বিষাদময়_প্রহর পর্ব ২০

0
808

#বিষাদময়_প্রহর
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ২০ ||

পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে বালিশের পাশে একটা চিরকুট পেলাম।
চিরকুটটায় লেখা,
—“ব্যান্ডেজ সাবধানে খুলবে, সেন্টার টেবিলে ওষুধের প্যাকেট রাখা। নিয়ম করে খাবে নয়তো মাথার ক্ষতটা ভালো হবে না। আর ক্ষত ভালো না হলে মাথার যন্ত্রণায় কাঁতড়াবা।”

শেষে কোনো “ইতি” নেই।
ইতি থাকলেও কি না থাকলেও ঠিকই ধরেছি এটা নিহান ভাইয়া।
হুহ ঢং! সামনাসামনি বললে কি হয়?
যতো যা-ই করেন নেতাসাহেব আপনার পেট থেকে আমি সব সত্য কথা বের করেই ছাড়বো হু।
হিদের ঘুমন্ত মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।
ফ্রেশ হয়ে অতি সাবধানে ব্যান্ডেজটা খুলে ফেললাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি হিদ পুরো বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।
হিদের ডান পায়ের নিচে ইনু ঘুমাচ্ছে।
হিদ একটু পরপর তার পা দিয়ে ইনুকে লাথি দিচ্ছে।
আর ইনু বিরক্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠে সোফায় গিয়ে আয়েশ করে শুয়ে পরলো।
হিদ আর ইনুর কান্ডে হেসে দিলাম।
আমি হিদকে না ডেকেই নিচে চলে আসলাম।
নিবিড় ভাইয়া, আঙ্কেল আর আন্টি নাস্তা করছেন।
আমাকে দেখতে পেতেই আন্টি মুচকি হেসে বলে,

—“আরে নাফিহা মা, আয় আয় এদিকে। একসাথে নাস্তা করি।”

আমি সম্মতি জানিয়ে তাদের দিকে গিয়ে এক চেয়ার টেনে বসলাম।
ওনারা নানান আলোচনা করছে আর খাচ্ছে কিন্তু একবারের জন্যেও কেউ এটা জিজ্ঞেস করলো না আমি কোথায় ছিলাম কখন পৌঁছেছি ইত্যাদি ইত্যাদি।
কেসটা কি বুঝলাম না!
আন্টি আমাকে বললো,

—“হ্যাঁ রে নাফু, নাহিদা কোথায়?”

—“ঘুমোচ্ছে আন্টি।” খেতে খেতেই বললাম।

—“এই মেয়ে ছেলেগুলাও হয়েছে একেকটা আপদ। এদের ঘুমের রাজ্যে এরা ১২টা ১টা অবধিই রাজত্ব করে।”

আন্টির কথায় নিবিড় ভাইয়া বিষম খেলো।
পানি কয়েক ঢোক খেয়ে বলে,

—“আমিও!”

—“না নয়তো কী? দরকারি কাজ আছে বিধায় তুই তাড়াতাড়ি উঠলি। আর তোর দামড়া ভাই আর বোন? এদের কানের সামনে ঢোল বাজালেও ঘুম ভাঙ্গাতে পারবো না।”

—“আহ তুমি থামবে! নিহান তো কতো কাজে ব্যস্ত থাকে, ওর রেস্ট নেয়ার সময় কই? ঘুমাচ্ছে ঘুমাতে দাও শুধু শুধু চিল্লিয়ে মাথা খেয়ো না।”

—“বুঝলাম কাজ আছে। তাই বলে রাতে কিসের জরুরি কাজ হ্যাঁ? এইসব পলিটিক্স বুঝি না বাপু। এইসব বদমাশ ফাজিল অপরাধীর জ্বালায় আমার ছেলেটা রাতে শান্তিতে ঘুমাতেও পারে না।

