#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৪
শুভ্রতা মুখ বাঁকিয়ে খেতে লাগল। কান মাথা ভো ভো করছে। আবারও তাকে পড়তে হবে। তা শাশুড়ি ওকে পড়াতে বসলে ও শেষ। এগুলোই ভাবছিল শুভ্রতা তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।
এক সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিলো। শুভ্রতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে। লম্বা শ্যাম বর্ণের একটা ছেলে। দেখতে আনিসুল চৌধুরীর মতো কিছুটা। কাকলি ভাইয়া বলে দৌড়ে গেল। শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো। পাশে থাকা একটা আধ বয়সি সার্ভেন্ট ললিতাকে জিঙ্গাসা করলো
-“আন্টি এই ছেলেটা কে!”
ললতি সামনে তাকিয়ে আবারও টেবিল গোছাতে গোছাতে জবাব দিলো
-“উনি কিরণ চৌধুরী। স্যারের ছোট ছেলে। মানে আপনার দেবর হয় সম্পর্কে।”
শুভ্রতা বলল
-“ও তা উনি কোথায় ছিল এই কয়েকদিন।”
ললিত নরম কন্ঠেই আবার জবাব দিলো
-“ঘুরতে গিয়েছিলেন বিদেশে।”
শুভ্রতা বলল
-“ওও বুঝলাম।”
আশা বেগম ছেলেকে দেখে বললেন
-“যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। ললিত তোকে খাবার দিবেনি। আমি কলেজ যাবো একটু পর। রেডি হই গিয়ে।”
কিরণ কিছু না বলে সামনে এগোতেই শুভ্রতাকে দেখতে পেল। সে ভ্রু কুচকে কাকলির দিকে তাকাতেই কাকলি বলে উঠলো
-“দাভাইয়ের বউ। তোকে বলছিলাম না।”
কিরণ শুধু গম্ভীর কন্ঠে ওও বলে নিজের রুমে চলে গেল।
শুভ্রতা কিরণের যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে কাকলির দিকে তাকিয়ে বলল
-“তোমাদের পরিবারের সবাই এমন কেন!”
কাকলি কপাল কুচকে বলল
-“কেমন!”
শুভ্রতা বলল
-“এই যে সবাই কেমন গম্ভীর। মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে রাখে।”
শুভ্রতার কথায় কাকলি হাসলো। আর বলল
-“পরিস্থিতি হয় তো এমন করে দিছে। সে যাইহোক রেডি হই চলো।”
শুভ্রতা ধপধপ পায়ে চলে গেল নিজের রুমে ইচ্ছা না থাকা সত্বেও। কাকলি শুভ্রতার কাজে হাসলো।
————————–
কলেজে পৌঁছে কাকলি চলে গেল ক্লাসে। আশা বেগমের পিছনে পিছনে যেতে লাগল শুভ্রতা। কলেজের স্টুডেন্টরা সালাম দিছে আশা বেগমকে ভয়ে ভয়ে। আশা বেগম গম্ভীর কন্ঠে সালামের উত্তর নিচ্ছেন।
ভর্তির কাজ সম্পূর্ণ করে আশা বেগম শুভ্রতা হাত ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগল। আজ তার ক্লাস নেই শুভ্রতাকে ভর্তি করানোর জন্যই উনি এসেছে। রাস্তার ধারের ফুচকার দোকানের দিকে তাকিয়ে আছে শুভ্রতা। আশা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“এগুলো অস্বাস্থ্যকর। আমি তোমাকে কিছুক্ষণ পর রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে দিবোনি। এখন চুপচাপ আমার সঙ্গে চলো।”
শুভ্রতার চোখ মুখ খুশিতে ঝলমল করে উঠলো। সে বলল
-“সত্যি”
আশা বেগম গাড়িতে শুভ্রতাকে বসিয়ে নিজে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল
-“আমি মিথ্যা কথা বলিনা।”
শুভ্রতা খুশি মনে জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখতে লাগল। আশা বেগম শুভ্রতাকে মার্কেটে গিয়ে কিছু কেটে কাটা করে দিলেন। বইখাতা যা যা দরকার সব কিনলেন। যাওয়ার সময় রেস্টুরেন্ট থেকে ফুচকাও কিনে নিলেন।
—————————
সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে নিজের রুমে এসে কাব্য দেখলো শুভ্রতা কান ধরে দাড়িয়ে আছে। আশা বেগম সামনের সোফায় মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন। শুভ্রতাকে এমন অসহায় অবস্থায় দেখে হুট করেই ফিক করে হেসে দিলো কাব্য। আশা বেগম আর শুভ্রতা দরজার দিকে তাকাতেই কাব্য নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে হো হো করে হেসে দিলো।
কাব্যকে মুখ ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকালো শুভ্রতা। কাব্য ওর মাকে বলল
-“আম্মু ওকে এমন করে কান ধরিয়ে রেখেছো কেন!”
