বিরহ শ্রাবণ পর্ব ১৮

0
820

#বিরহ_শ্রাবণ
#পর্ব_১৮
#লেখিকা:সারা মেহেক

বাড়িতে পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই নানু আদেশ দিয়ে বসলো আমাকে। তার আর তার ছেলের জন্য এখনই বেসনের বড়া বানিয়ে দিতে হবে। এ কাজের জন্যই মূলত মামি এতোক্ষণ অব্দি খুঁজছিলেন আমাকে। আমার হাতের বেসনের বড়া মামার ভীষণ প্রিয় বলে মামি কখনো নিজ হাতে বেসনের বড়া বানান না৷ মামার বড়া খাওয়ার ইচ্ছে জাগলে আমিই বানিয়ে দেই উনাকে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও আমার এ মুহূর্তে কোনো কাজই করতে মন চাইছে না। চাইবেই বা কি করে, কিছুক্ষণ পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা সকল মনে করলেই তো নাওয়াখাওয়া সব বন্ধ হয়ে জোগাড় হয়ে বসে। কিন্তু এটি যে কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না! এ কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রান্নাঘরে গিয়ে কাজ শুরু করলাম। যদিও আমার উড়ু উড়ু মন কিছুতেই রান্নার কাজে বসলো না। বরং অভ্র ভাইয়ের প্রতিটি কথার চুল চিরা বিশ্লেষণ করতে ব্যস্ত হলো। চিন্তা, দুশ্চিন্তা, ভাবনায় বিভোর হলাম আমি৷ মনের মাঝে উঁকি দিলো প্রশ্নের সারিরা। সবকিছু বাস্তবে ঘটলেও এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, অভ্র ভাই সত্যি আমাকে ভালোবাসেন! উনার মুখে বর্ণিত সেই স্বপ্নচারিণী আর কেউ নয় বরং আমি! তাহলে এতোদিন উনি যে আমার চিন্তা করতেন, আমার খেয়াল রাখতেন, তার সবটাই তিনি করতেন আমাকে ভালোবাসেন বলে! কিন্তু আমি যে উনাকে ভালোবাসি না। এমনকি আমার মনে উনার প্রতি কখনো তেমন কোনো অনুভূতিই তৈরী হয়নি৷ অথচ উনি তৎক্ষনাৎ সেখানে দাঁড়িয়েই পরোক্ষভাবে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন! আশ্চর্য!
এই ভাবনাতে মশগুল থেকে পেঁয়াজ কাটতে কাটতে অসাবধানতাবশত ব’টিতে ডান তর্জনী আঙুল কেটে গেলো। তড়িৎ গতিতে পিছিয়ে পড়লাম আমি৷ ফলস্বরূপ হাতের পেঁয়াজটা অদূরে ছিটকে গিয়ে পড়লো। ভয়ার্ত চাহনিতে লক্ষ্য করলাম, আঙুল বেয়ে গলগল করে র’ক্ত ঝড়ে পড়ছে। নিমিষের মাঝে এতো র’ক্ত দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি। ততক্ষণে কয়েক ফোঁটা র’ক্ত আঙুল বেয়ে হাতের কব্জি ছাড়িয়ে মেঝেতে গিয়ে পড়লো। আমি দ্রুত কোনোমতে হাত নিয়ে বেসিনের ট্যাপের সামনে ধরলাম। আঙুলের র’ক্ত ধুয়ে যেতে যেতেই রান্নাঘরে নানু ও মামি উপস্থিত হলেন। তাদের দেখে আঙুল ট্যাপের পানি হতে সরাতেই আবারো র’ক্ত বের হওয়া শুরু হলো। আমার আঙুল কেটে এভাবে র’ক্ত বেরুতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন মামি। একরাশ উদ্বিগ্নময় কণ্ঠে হায় হায় করতে করতে বলে উঠলেন,
” হাত কাটলি কিভাবে! দেখি দেখি কতখানি হাত কেটেছিস?”
এই বলে মামি এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরলেন। তখনও আঙুল দিয়ে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। বুঝতে পারছি, বেশ গভীর একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।
মামি ও নানুর এ আতঙ্কিত চাহনি ও মুখশ্রী দেখে আমি সশব্দে হেসে বললাম,
” এতো হাইপার কেনো হচ্ছো নানু? আর মামি আপনার এই টেনশনের কারণে আমার সুস্থতাও মাঝে মাঝে ভয়ে পালিয়ে যায়। কি এমন হয়েছে শুনি? এর আগে কি কখনো হাত কাটেনি আমার? রুমে গিয়ে ওষুধ লাগিয়ে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ”

