#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১১ বোনাস পর্ব
#নবনী_নীলা
রুহি সিড়ি বেয়ে নীচে এসে দেখে আহান আর সামিরা একসাথে সোফায় বসে আছে। দিদা সবাইকে নিচে ডেকেছে সবার সামনে এভাবে বসতে এদের লজ্জা করে না বুঝি বির বির করে বললো রুহি। আহান নিজের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত একটা হাত সোফার উপরে রেখে আরেক হাতের কনুই সোফার হ্যান্ডেল ভর করে ফোন দেখছে আর সামিরা আহানের একদম গা ঘেঁষে বসে আছে।
সামিরা কে বাড়ির সবাই চিনে ওদের যেত রিলেশন ছিল সেটাও সবাই জানে তবে ছোটো থেকে সামিরা কে দেখেছে এরা। সেই সুযোগ নিয়ে দেশে বেড়াবে বলে রয়ে গেছে এ বাড়িতে। সবাই নিচে আছে শুধু আহানের মা নেই। হয়তো আহানের জন্যই আসেনি। এদের মা ছেলের কিসের যুদ্ধ কে জানে?
রুহি একটা মেরুন রঙের থ্রি পিস পরেছে, চুলগুলো খোলা। ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরাতেই রুহির দিকে তাকালো আহান। মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে, এ কেমন অনুভূতি যা আহানকে রুহির দিকে টানে। রুহি চুপ চাপ আহানকে পাশ কাটিয়ে দিদার পাশে গিয়ে বসে পড়লো।
দিদা সামিরার এমন ব্যাবহারের পিছনের উদ্দেশ্য জানা, তার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। দিদা একটু কেশে উঠতেই রুহি তড়িঘড়ি করে পানি আনতে গেলো। রুহি দিদাকে পানি খাইয়ে গ্লাস রাখে আসতে গেলো। এর মাঝে দিদা হাতের ইশারায় সামিরা কে ডাকলো। সামিরা একবার আহানের দিকে তাকালো তারপর উঠে দিদার কাছে গেলো। দিদা সামিরার হাত ধরে নিজের কাছে বসিয়ে বললো,” তুমি আমার কাছে বসো। তোমার সাথে তো কথাই হয় নি।” খুব বুদ্ধি খাটিয়ে দিদা সামিরাকে আহানের পাশ থেকে সরিয়ে আনলো।
ফিরে এসে সামিরাকে দিদার পাশে দেখে রুহির মাথা গরম হয়ে গেল। আমার জায়গার উপরে খালি এ মেয়ের নজর। রুহি চোখ বুলিয়ে দেখলো সবটা কোথাও খালি সোফা নেই আর কোথায় গিয়ে বসবে নিশ্চই নিজের শ্বশুরের পাশে গিয়ে বসবে না। বসতে হবে কার পাশে? এই কুম্ভকর্ণটার পাশে!
রুহি মুখ কালো করে বসলো আহানের পাশে, আহানের দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনের দিকে। আহান এমনভাবে ফোনে স্ক্রোল করছে যেনো এই ফোনে পৃথিবীর সব নিয়ে ঘুরছে।
দিদা তখন থেকে শুধু সামিরার সাথে কথা বলে যাচ্ছে রুহির ইচ্ছে করছে এই কুম্ভকর্ণ আর শাকচুন্নি মাথা একত্র করে দুটোর সাথে দুটো বাড়ি দেয়।
কিছুক্ষণ পর দিদা সবাইকে জানালো কি কারণে তাদের ডাকা হয়েছে। দুদিন পর সুপ্রভার জন্মদিন, প্রতিবছর সেটা খুব বড়ো করেই হয়। দিদা চাইছেন এবার আরো বড়ো করে করতে রহমান পরিবারের সব কাছের মানুষদের সেখানে আসতেই হবে, এরপর বিদেশে ট্রিটমেন্ট করতে গেলে হয়তো আর কারোর সাথে দেখা হবে না।
সবাই মিলে সেই আয়োজন নিয়ে কথা বলছিলো আর রুহি চুপ করে সেসব শুনছিল, তাকে যে কেনো এখানে বসিয়ে রাখা হয়েছে সে নিজেও জানে না।
হটাৎ একটা ইদুর দেখে সামিরা লাফিয়ে উঠে পড়লো সোফায় ভাগ্যিস তখন দিদা পাশে ছিলেন না।
