বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_১৪

0
1227

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৪
#নবনী_নীলা

আহান রুহির কানের কাছে মুখ এনে বললো,” এতো লজ্জা পাচ্ছো কেনো? লজ্জা পাওয়ার মতন তো আমি কিছু করিনি।”
রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকালো তারপর বির বির করে বললো,” লজ্জা কি জিনিস জানলেই না বুঝবে লজ্জা পাওয়ার মতন কিছু করেছে কি করে নি।”
দিদা ঘরে ঢুকে আহানকে ডাকতেই আহান আর রুহি দুজনেই ছিটকে সরে গেলো। আহান স্বাভাবিক ভাবে দিদার কাছে এগিয়ে এলো।

?

রুহি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বসে আছে কারণ তন্বী আর শিফা মিলে তাকে শং সাজাচ্ছে।
তখন থেকে বসিয়ে রেখেছে, সিম্পল মেকআপ করতে নাকি দু ঘন্টা সময় লাগে। রুহি চোখ বন্ধ করে মাথা হেলিয়ে চেয়ারে বসে ছিলো। বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে তাকালো রুহি।

” তন্বী দি তোমার হয় নি। আর কতো? একটু পর আমি ঘুমিয়ে না পড়ি।”,

” হয়ে গেছে এবার তুমি উঠে বসো। তারপর একটু চুলগুলো সেট করে দিবো তারপর তুমি রেডি।”, বলে রুহিকে উঠিয়ে বসালো।

রুহি সামনের আয়নায় নিজেকে দেখলো। বাহ্ ভালোই সাজিয়েছে তাকে তবে তার ঘুম পাচ্ছে। সাজলেই কেনো জানি রুহির অনেক ঘুম পায়। এর মধ্যে শিফা কিছু ড্রেস নিয়ে হাজির হয়ে বললো,” টেন টেনা…. আমি হাজির ড্রেস নিয়ে।”
রুহি শিফার দিকে তাকালো এই মেয়ের হাতে দেখি সব ওয়েস্টার্ন ড্রেস। রুহি ভ্রূ কুচকে শিফার দিকে তাকালো তারপর বললো,” আমি এইগুলো পড়বো? মাথা খারাপ নাকি? নীচে গুরোজনরা আছে না।”

” তো কি হয়েছে আমরা সবাই তো পড়বো। আর আমাদের কাছে এইগুলো নরমাল। আজকে তোমাকে এমন ভাবে সাজাবো সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে আর আহান ব্রো জ্বলবে।”, বোলেই খিল খিল করে হেসে উঠলো শিফা।

” না না, এমন পিঠ খোলা জামা আমি পড়বো না। ওয়েস্টার্ন পড়তে হলে ভদ্র কিছু বের করো।”,

” তো একদিন একটু হট লাগলে কি হবে। তুমি এইগুলোই পড়বে।”, শাসিয়ে বললো তন্বী।

” কিন্তু এইগুলো আমার সাথে যায় না। কেমন নেকী নেকী জামা। আমি পড়বো না।”

” আচ্ছা তোমার যা ইচ্ছা সেটাই পরো। বাপরে আহান ব্রো কিভাবে যে তোমায় হ্যান্ডেল করে কে জানে?”, চোখ বড় বড় করে বললো শিফা।
রুহি নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর ড্রেস চেঞ্জ করতে চলে গেলো।

এদের কি অদ্ভুত পরিবার! নিচে বাচ্চা আর বয়স্কদের জন্য ব্যবস্থা আর ছাদের উপরে বাকিদের জন্য ব্যবস্থা। কি মহা বিপদে পড়েছে, কোথায় যাবে সে? ধুর উপরে কে যায়? এখনেই থাকি। রুহি নীচে এসে সুপ্রভার সাথে দুষ্টুমি শুরু করলো। সুপ্রভাকে পুরো ছোট্ট পরী লাগছে। বন্ধুদের সাথে এদিকে সেদিকে দৌড়াদৌড়ি করছে।
ভাবি রুহির পাশে এসে দাড়ালো।

” রুহি, তোমাকে তো সুন্দর লাগছে। তুমি নীচে বসে আছো কেনো। সবাই তো উপরে, যাও সেখানে।”

