#বিষাদময়_প্রহর
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ২৫ ||
—“তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে না কেন দেরী করেছিলাম?”
নিহানের কথায় কান্না থামিয়ে ফেললো নাফিহা।
মাত্রই তার মা-বোনের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসলো নাফিহা।
কাঁদতে কাঁদতে চোখ, নাক লাল হয়ে ফুলে গেছে যা নিহানের একদমই সহ্য হচ্ছিলো না।
তাই উপায় না পেয়ে এই প্রসঙ্গ তুললো নিহান।
নাফিহা নাক টানতে টানতে বলে,
—“কোথায় গিয়েছিলেন?”
নিহান উত্তরে মুচকি একটা হাসি দিয়ে তার পেছন থেকে অতিব সুন্দর একটা বড় ঝুঁড়ি বের করলো।
ঝুঁড়ির ভেতর দেখা যাচ্ছে না উপরের রঙিন কাপড়টার জন্য।
কাপড়টির উপরটা আবার বিভিন্ন ফুলে সুসজ্জিত করা।
নাফিহা হা হয়ে গেলো।
অত্যন্ত সুন্দর এই ঝুঁড়িটি।
নাফিহা অস্ফুট সুরে বলে,
—“কী আছে এটায়?”
—“নিজেই খুলে দেখো না।”
বলেই ঝুঁড়িটা নাফিহার দিকে এগিয়ে দিলো।
নাফিহা টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে ঝুঁড়িটা নিজের হাতে নিলো।
কাপড়টা উঠাতেই নাফিহা অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলো।
ইনু এবং তার পাশে আরেকটা বিড়াল চুপটি করে বসে আছে।
ওই বিড়ালটার গলায় এবং কানে সুন্দর ডিজাইনের ফিতা দিয়ে ফুল বাধা।
ইনুর গলায়ও টাইয়ের মতো একটা ফিতা আছে।
বেশ সুন্দর লাগছে দুজনকে।
নাফিহা মুগ্ধ হয়ে দেখছে ওদের, সে ভুলেই গেলো কিছুক্ষণ আগে সে তার মা এবং বোনের থেকে বিদায় নিয়ে শশুড়বাড়িতে যাচ্ছে।
নিহান মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বলে,
—“বাগানের একটা কার্টুনবক্সে এই বিড়ালটাকে পেয়েছিলাম। তবে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চট লেগেছিলো। তাই তৎক্ষনাৎ ওদের দুটোকে নিয়ে হসপিটালে ছুটি। কিন্তু এই শহরের কোনো পশু হসপিটাল আমার চেনা নেই। ২ঘন্টাই লেগেছে পশু হসপিটাল খুঁজে বের করতে। বের করার পরে গিয়েও ডক্টর পাইনি। এই ডক্টরের অপেক্ষায় আরও ২ঘন্টা। ১ঘন্টায় চেকআপ। চেকআপ করে বিড়ালটা আবারও ঘুমিয়েছেও অনেকক্ষণ। ওদের গাড়ি করে আনার সময় আবার লাগলো জ্যাম! মেজাজ খারাপ লাগে না বলো তো? ট্রাফিকে বসে থাকতে থাকতেই আমি প্লানিং করি ওদের সাজিয়ে তোমায় চমকে দিবো। তখন আবার গাড়ি ঘুরিয়ে এসবের ব্যবকথা করলাম। তোমার ইনুর পার্টনারের চক্করে আমার বিয়েতে যেতেই দেরী হলো।”
নাফিহা ফিক করে হেসে দিলো।
আহারে বেচারা এই বিড়াল নিয়েই সারাদিন ছুটাছুটি করলো।
—“তাহলে ফোন রিসিভ করেননি কেন?”
—“তখন বললাম না?”
—“ওপস সরি ভুলে গেছি। তবে যাই বলেন এই বিড়াল্পটা কিন্তু আরও কিউট।”
—“তা তো বটেই। তবে হ্যাঁ ভুলেও এই দুইটারে আমি আমার বাসরঘরে ঢুকতে দিবো না। ইনুকে তো একদমই না!”
নিহানের কথায় নাফিহার হাসতে হাসতে পেটে খুল ধরে গেছে।
ইনু আর তার পাশের বিড়ালটা বোকার মতো নাফিহার হাসি দেখছে।
নাফিহা অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে,
—“আচ্ছা তাহলে বলুন এই বিড়ালটার নাম কী দিবো?”