আন্টির কথা চুপচাপ শুনছি আর খাচ্ছি।
তার মানে কী নিহান ভাইয়া ঘুমাচ্ছে?
ফিরলো কখন?
কে জানে উনি কখন ওই চিরকুট দিয়ে গেছে।
আচ্ছা নিহান ভাইয়া কি ওই অচেনা লোকটাকে মেরে ফেলেছে?
মেরে ফেলেছে ভাবতেই কেমন শিউরে উঠলাম।
এই নিহান ভাইয়া পারে না এমন কোনো কাজ আদৌ আছে কি না বলে মনে হয় না।

খাওয়া শেষ হতেই সবাই উঠে গেলাম।
আঙ্কেল চলে গেলো অফিসে আর নিবিড় ভাইয়া কোন কাজে যেন গেলো।
আন্টিকে হেল্প করলাম ময়লা প্লেটগুলো কিচেনে দিয়ে এসে।
একজন দুইজন সার্ভেন্ট বারবার বলেছিলো যেন তাদের দেই কিন্তু আমি শুনিনি।
রান্নাঘরে আন্টি কাজ করছিলো বিধায় আমার হাতে প্লেটগুলো দেখে বড্ড অসন্তুষ্ট হলেন।
আমি প্লেটগুলো রাখতেই আন্টি বলে উঠলো,

—“এটা কেমন হলো নাফু, তোকে কে বলেছে এগুলো আনতে সার্ভেন্ট!”

সার্ভেন্ট দৌড়ে এসে তড়িঘড়ি গলায় বললো,

—“ম্যাম বিশ্বাস করুন! আমি ওনাকে মানা করেছিলাম কিন্তু উনি আমাদের কথা শুনেনি উল্টো জোর করে এনেছে।”

—“উফফ আন্টি! তুমি না আমাকে মেয়ে ভাবো। তাহলে কেন কিছু করতে দাও না? সামান্য প্লেটই তো এনেছি এতেই যেন মহাভারত করে ফেলছো।”

আমার কথায় আন্টি হেসে দিলেন।
—“পাগলি একটা।”

আমিও মুচকি হাসি দিলাম।
হুট করে আন্টির আমার থুতনির দিকে নজর গেলো।
কিছুটা চিন্তিত হয়ে অস্ফুট সুরে বলে উঠে,

—“আরে নাফু, তোর থুতনিতে কি হলো?”

—“আর বলো না ইনুর পিছে দৌড়াতে গিয়ে পরে চট পেয়েছি এর বেশি কিছু না।” মিথ্যা কথাটা এতক্ষণ মনে মনেই তৈরি করে ফেলেছিলাম।
তাই বলতে সমস্যা হয়নি।

—“ও আচ্ছা। এইজন্যই তাহলে রাতে আর রুম থেকে বের হোসনি!”

—“মানে?” কিছু অবাক ভঙ্গিতে।

—“আরেহ কাল মেহেদী দিয়ে রুমে গিয়ে রেস্ট নিলি না? নাহিদা তো বললো তুই নাকি অসুস্থতা অনুভব করছিস তাই রুমে রেস্ট নিচ্ছিলি।”

—“ও তাহলে দুই ভাইবোন কাল আমালে নিয়ে মিথ্যা বলেছিলো।” মনে মনেই কথাগুলো বললাম।

হালকা হাসার চেষ্টা করে বললাম,
—“হ্যাঁ তখনই। আচ্ছা তুমি নাহয় থাকো আমি গিয়ে দেখি হিদ উঠেছে কিনা।”

—“আচ্ছা তাহলে তা-ই যা। ওদিকে তো আবার শপিং এ যেতে হবে। উফফ কতো যে কাজ পরে আছে ধুর! ভাল্লাগে না।”

