#বিষাদময়_প্রহর
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ১৪ ||
অন্ধকার ঘরটায় নিস্তেজ হয়ে বিছানায় পরে আছে ফয়সাল।
তার চোখের কোণা ভিজে আছে।
তার এতদিনের সব কুকাজ আজ যেন তাকে আরও বিষিয়ে দিচ্ছে।
তার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে তার বুকে বা পাশে।
যাকে এতোদিন মা বলে সম্বোধন করতো সে তার মা-ই নয়!
তার মায়ের বোন ঝুমার ছেলে সে।
এই মা-ই তাকে কষ্ট করে বড় করেছে, কখনো কোনোকিছুর অভাব বুঝতে দেয়নি, নিজের বুকে আগলে রাখতো।
সেদিন তার লালসায় সেই মানুষটির গায়েই হাত তুলেছিলো সে।
ফয়সালের চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো।
এই প্যারালাইজড অবস্থায় থাকাটা মৃত্যুর চেয়েও বেশি যন্ত্রণাদায়ক লাগছে তার কাছে।
স্যালাইনের মাধ্যমে তাকে খাবার দেয়া হয় আর প্রতিদিন একজন লোক এসে তাকে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে চলে যায়।
কর্ণারের একটা হলদে বাল্ব সারাদিন জ্বলেই থাকে।
এই ছোট্ট বাল্বটি তার অন্ধকার ঘরটাকে আলোকিত করতে অক্ষম।
ঘুমানোর আগে যেমন অন্ধকার দেখে ঘুম ভাঙলেও নিজেকে সেই অন্ধকারেই আবিষ্কার করে।
কবে সে আলোর দেখা পাবে সেই চিন্তাতেই থুকে থুকে মরছে, তার পাপ তাকে আরও মেরে দিচ্ছে।
ফয়সাল মনে মনে আল্লাহ’র দরবারে প্রার্থনা করলো সে যদি একবার হলেও আলোর দেখা পায় তাহলে সবকিছু উৎসর্গ করে সৎপথে চলবে, আর কখনো অন্যায় করবে না।
মেয়েদের দিকেও খারাপ নজরে তাকাবে না।
ভেবে আরও দুই-চার ফোটা জল তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো।
★
আমার হাত-পা কেমন অনবরত কেঁপে চলেছে।
ভারি ভারি নিশ্বাস ফেলছি, চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।
এক অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে বুকের ভেতরটায়।
কেউ যেন ক্রমাগত ছুঁড়িঘাত করে আমার হৃদয়টা ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে।
দরজার ওপারে নিহান ভাইয়া বারংবার জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে যেন দরজা খুলে দেই কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নেই।
আমি তার কাছে যেতে চাই না।
তাকে দেখলে আমার বেদনা আরও শতগুণ বেড়ে যাবে যা আমি সহ্য করতে পারবো না।
বাকিরা এখনো বাগানে মজা করছে তাই আমাদের ঝামেলা সম্পর্কে ধারণা করার মতো অবস্থা নেই।
রিসোর্টে আমি, নিহান ভাইয়া আর সাবা আপুই আছে।
একসময় বেশ ঝাঁঝালো গলায় চেঁচিয়ে বললাম,
—“আমাকে দয়া করে একা থাকতে দিন। কথা শুনেননি! কতবার বলবো লিভ মি এলোন!!”
আমার কথায় নিহান ভাইয়া থেমে গেলো।
কিছুক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না, হয়তো চলে গেছে তাও সাবা আপুর কাছে।
ভাবতেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
কেন এতো কষ্ট হচ্ছে আমার!
আমি কেন নিহান ভাইয়ার পাশে অন্যকাউকে সহ্য করতে পারছি না, কেন!!
