বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_২৭

0
1087

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_২৭
#নবনী_নীলা

আহান রুহির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,” খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তোমায়।”রুহি চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। তারপর লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরলো। বুকের ভিতরটায় উথাল পাথাল চলছে। আহান রুহির গলায় মুখ ডুবিয়ে বললো,” লজ্জা পেলে তোমায় দেখতে দারুণ লাগে।তখন ইচ্ছে করে তোমায়…”বলেই আহান রুহির গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই রুহি আহানের পিঠের শার্টটা শক্ত করে খামচে ধরলো। আহানের নিঃশ্বাসের তাপে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে রুহির। আহান রুহির গলা থেকে মুখ তুলে রুহির লজ্জা মাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো। রুহি এখণও চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে। আহান ঘোরের কন্ঠে ডাকলো,” রুহি।”

রুহি আস্তে করে চোখ খুলে আহানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে ফেললো। আহান রুহির কানের কাছে মুখ নিয়ে যেতেই রুহি চোখ বন্ধ করে ফেললো। আহান রুহির কানে বলল,” ভালোবাসি তোমায়।”বলেই আহান রুহির দিকে তাকালো। রুহি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল আহানের দিকে, তারপর বিস্মিত হয়ে বলে ফেললো,” কেনো?” আহান রুহির দিকে তাকিয়ে নিরবে ঠোঁট এলিয়ে হাসছে। কোনো মেয়ে কে ভালোবাসি বললে প্রতিউত্তরে “কেনো” শুনতেও হতে পারে সেটা তার জানার বাহিরে। আহান রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলল,” কারন আমায় নেশা ধরেছে।”

রুহির হাত পা শীতল হয়ে গেছে আহানের স্পর্শে। ভাবতেই অবাক লাগছে এই মানুষটাই সেই আহান। সেই বিয়ের রাতের বদজ্জাত লোকটা। আচ্ছা ভুল ভাল কিছু খায় নি তো আহান? এই যে বললো নেশা ধরেছে। রুহি কাপা কাপা কন্ঠে বললো,” কিসের নেশা?”
আহান রুহির গলা থেকে মুখ সরিয়ে রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,”তোমার নেশা।”
কথাটা কর্ণগচর হতেই কেপে উঠলো রুহি। লজ্জায় পুরো শেষ। নিঃশ্বাস নিতেও কেমন জানি লাগছে, আর বুকের ভিতরটা কেমন দ্রিম দ্রিম শব্দ যেন সময়ের সাথে বাড়ছে। আহান এভাবে আরো জড়িয়ে থাকলে না জানি কি হাল হবে রুহির।

রুহি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,” সরুন তো আপনি, আমার ঘুম পাচ্ছে।”বলেই আহানের বুকে হাত দিয়ে ঠেলতে লাগলো।
” এতো আনরোমান্টিক বউ কপালে জুটবে কে জানতো। কি আর করার?”, রুহিকে জ্বালাতে কথাটা বলে রুহির উপর থেকে সরে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

আনরোমান্টিক কথাটা শুনে রুহির রাগ হলো সে মোটেও আনরোমান্টিক না। যত্তসব! নিজে একে বারে খুব রোমান্টিক। এহ আসছে রোমান্সে পিএইচডি করা রোমান্স বিশেষজ্ঞ।এসব উল্টা পাল্টা কাজ কে নাকি রোমান্স বলে। যে ভারী আরেকটু হলেই বিছানায় মিশে ভর্তা হয়ে যেতাম।
আচ্ছা উনি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসো? কিন্তু এগ্রিমেন্ট শেষে কি হবে? কিছুই মাথায় ঢুকছেনা, লোকটা কি মজা করলো নাকি? ধুর ছাই কিছুই বুঝিনা। এই লোকটা আমায় পাগল করে ফেলবে।

” আমার মুড নষ্ট করে,মনে মনে আমাকে নিয়ে কি বলছো। চুপ চাপ ঘুমাও।”, রুহিকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বললো।
রুহি হকচকিয়ে উঠলো। আহানকে যত দেখছে রুহির বিস্ময়ের মাত্রা ততো বাড়ছে। লোকটা কিভাবে বুঝলো তার মনের কথা ! ঘুম আর আসবে কি করে? আহানের নিঃশ্বাসগুলো আছড়ে পরছে রুহির গলা আর ঘাড়ে। তারউপর আহান খালি গায়ে জড়িয়ে ধরেছে রুহিকে। বুকের ক্রমাগত দ্রিম দ্রিম শব্দেই ঘুমের বারোটা বেজে যাবে।

_________

রুহির ঘুম ভাঙতেই চোখ পড়লো সামনের দেওয়ালের ঘড়িটার দিকে সকাল দুইটা? সকাল দুইটা কিভাবে হয়? ঘড়িটা কি নষ্ট নাকি? ভাবতে ভাবতে ধড়াম করে উঠে বসলো রুহি। তারপর আবার ঘড়িটার দিকে তাকালো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নাহ্ ভুল কিছু দেখেনি দুটা বাজে। তারমানে দুপুর দুইটা! ভেবেই রুহির চোখগুলো রসগোল্লার মতন হয়ে গেলো। তারপর পাশে তাকাতেই থার্মোমিটার, পানি দেখে রুহি গালে হাত দিয়ে বসে পড়লো। ইস আবার জ্বর এসেছিলো। এইসব কি আহান করেছে? এই লোকটাকে আমার একটা গোলক ধাঁধার মতন লাগে! তবে আহানের কথা ভাবতেই নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসি থামলো রুহি। গাল দুটো লাল আবরণে ঢাকা পড়লো।