” তুমি যাবা না? তোমার সাথে যাবো।”,

” কী বাচ্চাদের মতোন কথা বলছো। আমি তো সুপ্রভার দৌড়াদৌড়ি শেষ হলে, তারপর ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে শাড়ি বদলে যাবো। এই শাড়ি পরে যাবো নাকি? আমার অনেক দেরী হবে তুমি যাও।”

” এটা কেমন গেট টুগেদার? কেউ নীচে কেউ উপরে।”

” আরে বোকা মেয়ে। উপরে ড্রিংস আনা হয়েছে। সবাই ইনজয় করবে। এখন দিদা দাদুর সামনে কি আর এসব হয়? আর দেখো তোমার ভাইয়াও আছে এইখানে। তুমি যাও।”

এর মাঝেই শিফা রুহিকে খুঁজতে চলে এলো। তারপর এসেই টেনে রুহিকে নিয়ে গেলো।

” আরে আমি তো মানুষ গরুর মতো টানছো কেনো শিফা।”, শিফাকে থামিয়ে বললো রুহি।

” ওহ সরি, গাল্টি সে মিসটেক হো গিয়া। তোমায় না অনেক কুল কুল লাগছে কিন্তু আরেকটু হট হলে বেশী ভালো হতো। একদম জমে ক্ষির হয়ে যেতো।”, হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো শিফা।

” তুমি না বড্ড পাকনা।”, রুহির কথায় শিফা হেসে ফেললো।

উপরে উঠে বেশ অবাক হলো। এই বাড়ির ছাদে সে এর আগে কখনো আসেনি। তাই ছাদে যে সুইমিংপুল আছে সেটা জানা ছিলো না। বাম দিকে তাকাতেই একটা ছোট খাটো বার দেখা গেলো। রুহি সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। ভুলেও ঐদিকে যাওয়া যাবে না, ঐদিকে যাওয়া মানেই পাপ।

রুহি একটু ভিতরে আসতেই আস্তে আস্তে সবার নজর কাড়তে শুরু করলো। রুহি এতোটা অপ্রস্তুত এর আগে কখনো হয় নি।আগে এমন ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেছে তবে এমন জায়গায় সে এর আগে কখনো আসেনি।

রুহি রেগে গিয়ে শিফাকে বললো,” লোকগুলো এমন চোরের মতো তাকাচ্ছে কেনো?”

” শুধু লোকেরা না মেয়েগুলোও দেখছে তোমায়।”, ঈশারায় বললো শিফা।

” কেনো?”, প্রশ্ন করলো রুহি।

” ছেলেগুলো তোমায় কেনো দেখছে এটা খুবই স্বাভাবিক তবে মেয়েগুলোর হিংসে হচ্ছে তাই তাকাচ্ছে।”, বলেই হেসে উঠলো শিফা।

রুহির শিফার কথা বিশ্বাস করলো না। এর মাঝে তন্বী এসে বললো,” শিফা আরাফ ভাইয়া এসেছে। আর সিমন চুপ চাপ হয়ে বসে আছে একপাশে।”

” ও মেয়ে জীবনে কথা বলেছে বলেও সন্দেহ আছে। এদের একটা বেবস্থা করতে হবে তন্বী দি।”, কথা বলতে বলতে শিফা আর তন্বী চলে গেলো। মাঝে মাঝে রুহির এই দুটোকে নিউজ চ্যানেল মনে হয় সব তথ্য এদের কাছে, তবে আরাফ আর সিমনের কাহিনী আবার কি?

রুহি এগিয়ে সামনে গেলো, আহান কোথাও নেই। কিন্তু কোথায় সেই কুম্ভকর্ণ। রুহি সামনে গিয়ে চশমা পরা একটা মেয়েকে চুপ চাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। এই মেয়েটি সিমন নাতো? হতেই পারে। রুহি এগিয়ে গিয়ে বললো,” তোমার নাম কি সিমন?”
সিমন মাথা নিচু করে বসে ছিলো রুহির কথায় সে মাথা তুলে রুহির দিকে তাকালো তারপর হা সূচক মাথা নাড়ল।
” তুমি আমাকে চিনো?”, সিমন রুহিকে প্রশ্ন করলো।