—“তোমার ইনুর বউ তাই তুমিই ঠিক করো।”
—“আচ্ছা ঠিকাছে ভেবে নিই।”
বলেই নাফুহা গভীর মনোযোগ দিয়ে বিড়ালটার দিকে তাকিতে আছে।
বিড়ালটার চোখ বাদামী।
গালদুটো কেমন আবছা সুরমা রঙ, কপালেও সেম।
বিড়ালটাকে পর্যবেক্ষণ করতে করতেই নাফিহা আনমনে বলে ফেললো,
—“মিনু।”
—“মিঁয়াও!”
নাফিহা মুচকি হাসলো।
—“বাহ বেশ সুন্দর নাম তো। ইনু, মিনু।”
ইনু মিনুর কপালে হাত দিয়ে দিচ্ছে।
ইনু, মিনুর কান্ড দেখতে দেখতেই অবশেষে দুজন বাড়িতে এসে পৌঁছালো।
নিহান ঘুমোচ্ছে।
তার অনুভব হচ্ছে তার নাকে কেউ শুঁড়শুঁড়ি দিচ্ছে।
সাথে সাথে নিহান বিকট শব্দে একটা হাঁচি দিয়ে উঠে বসলো।
নিহানের বুকেই শুয়েছিলো নাফিহা।
উঠে বসাতে নাফিহার মাথা কোলে আসতেই ইনু গিয়ে পরলো নাফিহার মুখ বরাবর।
নাফিহা এক চিৎকার দিয়ে মুখ থেকে থাবা দিয়ে ইনুকে সরিয়ে উঠে বসলো।
নাফিহার যেন দম আটকে আসছিলো।
নিহান আর নাফিহা একে অপরের দিকে তাকালো।
এমন একটা সকালের জন্য কেউ-ই আশা করেনি।
দুজনেই সামনে ফিরে দেখলো ইনু বসে তাদের কান্ড দেখছে।
নিহান অবাক হয়ে বলে,
—“এই ফাজিল বিড়াল ভেতরে আসলো কি করে?”
—“আমি কি করে জানবো?”
হঠা খাটের নিচ থেকে খুটখুটানির আওয়াজ শুনতে পেলো যা ওরা গতকাল রাতেও পেয়েছিলো।
নাফিহা আর নিহান বেডের নিচে চেক করে দেখলো মিনু চুপটি করে বসে আছে।
—“এর মানে হাদারাম দুইটা কাল রাত থেকেই এঝানে আছে। হায়রে ফাজিল বিলাই! তোরে বউ দিসি যাতে আমার বউ আর আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবি তা না আবার তোর খোঁচানি শুরু! তোরে কী স্বাধে বেয়াদব, লম্পট বলি? দিলি তো সক্কাল সক্কাল ঘুম হারাম করে। যাহ বের হ তোর বউসহ রুম থেকে।”
—“মিঁয়াও!”
—“ফোর ওই তিব্বতী ভাষা বুঝি না আমি! জলদি নিজের বউ নিয়া ঘর থেকে বের হ নয়তো বেলকনি দিয়া তোরে ফিক্কা ফেলে দিবো।”
ইনু আগের মতোই বোকার চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে নিহানের দিকে।
এদিকে নাফিহা মুখ টিপে হাসছে।
নিহান নিজের রাগ কান্ট্রোল করতে না পেরে ইনুকে এক হাতে নিয়ে আরেক হাতে একটা স্কেল নিয়ে মিনুকে গুতিয়ে বেডের নিচ থেকে বের করলো।
মিনু বের হতেই দুটোকে একসাথে কোলে নিয়ে রুমের বাইরে রেখে নিহান ওদের মুখের উপরই দরজা বন্ধ করে দিলো।
ইনু, মিনু দুজন দুজনের মুখে বোকার মতো চাওয়া-চাওয়ী করছে।
নিহান দরজা লাগিয়ে পিছে ফিরে গাল ফুলিয়ে বলে,
—“তোমার বেয়াদব বিড়াল আর মিনু গতকাল আমাদের বেডের নিচেই বাসর সারসে! আর এদিকে বিয়ের প্রথম সকালই বজ্জাতমার্কা করে ছাড়লো।”
নিহানের কথা শুনে নাফিহা এবার হো হো করে হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পরেছে।
নিহানের এবার নাকটাও লাল হয়ে গেলো রাগে।
কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো নিহান।
এদিকে নাফিহা আবার ব্ল্যাঙ্কেটের ভেতর ঢুকে শুয়ে পরলো।
গতরাতের কথা মনে পরতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
গতকাল বাড়ির পেছনের সুইমিংপুলে পা ভিজিয়ে বসে অনেকক্ষণ একাকী সময় কাটিয়েছে দুজন।
নিহান তো তার নাকের সামনে থেকে নাফিহার হাত সরাতেই দেয়নি।
সরাতে চাইলেই তার এক কথা,
—“আহ! বউয়ের মেহেদীর ঘ্রাণ তো নিতে দাও!”
