#বিষাদময়_প্রহর
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ০৩ ||
চিঠিতে লেখা,
প্রিয় মিষ্টি সকাল,
শুভ সকাল আমার নাফিপাখি। জ্বর কমেছে? তোমার মেহেদীরাঙা হাত আমায় পাগল করে ফেললো যে। কবে পাবো তোমার সেই মেহেদীরাঙা নরম হাতের ছোঁয়া? কবে তোমার সামনে গিয়ে উঁচু গলায় বলবো “অসম্ভব ভালোবাসি আমার নাফি জানকে?” উম.. কিছুটা সময়তো অপেক্ষা করতেই হবে। কিন্তু এই অপেক্ষা শব্দটা আমায় বিষিয়ে তুলছে, কি করি?আচ্ছা যাইহোক, আর কখনো রাতে একা বের হবে না বুঝলে? আর কালকের যেই লোকটা তোমায় ছুঁয়েছে তোমার গলায় দাগ বসিয়েছে তাকে আমি খুব সুন্দর করে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছি জানো নাফিপাখি? উম.. তুমি তো জানবেই কারণ তোমারই সামনে তাকে ক্ষতম করে দিয়েছি চিরজীবনের মতো। তোমাকে ছুঁয়েছে সে তাকে ছেড়ে দিবো? কখনোই না। এভাবে আমাদের মাঝে যে-ই আসবে তাকে…ই”
আর পড়তে পারলাম না তার আগেই আমার হাত থেকে চিঠিটা পরে যায়।
হাত-পা কেমন থরথর করে কেঁপে চলেছে আমার।
তাহলে লোকটিকে বীভৎস ভাবে এই প্রহর খুন করেছে, আমারই সামনে?
এতো ভয়ানক উনি?
এবার বুঝলাম তার নামের পাশে এই বিষাদ শব্দটি কেন ব্যবহার করেন।
ইশশশ! কাল যদি চোখে ঝাপসা না দেখতাম তাহলে কালকেই এই প্রহর নামক বিষটাকে দেখতে পারতাম।
আমিও দেখতে চাই এই মুগ্ধতার চিঠি লিখে কে?
যদিও বা আমার কাছে বিরক্ত লাগে তবে তার লেখাগুলোয় কিছুটা সাহিত্যিক ভাব আছে।
কিন্তু আজ! আজ তো তার এমন রূপ দেখে আমি রীতিমতো ভয়ে কেঁপে চলেছি।
এ কোন ঝামেলা আমার জীবনে এট্রি নিলো?
আমার ভাবনার মাঝেই জিনিয়া আমার রুমে চলে আসে।
আমার পাশে বসতে বসতে বলে,
—“আজ আমার পরীক্ষার জন্য সকাল সকাল কোচিং এ দৌড় দিতে হয়েছে। দরজা খুলতেই যখন চিঠিটা পেলাম তখনই ঝটপট ব্যাগে ভরে ফেলি। তুইও অসুস্থ তাই তোকে দেয়ার সুযোগ ছিলো না। ভাগ্যিস মা দেখেনি নাহলে তো কেলেঙ্কারি বেঁধে যেতো।”
—“ভালো করেছিস নিজের সাথে নিয়ে গেছিস। আর আম্মু কোথায়?”
—“মায়ের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম ঘুমোচ্ছে। তাই কিছুটা সেফ।”
জিনিয়ার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।
—“তুই এতো টেন্সড কেন আপু? চিঠিটা পড়েছিস?”
—“হু।”
—“কি লেখা ছিলো আজকে? আজকেও কি কবিতা…”
—“কিছু না বাদ দে। ইনি এসব আজাইরা লেখালেখি ছাড়া আর কি-ই বা করতে পারে?”