” আহ রেট আই হেট রেট! এটাকে তাড়াও তোমরা প্লীজ। হেল্প মি আমাকে বাঁচাও।”, বোলে চেঁচাতে লাগলো। আহান বিরক্তির চোখে সামিরার দিকে তাকালো, সে বরাবরই এমন। তারপর নিজের পাশে রুহির দিকে তাকালো রুহি দুই হাটু তুলে তাদের জড়িয়ে ধরে বিস্ময় নিয়ে সামিরাকে দেখছে। রুহির মুখের এক্সপ্রেশন দেখে আহান নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেললো।
তারপর হাবু কাকা এসে বুঝিয়ে সুজিয়ে সামিরাকে নামলো সোফা থেকে, তারপর সামিরা পালাই পালাই করে নিজের রুমে চলে গেল।
আজব ইদুরের কি ডানা আছে যে উড়ে উড়ে এই মেয়ের কাছে যাবে। ভয় লাগলে পা তুলে রাখলেই হয়। ইদুরের যেদিকে যাওয়ার সেদিকেই যাবে। ইদুর নিশ্চই মানুষকে কামড়াতে আসবে না।
রুহির মুখে অদ্ভুত এক এক্সপ্রেশন আহান হাতের উপর গালের ভর দিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। সামিরা চলে যাবার পর রুহি আহানের দিকে তাকাতেই দেখলো আহান রুহির দিকেই তাকিয়ে আছে।
রুহি একটু এগিয়ে গিয়ে আহানকে বললো,” যেই মেয়েরা ইদুর দেখে লাফালাফি করে তাদেরকে আপনার অনেক পছন্দ তাই না?”, বলেই ঠোঁট চিপে হাসলো রুহি।
আহান সোফার উপরের হাতটা আস্তে করে রুহির ঘাড়ে ছোঁয়াতেই রুহি ভয়ে কেঁপে উঠলো। সাড়া শরীর শিউরে উঠলো তার। আহান একটু এগিয়ে এসে বলল,” না আমার সাহসী মেয়ে পছন্দ। আমি বাঘ হলে আমার পার্টনারকেও তো বাঘিনী হতে হবে।”, রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো আহান। তারপর উঠে চলে গেলো। ” অসভ্য লোক একটা।”, বির বির করে বললো রুহি।
রাতে রুহি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে কারণ সে ঘুমে একেবারে ঢুলে পরে যাচ্ছিলো। আহান বরাবরের মতোই দেরী করে ঘুমাতে যায় আজও তাই। সব কাজ শেষ করে ঘুমাতে যাবার আগে এসে রুহির সোফার সামনে বসে রইলো কিছুক্ষণ। আহানের ইচ্ছে করছে রুহিকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়। পাহাড়ের সেই দুইরাত কতোটা সুন্দর ছিলো। আহান নিশ্চুপে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহির ঠোঁটের দিকে তাকালেই সে রাতের ঘটনাটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। কি যেনো একটা হয় আহানের। এর আগে এমন অনুভূতি সে আর কারোর জন্য অনুভব করে নি। এই মেয়েটি আহান রহমানকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে।
???
পরেরদিন সন্ধ্যায় আহান কিছু লোক আনিয়ে সোফাটা বিদেয় করে দিলো। নিজের ইচ্ছেই করেছে সেটা আহান। রুহি রাতে ঘুমানোর সময় এসে সোফা না দেখে অবাক হয়ে গেলো।
” সোফাটা কোথায় গেলো? হায় হায়!”, বোলেই আহানের দিকে তাকালো রুহি।
আহান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো,”ঐ ডিজাইন পুরোনো হয়ে গেছে তাই পাল্টাতে দিয়েছি। আমার নতুন ডিজাইন লাগাবে।”
রুহির মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো। ভাবখানা দেখো যেনো নবাব সিরাজউদ্দৌলার বংশধর। ” মানে কি আমি ঘুমাবো কোথায়?”