হাঁটুতে দুইহাত প্রসারিত করে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ভেবে চলেছি।
বারবিকিউর পার্টিতে দুই একটা চিকেন কাবাব, চিকেন ফ্রাই খেয়ে ভেতরে পানি খেতে আসছিলাম।
পানি খেয়ে ফোনের কথা মনে পরতেই গ্লাস রেখে উপরে নিজের রুমে এসে হাতে ফোনটা নিয়ে আবারও বেরিয়ে গেলাম।
সিঁড়ির দিকে যেতে নিতেই হুট করে নিহান ভাইয়ার রুমে কিছু শব্দ পেতেই থেমে গেলাম এবং উঁকি দিলাম ভাইয়ার রুমে কে আছে।
সেই উঁকি দেয়ার ফলই আমি এখন হারে হারে পেয়ে চলেছি।
নিহান ভাইয়াকে সাবা আপু জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ছিলো।
সাবা আপু বারবার একটা কথাই বলছিলো,
—“আই লাভ ইউ নিহান, তুমি যতো দ্রুত পারো আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও। তোমাকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারছি না।”
নিহান ভাইয়া তখনই কিছু বলতে যায় কিন্তু আয়নায় আমাকে দেখে সাথে সাথে সাবা আপুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে আমার দিকে ফিরলো।
এই দৃশ্য দেখে আমার চোখের কোণা ভিঁজে আসলো, চোখের পানির কারণে সব কেমন ঝাপসা লাগছিলো।
এতদিনে সেদিনের “জান” ডাকার অর্থ বুঝতে পারলাম।
সেদিন ফোনে সাবা আপু ছিলো তাইতো তাকে জান ডেকেছিলো।
আমার আগেই ভাবা উচিত ছিল যে নিহান ভাইয়া অন্যকাউকে ভালোবাসে, কেন সে এই কথা এতদিন গোপন রাখলো?
যখনই নিহান ভাইয়া আমার দিকে ফিরে আমি তখনই দরজার সামনে থেকে সরে এসে ধপাধপ পা ফেলে রুমে চলে আসি।
নিহান ভাইয়া পেছন থেকে কয়েকবার ডেকেছে কিন্তু আমি ফিরেও তাকাইনি। শেষে আমার পিছে পিছে আসলেও আমি তার মুখের উপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেই।
সেই দৃশ্য বারংবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
একসময় কাঁদতে কাঁদতে অনেক ঘুম পেলো তাই আমি বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরি।
নিভু নিভু চোখ থাকলেও আমার কান এবং মস্তিষ্ক তখনো সজাগ ছিলো।
স্পষ্ট শুনতে পারছিলাম অনেক চেঁচামেঁচির শব্দ কিন্তু আমি বিষয়টা না ঘেটে তৎক্ষনাৎ ঘুমিয়ে পরি।
আজকেও আমার ঘুম ভাঙলো ইনুর খোঁচাখুঁচির কারণে।
পাশে তাকিয়ে দেখি জিনিয়া মুখ খুলে ঘুমিয়ে আছে আর ইনু আমাকে খুঁচিয়েই চলেছে।
মহাবিরক্ত হয়ে উঠে বসলাম।
ঘুম খারাপ হয়েছে এমনটাও নয় তবে আরেকটু ঘুমালে আরও ভালো লাগতো।
চোখ কচলাতে কচলাতে হঠাৎ রাতের কথা মনে পরলো।
কিছুটা ধড়ফড়িয়ে উঠলাম!
আমি তো রাতে ঘুমানোর আগে দরজা লক করে ঘুমিয়েছিলাম তাহলে এই ইনু, জিনিয়া রুমে ঢুকলো কি করে?
অদ্ভুত ব্যাপার তো।
জিনিয়ার দিকে ফিরলাম।
জিনিয়ার ঘুম দেখে আমার আর ওরে জাগাতে ইচ্ছা করলো না।
ইনুকে কম্বলেরর উপর বসিয়ে দিয়ে আমি ওয়াশরুম চলে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি ইনু জিনিয়াকে খুঁচাচ্ছে।
আর জিনিয়া চোখমুখে বিরক্তি নিয়ে কুচকে বারবার ঘুমের ঘোরে বলছে,
—“ইনু জ্বালাইস না প্লিজ! ঘুমোতে দে।”
বলে আবারও ঘুম আবারও ইনুর খোঁচানি শুরু।
এভাবে দুইটায় মিলে লড়াই করতে করতে লাফ দিয়ে উঠে বসলো জিনিয়া।
জিনিয়াকে বসতে দেখে সে অতি খুশি হয়ে কম্বল টু বিছানা কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করলো।
যার মানে দাঁড়ায় সে জিনিয়াকে উঠাতে পেরেছে।
জিনিয়া আমাকে দেখে গাল, নাক ফুলিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে,
—“আপু তোর এই বজ্জাত বিড়ালটা আমার ঘুমের সাড়ে বারোটা বাজায় দিলো। শাসন করতে পারিস না?”
জিনিয়ার কথায় ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম,
—“এই ইনুকে বলে লাভ নেই। এরে তো পুরো বাঙালি স্বভাব পাইসে। যেটা করতে বারণ করবি সেটাই আরও বেশি করে করবে।”
জিনিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম সে আমার উত্তর পছন্দ করেনি।
তাতে আমার কি?