পুরো বিষয়টা চেপে গেলাম জিনিয়ার থেকে।
আমি চাইনা এসব জেনে জিনিয়া কোনো চিন্তায় পরুক।
এই জিনিয়া এমনিতেই সবকিছু নিয়ে একটু বেশি ভাবে এবং বুঝে।
এমনেই ওর পরীক্ষা চলছে এখন এসব শুনলে মাথায় পড়া না ঢুকিয়ে এসব নিয়েই দিন-রাত পরে থাকবে।
জিনিয়া আমার সাথে কিছুক্ষণ থেকে রুমে চলে গেলো ঘুমাতে।
আর আমি রেডি হয়ে টিউশনির জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।
সকালে অসুস্থতার জন্য ব্যাচ আর আরেকটা টিউশনি মিস গেছে।
ব্যাচ নিয়ে চিন্তা নেই,কিন্তু সকালের টিউশনিটা এখন পড়াতে হবে।
এখনও ২টা বাজেনি।
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতেই সেই ছাত্রীর মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম এখন পড়াতে আসছি।
ছাত্রীকে পড়িয়ে বের হতে হতে ৩টা ৫ বাজলো।
সেই ছাত্রীর বাসা থেকে কিছুটা কাছেই আরেকজন স্টুডেন্টের বাসা।
তাই জলদি জলদি পা চালিয়ে সেদিকেই ছুটলাম।
এই স্টুডেন্ট দেড় থেকে দুই ঘন্টা না পড়ালে তার মা ছাড়েই না তাইতো প্রায় ৫টা বেজে যায় ওদের পড়াতে পড়াতে।
তবে দেড় দুই ঘন্টা হলেও ভালো বেতনও তারা দেয়, তাই তো বিনা দ্বিধায় রাজি হয়েছিলাম।
★
টিউশনি সব কমপ্লিট করার পর ঘড়িতে দেখি ৭টা বেজে গেছে।
মা এতোক্ষণে কতোবার যে কল দিলো হিসাব নেই।
তার একটাই কথা অসুস্থ শরীর নিয়ে কেন বের হয়েছি?
আজ আমিও অত্যন্ত ক্লান্ত। সেই দুপুরবেলা খেয়েদেয়ে বেরিয়েছি এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে তার উপর যা গরম!
দম যেন বের হওয়ার উপক্রম।
হাঁটারও শক্তি যেন পাচ্ছি না,
তাই একটা টঙের বেঞ্চিতে বসে পরলাম।
আমাকে বসতে দেখে চা ওয়ালা জিজ্ঞেস করলো,
—“চা বা অন্যকিছু খাইবেন আফা?”
আমি হাঁপাতে হাঁপাতে লোকটির দিকে তাকালাম।
এখন চা খেলে মন্দ হতো না, শরীরটাও কেমন মেজমেজ করছে।
কিন্তু আমার কাছে এখন শুধু বাসায় যাওয়ার জন্য রিক্সা ভাড়াটাই আছে।
রিক্সা ছাড়া হেঁটে কিছুতেই বাসায় যেতে পারবো না কারণ বাসা থেকে এখন অনেক দূরেই আছে, তার উপর আমার অসুস্থতা।
আমি যেন দোটানায় পরে গেলাম।
কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।
খুদাও লেগেছে ভিষণরকম।
হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ শুনতেই চোখ বড় বড় করে মাথা উঁচু করে তাকালাম।
নিহান ভাইয়া!!!
নিহান ভাইয়ার পিছে তার সৈন্যদল, মানে তার বডিগার্ডগণ।
আমি এদিক সেদিক তাকালাম।
এদিকে তেমন একটা মানুষজন নেই।
আমাকে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে নিহান ভাই হুংকার সুরে বলে,
—“এদিক সেদিক কাকে খুঁজছিস হ্যাঁ? কথা কি কানে যায়না? এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এখানে কি করছিস? কার সাথে দেখা করতে এসেছিস?”
—“মুখ সামলে কথা বলুন, আমি টিউশনি করে বাড়ি ফিরছিলাম।”
—“ওহ রিয়েলি? এই টিউশনির ভূত তো দেখছি তোর মাথায় ভালোভাবে চেপেছে। তা কি কারণে এতো টিউশনি করিস হু? নিজের হাত খরচের জন্য?”
