#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_২৩
#নবনী_নীলা
আহান রুহিকে শুধু মাত্র লজ্জা দিতেই এগিয়ে এসেছিলো, কিন্তু এখন তার নেশার মতন লাগছে। আহান আরো ঝুকে এসে রুহির কানের কাছে বললো,” মানে বুঝতে পারছো না?” আহানের চোখের দিকে তাকাতেই রুহির মানেটা বুঝতে বাকি রইলো না। রুহি চোখ সরিয়ে ফেললো। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে তার। রুহি চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে না সূচক মাথা নাড়ল। আহান তর্জনী দিয়ে রুহির মুখটা উপরে তুলে বললো,” না বুঝলে তো বুঝিয়ে দিতে হয়।”
কথাটা শোনার সাথে রুহির গা শিউরে উঠলো। চোখ খোলার সাহসটা সে পাচ্ছে না। আহান আজ কেনো জানি এ নেশা কাটিয়ে উঠতে পারছে না, অবশ্য তার ইচ্ছেও করছে না। রুহির এই লজ্জাটা আরো বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তার। আহান রুহির ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে দিতেই ঠাণ্ডা হাতের স্পর্শে কেপে উঠলো রুহি। আহান এগিয়ে আসতেই হটাৎ বেলের শব্দে ব্যাঘাত ঘটলো, রুহি বড়ো বড়ো করে চোখ খুললো। চোখ খুলে আহানকে এতো কাছে দেখে রুহি আতকে উঠলো। তারপর ছিটকে সরে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বুকে হাত দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগলো রুহি। কি করতে যাচ্ছিলো আহান ভেবেই ঘামতে শুর করেছে সে।
আহান কোমরে হাত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে মুখ দিয়ে তিক শব্দ করলো। আর সময় পেলো না বেল বাজানোর, এটা যদি রাতুল হয় তাহলে ওর চাকরির বারোটা বাজাবে আহান।
আরেকবার বেল বাজলো। আহান একবার রুহির দিকে তাকালো, রুহি লজ্জায় পুরো লাল টমেটো হয়ে দাড়িয়ে আছে। আহান এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। আহানকে কিচেন থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে রুহি শান্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
আহান প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে দরজা খুললো। দরজা খোলার পর আহানের রাগটা বেড়ে গেলো। যদি রাতুল হতো তাহলে দু চারটে লাগিয়ে দিয়ে রাগ কমানো যেতো, কিন্তু সামনে সামিরা দাড়িয়ে। আহান কিছু বলার আগেই সামিরা আহানকে জরিয়ে ধরলো। রুহি কিচেন থেকে এই ফাকে নিজের রূমে যাচ্ছিলো কিন্তু ড্রয়িং রুমে এসে দরজার দিকে চোখ পড়তেই রুহির কপাল ভাজ হয়ে গেলো। আহানের উপর এতক্ষণ রাগ হচ্ছিল না তার কিন্তু এখন আহানের উপর তার প্রচন্ড রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে দুটোর মাথা এক করে বারি মারে। রাগে গা জ্বলে উঠলো রুহির। আহান সামিরাকে সরালো নিজের থেকে, তারপর স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলো,” তুই এখানে? হটাৎ।”
” সব কথা কি বাহিরে দাড়িয়ে বলবো নাকি?”, বোলেই সামিরা ভিতরে ঢুকে পড়লো।
আহান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে দরজাটা বন্ধ করলো। সামিরা এগিয়ে গিয়ে রুহিকে হাতের ঈশারায় হেলো দিলো। রুহি কোনো সাড়া দিলো না চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে রুহি। বাহ্ অসাধারণ শাকচুন্নিটা এখানেও হাজির।
আহান এগিয়ে এসে রুহিকে দেখে একটু চিন্তায় পরে গেলো। একটু আগে গাল দুটো লাল হয়ে ছিলো লজ্জায় আর এখন কিনা শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে সে। রুহি কি কোনো ভাবে জেলাস? ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে তো তাহলে। ভেবেই আহান নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
সামিরা এসেই হাতের পার্সটা একপাশে রেখে সোফায় বসে পড়লো। তারপর ক্লান্ত হয়ে বললো,”আহান আমার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।”
আহান হাতে ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,” তুই যে প্রথম এসেছিস এমনটা তো নয়। ঠান্ডা পানির বোতল ফ্রিজে রাখা আছে।”, বলে হাতের পাশের ফাইল গুলো দেখতে লাগলো।
সামিরা হেসে বললো,” সে আমাদের কতো মেমোরি আছে, এই ফ্লাটে।” বলেই উঠে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলো সামিরা। এই কথাটা সে রুহিকে শোনানোর জন্য বলেছে। আহান আড় চোখে একবার রুহির দিকে তাকালো রুহি ভ্রূ কুটি করে সামিরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
রুহির ভাবতেই অবাক লাগে এরা একসাথে এই ফ্ল্যাটে ছিলো। এখন আবার তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে এসব বলছে একটু লজ্জা পর্যন্ত নেই এদের। ভেবেই রাগী চোখে আহানের দিকে তাকালো, এই লোকটা তো এমনই। আহান হাতের ফাইলগুলো দেখছে। রুহির দিকে তাকাতেই রুহি চোখ সরিয়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলো।সামিরা আর অফিসের অনেকেই এসেছিলো এই ফ্ল্যাটে সেই কথাটাই অন্যভাবে বললো সামিরা। কিন্তু রুহিকে রাগতে দেখে আহান একটু মজা নিলো।
সামিরা পানি খেয়ে যেই বেরিয়ে আসবে প্লেটে রাখা আলু পরোটা দেখে তার লোভ হলো। সামিরা প্লেটটা ধরার আগেই রুহি প্লেটটা হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। রুহির এভাবে আসায় অপ্রস্তুত হয়ে গেলো সামিরা।
তারপর হালকা হেসে বলল,”তুমি বানিয়েছো?”
