বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_২৮

0
1102

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_২৮
#নবনী_নীলা

কয়েক মাস পর তো আলাদা হয়ে যাবো দুজনেই তাহলেই এই অজানা অনুভূতিটাকে প্রশ্রয় দেওয়া কি ঠিক? কয়েকমাস পর হয়তো এই অনুভুতির অস্তিত্বই থাকবে না। যেমন তার বাবার অনুভুতি বদলে গেছিলো তার মায়ের প্রতি। আহানের ও হয়তো বদলে যাবে। নাকি সবটাই আহান এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী আমাকে তার কাছে রাখার। রুহির অতীতটা তাকে এমন ভাবে আকড়ে রেখেছে সেটা থেকে বেরিয়ে আসাটা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে তার জন্য। রুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এসেই রুহির চোখ গেলো আহানের দিকে। আহান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে ঘড়ি পড়ছে। আহান অফিসে যাবে মনে হয়। কিন্তু এখন তো বিকেল চারটা, অবশ্য সকালে তো তার জন্যই অফিসে যাওয়া হয় নি আহানের তাই হয়তো এখন যাচ্ছে।

আহান আয়না দিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। হালকা হলুদ রঙের থ্রি পিসে অসাধারণ লাগছে রুহিকে। হলুদ রঙ বরাবই রুহির খুব পছন্দের যদিও হলুদ রঙকে অনেকেই অপছন্দের তালিকায় রাখে আহানের মতো। রুহি নিজের চোখে মুখের বিষণ্ণতা ভাব দূর করতে চেষ্টা করছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। আহান সেই বিষণ্ণতা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আয়না দিয়ে।

” রুহি, কাবাড থেকে আমার নেভিব্লু টাইটা বের করো তো।”, আহানের আওয়াজে রুহি চোখ তুলতেই বুঝলো আহান এতোক্ষণ তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। রুহি হাতে থাকা আহানের জামা গুলো একপাশে রেখে বাধ্য মেয়ের মতন কাবাডের দিকে এগিয়ে গেলো। রুহি কাবাড খুলে নেভিব্লু রঙের টাই খুজতে লাগলো। টাই খুজতে খুজতে রুহির একটা শার্টের দিকে চোখ পড়লো। রুহি শার্টটা একটু কাছে এনে দেখার চেষ্টা করলো।

শার্টের বুকের পাশটায় লিপস্টিকের দাগ! দেখেই তক্ষণাৎ রুহি শার্টটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে নীল রঙের টাই নিয়ে কাবাড আটকে ফেললো। নিজেকে পরক্ষনেই সামলে নিয়েছে রুহি, একটা নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে এলো টাই হাতে। আহান সবটাই দেখেছে। রুহি কোনো প্রশ্ন করলো না দেখে আহানের অবাক লাগছে। তবে চোখ মুখের বিষণ্ণতা আরো বেড়ে গেছে।
রুহি এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে টাইটা এগিয়ে দিলো। আহান রুহির দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে মাথা ঝুকালো। রুহি এই মুহুর্তে কোনো কথা বাড়াতে চাইছে না। সে পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি ধাক্কাটা। আহান রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” কি হলো পড়িয়ে দেও টাইটা।”
রুহি আহানের দিকে তাকালো না। পায়ের পাতার উপর ভর করে টাইটা গলায় পরিয়ে ঠিক করতে লাগলো। পুরোটা সময় আহান রুহির প্রশ্নের অপেক্ষায় রুহির দিকে তাকিয়ে রইলো কিন্তু রুহি একবারের জন্যও তাকায়নি। আহান অবাক হচ্ছে রুহিকে দেখে। ভুল বুঝে কষ্টে পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু এক বারের জন্যে প্রশ্নও করছেনা।

” আমি এখন অফিসে যাবো। কিছু বলার থাকলে বলতে পারো। আসতে দেরী হবে।”, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুহিকে জিজ্ঞেস করলো আহান। রুহি নির্বিকার ভঙ্গিতে না সূচক মাথা নাড়লো।তারপর টাই ঠিক করতে লাগলো আহানের। আহান আরেকবার রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,” কোনো প্রশ্ন নেই?”
রুহি সেই আবারও নির্বিকার ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো। আহানের প্রচুর রাগ হলো রুহির হাতটা ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। রুহি অন্যদিকে মুখ করে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।

” রুহি আমার দিকে তাকাও। তোমার কোনো প্রশ্ন নেই? না থাকলে এমন বিহেভ করছো কেন?”, রেগে বললো আহান। রুহি কিছু বললো না আর আহানের দিকে তাকালো পর্যন্ত না। এমন সময় বেল বেজে উঠলো। রুহি হাতটা ছাড়িয়ে চলে যেতেই আহান কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে এনে শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো। রুহি বাধ্য হয়ে আহানের দিকে একবার তাকালো.

তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” দেখুন আপনার পার্সোনাল লাইফে কি হয়েছে সেটা জানার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। এবার ছাড়ুন আমাকে। এভাবে হুট হাট আমার কাছে আসবেন না।” কন্ঠে অভিমান স্পষ্ট।আহান সঙ্গে সঙ্গে রুহিকে ছেড়ে দিতেই রুহি নিজেও চমকে যায়। কারণ আহান এতো সহজে মেনে নেওয়ার পাত্র না। রুহি এক পলক আহানের দিক তাকালো, রেগে গেছে মনে হচ্ছে। আবার বেল বাজতেই রুহি দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। এই লোকটা চায় কি? আবার রাগটা আমাকেই দেখাচ্ছে। লিপস্টিকের দাগটা সমিরারই হবে। কিন্তু মেজাজ দেখাচ্ছে অমাকে।

রূহির উপর আহানের রাগ হলো। একে তো না জেনে রাগ করছে তার উপর এখন জানতেও চাচ্ছে না। আবার বলছে কাছে আসবেন না। নিজেই সব করবে শেষে রাগটা নিজেই দেখাবে। যা চাইছো তাই হবে। আর আসবো না তোমার কাছে।

রুহি দরজা খুলতেই, মুখোশ পড়া একজন রুহিকে জড়িয়ে ধরলো। আনমনে থাকায় ছেলে না মেয়ে সেটাও বুঝতে পারেনি রুহি। সজোরে চিৎকার করে উঠলো। আহান ছুটে ড্রয়িং রুম পর্যন্তও এলো তারপর থেমে গেলো। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পড়লো না সে। তারপর আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলো। রুহি চিৎকার করেই যাচ্ছে। আশে পাশের ফ্ল্যাটের কয়েকজন পর্যন্তও দরজা খুলে ঘটনা দেখতে লাগলো। মুখোশ পরা এক মেয়ে রুহিকে জরিয়ে ধরেছে। আরেকজন ভদ্রলোক এক পাশে নিবিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

মুখোশ পরা মেয়েটি রুহিকে ছেড়ে দিতেই রুহি ছুটে এসে আহানকে জড়িয়ে ধরলো। মারাত্মক ভয় পেয়েছে রুহি। আহান রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গিয়েও দিলো না। বলেছে না কাছে আসবেন না, এর মজা তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে মিসেস রুহি রহমান। আহান নির্বিকার ভঙ্গিতে দাড়িয়ে রইলো। মুখোশের আড়ালে খিল খিল করে হাসির শব্দ পেয়ে রুহি আহানের দিকে তাকালো। আহান মুখ অন্যদিকে করে রাখলো।

” এই নিলজ্যো মেয়ে জামাইকে এইভাবে ধরে দাড়িয়ে আছিস কেনো? রোমান্স শেষ হয় না বুঝি।”, চেনা কন্ঠে রুহি আহানকে ছেড়ে দরালো। ভয়ের চোটে কি করেছ টের পায়নি। রুহি প্রচন্ড রাগে তাকালো মেয়েটির দিকে। এই মুখোশের পিছনে কে সেটা রুহি কণ্ঠ শুনেই বুঝেছে।

রুহি এক টান মেরে লামিয়ার মুখের মুখোশটা খুলে ফেললো। বজ্জাত মাইয়াডা মান সম্মানের ফালুদা বানিয়ে দিল।
” তুই? চিনলি কিভাবে? আর এইটা কি? এভাবে কেউ বাসায় আসে। ডাকাতি করতে বেরিয়েছিলি নাকি।”, রেগে বললো রুহি।

” ডাকাতি আর করতে পারলাম কোথায় তুমি গিয়া তোমার জামাইরে জড়াইয়া ধইরা ফেললা। এতো রোমান্স বাবারে শেষ হয় না। কখন থেকে বেল বাজাচ্ছিলাম খেয়াল আছে।”,

রুহি কটমট করে তাকালো লামিয়ার দিকে, লামিয়ার মুখে কিচ্ছু আটকায় না। তাও রুহির কটমট চাহিনিতে চুপ করলো সে। তারপর আহানকে দেখে বললো,” এই যে জিজু আমি আপনার এক কথায় শালী আরকি। এই ভীতুর ডিমটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর ঐযে মুখটা বাংলার পাঁচের মতোন করে দাড়িয়ে আছে। এই নিরামিষ লোকটার সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে। এই জন্যে নেমন্তন্ন দিতে এসেছি।”

সবার দৃষ্টি গেলো বাহিরের লোকটার দিকে। আসলেই লোকটা তখন থেকে চুপ করে আছে। এইখানে যে তিন জন বাদে আরেকজন আছে কেউ টের পায়নি কেউ। লামিয়া মেয়েটার কথায় আহান একটু অবাক তবে মেয়েটা স্পষ্টবাদী বোঝা যাচ্ছে।
আহান বেড়িয়ে যেতে নিলেই লামিয়া বললো,”আরে যাচ্ছেন কোথায়?”

” অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি বাট আমার একটু আর্জেন্ট কাজ আছে। আবার কোনোদিন “,

“আচ্ছা, পনেরো মিনিট পরে যান। আমরা চলে গেলে তো বিয়ের আগে আর দেখা হচ্ছে না।”, অনুরোধ করে বললো লামিয়া। আহান অনুরোধটা রাখলো। কারণ যেই মিটিংয়ে আহান যাচ্ছে সেটা শুরু হতে একঘন্টার মতন সময় বাকি।

লামিয়ার হবু বরের নাম জয়। লোকটা খুবই শান্ত দেখে বোঝদার মানুষ মনে হয়। সব অগোছালো মেয়েদের কপালে নিষ্পাপ ভদ্র কিছু জামাই জুটে।
আহান জয় ভালোই কথা বলছে।রুহি আর লামিয়া কিচেনে, রুহি শরবত ভালো বানাতে পারে সেটাই চেষ্টা করছে। আর লামিয়ার আবোল তাবোল বলছে,” তোর বাসর রাতের গল্পটা কিন্তু বলিস নি আমায়। আরে আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকে কিছু টিপস দিবি না। সামনে আমার বিয়ে কি হয়েছে বলনা? দরজা খুলে এসে পাশে বসে তোর ঘোমটা তুলেছে?”

” ইহ, ঘোমটা তুলবে? আমার বর মোটেও এতো রোমান্টিক না। লোকটা না হুট হাট করেই….।’, এতটুকু বলেই রুহি থেমে গেলো।

“কিরে থামলি যে? হুট হাট করে কি করে? কিস করে?”, লামিয়ার মুখ থেকে কথাটা পড়তেই রুহি লামিয়ার হাতে জোড়ে চিমটি কেটে বলে,” এতো জোড়ে কথা বলিস কেনো? গলা নাকি ফাটা বাশ।”

লামিয়া আহ করে আর্তনাদ করে উঠে বললো,” আরে ধুরো এক্সাইটমেন্ট বলে ফেলেছি। আচ্ছা ঐ সব বাদ দে। একটা কথা বল তুই কি এখনও ভার্জি..?” বাকিটা মুখ থেকে বের করতেই রুহি সামনের ছুরিটা হাতে নিয়ে লামিয়ার মুখের সামনে ধরে বললো,” একদম চুপ। উল্টা পাল্টা কথা কম বল।ভালো কথা বলতে পারিস না।”

লামিয়া রুহির হাত থেকে ছুরি নিয়ে বললো,”লজ্জা না পেয়ে রাগ দেখচ্ছিস বুঝেছি তুমি এখনও বাচ্চাই আছো। তোর জামাইয়ের ধৈর্য্য আছে। সুন্দরী বউ সামনে ঘুর ঘুর করছে সারাদিন, বেচারা।”

” তোর বিয়েটা খালি হইতে দে লামিয়া। তোকে আমি দেখাবো মজা।”,

” আর মজা? কপালে জুটেছে এক নিরামিষ জামাই। দেখতে হান্ডসামআছে যদিও কিন্তু নিরামিষ কেনো বলি জানিস?”,

রুহি আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,” কেনো?”

” বিয়েটা অলমোস্ট পাকাই হয়ে গেছিলো দুইবাসা থেকে।আমি গেসিলাম দেখা করে বিয়ে ভাঙবো বোলে। ইস প্রথম দেখায় নিরামিষটার প্রেমে পড়ে গেছিলাম। কি যে সুন্দর লাগছিলো সেই মেরুন রঙের শার্টে। ছেলে তো পছন্দ হয়েছে কিন্তু যদি করেক্টার ভালো না হয়? তাই চেক করতে বলে বসলাম আপনার ঠোঁটের তিলটা সুন্দর। বদজ্জাত পোলা হইলে হাসি দেইখ্যা বুইঝ্যা ফেলতাম। এই নিরামিষটা শুধু একবার ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকাইয়া ছিলো। আমি নিজেই আপ্রস্তুত হয়ে গেছিলাম ওনার রিয়াকশন দেইখ্যা। নিজেরেই ইফটিজিংকারি মনে হইসিলো আমার।” লামিয়ার গল্পে রুহি হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

” আরো বাকি আছে শোন।”, রুহিকে থামিয়ে বললো লামিয়া।

[ #চলবে ]

[ দয়া কইরা কেউ নেক্সট লিখে কমেন্ট কইরা ভরাইয়া দিয়েন না। গল্পটা কেমন হচ্ছে কিছুই বুঝি না। কমেন্টে গেলেই দেখি নেক্সট। কেমন হচ্ছে দুবাক্যে একটু জানাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here