” নাহ্ গেস করেছি, আমি রুহি। তুমি এভাবে এক কোনে চুপ চাপ বসে আছো কেনো?”, রুহির প্রশ্নে সিমন একটু হেসে চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো,” আমার এসব পছন্দ না। আর অপরিচিত মানুষের মাঝে আমি আনইজি ফিল করি।”

” হ্যা এইটা সত্যি বলেছ নিজেকে এলিয়েন এলিয়েন মনে হয়।”, রুহির কোথায় সিমন আবার হেসে ফেললো।

সিমন আর রুহি কথা বলছিলো তখন আহান উপস্থিত হয়। রুহিকে বার বার ফোন দিচ্ছিলো কিন্তু এই শব্দের মাঝে রুহি বুঝতে পারে নি। তারওপর ফোন সাইলেন্ট করা।আহান ফোন করতে করতে ভিতরে এলো। সামিরা আহানকে দেখে আহানের কাছে যাচ্ছিলো যাওয়ার সময়ে ইচ্ছে করে রুহিকে ধাক্কা দিয়ে গেলো। রুহি পরে যাবার আগে সিমন ধরে ফেললো তারপর বললো,” তুমি ঠিক আছো?”
রুহি হা সূচক মাথা নাড়ল। সিমন রাগী চোখে সামিরার দিকে তাকিয়ে বললো,” এই মেয়েটাকে আমার একদম অপছন্দ।”
” কে সামিরা? আমারও তেমন একটা পছন্দের না।”, বলে দুজনেই বিরক্তি মুখে হাইফাইভ করলো।

সামিরা আহানের সামনে গিয়ে জড়িয়ে ধরবে এমন সময় আহান বললো,” রুহিকে দেখেছিস?”
সামিরার হাসি মুখ রাগে ফুলে উঠলো। তারপর হাত নামিয়ে রেখে বললো,” না রুহি নেই এইখানে। নীচে হয়তো। চল নীচে নেমে দেখি।”আহানকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো।

” না না, আমি নিচে খুজে এলাম ওকে। ভাবি বললো উপরে এসেছে। আচ্ছা আমি খুজছি ওকে।”, বলে রুহি যে পাশে সেদিকে যেতে নিলো। সামিরা আহানকে থামিয়ে বললো,” আমি ওদিক থেকেই আসলাম আমি দেখিনি ওকে। চল অন্যদিকটায় যাই।”, মিথ্যে বলে আহানকে উল্টো দিকে নিয়ে গেলো সামিরা।
আহান রুহিকে ফোন দিতে ব্যস্ত। এই মেয়েটা যে কোথায়? এতো কেয়ারলেস?

সিমন আর রুহি ভালোই কথা বলছিলো। সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরা সুদর্শন একজন এগিয়ে এলো ওদের দিকে। এসে সিমনের পিছে দাড়ালো। হটাৎ সিমনের সামনে এসে দাঁড়াতেই সিমন চমকে তাকালো। আরাফ দাড়িয়ে আছে। সিমন এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,” তুমি এখানে?”
” তোমায় সারপ্রাইজ দিতে এসেছি।”, আরাফের কথায় সিমন লজ্জা পেয়ে হাসলো।
আরাফ রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” হেলো রুহি।” রুহি আর সিমন একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর সিমন প্রশ্ন করলো,” তুমি ওকে চিনো?”
” না, তন্বী বললো ও আহানের ওয়াইফ।”,আরাফের কথায় সিমন রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” সত্যি! তুমি আমাকে এতক্ষণ বললে না কেনো?”

রুহি এই সিচুয়েশন থেকে বেরিয়ে আসতে হালকা হাসলো। এর মাঝেই আরো জোড়ে মিউজিক বাজতে লাগলো। কাপল ড্যান্স চলছে। রুহির দেখতে বেশ ভালোই লাগছে, তাও ভালো এরা মাতাল হয়ে নাচানাচি করছে না। পরিবেশটা এতটাও খারাপ না যতটা খারাপ রুহি ভেবেছিলো। আরাফ একটু কেশে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” ক্যান আই?” বলে মিষ্টি করে হাসলো আরাফ। সিমন হেসে উঠে হাত বাড়িয়ে দিলো। তখন সিমনের হাতের আংটি দেখে রুহি পুরোটা বুঝলো এরা তাহলে এনগেজড। কি কিউট একটা কাপল!

