#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৫
কাব্য শুভ্রতার পাশে দাড়িয়ে ওর কানের কাছে ঝুঁকে বলল
-“আর কত মুখ ফুলিয়ে রাখবে বলো তো। একদম পেত্নির মতো লাগছে।”
শুভ্রতা কটমট দৃষ্টিতে তাকালো কাব্যের দিকে। কিছু না বলে চলে গেল রুম ছেড়ে।
কাব্য হাসলো শুভ্রতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। রাতের খাওয়া শেষ করে কাব্য কিরণের রুমে গেল। কিছু কথা বলে নিজের রুমের দিকে রওনা হলো।
রুমে এসে রুম অন্ধকার দেখে লাইট জ্বালালো। শুভ্রতা রুমে না দেখে কপাল কুচকালো সে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে ঝিরিঝিরি। কাব্য এগিয়ে গেল বারান্দার দিকে। যা ভেবেছিল তাই বারান্দার গ্রিল ধরে শুভ্রতা দাড়িয়ে আছে বাইরের দিকে তাকিয়ে।
কাব্য ধীর পায়ে গিয়ে শুভ্রতার পাশে দাড়ালো। বৃষ্টির পানি শুভ্রতার কোমল মুখ আছড়ে পড়ছে। কাব্য সেইদিকে বলল
-”এইজন্যই হয় তো সবাই বৃষ্টিকে এতটা পছন্দ করে। কি সুন্দরভাবে নিজের কষ্টটাকে বৃষ্টির মাধ্যমে বিলিয়ে দেওয়া হয়। কেউ বুঝতেও পারেনা।”
শুভ্রতা অবাক চোখে তাকালো কাব্যের দিকে। কাব্য সামনের দিকে তাকিয়ে বলল
-“এই বৃষ্টি ক্লান্ত শহরে সকলে ব্যস্ত নিজের দুঃখ বিলাশ করতে। বৃষ্টিটাকে উপভোগ করতে হয়। মানুষের জীবন যেমন ক্ষণস্থায়ী তেমনই সুখ দুঃখও ক্ষণস্থায়ী। যতদিন এই রহস্যময় পৃথিবীতে নিজেকে ভালোবেসে প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতে পারলেই জীবন সুন্দর। থাক কিছু দুঃখ কষ্ট যত্নে গুছিয়ে।”
কাব্য শুভ্রতার হাত ধরতেই কেঁপে উঠলো শুভ্রতা। কাব্য সেই দিকে পাত্তা না দিয়ে ওকে বারান্দায় থাকা দোলনায় নিয়ে গিয়ে বসালো।
বারান্দায় থাকা বেলিফুলের ছোট গাছটাতে একটা ফুলে ধরেছে। বৃষ্টির সুগন্ধ আর বেলিফুলের স্নিগ্ধ সুভাষ মিলে এক মনোমুগ্ধকর সুগন্ধ এসে আছড়ে পরছে কাব্যের নাকে।
কাব্য প্রাণ ভরে সেই সুভাষ নিয়ে বলল
-“তুমি কি মনে করেছো তুমি সারাদিন সবার সঙ্গে স্বাভাবিক ছিলে বলেই তুমি সবকিছু মানিয়ে নিয়েছ। আমি জানি তোমার সূক্ষ্ম হাসির মাঝেই আপন জন হারানোর তীব্র কষ্ট কাজ করছে। তুমি আমাকে নিজের বন্ধু ভেবে সব কিছু ভাগ করে নিতেই পারো। জানো তো তুমি যদি আমার কাছে কষ্ট ভাগ করে নেও তাহলে আমি হয় তো অতটা অনুভব করতে পারবোনা। কিন্তু তুমি অনেকটা হালকা হবে এটা আমি বলতে পারি।”
শুভ্রতা নিজের অজান্তেই কাব্যের কাধে মাথা রাখলো। কাব্য বুঝতে পারলো বাচ্চা মেয়েটার উপর দিয়ে কি চাপ যাচ্ছে। তার এই কাধটা প্রয়োজন ছিল। শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে বলল
-“আমার জন্মের সময় আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে যায়। বাবা তারপর আর দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় নি। শুধুমাত্র আমার অযত্ন হবে বলে। আমি ছোট বেলা থেকে মায়ের আদর পাইনি। কিন্তু আমার বাবা আমাকে ভালোবাসার কোনো কমতি কোনোদিন অনুভব করতেই দেয়নি। আজ উনি নেই। আমাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূরে। আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।”
কাব্য নিজের হাত শুভ্রতার মাথায় রাখলো। শুভ্রতা আবারও বলতে লাগল
-“আপনার পরিবারের সবাই অনেক ভালো। আমাদের বিয়েটা স্বাভাবিকভাবে না হলেও এতো তাড়াতাড়ি যে ওনারা আমাকে আপন করে নিবেন আমি ভাবতেও পারিনি। বিশেষ করে আপনার মা। ওনাকে আমার অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে। আমি কোনোদিন মায়ের মতো কাউকে পাইনি। কিন্তু আপনার মায়ের থেকে আমি মা মা গন্ধ পাই।”
কাব্য ধীর কন্ঠে বলল
-“আমার মা এমনি ওনার রাগারাগির মাঝেই ভালোবাসা।”
অনেকটা সময় কেটে গেল ওদের নিরব নিরিবিলিতে। বৃষ্টি এতক্ষণে থেমে গেছে। মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। কাব্য নিরবতা ভেঙে বলল
-“চলো ঘুমাতে হবে। তোমাকে আবার কালকে কলেজ যেতে হবে।”
শুভ্রতা বলল
-“আর কিছু সময় থাকি।”
কাব্য মাথা ঝাকিয়ে বলল
-“না না রাত সাড়ে বারোটা বাজে। এখন ঘুমাতে চলো। কাল আবার গল্প করা হবে।”
রুমে আসতেই শুভ্রতা সোফায় ঘুমাতে যাবে। তার আগেই কাব্য বলল
-“আমার বিছানা কি এতোই ছোট হয়ে গেছে যে তোর মতো বাচ্চার বিছানায় জায়গা হবেনা।”
শুভ্রতা কোমরে হাত রেখে বলল
-“প্রথম দিন কে যেন বলেছিল আমার বিছানায় তোমার জায়গা হবেনা। তুমি সোফায় গিয়ে ঘুমাও। হেনতেন কত ধমকাধমকি।”
কাব্য মাথায় হাত রেখে বলল
-“আরে ওইদিন আমার মাথা গরম ছিল তাই ধমকাধমকি করে ফেলেছি। এটা ভুলে যাও।”
শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে বলল
-“ধরুন আপনি একজনকে খুন করেছেন। এখন আপনি কি তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।”
কাব্য ভ্রু কুচকে বলল
-“এখানে খুন টুন কোথায় থেকে আসলো।”
শুভ্রতা বিরক্তি নিয়ে বলল
-“আরে যা বলছি তার উত্তর দিন।”
কাব্য কিছুসময় ভাবলো। তারপর বলল
-“ফিরিয়ে আনতে পারবো। কারণ আমি হুদাই খুন করতে যাবো কেন!”