আহান ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে রুহির দিকে তাকালো তারপর বললো,” এতো বড়ো বিছানাটা আছে কি করতে? যতদিন অন্য ব্যাবস্থা হচ্ছে না এতেই কাজ চালাতে হবে।”
” নাহ্ কখনোই না, যেখানে আমার নিজের উপরেই বিশ্বাস নেই সেখানে আপনাকেও আমি বিশ্বাস করতে পারবো না। এই রিস্ক আমি নিচ্ছি না।”,
” রিস্ক নিচ্ছ না মানে? তুমি কি বলতে চাইছে আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমালে তুমি নিজেকে আমার কাছে আসা থেকে আটকাতে পারবে না?,”লেপটপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একটু হেসে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো আহান।
মুখের উপর আহান এমন কথা শুনাবে সেটা রুহি ভাবতেই পারে নি, কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো রুহ তারপর বললো,” মোটেই আমি সেটা বলিনি। আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনার কাছে যাওয়ার জন্য পাগল হব। কি ভেবেছেন কি আপনি আমাকে আমি কি আপনার প্রেমিকার মতন যখন তখন আপনার গায়ে ঢলে পড়ি, নাকি?।”
আহান লেপটপ বন্ধ করে উঠে এসে রুহির সামনে দাঁড়ালো তারপর বললো,” সামিরা আমার এক্স।”
” ওহ তাই বুঝি? আসলে আমি কারোর এক্সকে এভাবে অষ্টে পিষ্ঠে একে অপরের সাথে লেগে থাকতে দেখিনি কখনো। তা আপনার কয়টা এক্স?”, আর চোখে তাকিয়ে বলল রুহি।
” তোমার এতো ইন্টারেস্ট কিসের?”, দুই হাত বুকের কাছে ভাজ করে বললো আহান।
” নাহ্ ঠিক ইন্টারেস্ট নেই তবে ভাবুন আপনার সবগুলো এক্স এসে একটা আরেকটার মাথার চুল ছিঁড়ছে।”,বলেই মুখ টিপে হাসতে হাসতে কাবাড থেকে নীচে ঘুমানোর ব্যাবস্থা করার জন্য কিছু খুঁজছে।
” ওসব উসলেস জিনিষ তুমিই ভাবো। আর তুমি করছো কি? কি খুজছো?”, রুহির হাত ধরে রুহিকে টেনে তুলে বললো আহান।
” আরে ছাড়ুন, আমি নীচে ঘুমানোর জন্য ব্যাবস্থা করছি কিন্তু কিছু পাচ্ছি না তো।”, এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে খুঁজতে বোলো রুহি।
” তার মানে তুমি বিছানায় ঘুমাবে না এইতো? এটাই ফাইনাল।”, শক্ত চোখে বললো আহান।
” হ্যা।”, মুখ বাঁকিয়ে বললো রুহি।
” আরেকবার ভাবার সময় দিচ্ছি। “,
” এতো সময় দিয়ে লাভ নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে একপাও নড়ছি না।”
” এখন আমি যা করবো তার জন্য দায়ি থাকবে তুমি কারণ ভদ্র ভাবে বলেছিলাম তুমি শুননি। তোমার তো আবার অভদ্র ভাষা বেশী ভালো লাগে,” বোলেই রুহির কোমড় ধরে কাছে নিয়ে এলো। রুহির কোমড়ে আহানের ঠান্ডা হাতের স্পর্শে সারা শরীর কেপে উঠলো রুহির। আহান রুহির ডান হাতটা নিজের কাধের উপরে রেখে রুহিকে কোলে তুলে নিলো।
রুহি পরে যাবার ভয়ে চোখ বন্ধ করে আহানে শার্ট চেপে ধরলো। তারপর আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই দেখলো আহান তার দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো তারপর লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো,” কি করছেন? ছাড়ুন আমাকে।”
” ছাড়ার জন্যতো তো ধরিনি।”, বোলে রুহিকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিতেই চোখে পড়লো দুজনের। রুহি সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে আহানের শার্ট ছেড়ে দিয়ে হাত নামিয়ে রাখলো। কিন্তু আহান সরছে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে। রুহির বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। ঘামতে শুরু করেছে,এতো নার্ভাস সে এর আগে কখনো হয়নি। রুহি আহানকে সরে যেতে বলতে গিয়ে আহানের দিকে তাকালো। আহান এগিয়ে আসছে তার কাছে আহানের দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে রুহির দিকে,রুহি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আহান রুহির কানের কাছে মুখ নিয়ে দুষ্টুমি করে বললো,” বাহ্ তুমি তো দেখি লজ্জাও পাও।” কথাটা রুহির কর্নগোচর হতেই চোখ বড়ো বড়ো করে আহানের পাশে মুখ ঘুরাতেই দুজনের মাঝে দুরত্ব আরো কম গেলো। আহানের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে রুহির গলায়। শরীরের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে বার বার। রেগে গিয়েও রাগ ধরে রাখতে পারলো না। শেষমেশ চোখ বন্ধ করে আহানকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো,”তো আমি কি আপনার মত নিলজ্জ?”
আহান উল্টো দিকে ফিরে কানের উপর বালিশ চাপা দিয়ে হাত নাড়িয়ে বললো,” গুড নাইট।”
রুহির শরীর রাগে গজগজ করছে। কানের উপর বালিশ চাপা দিয়েছে যেনো আমার কথা না শুনতে হয়। অসভ্য লোক একটা।আপনাকে ধরে বেধে রাখা উচিৎ জোড়ে জোড়ে কথাটা বলে আহান থেকে চাদরটা টান মেরে নিয়ে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো রুহি।
[ চলবে ]
[ Don’t be a silent reader]?