—“এখন আর বসে না থেকে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।”
বলেই আমি বেলকনিতে চলে আসলাম।
ভোরের পরিবেশটা অসম্ভব সুন্দর এই রিসোর্ট থেকে।
সারাদিনের কাঠফাটা রোদের পর এই ভোরবেলায় সূর্যীমামার মেঘের মাঝে লুকোচুরি খেলা বেশ চলছে।
চোখ বন্ধ করে কয়েকবার লম্বা নিশ্বাস নিলাম।
হুট করে কেন যেন মনে হলো কেউ আমাকে দেখছে।
সাথে সাথে চোখ খুললাম।
আশেপাশে বা বাইরের নিচে বা দূরে কোথাও কাউকে দেখতে পেলাম না।
হয়তো আমার ভুল ধারণা।
আরও কিছুক্ষণ বেলকনিতে কাটালাম, আরও কিছুক্ষণ থাকতে মন চাইলেও এই ইনুটা আর থাকতে দিলো না।
ওকে কোলে নিয়ে আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।
বেরিয়ে আসার আগে ওয়াশরুমের দরজার সামনে মৃদ্যু সুরে জিনিয়াকে ডেকে বলে দিয়েছিলাম যে আমরা বাগানে যাচ্ছি, জিনিয়ার হয়ে গেলে যেন বাগানেই চলে আসে।
জিনিয়া ভেতর থেকে সম্মতি জানিয়ে শুধু ওকে বলেছিলো।
বাগানে একা একা ঘুরছি আর মুগ্ধ নয়নে এই বিশাল ফুলের সমরোহ দেখছি।
ফুল দেখে ইনু লাফ দিয়ে কোল থেকে নেমে এই সেই ফুলের দিকে চোখ বুলাচ্ছে।
ইনু আমার মতো ঘুরে ঘুরে ফুল দেখছে।
হুট করে সে এক গাছে ঝাপ মারলো ফুলের জন্য তা দেখে আমি চোখ বড় বড় করে ফেললাম।
মুহূর্তেই কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে ফেললো ইনু।
গন্ধরাজ ফুল গাছে এক ডাল ভেঙ্গে ফেলেছে।
আমি হ্যাবলার মতো ইনুর দিকে তাকিয়ে আছি, ইনুও সেই একই দৃষ্টি নিয়ে একবার আমার দিকে তো আরেকবার ভাঙ্গা ডালটার দিকে তাকাচ্ছে।
সে হয়তো আশা করেনি এভাবে হুঁমড়ি খেয়ে গাছের ডালসহ পরবে।
জিনিয়াও ঠিক সেই মুহূর্তে আসলো এবং দুজনকে এই অবস্থায় দেখে প্রশ্ন করলো,
—“কিরে আপু, ইনু এখানে আর তুই ওখানে এভাবে হ্যাবলার মতো চাওয়াচাওয়ী করছিস কেন?”
—“ইনুর পায়ের দিকে খেয়াল কর। ব্যাটা গাছে উঠতে গিয়ে গাছের ডালসহ হুঁমড়ি খেয়ে পরেছে।”
আমার কথায় জিনিয়া হো হো করে হেসে উঠলো।
ইনু বোকার মতো দৃষ্টি দিয়ে জিনিয়ার হাসি দেখছে।
—“একেবারে ঠিক হয়েছে, আমাকে এই সাতসকালে ফাজিলটায় ঘুম ভাঙ্গাইসে, এখন বোঝ কত ধানে কত চাল।” বলেই আবার হেসে ফেললো।
আমরা আরও কিছুক্ষণ বাগানে কাটালাম।
ফুল দেখতে দেখতেই দরজা লকের কথা মনে পরলো।
—“আচ্ছা আমি তো কাল দরজা লক করে ঘুমিয়েছিলাম, তাহলে তুই ইনু ভেতরে প্রবেশ করলি কি করে?”
—“আমরা যখন ফিরলাম তখন দরজা লক পাই, নিহান ভাইয়াকে বলতেই তিনি বলে তুই নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিস। তাই নিহান ভাইয়া তার ঘর থেকে এক্সট্রা চাবি দিয়ে লক খুলে দেয় আর আমরাও ভেতরে ঢুকি এবং ঘুমিয়েও পড়ি।”
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম জিনিয়ার দিকে।
নিহান ভাইয়ার কাছে যদি চাবি থেকেই থাকতো তাহলে উনি কাল কেন ফাউ ফাউ চিল্লালো দরজা খুলার জন্য?