বলেই আন্টি নিজের কাজে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমিও বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম।
এখন নিহান ভাইয়ার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ভেতরে ঢোকার সাহস হচ্ছে না।
আগে যতোই এই বাড়িতে আসতাম না কেন কোনোদিন নিহান ভাইয়ার রুমে ঢুকিনি শুধুমাত্র কাল ছাড়া।
ওই আসা-যাওয়ার মধ্যে তার রুমে চোখ যেত আরকি।
তবে আজ বড্ড আফসোস হচ্ছে কেন তার রুমে ঢুকতাম না, যদি ঢুকতাম ওনার হ্যান্ডরাইটিং ও চিনতে পারতাম।
ধ্যাত! নিজের বোকামির জন্য নিজেরই গলা টিপে দিতে মন চায়।
কিন্তু এখন আমার এটা জানতে হবে, কাল আমার উপর কে আক্রমণ করেছিলো।
নিহান ভাইয়ার রুমের সামনে ক্যারিডোরে কিছুক্ষণ পায়চারি করলাম হাত চুলকাতে চুলকাতে, কিন্তু কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না ওনার রুমে ঢুকবো কি ঢুকবো না।
অনেকক্ষণ পায়চারি করে সিদ্ধান্ত নিলাম রুমে ঢুকবো সে উনি আমায় মারুক কাটুক যা-ই করুক।

দরজা হালকা ধাক্কা দিতে খুলে গেলো।
অবাক হলাম, উনি কি তাহলে দরজা খুলে রেখেই ঘুমিয়ে গেছিলেন?
হয়তো, যাইহোক সেটা আমার দেখার বিষয় না আগে ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে উনি কি করছেন।
দরজা আলতো করে খুলে আগে মাথা ঢুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলাম রুমটা।
অন্ধকার রুম, তার মানে উনি এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।
এক পা এক পা করে ভেতরে প্রবেশ করতেই কেউ বিকট শব্দে হাঁচি দিয়ে উঠলো।
আমি ভিষণ ভয় পেয়ে গেলাম।
আমার মুখ দিয়ে শব্দ চিৎকার বের হওয়ার আগেই আমি হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলাম।
তারপর চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম।
হঠাৎ কারো ঝাঁজালো কন্ঠে আমি চোখ খুলে সামনে তাকালাম।

—“বেয়াদপ লম্পট বিড়াল! তোর সাহস তো কম না আমার রুমে আমার বেডে আমারই নাকের সামনে লেজ নাড়ছিস! যেমন মালকিন তেমন তার বেয়াদব বিড়াল। এক পাথর মেরে তোর মাথা ফাটায় দিবো।”

বলেই নিহান ভাইয়া ইনুকে পা দিয়ে দূরে সরালো।
ইনু ড্যাবড্যাব করে নিহান ভাইয়াকে দেখছে।
সামনে এগোনোর সাহস পাচ্ছে না।
ওনার নাক কেমন রক্তিম লাল রঙে পরিণত হয়েছে।
ওনার দিকে ভালোভাবে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।
উনি সেন্ডো গেঞ্জি পরে আছে।
ওনার হাত, পা, পিঠ ব্ল্যাঙ্কেটে ঢেকে আছে।
সেন্ডো গেঞ্জি কারণে ওনার কাঁধ, বাহু এবং হাতের গঠন বেশ ভালো করে দেখা যাচ্ছে।
চুলগুলো এলোমেলো, চেহারায় বিরক্তির ছাপ।
এতেই যেন ওনাকে কতোটা সুন্দর লাগছে।
নিহান ভাইয়া দরজার দিকে তাকাতেই আমাকে দেখতে পেলো।
আমাকে দেখে ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে বিরক্তির সুরে বললো,

—“এই তোর বেয়াদব বিড়ালটাকে এখান থেকে নিহে যা তো! সকাল সকাল আমার ঘুমের ১২টা বাজায় দিলো।”

আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ ইনুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
বেরিয়ে যাওয়ার আগে নিহান ভাইয়া পিছু ডেকে বললো,

—“আমার জন্য এককাপ কফি নিয়ে আসিস।”

আমি ডানে মাথা নাড়িয়ে একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেলাম।

—“এই তুই বারবার ওনাকে জ্বালাতে যাস কেন?”

—“মিঁয়াও!”

—“কিহ! ওনার বেড অনেক নরম?”

—“মিঁয়াও।”

নিজের কপালে এক চাপড় মেরে বললাম,
—“তুই ছেলে বিড়াল হয়ে ওনার শরীরে খরগোশের গন্ধ পাস! হায়রে আল্লাহ তুমি এই পাগল বিড়ালটাকে আমার পোষাপ্রাণী বানাইলা!”