এরপর বেশি রাত হয়ে গেলে চলে আসে রুমে।
নাফিহা যেন লজ্জা কাটাতেই পারছে না কিছুতেই।
নিহান চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।
বের হতে হতেই বলে,
—“তোমার যে রাক্ষসীর মতো নখ আছে তা জানলে আমি নিজেই তোমার নখ কাটাই নিতাম। উফফ আল্লাহ গোহ আমার ঘাড় পুরা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে।”
—“বেশ হয়েছে। অসভ্যতামি করসেন তাই এইগুলা ফ্রি তে পাইসেন। এখন বেশি বকবক করিয়েন না ঘুমাবো।”
—“আচ্ছা ঘুমাও। তবে ১০টার আগে উঠে যাবা। তারপর খেয়ে নিবা ওকে?”
নাফিহা চোখ খুলে নিহানের দিকে তাকালো।
নিহান শার্ট পরছে কিন্তু যাচ্ছে কোথায়?
নাফিহা ভ্রু কুচকে মৃদ্যু সুরে বলে,
—“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
—“কাজ আছে যেতে হবে।”
—“আপনি বিয়ের জন্য ছুটি নেননি?”
—“আমি আবার কার থেকে ছুটি নিবো?” হেসে বললো নিহান।
—“আমি কী জানি!”
—“আমাদের পলিটিশিয়ানদের কাজ বলতে রাত-দিন নেই। যখন ইচ্ছে তখনই কপালে কাজ চলে আসে। বাট আই রেসপেক্ট মাই ওকিউপেশন!”
নাফিহা কিছুই বললো না, মুখ গোমড়া করে নিহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
নিহান নাফিহাকে অনেক কষ্টে সামলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
দরজা খুলে ইনু বা মিনু কাউকেই দেখলো না।
নিহান যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
নিহান কয়েকপা এগোতেই তার ফোনে কল এলো।
নিহান সেই কল রিসিভ করলো।
—“হ্যালো। হ্যাঁ নির্ঝর বল।”
—“ভাই ইমরানের কয়েকটা লোকরে ধরসি। আস্তে আস্তে এর পুরো দল আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে।”
—“ওয়াও দ্যাট’স গুড! শুন আমি শীঘ্রই আসছি কেমন, মাত্র রওনা হলাম।”
—“হোয়াট! এই ছ্যাঁড়া তোর না গতকাল বাসররাত ছিলো। প্রথম সকালেই বউ ছাইড়া এইসব কাজে তোরে আসতে বলসে কে?”
—“বউকে পেতে হলে বউয়ের সকল সেফটি আগে করে দিতে হবে। বউয়ের পিছে যেই লাগবে তাকেই পেছন থেকে আস্তে করে সরিয়ে দেবো। এখন রাখ বের হচ্ছি।”
—“আচ্ছা আয়, বাই।”
—“আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই নিহান কল কেটে দিলো।
নিহান কল কেটে দিয়ে মেইন দরজার সামনে আসতেই দেখলো ইনু ঘাপটি মেরে বসে আছে।
ইনুকে দেখে নিহানের মেজাজ বিগড়ে গেলো।
—“বেয়াদব তো বেয়াদবই হয়। একদিন বাইরে নিয়ে গেছি দেখে প্রতিদিন নিয়ে যাবো নাকি ভাই? তোর বউ কই বেয়াদব ইনু? তোরে কী ৩ তালাক দিয়া অন্য বিলাইয়ের সাথে পালাইসে। পালানোরই তো কথা, তুই তো বউরে ফালায় আমার পিছে দৌড়াস! এখন সর সামনে থেকে, নয়তো জুতোটা খুলে ডাইরেক্ট তোর নাক বরাবর মারবো। বউ আইনা দিসি কী পুণরায় আমাকে জ্বালাইতে।”
—“উফফ তাও এউ বেয়াদবটা দরজার সামনে থেকে সরছে না! সার্ভেন্ট!”
