#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১১
কিরণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চিত্রলেখার মেকাপ ছাড়া স্নিগ্ধ চেহারার দিকে।
কিরণকে এমন করে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে চিত্রলেখা খানিকটা লজ্জা পায়। কিরণ মুগ্ধ কন্ঠে বলল
-“লজ্জা পেলে তোমাকে আরও বেশি সুন্দর লাগে লেখা।”
চিত্রলেখা লজ্জা মিশানো কন্ঠে বলল
-“চুপ করো তো তুমি। মাছি ঢুকে যাবে মুখে। হা বন্ধ করো।”
চিত্রলেখার বাসার সামনে আসতেই কিরণ চিত্রলেখার হাত শক্ত করে ধরে বলল
-“সময় করে কল দিও। আমি তোমার কলের অপেক্ষায় থাকবো।”
চিত্রলেখা রিক্সা থেকে নেমে গেল। চোখের আড়াল হওয়া না পযর্ন্ত কিরণ তাকিয়ে থাকলো চিত্রলেখার যাওয়ার দিকে।
চিত্রলেখার মা শাফিনা বেগম সবটাই রুমের বারান্দা থেকে দেখলেন।
——————-
কাকলি আর শুভ্রতা টিভি দেখছিলো। কলিংবেল বাজতেই দরজার দিকে ছুটলো কাকলি। কিরণকে দেখে কাকলি বলল
-“কোথায় ছিলি এতক্ষণ!”
কিরণ হাসি মুখে বলল
-“কোথাও না সর তো ভিতরে ঢুকতে দে।”
কাকলি চোখ ছোট ছোট করে কিরণের দিকে তাকিয়ে বলল
-“কি হয়েছে বল তো ভাইয়া!”
কিরণ কাকলিকে এড়িয়ে গিয়ে বলল
-“কি হবে কিছুই হয় নি।”
কিরণ সোফায় এসে বসলো। শুভ্রতাকে বলল
-“দাভাই কোথায় শুভ্রতা?”
শুভ্রতা আড়চোখে একবার কিরণের দিকে তাকিয়ে আবারও টিভির দিকে মন দিয়ে বলল
-“উনি কোথায় আমি কি জানি!”
কিরণ চোখ ছোট ছোট করে শুভ্রতার দিকে তাকালো। এমন টেরা উত্তরের মানে কি সে বুঝতে পারছে না। কিরণ কি যেন ভেবে চলে গেল নিজের রুমে।
কাকলি এতক্ষণ সবকিছুই দেখছিল। কাকলি শুভ্রতার পাশ ঘেঁষে বসে বলল
-“দাভাইয়ের সাথে কি কিছু হয়েছে! ঝগড়া করেছো!”
শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
-“কি হবে কিছুই হয় নি। আমি ওনার সঙ্গে কোন দুঃখে ঝগড়া করবো।”
কাকলি কিছু বলতে নিবে তার আগেই কাব্যকে দেখে থেমে গেল। কেমন যেন দেখাচ্ছে। শুভ্রতা আড়চোখে তাকিয়ে আছে কাব্যের দিকে।
কাব্য কেমন যেন অস্থির অস্থির করছে। কাব্য অস্থির কন্ঠে কাকলিকে বলল
-“পানি দে তো কাকলি।”
কাকলি দৌড়ে গিয়ে পানি নিয়ে এলো। পানি ঠোঁটে ঠেকানোর আগেই হাতের গ্লাসটা পরে গেল কাব্যের। গ্লাস ভাঙার শব্দে সবাই বসার রুমে চলে এলো। শুভ্রতা ভয় পেয়ে গেল।
আশা বেগম অস্থির হয়ে কাব্যের কাছে এসে আনিসুল চৌধুরীকে বললেন
-“ডাক্তার ডাকো কাব্যের আবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে তাড়াতাড়ি।”
আনিসুল চৌধুরী তাড়াহুড়ো করে কল করলো ডাক্তারকে।
————————-
কাব্য বেডে শুয়ে আছে। ডাক্তার একটু আগেই দেখে গেছেন। আশা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আনিসুল চৌধুরী ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে গেছেন। আনজুমা বেগম সোফায় বসে আছেন। কাকলিও তার পাশে বসে আছে। শুভ্রতা গুটিসুটি মেরে বেডে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কিরণ মুখ চুপসে দাঁড়িয়ে আছে দরজা ঘেঁষে।
কাব্য জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
-“তোমরা সবাই তোমাদের রুমে যাও। আমি এখন ঠিক আছি।”
কাব্যের কথায় আর কথা না বাড়িয়ে আনজুমা বেগম কাকলি আর আশা বেগম চলে গেলেন। কাব্য কিরণের দিকে তাকাতেই। কিরণ দ্রুত পায়ে কাব্যের কাছে এসে বেডে বসে কাব্য ডান হাত নিজের দুইহাতের মধ্যে আবদ্ধ করে বলল
-“দাভাই আমার জন্য তোর এই অবস্থা তাইনা। আমি যদি তোকে এই ঝামেলায় না ফেলতাম তাহলে তুই টেনশনও করতি না আর তোর এমন অবস্থাও হতো না। আমি তো জানতাম তুই বেশি টেনশন নিতে পারিস না। তারপরও এটা আমি কি করে করলাম। সব দোষ আমার।”
কাব্য তার বাম হাতটা কিরণের হাতের উপর রেখে বলল
-“ধুর পাগল, তোর জন্য কেন হবে। আসলে অফিসে একটা সমস্যা হয়েছে। ওটার জন্যই।”