রুহি মূখে খাবার রেখে বললো,”নাহ্ আমি তো রান্নাই জানি না।”
” তাহলে আহান?”, বিস্মিত চেহারা নিয়ে বললো সামিরা। রুহি একটু ভাব দেখিয়ে হা সূচক মাথা নাড়ল। তারপর ড্রয়িং রুমে এসে অন্য একটা সোফায় বসে খাওয়া শুরু করলো। আহান আড় চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। রুহির রাগটা একটু একটু করে বাড়ছে। নিজের রুমে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু এখন এইখানেই সে থাকবে। দেখি এরা কি করে।
সামিরা হেঁটে এসে একদম আহানের গা ঘেঁষে বসে পড়লো।
অন্য সময় হলে আহান একটু সরে বসতো কিন্তু আজ সে সরবে না।রুহি আরো রাগে কিনা সেটাই দেখতে চায় আহান।
নিলজ্য সব নিলজ্য, পৃথিবীতে থেকে লজ্জাই উঠে গেছে। একেবারে গা ঘেঁষে বসেছে, খুব প্রেম। প্রেম একেবারে উতলে উতলে পরছে। যত্তসব! মুখ বাকিয়ে বির বির করলো রুহি।
এর মাঝে সামিরা বলে উঠলো,” আহান তুই এসব বাঙালি খাবার কবে রান্না করা শিখলি?”
আহান ফাইলের দিকে তাকিয়ে বললো,” ইউটিউব থেকে দেখে।”
” বাহ্ ভালো।”, শান্ত ভঙ্গিতে বলল সামিরা। রুহি স্থির দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো দুই আসামিকে দেখছে সে।
” আচ্ছা শোন, আমি কাল রাতে জার্মানি তে চলে যাচ্ছি। কয়েকমাস পর আবার আসবো। তাই আজকের দিনটা আমি এইখানে থাকবো। আমার জিনিসপত্র সব গাড়িতে আছে। এইখান থেকেই এয়ারপোর্টে যাবো। তোদের কোনো সমস্যা নেই তো।”, বোলেই রুহির দিকে তাকাল সমিরা। আহান কিছু বলার আগে একবার রুহির দিকে তাকিয়ে হাবভাব দেখে নিলো। তারপর বললো,”নাহ্ কোনো সমস্যা নেই। গেস্ট রুম তো আছেই।”
রুহি এতক্ষণ এদের কথা কর্নগোচর করে নি কিন্তু এখন গেষ্ট রুমে এই মেয়ে থাকলে সে থাকবে কোথায়? আবার এই কুম্ভকর্ণটার সাথে উফফ অসহ্য।
সারাদিন চোখের সামনে আহান আর সমিরাকে একসাথে দেখলো রুহি। আহান তাকে একবারও ডাকলো না। ইচ্ছে করেই আহান এমনটা করেছে। তবে সামিরার কথা শুনে শুনে তার মাথা ধরে গেছে। রুহিকে বোঝাতে যে তার আর কতো কি করা লাগবে?