—“আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে আপনাকে কিছু বলতে বাধ্য নই ওকে? এখান থেকে যান আপনি আপনার সাথে কথা বলার মতো অবস্থা আমার নেই।”
নিহান ভাইয়া আমার সামনের বেঞ্চিতে শব্দ করে বসে পরলো।
এমন বিকট শব্দে আমার কলিজা কেঁপে উঠলো।
জলদি জলদি বুকে থু থু মারলাম।
উফফ এভাবে কেউ বসে আজিব!
—“আমি যাব না! আমি এখানে তোর চোখের সামনেই বসে থাকবো তোর কোনো সমস্যা?”
আসলেই। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমি একজন পিএইচডি প্রাপ্ত ঘাড়ত্যাড়াকে এখান থেকে চলে যেতে বলেছিলাম।
এ তো এজীবনে আমার সাথে লাগা ছাড়া আর কিছু বললো না।
কিন্তু আজ একটাই তফাৎ, এতোদিন রেগে কথা বলতো আর আজ ত্যাড়ামি করে কথা বলছে।
ওনার এতো গুণ দেখে আমি শিহরিত।
—“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি জানি আমি দেখতে ভালো তাই বলে এভাবে নজর দিবি এতো সাহস! তোর নজরে আমার কিছু হলে তোর চোখ কেটে রেখে দিবো।”
নিহান ভাইয়ের এমন কথায় আমি থতমত খেয়ে ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফেললাম।
গালদুটি জ্বলে উঠছে, কেন জানিনা গলা দিয়ে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না আমার।
এই হিটলার তো আস্ত ফাজিল।
মান ইজ্জত সব গেলো আমার।
কি করে তার বডিগার্ড এবং চাওয়ালার সামনে আমায় অপমান করলো!
এর থেকে পালাতে উঠে দাঁড়াতে নিবো ওমনি নিহান ভাইয়া আমার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললো,
—“চাচা দুইকাপ গরম গরম স্পেশাল চা বানান তো।”
আমি অবাক হয়ে নিহান ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
নিহান ভাইয়ার কথায় চাওয়ালা চাচা আনন্দের সুরে বলে,
—“নিশ্চয়ই! আমাগো নিহান বাবা কইসে তার কথা না রাইখা উপায় আছে নাকি। খাড়াও বাবা দিতাসি।”
আমি নিহান ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
ভাইয়া ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে চাওয়ালার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
আমি তার দিকে তাকাতেই সেই হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমার বুকটা কেমন ধুক করে উঠলো, সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেললাম।
এই টঙ টা নিহান ভাইয়ার বডিগার্ডরা ঘিরে রেখেছে, তাই এখানে কি হচ্ছে বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারবে না, দেখতেও পারবে না।
আমার কেমন দম বন্ধ লাগছে।
আসলাম চিল করতে, আর এই হিটলার আমার চিল মুডে বাম হাত ঢুকিয়ে বসে আছে।
আমার ভাবনার মাঝেই হুট করে নিহান ভাইয়া তার ঠান্ডা হাত আমার কপালে রাখলো।
তার ঠান্ডার হাতের স্পর্শে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো।
এই মাথাফাটা গরমের মাঝেও ওনার হাত এমন ঠান্ডা কি করে আছে? নিশ্চয়ই এসির নিচে বসে ছিলো।
হায়রে বড়লোকী কারবার!
আমি আমার হাত দিয়ে তার হাত আমার কপাল থেকে সরাতে চেয়েও পারলাম না।
নিহান ভাইয়া আমার কপাল থেকে হাত সরাতে সরাতে বলে,
—“জ্বর নেই। কিন্তু আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর তোর উইকনেস আছে। এই উইকনেস নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিস কেন?”