” এই গভীর ক্ষত একদিন ওষুধ লাগালেই বুঝি সেরে যাবে!”
হঠাৎ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কণ্ঠস্বর শুনে দৃষ্টি তুলে চাইলাম আমি। স্বাভাবিক কণ্ঠেই উনার কথার প্রত্যুত্তরে বললাম,
” একদিন না হলে দু তিনদিন লাগাবো। সারতে বেশি সময় লাগবে না৷ ”

এবার নানু শাসন করে জিজ্ঞেস করলো,
” এভাবে হাত কাটলো কি করে? মন কোথায় ছিলো তোর?”

নানুর এহেন প্রশ্নে খানিক থতমত খেলাম আমি। বাস্তবেই আমার মন কাজে ছিলো না। ক্ষণিকের জন্য মনটা অভ্র ভাইয়ের কথায় মশগুল হয়ে ছিলো। কিন্তু এটি যে স্বীকার করার মতো অপরাধ নয়। এ কারণে আমতাআমতা করে বললাম,
” তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কেটে গিয়েছিল নানু। উফ, এতো টেনশন করো না তো। আমি এখন রুমে গিয়ে ওষুধ লাগিয়ে নিচ্ছি। আর প্লিজ তোমরা কেউ এসো না। তুমি আর মামি আসলে নির্ঘাত হইহই বাঁধিয়ে দিবে। ”
এই বলে আমি নানু ও প্রোজ্জ্বল ভাইকে পাশ কাটিয়ে রান্নাঘর হতে বেরিয়ে এলাম। তবে বের হওয়ার পূর্বে লক্ষ্য করলাম, প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের মুখখানা কেমন যেনো থমথমে হয়ে আছে। হঠাৎ এমন থমথমে মুখশ্রীর পিছনে রহস্য কি তা তৎক্ষনাৎ উদঘাটন করতে পারলাম না। আর চেষ্টাও করলাম না৷ এ মুহূর্তে আমার ব্যান্ডেজ লাগানো ফরজ হয়ে গিয়েছে। কারণ এখনও ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়ছে আর ভীষণ জ্বালা করছে। আমি বাম হাত দিয়ে তর্জনী আঙুল চেপে ধরে রুমে চলে এলাম। ওয়ারড্রবের উপর হতে ছোট্ট ওষুধের বক্সটা খুলে স্যাভলন আর একটা ব্যান্ডএইড বের করলাম। স্যাভলন খুলে একটুখানি হাতে নিলাম ক্ষতে লাগানোর জন্য। কিন্তু এটা দেওয়ার পরে যে জ্বালা শুরু হবে তা ভাবতেই আমার বাম হাত আপনাআপনি পিছিয়ে এলো। কিন্তু ক্ষতে ওষুধ যে লাগাতেই হবে। তাই সাহস নিয়ে এবার এগিয়ে গেলাম ওষুধ দিতে। কিন্তু এর পূর্বেই কারোর হাতখানা আমার বাম হাত চেপে ধরলো। দৃষ্টি তুলে দেখলাম প্রোজ্জ্বল ভাই এসে আমার সামনে দাঁড়িয়েছেন৷ আমার বাম হাতে স্যাভলন দেখে শান্ত কণ্ঠে বললেন,
” সারাজীবন বেক্কলই দেখে যাবি তুই। হাতের র’ক্ত পরিষ্কার না করেই ওষুধ দেয় কোন পাগল?”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কথায় তৎক্ষণাৎ নিজের ভুল বুঝতে পেরে আলতো করে জিব কাটলাম। বললাম,
” সরি প্রোজ্জ্বল ভাই। খেয়াল ছিলো না। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই আমার কথার প্রত্যুত্তরে তৎক্ষনাৎ কিছু বললেন না। বরং আমার সামনে খাটে বসে ওষুধের বক্স হতে একটু তুলো নিয়ে হাতের স্যাভলন মুছে ফেললেন। অপর একটি তুলো নিয়ে আঙুলে র’ক্ত পরিষ্কার করতে করতে বললেন,
” এখনই এতো ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছিস তুই! সামনে কি হবে তাহলে?”

