#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১২ (অন্তিম পর্ব)
কিরণ বলদ হয়ে গেল। চিত্রলেখা হাসতে লাগল।
আরও কিছু সময় কলে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লো চিত্রলেখা আর কিরণ।
————————-
কেটে গেছে দশটা দিন। আজ কিরণ আর চিত্রলেখার গায়ে হলুদ। আনিসুল চৌধুরী চিত্রলেখার মায়ের সঙ্গে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে নিয়েছেন।
কাব্য আর শুভ্রতা মার্কেটে এসেছে কিছু কেনাকাটা করতে। কেনাকাটার মাঝে কাব্য কিছুটা দূরে গিয়ে একটা লোককে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রতা ভ্রুকুচকে সেই দিকে তাকালো। দুইজন যখন তার দিকে ফিরে একসঙ্গে আসতে লাগল তখনই শুভ্রতা চমকে উঠলো। তীব্র এখানে কি করছে। তাও আবার কাব্যের সঙ্গে। শুভ্রতা অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে অবাক হয়ে আছে।
তীব্রের চোখ শুভ্রতার দিকে পড়তেই সে থমকে গেল। এতদিন তো কম খুঁজেনি শুভ্রতাকে। কাব্য পরিচয় করিয়ে দিতেই তীব্র থমকে গেল।
হুট করেই শুভ্রতা চটে গেল। তীব্রের কলার ধরে বলতে লাগল
-“তুই আমার বাবাকে কেন খুন করলি। একবারও বিবেক কাজ করলো না তোর। তুই কি আমাকে বাঁচতে দিবি না।”
কাব্য এবার অবাক হয়ে শুভ্রতাকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
কাব্য শুভ্রতা আর তীব্র বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে। তীব্র মাথা নিচু করে আছে। কাব্য চোখ ছোট ছোট করে বলল
-“তুই কি!”
তীব্র কাব্যকে থামিয়ে বলল
-“আমি কিছু করিনি। আসলেই তোর কপাল ভালো। আর আমার কপাল খারাপ। তুই শুভ্রতাকে নিজের করে পেয়েছিস। সে যাইহোক শুভ্রতাকে ভালো রাখিস।”
বলেই উঠে চলে গেল তীব্র। কাব্য আর শুভ্রতাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না তীব্র।
রেস্টুরেন্ট থেকে তীব্র বের হতেই আর্তনাদ ভেসে এলো। কাব্য আর শুভ্রতা চমকে সে দিকে তাকাতেই থমকে গেল।
হুট করেই মানুষের ভীড় লেগে গেল। কাব্য আর শুভ্রতা সেই জায়গায় যেতেই তীব্রের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পেল। তীব্র ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো কাব্য আর শুভ্রতার দিকে। কাব্য দৌড়ে গেল তীব্রের কাছে। তীব্রের হাত ধরতেই তীব্র আধো আধো কন্ঠে বলল
-“দেখে রাখিস শুভ্রতাকে। কষ্ট পেতে দিস না একদম।”
কাব্যের কোলেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো তীব্র।
——————————-
কেটে গেছে তিনটা বছর জশুভ্রতা,কাব্য,কিরণ আর চিত্রলেখা ঘুরতে এসেছে। ওরা বসে আছে সমুদ্রের ধারে।
কিরণের কাধে মাথা রেখে বসে আছে চিত্রলেখা। চিত্রলেখা নরম কন্ঠে বলল
-“ভালোবাসি প্রিয়”
কিরণ মুচকি হেসে চিত্রলেখাকে শক্ত করে ধরে বলল
-“আমিও তোমার অনেক বেশি ভালোবাসি লেখা।”
শুভ্রতা এতক্ষণ হা হয়ে কিরণ আর চিত্রলেখার দিকে তাকিয়ে ছিলো। কাব্য সেটা খেয়াল করে শুভ্রতার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল
-“ওই কি করছো! ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে না থেকে সমুদ্র উপভোগ করো। আর মানুষই বা কি বলবে বলো তো!”
শুভ্রতা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। কাব্য বাঁকা হাসলো। শুভ্রতা হাত ধরে ওকে দাড় করিয়ে দুইজন মিলে পানির কাছে চলে গেল। সমুদ্রের নোনা পানি দুইজনের পা ছুয়ে যাচ্ছে। শুভ্রতার মুখে এক মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। শুভ্রতা একবার তাকালো কাব্যের শক্ত করে ধরে থাকা হাতের দিকে। শুভ্রতা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে হাসলো।
কাব্য নিচু হয়ে শুভ্রতার কানে কানে বলল
-“এরকম করে হাসতে নেই পিচ্চি। মনে লাগে যে।”
কাব্যের কথায় চোখ বড় বড় হয়ে গেল শুভ্রতার। শুভ্রতার এমন করে তাকানো দেখে হো হো হেসে দিলো কাব্য। কাব্যের হাসিতে মুখ ভেংচি কাটলো শুভ্রতা।
শুভ্রতা আইসক্রিম দেখে কাব্যের হাত ঝাকুনি দিয়ে বলল
-“আইসক্রিম কিনে দেন না! প্লীজ প্লীজ”
কাব্য কপাল কুচকে বলল
-“আমি যদি তোমাকে আইসক্রিম কিনে দেই তাহলে তুমি আমাকে কি দিবে?”
শুভ্রতার মুখ ছোট হয়ে গেল। শুভ্রতা কাচুমাচু কন্ঠে বলল
-“আমি আবার কি দিবো আপনাকে!”