—“এক কথা আমার বারবার বলতে ভালো লাগে না নিহান ভাইয়া। কয়বার বলবো আমার পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করবেন না।”
নিহান ভাইয়া কিছু বললো না, শুধু অদ্ভুতভাবেই তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ ওনার মুখের ভাব-ভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে চিরচেনা হিটলার রূপে ধারণ হলো।
—“এমন চড় দিবো না তোর পার্সোনাল লাইফ, পার্সোনাল লাইফ বলা ফুটায় ফেলবো। আমাকে বুঝাতে আসছিস পার্সোনাল লাইফ, এই নিহানকে? খুব বড় হয়ে গেছিস, আমার থেকেও বড়? আর যদি দেখেছি নিজের যত্ন না নিয়ে এই টিউশনির জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে তাহলে তোকে তুলে এমন আছাড় মারবো জম্মের মতো টিউশনির ভূত নেমে যাবে। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।”
পুরোটা এমন ধমক দিয়ে বললেন আমার যেন রুহ কেঁপে উঠলো।
এরে কি স্বাধে আমি হিটলার বলি?
চাওয়ালার চা বানানো শেষ হতেই নিহান ভাইয়া গিয়ে তার থেকে চা রিসিভ করলো।
আমার দিকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
—“কোনোরকম কথা বা এক্সপ্লেইন না করে চুপচাপ খা। নয়তো এই গরম চাসহ চাওয়ালা চাচার পাতিলের গরম পানিসহ তোর মাথায় ঢালবো। তুই তো ভালো করেই জানিস আমি কেমন ধরণের মানুষ।”
আমি ভয়ে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে চা টা চুপচাপ কোনোরকম টু শব্দ না করে হাতে নিয়ে নিলাম।
আমি যদি একজন বুদ্ধিমতি মেয়ে হয়ে থাকি তাহলে অবশ্যই এই বাঘের সাথে লাগতে যাবো না।
পাগলেও নিজের ভালোটা বুঝে।
আমাকে চা দিয়ে নিহান ভাইয়া আবার আগের জায়গাতেই বসে পরলো।
আমি তার দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ চা টা শেষ করলাম।
আহ! কি শান্তি!
এতক্ষণ যে এই সুখটার খোঁজেই ছিলাম।
চা খেয়ে উঠতেই নিহান ভাইয়া টেনেটুনে আমাকে তার গাড়ির দিকে নিয়ে গেলো।
আমি এবারও কোনো কথা বললাম না।
কারণ এই রাস্তাতে এই হিটলারের কথায় ইজ্জতহরণ হতে চাইনা।
বাসায় আসা অব্দি গাড়িতে আমাদের মাঝে কোনো কথাই হলো না।
আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে নিহান ভাইয়াসহ তার বডিগার্ডরা চলে গেলো।
ওনারা যেতেই হাফ ছেড়ে ভেতরের দিকে গেলাম।
এই যাত্রায় আজকের মতো বেঁচে গেছি।
কিন্তু ভিতরে এসে মনে হলো না আমি বেঁচে ফিরেছি।
মায়ের বকুনিতে আমার ১ঘন্টা পার হলো।
আমিও চুপচাপ মায়ের বকুনি হজম করে গেলাম।
শেষে যখন বললাম নিহান ভাইয়া বাসায় দিয়ে গেছে তখনই মায়ের বকা থামলো।
আমি এবার নিজের রুমে যাওয়ার অনুমতি পেলাম।
ফ্রেশ হয়ে খেতে এসে দেখি মা ভাত, আলুরভর্তা, সাঁচি শাক টেবিলে সাজিয়েছে।
আমি কিছু না বলে খেতে বসে পরলাম।
এসবই আমাদের রেগুলার খাবার আইটেমে থাকে।
জিনিয়া এসব খেতে কেমন বিরক্তিবোধ করে তবুও কিছু বলে না কিন্তু আমি বুঝি।
বোনটা কতোদিন ভালো ভালো খাবার খায় না।
আবার শুরু হলো মায়ের খোঁচানি।
—“বাড়িতে এতো এতো টাকা আছে অথচ আমাদের পান্তাভাত খেয়ে দিন পার করতে হয়। ওই টাকা দিয়ে কিছু করলে আমরা নাকি অন্যের দয়ায় বেঁচে থাকবো। আর মেয়ে নাকি কোনোদিন দয়ার জিনিস নিবে না তাই সে জ্বর গায়ে নিয়েই দুপুরবেলা বেরিয়েছে রাস্তায় রাস্তায় টিউশনি করতে। বড় মেয়ের ত্যাড়ামির জন্য ছোট মেয়েটাও কষ্ট করছে।”
মায়ের কথাগুলো যেন আমার বুকে তীরের মতো বিঁধলো।
মা কি বুঝে না আমার কাছে আমার এবং আমার পরিবারের আত্মসম্মানটা কতো বেশি?