উনি তো চাইলেই দরজা খুলে ভেতরে এসে কথা বলতে পারতো কিন্তু ভাইয়া তা করেনি।
উল্টো আমার কথায় সে সাথে সাথেই চলে গেছে।
হুট করে মনে পরলো, তখন তো আমি আর নিহান ভাইয়া ছাড়া আর কেউ ছিলো না।
নিহান ভাইয়া যদি রুমে ঢুকেও আসতো, কোনো সার্ভেন্ট বা ফ্যামিলির কেউ হুট করে আমাদের একই রুমে দেখলে বিষয়টা বেশ খারাপ দেখাতো।
নিহান ভাইয়া নামীদামী মানুষ তাকে হয়তো কেউ কিছু বলতো না কিন্তু আমি?
আমাকে নিয়ে তো উল্টো পাল্টা চিন্তা আসতো তাদের মাথায়।
হুট করেই এক মুগ্ধতা অনুভব করলাম নিহান ভাইয়ার প্রতি।
আবার কালকের রাতের কথা মনে পরতেই মন খারাপ হয়ে গেলো।
আমি জিনিয়াকে নিয়ে ভেতরে চলে আসলাম।
ভেতরে ঢুকতেই হিদসহ আরও কিছু আপুরা হা করতে করতে নিচে নামলো।
ছেলেরা আগেই নেমে এসেছে।
মেয়েরা নামতেই নিহান ভাইয়ার এন্ট্রি হলো কিন্তু আমি তার দিকে ফিরেও তাকালাম না।
অনেকগুলো মানুষ থাকায় ডাইনিং টেবিলে সবার বসার জায়গা হলো না দেখে আমরা ফ্লোরে গোল হয়ে বসে নাস্তা করছি।
নিহান ভাইয়াও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে।
খাওয়ার সময়েও আমি একবারের জন্যেও নিহান ভাইয়ার দিকে তাকাইনি।
তবে আড়চোখে বেশ বুঝতে পেরেছি উনি সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে আমার দিকেও তাকিয়েছিলো কিন্তু পাত্তা দিলাম না।
অনেকে অনেক কথা বললেও আমি নিশ্চুপ হয়ে নাস্তা শেষ করলাম।
কিন্তু সমস্যা হলো সকাল থেকেই আমি সাবা আপু বা আদ্রান ভাইয়াকে দেখিনি।
তারা আবার কোথায় উধাও হয়ে গেলো?
হিদকে পাশে টেনে এনে বললাম,
—“কিরে আদ্রান ভাইয়া আর সাবা আপু কোথায়?”
আদ্রান ভাইয়ার কথা উঠাতেই হিদ কেমন অদ্ভুতভাবে রেগে গেলো।
—“আদ্রান ভাইয়াকে দিয়ে তোর কি কাজ?”
হিদের এমন ব্যবহারে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না হিদের এমন ব্যবহারের কারণ।
—“আমি বুঝলাম না আদ্রান ভাইয়াকে দিয়ে আমার কি কাজই বা থাকতে পারে?”
—“তাহলে জিজ্ঞেস করলি কেন?”
—“সাবা আপুর জন্য জিজ্ঞেস করেছি।” কথাটা মুখ ফসকেই বলে ফেললাম।
আমার কথাতে হিদের রাগ পানি হয়ে গেলো।
তারপর হেসে বলে,
—“ডাইরেক্টলি জিজ্ঞেস করতেই পারতিস এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার কি আছে? আর সাবা আপু তো তোরে সহ্যই করতে পারতো না তাকে দিয়ে তোর কি কাজ?”