আমি নিরুত্তর রইলাম। উনার এমন প্রশ্নের ঠিক কি জবাব দেওয়া যায় তা বোধগম্য হলো না বলেই নিশ্চুপ রইলাম। খানিক বাদে পূর্বের তুলনায় অত্যধিক রাশভারি গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” তখন অভ্রের কথা চিন্তা করছিলি তাই না?”

অকস্মাৎ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এরূপ প্রশ্নে থতমত খেলাম আমি। উনি আমার মনের কথা বুঝলেন কি করে! জানলেন কি করে যে আমি অভ্র ভাইকে নিয়েই চিন্তায় মগ্ন ছিলাম! অদ্ভুত!
আমার পক্ষ হতে জবাব না পেয়ে প্রোজ্জ্বল ভাই মৃদু স্বরে হাসলেন। বললেন,
” অভ্রকে পছন্দ করিস তুই?”

উনার এ প্রশ্নে আমার মাঝে আড়ষ্টতা বিরাজ করলো। স্বভাবতই একজন মেয়ে হওয়ার দরুন এমন প্রশ্নের জবাব হুট করে সরাসরি দেওয়া বেশ দুঃসাধ্য। তা সে প্রশ্নের জবাব যতই নেতিবাচক হোক না কেনো। ফলে উনার এ প্রশ্নের জবাব দিতেও ব্যর্থ হলাম আমি। উনি আর কথা বাড়ালেন না। তুলো দিয়ে র’ক্ত পরিষ্কার করে একটুখানি স্যাভলন নিয়ে আমার ক্ষতে লাগালেন তিনি। তাজা ক্ষত ওষুধের স্পর্শ পেতেই জ্বলে উঠলো। ফলস্বরূপ তড়িৎ গতিতে হাত সরিয়ে নিলাম আমি। কাতর কণ্ঠে বললাম,
” খুব জ্বলছে তো! ”

প্রোজ্জ্বল ভাই আমার কাতর কণ্ঠ শুনেও যেনো তা উপেক্ষা করলো। উনি ভাবলেশহীন চাহনিতে আমার পিছিয়ে রাখা হাতটা ধরে এগিয়ে নিয়ে আসলেন। শক্ত করে চেপে ধরে পুরো ক্ষততে স্যাভলন লাগিয়ে দিলেন। ওদিকে আমি ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে আছি৷ কিন্তু প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। অন্যান্য সময় হলে আমাকে এক ধমকেই চুপচাপ বসিয়ে রাখতেন উনি৷ অথচ আজ আমার আর্তনাদের আওয়াজেও নিশ্চুপ আছেন উনি। অদ্ভুত!
স্যাভলন লাগানো শেষে ঐ আঙুলে ভালোমতো ব্যান্ডএইড লাগিয়ে দিলেন তিনি। অতঃপর সবকিছু গোছগাছ করে ওষুধের বক্সে রেখে দিলেন। এরই মাঝে উনার এরূপ আচরণ দেখে জিজ্ঞেস করে বসলাম,
” আপনার কি হয়েছে প্রোজ্জ্বল ভাই? এতো শান্ত কেনো আপনি?”

আমার প্রশ্নের জবাবে উনি আমার পানে চেয়ে মৃদু হাসলেন। বললেন,
” কেনো? শান্ত থাকাও কি সমস্যা? ”

” না, সেটা বলছি না। ”

” তাহলে কি বলছিস?”

