#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৮
কাব্যের ভাবনায় ছেদ ঘটলো শুভ্রতার কন্ঠে। শুভ্রতা চকলেটের দিকে তাকিয়ে বলল
-“চকলেটগুলো কার?”
কাব্য শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
-“কাকলির জন্য অফিস থেকে আসার সময় সবসময় নিয়ে আসি। আর এখন তো আরও একটা বাচ্চা আছে আমাদের বাসায় তাই আজ তার জন্যও নিয়ে এসেছি।”
শুভ্রতা কপাল কুচকে বলল
-“আরেকটা ছোট বাচ্চা আবার কে আপনার ছোট ভাই!”
কাব্য বেড থেকে উঠে এসে চকলেটগুলো নিয়ে শুভ্রতার হাতে দিয়ে ওর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল
-“পাগলি মেয়ে এটা তোমার জন্য আর কাকলির জন্য। যাও ওকে দিয়ে এসো।”
শুভ্রতা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেল কাকলির রুমে বকবক করতে করতে। কাব্য ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
———————–
রাতে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। কিরণ বাদে। কাব্য কিছুটা চিন্তিত হয়ে পিছনে তাকাতেই কিরণকে দেখতে পেলো। কিরণের মুখ অসম্ভব গম্ভীর হয়ে আছে। চোখ লাল হয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। কাব্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাওয়া শুরু করলো। আনজুমা বেগম কিছু বলছেন না। চুপচাপ বসে আছেন।
কিরণ চেয়ার টেনে বসতেই আশা বেগম ভ্রুকুচকে বলল
-“কি হয়েছে তোর! বিকেলে বাইরে থেকে আসার পর থেকে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন!”
কিরণ খাওয়ার দিকে চোখ রেখে বলল
-“তেমন কিছু না। মাথা ব্যথা করছিল। তাই একটু ঘুমিয়েছিলাম। হয় তো সেই জন্যই এমন দেখাচ্ছে। ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করোনা।”
আশা বেগমের মনটা তাও খুত খুত করতে লাগল। কিন্তু তাও সে কথা বাড়ালো না।
কিরণ চুপচাপ খাবার নাড়াচাড়া করে চলে গেল। আশা বেগমের সন্দেহ যেন আরো বেড়ে গেল।
—————–
খাওয়া শেষ করে কাব্য কিরণের রুমে চলে গেল। কিরণ বসে ছিল বেডের উপর। কাব্য কিরণের পাশে বসে বলল
-“মন খারাপ!”
কিরণ তাকালো কাব্যের দিকে। কাব্য হাসলো। কাব্য নরম কন্ঠে বলল
-“কি হয়েছে বিকালে?”
কিরণ খানিকটা অবাক হলো। কাব্য আবারও হাসলো। কিরণের হাতে হাত রেখে বলল
-“আমি তোর বড় ভাই। আর চেহারার যে অবস্থা করে রেখেছিস সব যে তখন খাবার টেবিলে মিথ্যা বলেছিস বোঝাই যাচ্ছে। অভিনয়টাও ঠিক মতো করতে পারিস না।”
হুট করেই কিরণ কাব্যকে। কাব্য শক্ত করে আকড়ে ধরলো কিরণকে। ছেলেটা রীতিমতো ফোপাতে লাগল। কাব্য কিরণের মাথায় হাত রেখে বলল
-“আমি চিত্রলেখার সঙ্গে তোকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বো। আর আমার এতো হ্যান্ডসাম ভাই। তাকে কেন কোনো মেয়ে রিজেক্ট করবে। নো নেভার। আমি তা কিছুতেই হতে দিবোনা।”
কিরণ কাব্যকে ছেড়ে বেডে উঠে বসে বলল
-“ও আমাকে রিজেক্ট করেনি দাভাই। ও আমাকে ভালোবাসে।”
কাব্য কপাল কুচকে বলল
-“তাহলে সমস্যা কি!”
কিরণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব খুলে বলল।
কাব্য সব শুনে খানিকটা সময় চুপ থেকে বলল
-“ও এই ব্যাপার। তাতেই তুই দেবদাস হয়ে বসে আছিস। তারে বেডা এখন শুরু তোর শাশুড়িকে মানানো। তারপর বাসার সবাইকে। চিল ব্রো এতো সিরিয়াসলি নিস না। আমি দেখছি সব।”
কিরণ কাব্যের দিকে তাকিয়ে বলল
-“দাভাই তুই কি করবি!”
কাব্য বাঁকা হেসে বলল
-“আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া। এখন ঘুমা কাল সকাল থেকে কাজ আছে অনেক।”
কিরণ গোল গোল চোখে তাকিয়ে বলল
-“কি কাজ?”
কাব্য কিরণের পিঠ চাপড়ে বলল
-“আরে এতো টেনশন নিচ্ছিস কেন! আমি আছি তো সব দেখে নিবো। এখন ঘুমা তো। আমি ও গিয়ে ঘুমাই।”
বলেই কাব্য কিরণের রুম ত্যাগ করলো। কিরণ শুধু ভেবলার মতো তাকিয়ে রইলো কাব্যের যাওয়ার দিকে। কাব্য কি করবে এটা ভাবতে ভাবতেই কখন যে চোখটা লেগে এসেছে তার বুঝতেই পারেনি সে।
কাব্য কিরণের রুম থেকে বের হতেই আশা বেগমের মুখোমুখি হয়। খানিকটা থতমত খেয়ে যায় কাব্য।
আশা বেগম কাব্যকে বললেন
-“তুই কিভাবে সমস্যার সমাধান করবি। আর তোর আব্বু এগুলো জানে।”
কাব্য বলল
-“আম্মু তুমি একটু বাবাকে মেনেজ দিবে।”
আশা বেগম কপাল কুচকে বললেন
-“চিনিনা জানিনা এমন করে কেমনে কি!”