এতো কষ্ট, এতো পরিশ্রম শুধু আত্নসম্মানটাকে বজায় রাখতে করে আসছি।
খাবার যেন গলা দিয়ে নামছে না, খিদেটাও যেন মরে গেছে।
—“তার মানে তুমি বলছো আমরা আমাদের আত্মসম্মান বাজারের সস্তা জিনিসের মতো বিক্রি করবো সামান্য কটা টাকার জন্য?”
মা আমার কথায় খেঁকিয়ে উঠলো।
—“তোকে এতোদিন কিছু না বলাই আমার ভুল হইসে। বেশি বড় হয়ে গেছিস তাইনা? খুব বেশি বড়াই, অহংকার তোর আত্মসম্মান নিয়ে? ওই টাকাগুলো কে পাঠায় জানিস? তোর জম্মদাতা বাবা। তোর বাবা টাকা পাঠায় প্রতি মাসে মাসে সেখানে তুই আমাকে কোনোকিছু এক্সপ্লেইন করতে না দিয়ে সারাক্ষণ এই দয়া দয়া বলে আমার কান খাচ্ছিস!”
আমি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম।
তার মানে বাবা আমাদের প্রতি মাসে টাকা পাঠায়?
কিন্তু মা আমাকে এতোদিন কেন বললো না?
—“আমি তো তোমাকে জিজ্ঞেস করতামই তাও তো তুমি কিছু বলোনি আমাকে। তো আমি কি করে বুঝবক যে বাবা পাঠায় টাকাগুলো। আর বাবা না মারা গেছে?”
শেষের লাইনটা আমি মনের মাঝেই বললাম।
বাবা মারা যাবার কথা মাকে বললে আমাকে থাপ্রাবে কারণ আমি যে মনের মাঝে বাবাকে মৃত ভেবে এসেছি এটা আমি ছাড়া কেউই জানেনা।
—“প্রয়োজন পরেনি তাই বলিনি কিন্তু এখন তো বলছি! কাল থেকে খবরদার কোনোরকম টিউশনি করবি না। আর যা টাকা আমাদের আছে তা থেকে এই বাড়িটাকে নতুন করে সাজাবো, নতুন ফার্নিচারসহ এসিও প্রতি রুমে রুমে লাগাবো। এটাই আমার শেষ এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।”
মায়ের সিদ্ধান্তে আমি টু-শব্দও করলাম না।
মায়ের কথায় জিনিয়ার মন যেন নেচে উঠলো।
সে খুশিমনেই খাবারগুলো খেয়ে উঠে চলে গেলো।
মাও খেয়ে চলে গেলেন।
আমি খেয়ে সব রান্নাঘরে নিয়ে ধুঁয়ে পরিষ্কার করলাম।
কাজ শেষে সব বাতি অফ করে নিজের রুমে চলে আসলাম।
আজই আমার কষ্টের সমাপ্তি ঘটলো।
২ বছর অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাকে।
এখন আমিও বাবার টাকায় বসে বসে খাবো তবে সাময়িক সময়ের জন্য।
রাতে ১ জন স্টুডেন্ট যেটা সকালে পড়াই সেটা বাদে সব জায়গায় মানা করে দিলাম টিউশনির জন্য।
ব্যাচও বাদ। সকালের টিউশনিটা রাখলাম সময় কাটানোর জন্য।
আর সবসময় তো টাকা মায়ের থেকে চাওয়া যাবে না, তাই হাতখরচের টাকা জমিয়ে রাখবো।
চলবে!!!
বিঃদ্রঃ গল্পটা কি আপনাদের ভালো লাগছে না??