শুভ্রতা বিরক্তির চরম পর্যায় পৌঁছে গিয়ে বলল
-“আরে মিয়া আপনি সোজা কথার সোজা উত্তর দিতে পারেন না। সে যাইহোক আপনি সেই খুন করা মানুষকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। তেমনি কথা একবার যা বলবেন তা ফিরাতে পারবেন না। সেহেতু আপনার তো উচিত কথা বলার সময় ভেবে চিন্তে বলা। সে যাইহোক রাগের সময় যদি নিজের কথাই কন্টোল করতে পারেন না তাহলে আর কি করলেন জীবনে।”
কাব্য গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“একটু বেশি কথা হয়ে যাচ্ছে তোমার শুভ্রতা। আমার কাজের জন্য সরি। এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়। আর ঘাটিও না।”
শুভ্রতা মুখ ভেংচি কেটে বেডের এক সাইডে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। কাব্য ও চুপচাপ অন্য দিকে পাশ হয়ে শুয়ে পরলো।
———————-
সকাল হতেই ঘুম ভেঙে গেল কাব্যের। চোখ পিটপিট করে তাকাতে হুট করে একটা হাতের বাড়ি খেতেই থতমত খেল কাব্য। শুভ্রতার হাত সরিয়ে কাব্য উঠে বসলো। শুভ্রতার শোয়া স্টাইল দেখে চোখ কপালে উঠে গেল কাব্যের। আর একটু হলেই সে খাট থেকে পড়ে যেত। শুভ্রতা সারা বিছানা নিয়ে শুয়ে আছে।
কাব্য ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
শুভ্রতা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিল দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে ধড়ফড়িয়ে উঠলো সে। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই ললিতাকে দেখতে পেল।
শুভ্রতা বুকে ফু দিয়ে বলল
-“আরে ললিতা আন্টি তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। আমি তো মনে করেছি শাশুড়ি।”
ললিতা বললেন
-“মেডাম তোমাকে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে যেতে বলেছে। তারপর আবার কলেজের জন্য রেডি হতে হবে তোমার । তুমি কি কলেজের কথা ভুলে গেছো।”
শুভ্রতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই দেড়ি হয়ে গেছে। কপাল চাপড়ে বলল
-“আন্টি আমার তো মনেই ছিল না। তুমি যাও আমি যাচ্ছি।”
ললিতা চলে গেলেন। শুভ্রতা পিছনে ঘুরতেই শুধু টাওয়েল পড়া অবস্থায় কাব্যকে দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেল। চোখ বড় বড় করে অবাক কন্ঠে বলল
-“সকাল সকাল আপনার আবার কি হলো। এমন অবতার হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন যে।”
কাব্য ভ্রুকুচকে বলল
-“মানে”
শুভ্রতা বলল
-“আপনি সকাল সকাল খালি টাওয়েল পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন!
কাব্য কার্বাট থেকে শার্ট প্যান্ট বের করতে করতে বলল
-“শাওয়ার নিলাম অফিস যাবোনা। আর আমার রুমে আমি টাওয়েল পড়ে থাকলে কি সমস্যা!”
শুভ্রতা হা হয়ে বলল
-“আপনার মনে নাই রুমে শুধু আপনি একা নেই একটা মেয়েও আছে।”
কাব্য স্বাভাবিক ভাবেই বলল
-“তো তুমি এমন ভাব করছো যেন আমি টাওয়েলও পড়িনি।”
শুভ্রতার চোখ আরো বড় হয়ে গেল।কাব্য ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-“এবার কিন্তু আর ললিতা আন্টি আসবেনা আম্মুই আসবে।”
শুভ্রতা হুশ হতেই সে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
শুভ্রতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দিলো কাব্য। কাব্য অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগল।
কিছুক্ষণ বাদে শুভ্রতা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আবারও ভো দৌড় দিলো খাবার টেবিলের দিকে।
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।)