—“মিঁয়াও।”

—“ওনার তো আর খেয়ে-দেয়ে কাজ নাই ওনার কাজকর্ম ফেলে তোর খরগোশের পিছে ফুটবে। আর ভুলেও যদি ওনাকে বিরক্ত করতে যাস তাহলে তোরে আমি মায়ের কাছে ফেলে আসবো।”

বলেই হনহন করে চলে গেলাম ওনার জন্য কফি আনতে।
রান্নাঘরে কাউকে পেলাম না, তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই কফি বানাতে হলো।
এই নিহান ভাইয়া আমাকে এতো খাটায় কোন দুঃখে বুঝলাম না ধুর!
দুই ভাইবোনের জ্বালায় আমার অবস্থা ত্যানা ত্যানা।
তবুও তো ওরা গতকাল আমাকে অনেক হেল্প করেছে।
আচ্ছা যাক কালকের জন্য আজকের সকল ভুল মাফ করে দিলাম।
ভাবতে ভাবতেই কফির কাপ নিয়ে চললাম নিহান ভাইয়ার রুমে।
ওনার রুমে গিয়ে দেখি উনি উঁবুড় হয়ে বেশ আরামে ঘুমোচ্ছেন।
ওমা! নিজে ঘুমাবি ভালো কথা এই কফি কেন আনতে বললো?
আশ্চর্য তো!
আমাকে খাটিয়ে নিজে পরে পরে ঘুমাচ্ছে!
মন তো চাচ্ছে এই গরম কফি ওনার পিঠে ঢেলে দেই।
তাহেরি আঙ্কেলের কথাগুলো মনে পরে গেলো,
“চা খাবি? ঢেলে দেই?”
কিন্তু এখন আমার হাতে কফি আছে তাই বাক্যটাকে কফি দিয়ে শুরু করতে হবে।
“কফি খাবেন, ঢেলে দেই?”

অসহ্য!
কফিটা বেডবক্সে রেখে ওনার দিকে এগিয়ে ওনাকে ডাকতে শুরু করলাম।
কিন্তু উনি ঘুমে এতোটাই বিভোর যে তার কোনো হুঁশই নেই।
আরেকটু জোরে ডাকতেই চোখমুখ কুচকে বিরক্তির সুরে ঘুমের ঘোরেই বলে,

—“আহ! ডিস্টার্ব করিস না তো ঘুমোতে দে। এমনিতেই তোর ওই বেয়াদপ বিড়ালের জন্য আমার কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেছিলো।”

আমি কোমড়ে দুই হাত দিয়ে হতবাক হয়ে বলি,

—“আজিব মশাই তো আপনি! নিজেই তো বললেন কফি আনতে আর এখন আনিয়ে বলছেন ডিস্টার্ব করছি? আমি কোন দুঃখে আপনাকে ডিস্টার্ব করতে যাবো? আমি জাস্ট কফির কথা বলতেই ডেকেছি। নিজে আমাকে কফি আনিয়ে খাটাইসেন তার বেলায় কিছু না?”

আমার কথায় নিহান ভাইয়া চোখ বুজেই উঠে বসলেন।
পিটপিট করে চোখ খুলে বেডবক্সের দিকে তাকিয়ে কাপ দেখতেই সেটা হাতে নিয়ে এক চুমুকেই পুরোটা কফি খেয়ে ফেললো।
খাওয়া শেষ হতেই আবার কাপটা আগের জায়গায় রেখে চোখ বুজেই ধপ করে শুয়ে পরলো কোনোকিছু না বলেই।
আমি বিস্ময়ের সাথে ওনার কান্ড দেখলাম।
গরম কফি এক ঢোকেই সবটা খেয়ে ফেললো!!
উনি মানুষ নাকি এলিয়েন?
এসব ভাবতে ভাবতেই কফির কাপটা নিয়ে বাইরে চলে আসলাম।