আশা বেগম ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন
-“আর বলিস না ওকে পড়াচ্ছিলাম। সেই যাইহোক ফ্রেশ হয়ে নে। কিরণ আসছে একসঙ্গে নাস্তা করবি যা।”
কাব্য শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
-“আজকের মতো ওকে ছেড়ে দেও আম্মু। বেচারাকে প্রথম দিন একটু মাফ দেও।”
আশা বেগম শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
-“যাও আজকে তোমার ছুটি। কাল থেকে কলেজ যাবে বুঝলে।”
বলেই শুভ্রতার উত্তরের অপেক্ষা না করে আশা বেগম চলে গেলেন। শুভ্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে কোমরে হাত রেখে বলল
-“আপনি হাসলেন কেন!”
কাব্য কপাল কুচকে বলল
-“হাসি আসলে কি হাসা যাবেনা।”
শুভ্রতা দ্বিগুণ জোর দিয়ে বলল
-“আমার কান ধরে থাকতে থাকতে কান হাত পা সব ব্যথা করছে। আর আপনি হাসি আসলো বলেই হাসলেন বদ লোক।”
কাব্য বলল
-“পড়া না পারলে তো এমন হবেই।”
শুভ্রতা রেগে বলল
-“আপনার সঙ্গে আর কথা নেই যান।”
বলেই গটগট পায়ে রুম ত্যাগ করলো শুভ্রতা। কাব্য হেসে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
কিরণের রুমের সামনে আসতেই পা থেমে গেল শুভ্রতার। মৃদু সুরে গান ভেসে আসছে। শুভ্রতা চুপ করে শুনতে লাগল। কিরণ খালি গলায় গান গাইছে
▪▪বৃষ্টিটাকে জড়িয়ে ধরে আজও কেঁদেছি
চোখের পানি মুছে দেবে বলে আর ভাবিনি
এখন আমি অনেক ভালো তোমায় ছাড়া থাকতে পারি▪▪
শুভ্রতা কপাল কুচকে ভাবলো এর তো কোনো ঘাবলা আছেই আছে। ছেলেটার হাবভাব ভালো লাগছে না ছ্যাকা খাইছে না। ভাবতে ভাবতে কাকলির রুমে চলে গেল।
কাকলি পড়ছিল দেখে শুভ্রতা কোনো কথা না বলে বসে পরলো বেডে গাল হাত রেখে।
কাকলি আড় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে পড়া শেষ করলো। পড়া শেষ করে শুভ্রতার পাশে এসে বলল
-“কি হয়েছে তুমি কি ভাবছো!”
শুভ্রতা ভাবুক কন্ঠে বলল
-“তোমার ছোট ভাই মনে হয় ছ্যাকা খাইছে।”
কাকলি ভ্রু কুচকে বলল
-“তুমি কিভাবে বুঝলে।”
শুভ্রতা বলল
-“ওনার রুমের সামনে থেকে ঘুরে এসো বুঝতে পারবে।”
কাকলি অবাক হয়ে ওর ছোট ভাইয়ের রুমের সামনে থেকে ঘুরে আবার চলে এলো। আবার শুভ্রতার পাশে বসে বলল
-“ভাইয়া তো গান গাচ্ছে।”
শুভ্রতা বেডে পা ভাঁজ করে বসে বিজ্ঞের মতো বলল
-“উনি ফিলিংস নিয়ে গান গাচ্ছেন। এর মানে বোঝনা।”
কাকলি কিছু বলতে নিবে তার আগেই শুভ্রতা কারো গাট্টা খেয়ে আহ করে উঠলো। মাথা হাত রেখে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো
-“কেরে এতো বড় সাহস আমার মাথায়..”
পিছনে ফিরে কাব্যকে দেখে চুপ করে গেল শুভ্রতা। কাব্য বুকে হাত গুজে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কাব্য সন্দেহ নিয়ে বলল
-“তোমার এত বুদ্ধি কোথায় থেকে আসে।”
শুভ্রতা আমতা আমতা করতে লাগল। কিরণ দরজায় ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে বলল
-“দা ভাই তুমি এই পিচ্চিকে বিয়ে করলে শেষমেষ। ও তো বুঝতেও পারলো না আমার কত টেলেন্ট। আমি ফিলিংস নিয়ে গান গাইছি তাই আমি ছ্যাকা খাইছি কি যুক্তি দাভাই।”
শুভ্রতা দাঁত কিটমিট করলো। কাব্য ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“সবই আমার কপালের দোষ।”
কিরণ কাকলির কাছে গিয়ে ওর চুল টেনে বলল
-“কিরে মশা, নতুন বান্ধবী পেয়ে আমাদের ভুলে গেছিস।”
কাকলি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে বলল
-“ভাইয়া তুই সবসময় আমার চুলের সাথে লাগিস। লাগেনা আমার।”
কিরণ মুখ বাঁকিয়ে বলল
-“কোথায় এতদিন পর বাসায় আসলাম কিছু বানিয়ে খাওয়াবি তা না কানের সামনে ফেনফেন করছিস।”
কাকলি বলল
-“আমার কত ঠেকা তোর জন্য রান্না করি আর তুই ভুল ধরিস।”
শুভ্রতা চুপ করে ছিল। কাব্য ওর পাশ থেকে বলল
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।💛)