খুজতে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সোফায় বালিশ আর চাদর। রুহি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এতো রাগ হয়েছে যে সোফায় এসে ঘুমিয়েছে। রুহির কেমন অসস্তি লাগছে।
আহান আজ খুব তাড়াতাড়ি অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। রুহি এসে একপাশে দাড়ালো কারণ তার কিছু বলার ছিল কিন্তু আহান নিজের কাজে ব্যাস্ত।
” আপনার কি আজও ফিরতে দেরি হবে?”, অনেক সাহস নিয়ে প্রশ্ন করলো রুহি।
” হতে পারে।”, সাভাবিক ভাবেই কথাটা বললো আহান তবে রুহির দিকে তাকালো না একবারের জন্য। রুহির মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। আর কি বলবে বুঝে উঠলো না। আহান নিজের মতন অফিসে চলে গেলো। প্রয়োজনের বেশি একটাও কথা বললো না। রুহি মন মরা হয়ে বসে রইলো। আহানকে খুব মিস করতে লাগলো। লোকটাকে সরি বলে দিলেই হয়তো এতো রাগ করতো না। বড্ড বোকামি হয়েছে! কখন আসবে সে? গোমড়ামুখো এমন চেহারা বানিয়ে রাখে কথা বলাও দায়। রুহির কাছে প্রতিটা ঘন্টা একেকটা দিনের মতন লাগছে।
আজ আটটার পরই আহান ফিরেছে। সবটাই আগের দিনের মতন চুপচাপ হয়ে করছে। রুহি কথা বলার অনেক সুযোগ খুঁজলো কিন্তু কোনো সুযোগই দিলো না আহান। ক্রমাগত রুহিকে ইগনোর করে যাচ্ছে। আজ ল্যাপটপ নিয়ে ড্রয়িং রুমে যেতেই রুহি ল্যাপটপটা আহানের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে গেলো। আহান ভ্রু কুচকে রুহির দিকে তাকালো। ল্যাপটপ আবার কি করলো ওকে?
” কি ব্যাপার ল্যাপটপ নিয়ে গেলে কেনো?”,
” আমাকে বলেছেন? শেষমেশ দেখতে পেয়েছেন তাহলে আমাকে। আমার তো নিজেকে অদৃশ্য মানব মনে হচ্ছিল।”, আড় চোখে তাকিয়ে বললো রুহি।
আহান নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,” মানে?”
রুহি ল্যাপটপটা টেবিলের উপর রেগে মুখ ভার করে অনেকটা সাহস জুগিয়ে বললো,” সরি।”। বোলেই মাথা নুইয়ে ফেললো। আহান এগিয়ে আসছে সেটা না তাকিয়েই রুহি বুঝতে পারলো। আরো কাছে আসতেই রুহির বুকের ভিতরের ধুক ধুক আরো বেড়ে গেলো। আহান হাত বাড়িয়ে রুহির পাশের টেবিলে থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে রুহিকে পাশ কেটে চলে গেলো। আহান এমন কিছু করবে রুহি একদম ভাবে নি। রুহির রাগটা বেড়ে গেলো। এই লোকটাকে আমি ছাড়ছি না। আমাকে ইগনোর করা? আমিও দেখবো কিভাবে আমাকে ইগনোর করে।
রুহি আহানের পিছু পিছু গেলো। আহান সোফায় বসে ল্যাপটপটা অন করতেই রুহি আহানের পাশে গিয়ে বসলো। আহান কোনো রিয়েক্ট করলো না। দৃষ্টি ল্যাপটপের দিকে স্থির আহানের। রুহি রেগে গিয়ে ল্যাপটপের উপরের অংশ ধরে ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলো। আহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার ল্যাপটপটা খুলতে যাবে রুহি উঠে এসে আহানের কোলে বসে পড়লো। আহান রীতিমত অবাক হয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে রইলো। রুহি নিজের মুখটা আহানের একদম সামনে এনে বললো,” এবার দেখি কিভাবে আমাকে ইগনোর করেন।”
রুহি এমন কিছুও করতে পারে ভাবাই যায় না। আহান নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে অন্যদিকে তাকালো। রুহি রাগে ফুলতে ফুলতে বললো,” আমি বললাম তো সরি। তারপরও আপনি এমন করছেন কেনো? মানছি ভুল হয়েছে। ভুলের জন্যে কি করতে হবে বলুন।”
” কি ভুল করেছো?”, আহান শক্ত চোখে প্রশ্ন করলো।
” আপনাকে ভুল বুঝেছি।”, মাথা নিচু করে বললো রুহি।
” আচ্ছা।”, বোলে একবার রুহির দিকে তাকালো,” তোমার মনে হচ্ছে না তুমি আমার কাছে চলে এসেছো। না মানে তোমার তো আবার হুট হাট করে আমার কাছে আসায় সমস্যা।”, থুতনির নীচ ডান হাত রেখে বলল আহান।
” আপনি এখণও আমার উপর রেগে আছেন?”, বিষণ্ণতা ভরা চোখে বললো রুহি।
” নাহ্, আমি তা বলিনি। আমি শুধু তোমার বলা কথাগুলো তোমায় মনে করিয়ে দিলাম।”, নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল আহান।
আহানের কথায় রুহি ভীষন কষ্ট পেলো।” আপনি অনেক খারাপ। আমি আর কখনো আপনারা কাছে আসবো না।”, ভরা গলায় বলে চোখ থেকে পানি পরার আগেই উঠে পড়লো আহানের কোল থেকে। উঠে যেতেই আহান আবার রুহির হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসালো। রুহি অন্য হাত দিয়ে চোখের জল মুছতে লাগলো। রুহির রাগ দেখে আহান ঠোঁট এলিয়ে বললো,” আমাকে দিষ্ট্রাক্ট করে কোথায় যাচ্ছো? ভদ্র ছেলের মতন বসে ছিলাম ভালো লাগছিলো না বুঝি।”
রুহি এখনও কেঁদেই যাচ্ছে চুপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে। শেষে মনে হয় একটু বেশী বেশী করে ফেলেছে আহান তাই রুহিকে থামাতে জড়িয়ে ধরে গলার এক পাশে মুখ গুজে দিলো।
তারপর রুহির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,” এগ্রিমেন্ট শেষ হলে আমি তোমায় ছেড়ে দিবো, তারপর আর যে সব চিন্তা তোমার মাথায় আছে। সেগুলো তোমার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। আমি তোমায় কোনোদিন ছাড়ছি না। তোমায় ছাড়া তো আমি থাকতেই পারবো না।”
রুহি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। শুধু শুধু আহানকে ভুল বুঝেছে সে। রুহি কাদো কাদো চোখে আহানকে জড়িয়ে ধরলো। আহান রুহির মুখ তুলে চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,” তুমি তো বললে যে ভুলের জন্য শাস্তি নিতে প্রস্তুত। তাহলে একটা পানিশমেন্ট দেই তোমাকে। তোমার পানিশমেন্ট হলো এক্ষুনি আমাকে কিস করবে।”, ঠোঁট এলিয়ে বললো আহান।
[ #চলবে ]
{ কালকে গল্পটা হয়তো দিতে পারবো না। কিন্তু আমি চেষ্টা করবো, সময় পেলে অবশ্যই দিবো।}