শুভ্রতাকে কাচুমাচু করতে দেখে হেসে দিলো কাব্য। হাসতে হাসতে কাব্য বলল
-“আরে পাগলী আমি তো মজা করছিলাম। আসো আইসক্রিম কিনে নিয়ে আসি।”
শুভ্রতা খুশি হয়ে গেল।
আইসক্রিম কিনতে গিয়ে চোখ আটকে গেল শুভ্রতার। ছবির মেয়েটা একটা অন্য ছেলের সঙ্গে দেখে সে কাব্যের দিকে তাকালো। কাব্য আইসক্রিম কিনছে। শুভ্রতা জানে এখন মেয়েটাকে দেখলে কাব্য আবার অস্বাভাবিক হয়ে পড়বে। শুভ্রতা ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে কাব্য হাত ধরে আইসক্রিম নিলো অপর হাতে।
কাব্য পাঁচটা আইসক্রিম কিনেছে। দুটো আইসক্রিম শুভ্রতার হাতে দিতেই শুভ্রতা খুশিতে টুক করে একটা চুমু বসিয়ে দিলো কাব্যের গালে। কাব্য হাসলো। শুভ্রতা ঘটনা বুঝতে পেরে লজ্জামেশানো হাসি হাসলো।
—————————–
শুভ্রতা গালে হাত দিয়ে বসে আছে হোটেলের রুমের বেডে। সন্ধ্যার পর আর খবর নেই কাব্যের। কিরণ আর চিত্রলেখার সঙ্গেই ছিলো এতক্ষণ সে। কিন্তু তার ভালো লাগছিল না বলে রুমে চলে এসেছে।
হুট করেই বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। শুভ্রতার কপালে চিন্তার ছাপ পড়লো। শুভ্রতা গিয়ে দাঁড়ালো বারান্দায়। বৃষ্টি হলেই তার মন কেন যেন খারাপ হয়ে যায়।
কাব্য চাবি দিয়ে রুমের দরজা খুলতেই শুভ্রতাকে দেখতে পেল না। দরজা লাগিয়ে সে এগিয়ে গেল বারান্দার দিকে।
শুভ্রতাকে ডাকতেই শুভ্রতা পিছু ফিরে তাকালো। কাব্যের চোখ আটকে গেল শুভ্রতার দিকে। শুভ্র রঙের শাড়িতে এক মোহনীয় নারী লাগছে শুভ্রতাকে। লম্বা চুলগুলো বাতাসে তালে তালে নাচছে। সামনের অবাদ্ধ চুলগুলো কপালে এসে বারি খাচ্ছে। কাজল রাঙানো চোখ যেন আরো একধাপ সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। কাব্য মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার মায়াবতীর দিকে তাকিয়ে আছে।
শুভ্রতা কাব্যের এমন করে তাকানো দেখে লজ্জা পেলো। কাব্য ধীরপায়ে শুভ্রতার কাছে এসে হাতে থাকা গোলাপ ফুলটা ওর কানে গুজে দিলো। পকেটে থাকা বেলিফুলের মালাটা ওর হাতে পড়িয়ে দিলো। মুগ্ধ কন্ঠে বলল
-“এখন একদম পারফেক্ট লাগছে।”
শুভ্রতা মুচকি হাসলো।
কাব্য ভ্রু নাচিয়ে বলল
-“নাফিসাকে যে দেখলে আমাকে কিছু বললে না কেন!”
শুভ্রতা কপাল কুচকে বলল
-“নাফিসা কে!”
কাব্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-“ছবির মেয়েটা। সে যাইহোক নাফিসা আমার প্রথম প্রেম ছিলো। কিন্তু নাফিসার ভালোবাসা ছিলো আমার ছোটবেলার বন্ধু তূর্যকে। আমরা তিনজন একসঙ্গে ভার্সিটিতে পড়েছি। দুইজনই আমার খুব কাছের মানুষ ছিলো। আমার ভালোবাসা ছিলো একতরফা আর ওরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসতো। তাই আমি ওদের জীবন থেকে সরে এসেছি।”
শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
-“হঠাৎ আমাকে এগুলো বলছেন যে।”
কাব্য মুচকি হেসে বলল
-“তুমি আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত। তোমাকে তো বলতেই হতো আমার অতীত।”
শুভ্রতা হাসলো।
কাব্য শুভ্রতার দিকে তাকালো। শুভ্রতাও তাকালো। আজ কাব্যকে অন্যরকম লাগছে। আজ ওর চোখে চিকন ফ্রেমের চশমাটা নেই। তাও খারাপ লাগছেনা। ফর্সা মুখে কালো কুচকুচে চাপ দাড়িতে বেশ ভালো লাগছে। কাব্য শুভ্রতাকে কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে কপালের সঙ্গে কপাল ঠেকিয়ে বলল
-“এই বৃষ্টি ক্লান্ত শহরকে স্বাক্ষী রেখে বলছি বৃষ্টির সময় তোমার মন ভালো করার দায়িত্ব আমি নিলাম।”
শুভ্রতা মুচকি হাসলো। হুট করেই কাব্য শুভ্রতার হাত ধরে দৌড় দিতে লাগল। শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
-“কোথায় যাচ্ছেন!”
কাব্য বলল
-“বৃষ্টি ক্লান্ত শহরে নিজের ক্লান্তি দূর করতে যাচ্ছি।”
হোটেলের বাগানে এসে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল কাব্য আর শুভ্রতা। কাব্য দুইহাত ছড়িয়ে চিল্লিয়ে বলল
-“ভালোবাসি শুভ্রতা”
শুভ্রতা কাব্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
-“আমিও আপনাকে ভালোবাসি।”
পরিশেষে ভালো থাকুক ভালোবাসা।
#সমাপ্ত
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করবেন।গল্পটি কেমন হলো জানাতে ভুলবেন না। পুরো গল্পটা আমাকে সাপোর্ট করার জন্য সকল পাঠক-পাঠিকাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নতুন গল্প নিয়ে আবার ফিরে আসবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।😊💛)