সার্ভেন্টকে ডাকতেই একজন সার্ভেন্ট এসে হাজির।
—“এই বিড়ালটাকে সরিয়ে ছাদে রেখে দরজায় তালা লাগায় দিয়ে আসো।”
সার্ভেন্ট সম্মতি জানিয়ে ইনুকে দরজা থেকে সরিয়ে আনলো।
ইনুকে সরাতেই নিহান ধপাধপ পা ফেলে বাহিরে চলে গেলো।
নিবিড়ের ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ তার পায়ের তালুতে সুঁড়সুঁড়ি দিচ্ছে।
সে ঘুমের মধ্যেই হেসে উঠে বসলো।
হঠাৎ কি মনে পরতেই সে তৎক্ষনাৎ চোখ খুললো আর এদিক সেদিক তাকালো।
নাহ কেউ তো নেই তাও কে তারে এমন সুঁড়সুঁড়ি দিচ্ছে?
নিবিড় পা থেকে কম্বল সরাতেই দেখলো মিনু তার পায়ের তালুতে গুতাগুতি করছে।
এটা দেখে নিবিড়ের চেহারা দেখার মতো ছিলো।
সে চিল্লিয়ে সার্ভেন্টকে ডাকলো।
সার্ভেন্ট আসতেই নিবিড় বললো,
—“এই আজাইরা বিড়ালকে এখান থেকে সরিয়ে ছাদে রেখে তালা লাগায় দিয়ে আসো।”
—“আয়হায়। কিছুক্ষণ আগে তো বড় সাহেবও একই আদেশ দিয়ে গেলো আমায়।”
—“এতকিছু জানি না জলদি সরাও, এর জ্বালায় আমার ঘুমের বারোটা বেজে গেছে।”
সার্ভেন্ট সম্মতি জানিয়ে মিনুকে নিয়ে চলে গেলো।
আর নিবিড় আবারও ধপ করে শুয়ে পরলো, এবং ঘুমিয়েও গেলো।
—“স্যার মাফ করেন আমি সত্যিই কিছু জানি না!”
—“ও আচ্ছা তাই? মাদক সাপ্লাইয়ে তো তোরাই দেশের ১ম স্থান লাভ করেছিস আবার বলিস জানিস না!”
বলেই নিহান ভাঙ্গা কাঁচটা এবার লোকটার হাতেই ঢুকিয়ে দিলো।
লোকটা ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
নির্ঝর দুহাত বুকে গুজে চুপচাপ বিনোদন নিচ্ছে।
নইহান কথা বের করার জন্য বেশ ভালোই ফন্দি করছে।
জিনিয়া সাজিদকে ফোন দিলো।
বেচারী নিজের সাথে সারারাত যুদ্ধ করে অবশেষে নিজের মনে সাহস গুজিয়ে সাজিদকে ফোন দিলো।
সাজিদ ঘুমের ঘোরে কল রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
—“হ্যালো কে?”
সাজিদের এমন ভয়েসে জিনিয়া যেন মুগ্ধ হয়ে গেলো।
জিনিয়া চুপ কিন্তু সাজিদ ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করেই চলেছে।
সাজিদের কথায় জিনিয়ার ধ্যান ভাঙ্গতেই থতমত খেয়ে বললো,
—“কাল বিয়েতে আসেননি কেন?”
সাজিদ চোখ খুললো।
কান থেকে ফোন সরিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে আননোন নাম্বার।
আবার ফোন কানে দিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,
—“তুমি কী নাফিহার বোন?”
—“হ্যাঁ। আমি জিনিয়া।” মুচকি হেসে বললো জিনিয়া।
জিনিয়ার হাসি সাজিদের কানে আসলো।
সাজিদ কিছুটা নরম সুরে বললো,
—“কাল হুট ক্ক্রেই মিটিং হয়েছিলো। বস ছিলো না তাই আমাকেই মিটিং এ এটেন্ড করতে হয়েছিলো।”
—“কাল না শুক্রবার ছিলো। তাহলে কিসের অফিস কিসের মিটিং?”
