#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০২
শুভ্রতা লাফাতে লাফাতে যেতেই এক রুমে উঁকি দিয়ে দেখল। একজন বয়েস্ক মহিলা বসে আছে চেয়ারে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে। শুভ্রতা কপাল কুচকে তাকাতেই মহিলাটা বলে উঠলো
-“ভিতরে আসো।”
শুভ্রতা থতমত খেয়ে গেল। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বলল
-“আপনি কে!”
মহিলাটা নিজের চোখের চশমা ঠিক করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-“আমি কাব্যের দাদি। তুমি কি নতুন বউ নাকি।”
শুভ্রতা মুখ ফুলিয়ে বলল
-“হুম”
কাব্যের দাদি মিসেস আনজুমা বললেন
-“মন খারাপ নাকি রে। আয় আমার কাছে এসে বস।”
শুভ্রতা হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসে পড়লো। আনজুমা বেগম শুভ্রতার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন
-“জানিস তো আমার ও অনেক ছোট বেলায় বিয়ে হয়েছিল। আমার কেমন কেমন জানি লাগত। আর আমার উনি ছিল একদম কাব্যের মতো উঁচালম্বা। আর ওর মতো রাগী আর ঘাড়তেড়া ও। উনি প্রথম দিনই আমাকে যে ধমক দিয়েছিলেন।”
শুভ্রতা চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে বলল
-“উনিও জানেন কাল রাতে কি ধমকটাই দিলো আমাকে। আমি তো খুব ভয় পেয়ে পরে সোফায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়েছিলাম। আসলেই খাটাশের খাটাশ উনি।”
আনজুমা বেগম হাসলেন শুভ্রতার কথায়। আনজুমা বেগম বললেন
-“জানিস তোর বাবা মা অনেক ভালো মানুষ। তোর শশুর আর তোর বাবা অনেক ভালো বন্ধু। আনিসুল বিদেশে সিফট হওয়ার পর যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। দেশে ফিরে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরে এই তো সাতদিন আগে জমিজমার কাজে পরশু কাব্যকেও ডেকে নিয়ে যায়। পরে তো হুট করেই তোকে কাল কাব্যের বউ করে নিয়ে আসে। আগেই অবশ্য কাব্যের সঙ্গে তোর বিয়ের কথা বলেছিল তোর শশুর আর তোর বাবা।”
শুভ্রতা চুপ করে শুনছিল আনজুমার কথা। কাকলিকে আসতে দেশে আনজুমা বেগম বললেন
-“কাকলি যা তো শুভ্রতার সঙ্গে একটু আড্ডা দে তো। মেয়েটা একা একা বিরক্তবোধ করছে।”
কাকলি হেসে বলল
-“আমি তো ওকেই খুঁজতে এসেছিল। চলো শুভ্রতা আমরা যাই।”
আনজুমা বেগম চোখ ছোট ছোট করে বললেন
-“শুভ্রতা আবার কি! ও তোর বয়সে ছোট হতে পারে কিন্তু ও তোর সম্পর্কে তো বড়।”
কাকলি ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“আচ্ছা বাবা ভাবি চলেন যাই তাহলে।”
আনজুমা বেগম হাসলো। শুভ্রতা আর কাকলি চলে গেল কাকলির রুমে।
——————-
আনিসুল চৌধুরী কাব্যকে নিজের কেবিনে ডাকলো। কাব্য আসতেই আনিসুল চৌধুরী বললেন
-“কাব্য তোমার শশুর মারা গেছেন।”
কাব্য অবাক হয়ে বলল
-“বাবা উনি এমন হুট করে কেমনে কি?”
আনিসুল চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“তোমার তা জানতে হবেনা। শুধু এইটুকুই জেনে রাখ মেয়েটাকে এখন থেকে তোমাকেই দেখে রাখতে হবে। মেয়েটার আপন বলতে শুধু তার বাবা ছিল। যাইহোক তুমি কিন্তু ওর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। মেয়েটা অনেক ছোট। আর তুমি যদি ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছ তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা বলে দিলাম।”
কাব্য চুপ করে সব কথা শুনলো। ওর বাবা আবারও বললেন
-“যাইহোক সত্যি যতই কঠিন হোক না কেন মেনে নিতে হবে। আর তোমার সঙ্গে শুভ্রতার মিল সৃষ্টিকর্তার থেকে ঠিক করা। তাই তো দেখ ভাগ্যের কি পরিহাস তোমাদের কিভাবে মিলিয়ে দিলো। আমি বিশ্বাস করি তুমি তোমার দায়িত্বের ঠিকমতো যত্ন করবে।”
কাব্য বলল
-“আচ্ছা বাবা আমি একটু আসি আমার কাজ আছে।”
আনিসুল চৌধুরী বললেন
-“যাও কিন্তু মনে যেন থাকে শুভ্রতার কথা।”
কাব্য চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। নিজের কেবিনের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে রইলো। কি থেকে কি হয়ে গেল তার জীবনে। আগের থেকে সে প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করতো না। কিন্তু দায়িত্ব কর্তব্য ঠিকই পালন করতে জানে সে। ওইদিন যখন কাব্য যায় তখন শুভ্রতার বাবা ওর হাত ধরে কান্নাকাটি করে বলেছিলেন
-“বাবা আমার মেয়েটার অনেক বড় বিপদ। তুমিই ওকে বাঁচাতে পারো। তুমি দয়া করে আমার মেয়েটাকে বিয়ে করে নেও। আমি তাহলে তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো বাবা।”
কাব্য ওনার হাত ধরে বলেছিল
-“আঙ্কেল এমন করে বলবেন না।”
তখনই কাব্যের বাবা কাব্যকে বলেছিল সে যদি শুভ্রতাকে বিয়ে না করে তাহলে তার মরা মুখ দেখবে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিয়ে করতে হয় শুভ্রতাকে। কিন্তু কি এমন বিপদ হয়েছিল শুভ্রতার। যে এমন করে বিয়ে করতে হলো। এগুলোই ভাবছিল কাব্য। কাব্যের ভাবনাই ছেদ ঘটলো মুমিনুল হকের ডাক শুনে।
কাব্য কাজে মন দেয়।
——————-
পরন্ত বিকেলে শুভ্রতা আর কাকলি গল্প করছিল। কাকলি বলল
-“তুমি কোন ক্লাসে পড়ছো!”