এমন সময় আহান তোয়ালে দিয়ে মাথার পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো। গায়ে কোনো শার্ট নেই বিন্দু বিন্দু জল গা বেয়ে পড়ছে। ভিজে চুল কয়েকটা মাথার সামনে এসে পড়েছে। রুহি মুখ হা করে তাকিয়েই আছে আহানের দিকে। এতো হ্যান্ডসাম কেনো এই লোকটা?
আহান রুহির দিকে তাকিয়ে একটা ভ্রু তুলে আবার নামালো। রুহি একটু কাশির ভান করে অন্যদিকে তাকালো। ইস কি হয়েছে তোর রুহি, পাগল হয়ে গেছিস? লোকটা নিশ্চই এখন উল্টা পাল্টা ভাববে। উফফ! বির বির করে কপাল চাপরালো রুহি।

আহান রুহির পাশে গা হেলিয়ে বসে বললো,” কি হয়েছে? নিজের বরের দিকেই তো তাকিয়ে ছিলে এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?”

রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো। তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে মুখ বাকালো।

” বাহ্, তোমার দেখি আমার উপর থেকে চোখই সরাতে ইচ্ছে করছে না। ব্যাপারটা ভালো। আই এপ্রিশিয়েট ইট।”, নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো আহান।
রুহির রাগটা বেড়েই গেলো। পাশের থেকে একটা বালিশ নিয়ে আহানের উপর ছুড়ে মারলো। তারপর দাতে দাত চেপে বললো,” আপনি চুপ থাকতে পারেন না। এতো কথা বলেন কেনো?”
আহান একহাত দিয়ে বালিশটা ধরে ফেললো তারপর ঘাড় কাত করে রুহির দিকে তাকালো। আবার আমার দিকে তাকাচ্ছে কেনো? রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকালো।

” তোমার কাধে ওটা কিসের দাগ?”, আহান ঠোঁট এলিয়ে বললো।
আহানের কথায় রুহির চোখ কপালে উঠে গেলো। নিজের দিকে তাকাতেই শার্টের কলার চেপে ধরলো। শার্টের দুটো বোতাম খোলা থাকায় কাধের এক পাশ দিয়ে ঝুলে ছিলো।
” আই গেস বার্থমার্ক ঐটা।”, আহানের কথায় রুহি লজ্জায় রেগে নেমে পরে বিছানা থেকে। নামার সময় গায়ের চাদরটা আহানের মুখের উপর ছুড়ে মারে। “অসভ্য”, বির বির করে বলে ওয়াসরুমে যেতেই আহান রুহির সামনে এসে দাড়ালো।

” আবার সামনে এসে দাড়িয়েছেন কেনো? এবার কি আপনি আমার সাথে ভিতরেও যাবেন?”, গাল ফুলিয়ে বললো রুহি।

” হুম, তুমি চাইলে অবশ্যই যেতে পারি। তুমি কি চাও?”,

রুহি রাগে কিরমির করতে লাগলো। লোকটার মাথা পুরোই গেছে। রুহি কিছু বলার আগেই আহান রুহির হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো,”এইখানে একটা ড্রেস আছে। আর বাকি ড্রেসগুলো আমি কাবাডে রেখে দিয়েছি।”

রুহি ব্যাগটা হাতে নিয়ে ভ্রূ কুচকে তাকালো তারপর বললো,” আমার জামা গুলোর কি হয়েছে?”

” ওহ ওগুলো তো ফেলে দিয়েছি।”, আহানের মুখে এই কথা শুনে রুহি হা করে তাকিয়ে রইল।

” ফেলে দিয়েছেন, মানে? কেনো? আপনার মাথা কি পুরো খারাপ হয়ে গেছে? আমি কি পড়বো। আপনার দেওয়া এইগুলো আমি পড়বনা। ফেলেছেন কেনো আপনি আমার জামা গুলো?”, রাগে ফুলতে ফুলতে বললো রুহি।

” সে তোমার যা ইচ্ছে তুমি পরো। তবে হ্যা আমার জামা গুলো যে তুমি পরে আছো সেগুলো আমি দশ মিনিটের মধ্যে ফেরত চাই।”, সিরিয়াস হয়ে বললো আহান।

লোকটা ভালোই ফাঁদ পেতেছে। মানে এগুলো রুহিকে পড়তেই হবে কোনো উপায় নেই। আহানের কিনে আনা জামাটা নিয়ে গাল ফুলিয়ে স্বজড়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলো রুহি।

[ #চলবে ]

{ দুঃখিত, ছোট করে দেওয়ার জন্যে।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here