—“নাহ, মানে সকাল থেকে দেখছি না তো তাই।”
—“ওহ। আসলে সাবা আপু বা আদ্রান ভাইয়া কেউই এই রিসোর্টে নেই।”
—“মানেহ! কেন কোথায় গেছে ওরা?” অনেকটা হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
—“কেন তুই জানিস না? ওহ সরি তখন তো তুই ঘুমিয়ে ছিলি, যাইহোক শোন! প্রায় মাঝরাতে আমরা বাড়ি ফিরেছিলাম, রিসোর্টে এসে দেখি নিহান ভাইয়া সাবা আপুকে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে ফেলেছে আর সাবা আপু মাতালের মতো ঢলছিলো আর বারংবার নিহান ভাইয়াকে ড্যাটিং, লাভ, বিয়ে এসব নিয়ে কথা বলছিলো। তার কথার ধরণে বেশ বোঝা যাচ্ছিলো সাবা আপু ড্রিংকস করে এমন মাতলামো করছে। আদ্রান ভাইয়া যেহেতু সাবা আপুর বড় ভাই সে দ্রুত তার বোনের কাছে এগিয়ে যায় এবং সাবা আপুকে ধরে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসে। সাবা আপু আদ্রান ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিহান ভাইয়ার দিকে আবার যেতেই নিহান ভাইয়া আরেক চড় লাগিয়ে দেয়।”
বলেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছে হিদ।
হাসতে হাসতে আবার বলা শুরু করে,
—“ভাইয়ার চেহারা রাগে তখন লাল হয়েছিলো, তাই তাকে কেউ কোনো কিছুতে বাধা দেয়নি। নিহান ভাই তখন চিল্লিয়ে বলছিলো,
-“এই মাতাল মেয়েকে এখনই ঢাকায় নিয়ে যাও, এরে যেন আমার বাড়ির বা এই রিসোর্টের ত্রি-সীমানায় না দেখি। এই বেয়াদব মেয়ের সাহস তো কম না মদ খেয়ে মাতলামি করে আমার রুমে গিয়ে বসে থাকে! ফাজিল, ইডিয়েট মেয়ে কোথাকার। আদ্রান, চাচীমনিকে ফোন করে এখনই বল তোর এই বেয়াদব বোনের ব্যবস্থা করতে নয়তো ওরে আমি যে কি করবো কেউ চিন্তাও করতে পারবে না।”
বলেই হনহন করে উপরে চলে গেছিলো।
নিহান ভাইয়ার রাগে আমরা ভিষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, আর আদ্রান ভাইয়াও সাবা আপুর কর্মকান্ডে লজ্জিত হয়। কিন্তু সাবা আপুর বিলাপ তখনো বন্ধ হচ্ছিলো না দেখে আদ্রান ভাইয়াও আরেক চড় দিয়ে তখনই সাবা আপুকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।”
আমি অবাক হয়ে সবটা শুনলাম।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার অগোচরে এতকিছু ঘটে গেলো আর আমি কিনা পরে পরে ঘুমাচ্ছিলাম!!
—“তোর ভাই না সাবা আপুকে ভালোবাসে?”
—“তুই পাগল নাকি তোর পেট খারাপ? নিহান ভাইয়ার চয়েস এত ফাউল না যে সাবা আপুর মতো চিফ ক্যারেক্টারের একটা মেয়েকে ভাইয়া ভালোবাসবে। আমার ভাইও যেমন ওয়ান পিস দেখিস তেমনই ওয়ান পিস ভাবী আমাদের জন্য আনবে।”
হিদ আরও কিছু বলার আগেই হিদকে আন্টি ডেকে পাঠালো তাই সে চলে যায়।
আমি সেখানে ভেংচি কেটে বলি,
—“আহ! কি আসছে আমার ওয়ান পিস। এক নাম্বারের হিটলার এই ব্যাটা। এর চেহারা আর রাগ দুইটাই ভয়ংকর, এর সাথে সংসার করবে কে? যদি কোনো মেয়েকে ভাইয়া বিয়েও করে তাহলে নির্ঘাত ওই মেয়ে কুত্তার কামড় খাইয়া নিহান ভাইয়ের গলায় ঝুলবে, যা-ই হোক কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মেয়ে এই হিটলারের সাথে সংসার করবে না। এর হিটলামির পরিমাণ এতো বেশি যে বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ তারে বিয়ে করে না। হাহ!”
সারাদিনে নিহান ভাইয়ার সাথে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হলেও নিহান ভাইয়া প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক আচরণ করলো।
তার এমন ভাব যেন গত রাতে কিছুই হয়নি আর হলেও উনি কিছুই জানেন না।
অদ্ভুত মানুষ তো!
কই ভাবলাম গত রাতের বিষয় নিয়ে আমার রাগ ভাঙাবে তা না, কি সুন্দর টইটই করে হেঁটে বেড়াচ্ছেন উনি।
আসলেই আজব লোক এই নেতাসাহেব।
গতরাতের আর এখনকার বিহেভে আকাশ পাতাল তফাৎ!
আর আমি-ই বা কে যে আমার রাগ ভাঙ্গাবে?
আমার মাথাটা আসলেই গেছে, আর কালকের বিষয়টা নিয়ে আসলেই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।
নিহান ভাইয়া যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে মিশুক, হাগ করুক তাতে আমার কী?
এই সহজ বাক্যটা কেন যেন মনের সাথে মিলাতে পারছি না।
বারংবার দুর্বল হয়ে পরছি নিহান ভাইয়ার প্রতি।
ধুর! অসভ্য মন একটা।
চলবে!!!
বিঃদ্রঃ গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।