দুপুরের দিকে উনি বেরিয়ে গেলেন।
বেরিয়ে যাওয়ার আগে ওনাকে আমার প্রশ্ন করেছিলাম কিন্তু উনি বরাবরই আমাকে এড়িয়ে গেছেন।
ওনার এরূপ ব্যবহারে যেমন রাগ হলো তেমনই কষ্টও হলো।
উনি এমন কেন? জানলে কি আমি ওনাকে খেয়ে ফেলবো?
এসব ভেবেই মনমরা হয়ে বসেছিলাম।
হুট করে ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো।
সিম কোম্পানির ম্যাসেজ ভেবেই পাত্তা দিলাম না।
২-৫ মিনিট পর মাকে ফোন দিবো ভেবে ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে নিহান ভাইয়ার ম্যাসেজটা শো করলো।
জলদি জলদি সিন করে দেখলাম উনি লিখেছেন,

“সময় হলে সবটা জানতে পারবে।”
ম্যাসেজটা দেখে আমার মুখের ভাবভঙ্গি কোনোরকম পরিবর্তন না এলেও মনের বোঝাটা কিছুটা কমলো।
উনি প্রহর হোক বা না হোক এটা আমার ভাবতে ইচ্ছা করে না।
উনি শুধুই হিটলার, নেতাসাহেব।
এই ভেবেই আমি বাকিটা জীবন পার করতে চাই।
চাই না ওনার মাঝে কোনো বিষাদের ছায়া পরুক।
কিন্তু উনি যে আগে থেকেই একজন বিষাদময় মানুষ,যদিও আমি গতকালই জানলাম।
কিন্তু কেন যেন মানতে পারছি না উনিই বিষাদ, উনিই প্রহর।
অসহ্য লাগছে সব।
ভাবতে ভাবতেই নাহিদার পাশে গিয়ে বসলাম।
এই মেয়েটাও না! সারাদিন এর কানে ফোন থাকবেই।
দুদিন পর বিয়ে আর এই মেয়ে সেই ফোন কানেই লাগিয়ে রাখে, যেন জামাই চিরজীবনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে।
হুহ ঢং!
হিদের থেকে সরে ইনুকে নিয়ে চলে গেলাম বাড়ির পিছে সুইমিং পুলে।
কিন্তু সেখানেও থাকতে পারলাম না।
লোকজন কাজ করছে বিধায় নিবিড় ভাইয়া আমাকে ভেতরে পাঠিয়ে দিলো।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
ভুলেই গেছিলাম এটা বিয়েবাড়ি।
ডেকোরেশনের জন্য কতো মানুষ আসছে যাচ্ছে তার হিসাব নেই।
আর মাত্র কিছুদিন বাকি বিয়ের।
নিজের সময় কাটছে না দেখে ছাদে চলে গেলাম।
নাহ ছাদে কেউ নেই।
যাক বাঁচা গেলো।
আকাশটা মেঘে ঢেকে আছে।
আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি নামবে নামবে এমন ভাব।
কিছুক্ষণ পর নেমেও গেলো।
আমি আর ইনু ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করছি।
ইনুকে ফেলেই এখন ভিঁজতে নামতাম কিন্তু মাথার ক্ষতটার জন্য ভিঁজছি না।
থুতনিতেও পানি লাগলে জ্বালা অনুভব হয়।
তাই আর কি করার বসে বসে দেখা ছাড়া উপায় নেই।