কাব্য আশা বেগমের হাত ধরে বলল
-“আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। মেয়েটা যদি ভালো হয় তাহলে তো তোমার সমস্যা নেই তাইনা।”
আশা বেগম ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললেন
-“দেখ কি করিস!”
বলেই উনি ওনার রুমে চলে গেলেন। কাব্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে গিয়ে দেখলো শুভ্রতা বেডের উপর গালে হাত দিয়ে বসে থেকে কি যেন ভাবছে। শুভ্রতার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে কাব্য বলে উঠলো
-“কি এতো ভাবছো!”
শুভ্রতা ভাবুক দৃষ্টিতে কাব্যের দিকে তাকিয়ে বলল
-“কথা হচ্ছে কি আমি কলেজ গিয়ে কি করবো!”
কাব্য ভ্রু কুচকালো। শুভ্রতা আবারও বলল
-“পোলাপান সামনালোর জন্য তো এসএসসি পাশ করছিই। আর পড়াশোনা করে কি করবো বলেন তো।”
কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের লাইট বন্ধ করে বলল
-“এগুলো এখন ভেবে লাভ নেই। তুমি আম্মুর পাল্লায় পড়েছো। তা আজ কি পড়া পারোনি নাকি।”
শুভ্রতা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল
-“জানেনা পড়া না পারলে শাশুড়ি কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখে। কি এক মহাবিপদ বলেন তো।”
কাব্য চোখ থেকে চিকন ফ্রেমের চশমাটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বলল
-“এখন ঘুমাও তাছাড়া আবার সকালে উঠতে না পারলে আম্মু খেপে যাবে।”
শুভ্রতা কাব্যের দিকে ঘুরে বসে বলল
-“কাল তো শুক্রবার। কালকেও ছুটি নেই।”
কাব্য বালিশে মাথা রেখে বলল
-“কাল আম্মু সকালে ব্যাচ পড়ায়। তো সাথে তোমাদের ও বসাবে।”
শুভ্রতা কপাল চাপড়াতে লাগল। কাব্য হাসলো আর বলল
-“এখন ঘুমাও রাত হচ্ছে অনেক। পরে ঘুম না হলে খারাপ লাগবে।”
শুভ্রতা ধপ করে অপর পাশ হয়ে শুয়ে পরলো।
———————
কাকলি দরজায় টোকা দিতেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো শুভ্রতা। কাকলি শুভ্রতা আসতে বলে চলে গেল।
পাশে তাকিয়ে দেখলো কাব্য খালি গায়ে শুয়ে আছে। দেখেই চোখ কপালে উঠলো শুভ্রতা। এই ছেলে তো রাতে টিশার্ট পড়ে শুয়েছিল। শুভ্রতার মাথায় হুট করেই শয়তান নাড়া দিলো। সে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে পাশের গ্লাসটা তুলে নিয়ে পানি ছিটাতে লাগল কাব্যের গায়ে।
কাব্য হুড়মুড়িয়ে উঠলো। কি হয়েছে ব্যাপারটা বুঝতে বেগ পেতে হলো তার। বুঝতে পেরেই শুভ্রতার দিকে তাকাতেই শুভ্রতা ভো দৌড় দিলো ওয়াশরুমের দিকে। কাব্য শুভ্রতা বলে চিল্লিয়ে উঠলো।
শুভ্রতা ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দরজার সঙ্গে পিট লাগিয়ে হাসতে লাগল।
খানিকক্ষণ পর শুভ্রতা ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে টুকি দিলো। না কাব্য নেই বাইরে গেছে হয় তো।
শুভ্রতা স্বস্থির নিশ্বাস ছেড়ে বের হতে নিবে তখনই এক গ্লাস পানি আছড়ে পরলো শুভ্রতার মুখে। শুভ্রতা একদম হতভম্ব হয়ে গেল।
কাব্য বাঁকা হেসে বলল
-“আমার সঙ্গে পাঙ্গা লাগতে এসেছো। আমি কি তোমায় ছেড়ে দিবো।”
হুট করে শুভ্রতা ঠোঁট উল্টিয়ে ভে ভে করে কান্না করতে লাগল।
কাব্য থতমত খেয়ে বলল
-“কি হয়েছে কান্না করছো কেন!”
শুভ্রতা নাক টেনে বলল
-“এখন আপনার জন্য আমাকে আবার শাশুড়ির থেকে বকা খেতে হবে।”
কাব্য অবাক হয়ে বলল
-“আম্মু আবার বকবে কেন!”
শুভ্রতা এবার খেপে গিয়ে বলল
-“বোঝেন না মিয়া। এখন পানি দিয়ে ভিজে যাওয়ার পর চেন্স করতে হবেনা। কি করলে আপনি এটা।”
কাব্য বাঁকা হেসে শুভ্রতার নাক টেনে বলল
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করে পাশেই থাকবেন ধন্যবাদ।)