শুভ্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“আর বলো না একাদশ শ্রেণিতে উঠেছি। পড়াশোনার কথা না বললে হতো না।”
কাকলি হেসে বলল
-“কেন তোমার পড়াশোনা ভালো লাগে না। আর অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমিও এবার একাদশ শ্রেণিতে পড়ছি।”
শুভ্রতা বলল
-“আমার পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না।”
আশা বেগম কাকলির রুমের বারান্দায় এসে বললেন
-“তা কেন ভালো লাগবে। গাছে উঠে বসে থাকতে বললে তো ভালোই লাগবে তার।”
শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো আশা বেগমের দিকে। আশা বেগম টিটেবিলে চায়ের কাপ আর নুডলস দিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যেতে নিলো। তখন শুভ্রতা ওনার হাত ধরে টেনে বলল
-“শাশুড়ি আপনি খাবে না।”
আশা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“আমাকে নিয়ে তোমার এতো ভাবতে হবেনা।”
শুভ্রতা ভ্রু কুচকে বলল
-“এহ পরে বলবেন আমি শাশুড়ির খেয়াল রাখিনা। হেনতেন আরও কত কিছু। এখন চুপ করে বসেন আমি আপনার চা নিয়ে আসি।”
আশা বেগম কিছু বলতে নিবেন তার আগেই শুভ্রতা দৌড়ে চলে গেল। মুহূর্তের মধ্যেই খাবার নিয়ে চলে এলো। আশা বেগম মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।
শুভ্রতা এক চামচ নুডলস নিয়ে আশা বেগমের মুখ নিজের দিকে নিয়ে খাইয়ে দিলো। আর বলল
-“নেন খান এখন এতো ঢং আমার ভালো লাগে না। আমার ক্ষুধা লেগেছে। একাএকা খান এখন।”
বলেই মুখ ভেংচি কেটে খেতে লাগল শুভ্রতা। আশা বেগম মনে মনে হাসলেন আর ভাবলেন মেয়েটা পারেও বটে। এমন ব্যবহার করছে যেন তাদের কতদিন চেনে।
——————–
রাতে কাব্য বাসায় ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। ব্যাগ মোবাইল রেখে টাওয়েল নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
আনিসুল চৌধুরী সোজা নিজের মায়ের রুমে চলে গেল। আনজুমা বেগম আধ শোয়া হয়ে টিভি দেখছিলেন। ছেলের ক্লান্ত মুখ দেখে মুচকি হেসে টিভি বন্ধ করে ছেলেকে কাছে ডাকলেন।
আনিসুল চৌধুরী মুখ ছোট করে বললেন
-“মা তোমাকে তো সব কথাই বলেছিলাম। কাল রাতে শাহিন মারা গেছে।”
আনজুমা বেগম অবাক হয়ে বললেন
-“কিভাবে কি! কি বলছিস তুই!”
আনিসুল চৌধুরী বললেন
-“হুম মা সত্যি বলছি আমি। কাল রাতে এমপির ছেলে শাহিনের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। সেখানেই ও…”
বলতে গিয়ে আনিসুল গলায় কথা আটকে যায়। কারো ফোপানো আওয়াজে দুইজন দরজার দিকে তাকায়। শুভ্রতাকে দেখে দুইজনই চমকে উঠে। আনিসুল চৌধুরী শুভ্রতাকে কিছু বলতে নিবেন তার আগেই শুভ্রতা দৌড়ে চলে যায় কাব্যের রুমে। রুমে দরজা লাগিয়ে বেডে উল্টা হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগল শুভ্রতা।
আনিসুল চৌধুরী দরজা ধাক্কাতে থাকেন। শুভ্রতাকে নিয়ে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে।
কাব্য ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে থমকে যায় শুভ্রতাকে এমন হাউমাউ করে কান্না করতে দেখে। কিছুক্ষণ ভেবে বিষয়টি বুঝতে পেরে ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“বাবা আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি এইদিকটা দেখে নিচ্ছি।”
আনিসুল চৌধুরী কাব্যের কথায় চলে যায় নিজের রুমে।
কাব্য ধীর পায়ে এগিয়ে যায় শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা কাধে আলতো করে স্পর্শ করে বলল
-“কান্না করোনা। দেখ কেউ তো আর সারাজীবন বেঁচে থাকে না। নিজেকে শক্ত করো। তোমাকে এমন করে কান্না করতে দেখলে কিন্তু তোমার বাবার কষ্ট লাগবে।”
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।)