মাঝরাতে পা টিপে টিপে নিহান নাহিদার ঘরে প্রবেশ করলো।
নাহিদা এবং নাফিহা গভীর ঘুমে আছন্ন।
ঘুমন্ত নাফিহাকে মৃদ্যু আলোতে দেখাটা নিহানের যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
তাই সে প্রতি রাতে বা ভোরে লুকিয়ে রুমে প্রবেশ করে একটাবার তার মনপাখিটার ঘুমন্ত নিষ্পাপ চেহারাটা দেখতে।
নিহানই তার মা এবং বোনকে দিয়ে বিয়ের ১ সপ্তাহ আগেই জোর করে আনিয়েছে।
তবে সেটা নাফিহা জানে না।
নিহান পা টিপে ভেতরে ঢুকতেই পায়ের উপর হুট করে ভারি, নরম এবং উষ্ণ কিছু অনুভব করলো।
পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ইনু তার এক পায়ের উপর বসে আছে।
ইনুকে দেখে নিহানের মেজাজ বিগড়ে গেলো।
তাদের মধ্যে ইনু থাকলে বড় কোনো ভিলেনের প্রয়োজন পরে বলে প্রয়োজন মনে করে না ইনু।
প্রতিবারই তার শুভ কাজে এই বেয়াদপ বিড়ালটা বেঁগড়া দেবেই!
তাও নিহানের সাথে তো ইনু এক্কেবারে চিপকায় থাকে।
নিহানের তো মন চাচ্ছে পা ঝাকিয়ে ইনুকে ফেলে দিতে।
তবুও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে আলতো করে নিজের পা টা ঝাঁকালো।
কিন্তু ইনু তার চার পা দিয়ে নিহানের পা বেশ ভালোভাবেই ধরে বসে আছে।
নিহান রেগে আরও কয়েকবার নিজের পা ঝাঁকালো।
তাও এই ইনু তাকে ছাড়লো না।
অন্ধকারে এক প্রেমিক পুরুষ আর এক ফাজিল বিড়াল অন্ধকারে যে একপ্রকার ধস্তাধস্তি লাগিয়েছে তা ঘুমন্ত দুই নারীর অজানা।
তারা দুজন আপাতত নিজেদের স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত।
অনেক ধস্তাধস্তির পর নিহান ইনুকে নিজের পা থেকে ছাড়িয়েছে।
নিহান নিজের পা থেকে ছাড়িয়ে ইনুর ঘাড়ের পেছন দিকটায় দুই আঙুল দিয়ে ধরে উঠিয়ে বেলকনির ডিভানে গিয়ে রাখলো তারপর বারান্দার দরজাটা ভেঁজিয়ে রাখলো।

তারপর দুইহাত ঝেড়ে নাফিহার দিকে গিয়ে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে কিছুক্ষণ তার ঘুমন্ত পরীকে মনোযোগ দিয়ে দেখলো।
দেখা শেষ হলে নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটা চিরকুট আর একটা কলম নিয়ে সেই চিরকুটটায় কিছু লিখতে শুরু করলো।
নাফিহার কাধের কাছে চিরকুট রেখে লিখার ফলে নাফিহার নিঃশ্বাস বারংবার নিহানের হাতে এসে বারি খাচ্ছে।
নিহান এই বিষয়টা বেশ উপভোগ করছে।
চিরকুটটায় লেখা শেষ হলে গতদিনের মতোই বালিশের কাছে রেকগে কলমের মুখ লাগিয়ে আবারও সেটা প্যান্টের পকেটে পুরলো।
নাফিহাকে আরেক পলক দেখে সে বেলকনির দিকে এগোলো।
বেলকনির দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই ইনু অপ্রস্তুত হয়ে কিছুটা দূরে ছিটকে পরলো।
বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলো নিহান এই দৃশ্য বেশ ভালো করেই লক্ষ্য করেছে।
ইনু তাহলে দরজা খোলার জন্য এতক্ষণ দরজায় খোঁচাখুঁচি করছিলো।
তাইতো এভাবে ছিটকে গিয়েছে।
নিহান আবারও নিজের দুই আঙুল দিয়ে ইনুকে ধরে ভেতরে নিয়ে এসে সোফায় ধপ করে ফেলে দিলো।
ধপ করে ফেলার কারণে কিছুটা শব্দ হলেও উপরে সিলিং ফ্যানের গড়গড় শব্দে নাফিহা বা নাহিদার কান অবধি পৌঁছালো না।
আজ বেশি গরম না বিধায় নাফিহা একপ্রকার জোরজবরদস্তি করেই এসি অফ করে ফ্যান চালিয়ে শুয়েছে।

ইনু ড্যাবড্যাব করে নিহানের দিকে তাকিয়ে রয়।
নিহান আরেকবার নাফিহাকে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বেরিয়ে যাওয়ার আগে খুবই সাবধানে দরজাটা ভিঁজিয়ে দিয়ে গেলো।
আজও তার আরামের ঘুম হবে।

চলবে!!!

বিঃদ্রঃ রিচেক দেয়ার সময় হয়ে উঠেনি তাই ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here