এদের দেখে রুহির আহানের কথা মনে পড়লো। তার কপালে এমন আনরোমান্টিক জামাই আর না চাইতে একটা সতিন জুটেছে। রুহির গলা শুকিয়ে গেছে কিন্তু এইখানে ভালো কিছু আছে বলে তো তার মনে হচ্ছে না। রুহি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে একটা ছেলে হটাৎ রুহির দিকে এগিয়ে এলো। তারপর হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” লেটস ড্যান্স।” রুহির এমন ফালতু ছেলে একদম ভালো লাগে না। কিন্তু হতে পারে এদের কোনো আত্মীয় তাই রুহি একটু হেসে বললো,” আমি পারি না এসব।”

” ইটস ওকে আমি শিখিয়ে দিবো, ডার্লিং।”, ছেলেটার মুখে এই কথা শুনার পর রুহির ইচ্ছে করছে ঠেলা মেরে সুইমিং পুলে ফেলে দেয় এই বদমাইশটাকে। রুহি কিছু বলার আগে তার কোমরে কারোর স্পর্শে পেয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো আহান শক্ত চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। আহানের রাগ তুঙ্গে উঠে আছে এই ছেলেটা এইখানে এলো কি করে? এই ছেলেটাকে তো সে আগে কখনো দেখেনি।

” হোয়াট ডিড ইউ জাস্ট সেয়?”, আহানের রাগ মিশ্রিতকণ্ঠ শুনে ছেলেটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ছেলেটা কিছু বলার আগেই আহান বলে উঠলো,” হূ দা হেল উ আর?”। আহানের হাত এখনো রুহির কোমড়ে আছে রুহি একবার সেদিকে তাকালো তারপর একটা ঢোক গিললো। এই লোকটা হুট করে রেগে উঠে খালি। সামিরা ঘটনাটা খেয়াল করে ছুটে আসে তারপর আহানকে বললো,” ওয়েট কি হয়েছে?”, ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,” জিসান কি হয়েছে কি?”

” তুই ওকে চিনিস?”, শক্ত চোখে তাকিয়ে বলল আহান।

” ও আমার ফ্রেন্ড, কেনো কি হয়েছে!”,

” ওকে বের হয়ে যেতে বল এখান থেকে।”, সিরিয়াস হয়ে বললো আহান। রুহি চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। ওরে বাপরে কুম্ভকর্ণ দেখি ক্ষেপেছে।

জিসান মানে ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে বললো,” হোয়াট?”

” জাস্ট গেট আউট ফ্রম মাই হাউস।”, ছেলেটার মুখের উপর বলল আহান।

ছেলেটা রেগে বেড়িয়ে গেলো। সামিরাও প্রচুর রেগে গেলো শেষে রাগ দমিয়ে আহানকে প্রশ্ন করলো,” কেনো করলি তুই এইটা?”

” আমি আমার কাজের এক্সপ্লেনেশন কাউকে দেই না।”, বলে রুহির হাত ধরে ছাদের উল্টপাশের ফাকা জায়গাটায় নিয়ে এলো।
রুহির বুকের ভিতরটা ধক ধক করছে। আহান শক্ত চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলো। আহান রুহির দিকে এগিয়ে এসে রেলিংয়ের দুপাশে হাত রাখলো। দুজনের মধ্যে দূরত্ব কমে গেছে।

” তোমার ফোনের কি হয়েছে? নাকি ইচ্ছে করে আমার কল ধরছিলে না। “,গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো আহান। আহানের দৃষ্টি রুহির দিকে। রুহি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ফোন তো সাইলেন্ট করা ছিলো। তাই হয়তো বুঝতে পারেনি। এবার কি বলে রুহি?

” ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো”, এলো মেলো দৃষ্টিতে বললো রুহি।
আহান আরেকটু ঝুকে এসে রুহির চোখের দিকে তাকালো। আহান নিশব্দে তাকিয়ে আছে। রুহি আহানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।

” আমার তৃষ্ণা পেয়েছে।”, এলোমেলো দৃষ্টিতে বললো রুহি।

” আমারও।”,আহান রুহির আরো কাছে এসে বললো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here