এদিকে রুহির মুখ ভার, সারাদিন আহান ঐ শাকচুন্নির কথা শুনেছে। রুহির মুখটাই ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। কেনো জানি মনটাই খারাপ হয়ে আছে তার।
দিন শেষে সবচেয়ে অসস্তিকর একটা সময় এলো। সামিরা আহানের রুমে বসে আছে এদিকে রুহির প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। এরা আবার একসাথেই না থেকে যায়। আমি যে তখন থেকে সোফায় বসে আছি একবার এসে কেউ খোজ পর্যন্ত নিলো না। মানবতা বলতে কিছু নেই এদের। রুহি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে সোফাতেই শুয়ে পড়লো।
রূমের ভীতরে থেকে রুহিকে এতোক্ষণ দেখা যাচ্ছিলো তবে সোফায় শুয়ে পড়ার কারনে রুহিকে দেখা যাচ্ছে না। আহান এগিয়ে গেলো সেদিকে এসে রুহিকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে এখন নিজেরই খারাপ লাগছে। কোথায় সে আজ অফিসে যায় নি এই মেয়েটির জন্য আর সে কিনা গাল ফুলিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পরেছে। আহান নিশ্চুপে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে।
সামিরা কি আর না এসে পারে আহানের পিছু পিছু সে ও আসে।
” ও এইখানে ঘুমিয়ে পরেছে কেনো?”, সামিরা জোরেই কথাটা বললো, আহান কড়া চোখে তাকাতেই সামিরা মুখ দিয়ে ওহ আওয়াজ করে বললো,” সরি।”
আহান হাঁটু গেড়ে রুহির সামনে বসলো। তারপর খুব সাবধানে রুহির মাথাটা নিজের বুকের সাথে ঠেক দিয়ে রুহিকে কোলে তুলতেই সামিরা রাগে ফুলতে শুরু করলো। আহানকে বাধা দিয়ে বললো,” ওর ঘুম ভেঙে যাবে। দরকার কি ভিতরে নিয়ে যাওয়ার? ঘুমাচ্ছিল কি সুন্দর।”
আহান পাশ কাটিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দিলো। পুরো দিনটাই তার খারাপ গেলো। আহান দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুহির দিকে তাকাতেই রুহি হুট করে চোখ খুলে তাকালো। আহান কিছুটা অবাক হলো, এই মেয়ে তো ঘুমিয়ে ছিলো।
রুহি কড়া চোখে তাকিয়ে আছে তার মানে সে ঘুমায় নি। তাহলে কি ইচ্ছে করে এমন করেছে?
” নামান আমাকে এক্ষুনি।”, রাগী গলায় বললো রুহি।
” তুমি ঘুমাও নি, নাটক করছিলে?”,
” আমি নাটক করেছি কি সিনেমা করেছি। আমার ইচ্ছে আপনার কি? আপনি আমায় কোলে তুললেন কেনো? নামান বলছি আমাকে।”, নামার জন্যে হাত পা ঝাপাতে লাগলো রুহি।
আহান আরো শক্ত করে ধরে বললো,” সেটাও আমার ইচ্ছা, তোমার কি?”
” এতো কোলে নেওয়ার শখ হলে আপনারা সামিরাকে কোলে নিয়ে ঘুরুন।আমাকে ধরেছেন কেনো?”, পা ঝাপাঝাপি করতে লাগলো রুহি।
আহান রুহিকে বেডের দিকে নিয়ে গিয়ে বললো,” বললাম তো আমার ইচ্ছা।”
” আপনার ইচ্ছার কেতায় আগুন। ছাড়ুন আমাকে নইলে আমি চিৎকার করবো।”, কথাটা বলার আগেই আহান রুহিকে বালিসে মাথা দিয়ে শুইয়ে দিতেই দুজনের চোখাচোখি হলো। সেকেন্ডের জন্য দুজনেই থমকে গেলো। কয়েক সেকেন্ড পর রুহি চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। আহানের চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকালে কেনো জানি নিজেকে অনেক অগোছালো লাগে রুহির। আহান ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বলল,” চিৎকার করলে করতে পারো। আমার কোনো সমস্যা তবে আশে পাশে ফ্ল্যাটের মানুষ অন্যকিছু বুঝবে।”
রুহি দাতে দাঁত চেপে বললো,”অসভ্য”
“অসভ্যতা শুরু করলে না তুমি…”, বাকিটা বললো না আহান। বিছানার দুপাশ থেকে হাত সরিয়ে রুহির উপর থেকে উঠে যেতে যেতে বলল,” ভালো চাও তো চুপ চাপ ঘুমাও।”
রুহি কড়া চোখে একবার তাকালো আহানের দিকে তারপর বেণীটা সামনে রেখে উল্টো পিঠ হয়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে রইলো রুহি। রুহির মুখ ঘুরিয়ে ঘুমানোটা আহানের পছন্দ হলো না। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। আহান রুহির পিঠের দিকে মুখ করে শুয়ে বললো,” তোমার পিঠের তিলটা আসলেই অনেক অ্যাট্রাকটিভ।”
রুহির জামার পিঠটা বড়ো ছিলো কিন্তু এতো বড় না। আহান রুহিকে তার দিকে ফিরতে কথাটা বললো শুধূ। কথাটা কানে যেতেই রুহির বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো। তৎখনাত রুহি চিত হয়ে শুয়ে পড়লো। আহান নিরবে একটু হাসলো।
অসভ্য একটা লোক মুখে কিছু আটকায় না। সারারাত এইভাবেই থাকতে হবে, উফ অসহ্য।
[#চলবে ]