—“হুট করেই দেশের বাইরে থেকে ক্লায়েন্ট চলে এসেছিলো এই আর কী।”
—“ও আচ্ছা বুঝলাম।”
এভাবে আরও কিছুক্ষণ কথা বললো দুজনে।
★
বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।
এখানে থেকে যেন সবাই আমার উপর ঝাল তুলছে।
বাসায় যাও অল্প অল্প খেতাম এখানে তো জোর করে অনেক খাবার খাওয়ায়।
এদের কী আমায় মুটকি বানানোর প্লান নাকি?
বিশেষ করে নেতাসাহেব, উনি আসলে তো এক গামলা খাওয়াতেও প্রস্তুত!
এতো খাইয়ে কী হবে বুঝি না।
সেদিন বেশি খেতে না পেরে বমি করে দিয়েছিলাম এক্কেবারে নিহান সাহেবের গায়েই।
ভাবলাম আমায় বকবে তা না উল্টো আরও খাইয়ে সুপারি মুখে দিয়ে দিসে।
বমি করা নিয়ে টুশব্দও করেনি।
ইনু আর মিনু তো দুই-ভাইয়ের সাথে চিপকায় থাকে।
ইনু জ্বালায় নেতাসাহেবকে আর মিনু জ্বালায় নিবিড় ভাইয়াকে।
মিনুর জ্বালায় নিবিড় ভাইয়া একমাস আগে থেকেই অফিস জয়েন করেছে।
এ নিয়ে বাসায় হাসা-হাসির শেষ নেই।
এদিকে হিদকেও আদ্রান ভাইয়া দিয়ে গেছে।
উনি নাকি কিছু কাজে কয়েকমাসের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন।
তাই নিহান ভাইয়াই হিদকে আমাদের কাছে রেখে দিয়েছে।
ইভেন আমাদের পড়াশোনাও বাকি আছে।
সামনের সপ্তাহে আমরা আবার ভার্সিটি যাওয়া শুরু করবো।
এদিকে নেতাসাহেব সারাদিন বিজি থাকলেও ঠিকই সময় বের করে আমার সাথে একাকী সময় কাটায়।
মাঝেমধ্যে তো রাতের বেলাতেই সবার আড়ালে আমরা ঘুমন্ত শহর ঘুরে বেড়াই।
ভালোই যাচ্ছে আমাদের বিবাহিত জীবন!
ওনার তো স্বামী পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।
সেদিন ভার্সিটি থেকে আমি আর হিদ হেঁটে হেঁটে ফিরছিলাম তখনই রোডে চোখ যেতেই থমকে গেলাম।
রোডে মানুষ জড়োসড়ো হতেই আমি হিদকে নিয়ে সেখানে দৌড়ে গেলাম।
এক মাতাল লোক রোডে বেপরোয়া ভাবে হাঁটছিলো।
তখনই তার সামনে থেকে এক গাড়ি চলে আসলো।
সেই গাড়ি লোকটার সাথে লাগার আগেই লোকটা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো।
আমি আর হিদ সেই লোকটির দিকেই ছুটছি।
জানি না ওই লোকটির প্রতি কেন আমাকে টানছে।
হিদকে বললাম ড্রাইভার সামসুর চাচাকে ফোন করে যেন ইমিডিয়েটলি এখানে আসতে বলে।
হিদ মাথা নাড়িয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ডায়াললিস্টে ঢুকলো।
আমি হিদকে রেখেই ভিড় ঠেলে লোকটির কাছে আসলাম।
লোকটি উঁবুড় হয়ে থাকায় কয়েকজন চাচার মাধ্যমে তাকে সোজা শোয়ালাম।
লোকটির চেহারার দিকে তাকাতেই আমি যেন স্থির হয়ে গেলাম।
বুকের ভেতরটা যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আমার।
হাত-পা অনবরত কেঁপে উঠছে আমার।
চোখে অশ্রুর লীলাখেলা।
একসময় “বাবা” বলে চিল্লিয়ে উঠলাম!!!
চলবে!!!