ইতোমধ্যে প্রোজ্জ্বল ভাই উঠে গিয়ে ওষুধের বক্স ওয়ারড্রবের উপর রেখে দিয়েছেন। আমি তখনই জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি কি অভ্র ভাইয়ের প্রপোজালের কারণে রেগে আছেন? ”

উনি বক্স রেখে আমার রুম হতে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মাঝে আমার প্রশ্ন শুনে থমকে দাঁড়িয়ে বললেন,
” রাগ করবো কেনো? রাগ করার কোনো কারণ দেখছি না তো। ”
এই বলেই তিনি প্রস্থান করলেন। অকস্মাৎ উনার এরূপ আচরণ ভাবিয়ে তুললো আমায়। অভ্র ভাইয়ের এমন প্রপোজাল দেখেই উনি এমন আচরণ করছেন? এ কারণে অভ্র ভাইয়ের উপর উনি রাগ করেননি তো! এসব প্রশ্ন ভীষণ ভাবিয়ে তুলছে আমাকে।

———-

গতকাল রাতেই ঘুমানোর পূর্বে প্রত্যাশা আপুকে কল করে সব ঘটনা বিস্তারিত বলেছি। প্রথম প্রথম আপু বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু পরে ঠিকই বিশ্বাস করেছে। আপাতত এ বিষয়ে কথা বলতেই দুপুরের শ্বশুরবাড়ি হতে বাড়িতে ছুটে এসেছে আপু। হঠাৎ আপুর এমন আগমন দেখে মামি ভীষণ অবাক হলেও খুশি হলেন বেশি।

আপু রুমে এসেই আমার দিকে প্রথম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,
” গতকাল রাতের পর অভ্রের সাথে আর কথা হয়েছে তোর?”

” না আপু। কি কথা বলবো বলো। উনি প্রপোজ করার পর থেকেই স্বভাবতই আগের মতো কিছুই স্বাভাবিক থাকবে না৷ আজ কলেজে উনার সাথে দেখা হলেও লজ্জায় কথা বলতে পারিনি। ”

” অভ্র এগিয়ে আসেনি কথা বলার জন্য?”

” না। হয়তো উনি আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরেছেন। ”

” হয়তো। কিন্তু আমি এই ভাবছি যে, আমাদের অভ্র মিয়া কত বড় ছুপারস্তুম! চার বছর ধরে তোকে ভালোবাসে। অথচ কাউকে কিছু জানতে দেয়নি! আবার একদিনে মনের কথা বলে ঐদিনই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেছে! কি ফাস্ট!
আচ্ছা, তোর মনে কি চলে বল তো আমাকে। ”

” আমার মনে কি চলবে আবার! ”

” ওমা! কি চলবে মানে! এই যে অভ্রের প্রতি কোনো ফিলিংস বা টান?”

” তুমি পাগল না কি আপু! উনাকে আমি কখনোই ঐ নজরে দেখিনি। সুতরাং উনার প্রতি ফিলিংস বা টান না থাকাই স্বাভাবিক। ”

” হ্যাঁ সেটাও ঠিক বলেছিস। তবে আমার এখন কি মনে হয় জানিস?”

” কি মনে হয়?”

” মনে হয়, অভ্র খুব শীঘ্রই অফিশিয়ালি তোকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে।”

আপুর এহেন কথায় আমি বিস্ময়ের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেলাম। বললাম,
” এসব কি বলো আপু!”

” হ্যাঁ। সত্যিই বলছি। ”

” অভ্র ভাই এমন করলে আমি শেষ। লজ্জায় কারোর সামনে মুখ দেখাতে পারবো না৷ ”

আপু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” লজ্জা! লজ্জা লাগবে কেনো? এখানে লজ্জা লাগার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। সেই ছোটবেলা থেকে পরিচিত তোরা। ”

” ছোটবেলা থেকপ পরিচিত বলেই তো লজ্জা লাগবে বেশি। একবার চিন্তা করো, সবকিছু কেমন ওলটপালট হয়ে যাবে না? মানে…. উফ, কিভাবে কি বুঝাবো তোমাকে!”
এই বলে আমি মাথায় হাত রাখলাম। আপু আমার মাথা থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
” আচ্ছা, আমাকে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দে। ”

” হুম করো প্রশ্ন।”

” তুই কাউকে ভালোবাসিস?”