কিরণ কিছু বলতে নিবে তার আগেই কাব্য ওকে থামিয়ে বলল
-“যা হওয়ার তা হয়েছে। এখন গিয়ে রুমে রেস্ট নে কিছু হবেনা। আমি ঠিক আছি।”
কিরণ আর কথা বাড়ালো না। চলে গেল রুম ছেড়ে। কিরণ যেতেই কাব্য মুখ ঘুরিয়ে তাকালো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলো। কাব্য শুভ্রতাকে নিজের কাছে ডাকলো।
শুভ্রতা ধীর পায়ে গিয়ে বসলো কাব্যের পাশে। কাব্য নরম কন্ঠে বলল
-“ভয় পাইছো।”
হুট করেই শুভ্রতা কান্না করে দিলো। কাব্য আলতো হাতে শুভ্রতার মাথা নিজের বুকে টেনে নিলো। শুভ্রতা কাব্য টিশার্ট থামছে ধরে কান্না করতে লাগলো। কাব্য শুভ্রতাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বলল
-“কিছু হয় নি তো আমার। আমি ঠিক আছি তো।”
শুভ্রতার কান্নার গতি যেন বেড়েই চলছে। কান্না করতে করতে হিচকি তুলে ফেলেছে সে। কাব্য হাত বাড়িয়ে বেড সাইট টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে শুভ্রতাকে খাইয়ে দিলো। শুভ্রতা খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে বলল
-“সরি”
কাব্য ভ্রুকুচকে বলল
-“সরি কিসের জন্য।”
শুভ্রতা ছলছল নয়নে কাব্যের দিকে তাকিয়ে বলল
-“ওই মেয়েটার ছবি”
কাব্য শুভ্রতাকে থামিয়ে বলল
-“ওই মেয়ের কথা আর তুলোনা প্লীজ।”
শুভ্রতা আচ্ছা বলে চুপ করে কাব্যের পাশে বসে রইলো।
আশা বেগম রুমে আসলেন খাবার প্লেট নিয়ে। ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলেন কাব্যকে। আশা বেগম ভাত নিয়ে শুভ্রতার মুখের সামনে ধরলো। শুভ্রতা টলমল চোখে তাকালো আশা বেগমের দিকে। আশা বেগম কপাল কুচকে বললেন
-“কান্না করছো কেন!”
শুভ্রতা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল
-“এর আগে বাবা ছাড়া কেউ আমাকে খাইয়ে দেই নি।”
আশা বেগম শুভ্রতার মুখে ভাত তুলে দিয়ে বললেন
-“এখন খাবে। খাওয়ার সময় চোখের পানি ফেলতে হয় না।”
শুভ্রতা মুচকি হাসলো। কাব্যও প্রাপ্তির হাসি হাসলো। সে চায় সবাই ভালো থাকুক। হাসিখুশি থাকুক।
——————-
বিচ্ছেদের যন্ত্রণা প্রতি মুহূর্তে আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমায়। তোমার মায়ায় আমি প্রতিটা মুহূর্তে দহনে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি। কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি। আমি যে তোমার অপেক্ষায় তৃষ্ণার্ত কাকের ন্যায় চেয়ে আছি। আমি ওর কাছ থেকে তোমায় ছিনিয়ে আনবো। দেখে নিও।
চিঠিটা বন্ধ করে চোখ বুজে শুয়ে পরলো। আবারও আরেকটা রাত আসবে। আবারও আরেকটা চিঠি জমা হবে।
——————————
কিরণ রুমে এসে ফোন চেক করতেই দেখলো চিত্রলেখা সাতবার কল করেছে। কিরণ কল ব্যাক করতেই চিত্রলেখা সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে বলল
-“কল ধরছিলে না যে। কিছু কি হয়েছে!”
কিরণ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“দাভাই হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে গেছিলো তো। আর ফোনটাও রুমে ছিলো।”
চিত্রলেখা বলল
-“ও তো এখন কেমন আছেন উনি?
কিরণ বেডে শুয়ে বলল
-“হুম এখন একটু ভালো আছে। যাইহোক তোমার আম্মু বাসায় যাওয়ার পর কিছু বলেনি।”
চিত্রলেখা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-“না চুপচাপ কিছু বলছেও না।এক অন্যরকম আচরণ।”
কিরণ কপাল কুচকে বলল
-“তোমার মা একটা হিটলারের নানি।”
চিত্রলেখা মুখ ভেংচি কেটে বলল
-“আমার আর কি করার তোমার বাচ্চা যদি হিটলার হয়!”
কিরণ অবাক কন্ঠে বলল
-“মানে”
চিত্রলেখা ভাবলেশহীন ভাবে বলল
-“তোমার বাচ্চার নানি তো আমার মা হবে। তাই না।”
কিরণ বলদ হয়ে গেল। চিত্রলেখা হাসতে লাগল।
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বেশি বেশি রিয়েক্ট-কমেন্ট করে পাশেই থাকবেন ধন্যবাদ।)