” আস্তাগফিরুল্লাহ! কি বলছো! আমি কাউকে পছন্দ করি না। হ্যাঁ, আমার ক্রাশ আছে। যদিও সবগুলো সেলিব্রিটি। ”

” ইশ! ওসব সেলিব্রিটি ক্রাশের কথা বাদ দে।
আচ্ছা, ভালোবাসিস না। তাহলে কাউকে পছন্দ করিস?”

” উঁহু। ”

” বিয়ের আগে প্রেম করতে চাস?”

” মোটেও না। ”

” অভ্রর মধ্যে খারাপ কিছু আছে?”

আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম এর জবাব। অতঃপর বললাম,
” না। খারাপ কিছুই নেই। ”

” গুড। তাহলে বলবো, এক্ষুণি অভ্রকে বিয়ে করেনে।”

” এক্ষুণি! আপু, তোমার মাথা গেলো না কি! কি বলছো?”

” দেখ, তুই কাউকে পছন্দ করিস না, ভালোবাসিস না। তাহলে তোর দিকে সবকিছু ক্লিন। কিন্তু অভ্র তোকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। ইভেন তোকে বিয়েও করতে চাইছে। তাহলে আপত্তি কিসে?”

” আপু বুঝছো না৷ আমাদের বিয়ে, ব্যাপারটা কেমন অড হয়ে যায় না?”

” রাখ তোর অড-ফড। স্বভাব চরিত্র ভালো মিলিয়ে একটা ছেলে তোকে ভালোবাসে আর তুই বলছিস কেমন অড দেখায়!
আর অভ্রের সাথে তোর বিয়ে হলে একদিন না একদিন ওকে তুইও ভালোবেসে ফেলবি। আর বিয়ের আগে যে দু পক্ষেরই ভালোবাসা থাকতে হবে এমনটা নয়৷ একজন ভালোবাসলে বিয়ের পর অপরজন ঠিকই ভালোবেসে ফেলবে। ”

” তোমার কথায় যুক্তি আছে আপু। কিন্তু….. ”

” কোনো কিন্তু না৷ শুধু অস্বস্তি লাগার জন্য এমন ভালো ছেলে কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। সো, অভ্র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলে তুই নিষেধ করবি না। আর সরাসরি হ্যাঁ না বলতে পারলে আমাকে বলিস। আমি তোর পক্ষ থেকে বিয়েতে মত দিয়ে দিবো।”
এই বলার পর আপু আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে নিচে নিয়ে গেলো। একসাথে নুডলস রান্না করে খাবে তাই। আমিও আপত্তি না জানিয়ে কাটা আঙুল নিয়েই টুকটাক আপুকে সাহায্য করলাম।

——-

গতকাল সারারাত প্রায় জেগে ছিলাম। কারণ আমি আর আপু মিলে একটা মুভি দেখে সাথে গল্প করে সময় কাটিয়েছিলাম৷ স্বভাবতই ভোর রাতে ঘুমানোয় এদিকে ঘুম ভেঙেছেও দেরিতে। শুক্রবার হওয়ায় ক্লাস নিয়ে কোনো প্যারা না থাকা ধীরেসুস্থে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম নাস্তা খেতে। কিন্তু নিচে নেমে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হবো তা কল্পনাও করিনি আমি৷ ডাইনিং এ ঢুকে দেখলাম, ড্রইংরুমে আমাদের পরিবারের সবাই উপস্থিত আছে৷ আর তারা সবাই সোফায় বসে থাকা অভ্র ভাই ও উনার বাবা মার আশেপাশে দাঁড়িয়ে আছে। ছুটির দিনে অভ্র ভাইয়ের সাথে অকস্মাৎ উনার বাবা মার আগমনে আমার বুকটা ধক করে উঠলো। ক্ষণিকের পর্যবেক্ষণে মনে সন্দেহ জেগে উঠলো, অভ্র ভাই কি সত্যিই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন!”
®সারা মেহেক

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here