বিরহ শ্রাবণ পর্ব ১৬

0
777

#বিরহ_শ্রাবণ
#পর্ব_১৬
#লেখিকা:সারা মেহেক

বাড়ি আসার পথে আজকের পুরো ঘটনাটা প্রোজ্জ্বল ভাইকে বললাম। অভ্র ভাইয়ের দেওয়া দিক নির্দেশনাও শোনালাম উনাকে। সব শুনে উনি অভ্র ভাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। স্বভাবতই, বন্ধুর প্রশংসায় প্রোজ্জ্বল ভাই কখনো পিছিয়ে থাকেন না।

বাড়ি ফিরে কলেজ ব্যাগ রেখে ড্রেস বদলিয়ে দ্রুত এসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। ক্ষুধায় পেটটা চোঁ চোঁ করছিলো৷ উপরন্তু মামির হাতের সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ সেই দোতলায় এসে নাকে বাড়ি খাচ্ছিলো। এর ফলে কোনোভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। নিচে এসেই রান্নাঘর হতে খাবার নিয়ে ডাইনিং এ বসে গেলাম খেতে।
আমার খাবার খাওয়া শুরুর পরপরই ডাইনিং এ নানু এসে উপস্থিত হলো। আমাকে এভাবে খেতে দেখে এক গাল হেসে বললো,
” খুব ক্ষুধা লেগেছিলো বুঝি?”

আমি এক লোকমা ভাত মুখে তুলে বললাম,
” হ্যাঁ নানু। সেই সকালে খেয়েছিলাম। আর ক্যান্টিনেও কিছু খাইনি। এ কারণে আরো বেশি ক্ষুধা লেগেছে। ”

” আচ্ছা খেয়েনে আরাম করে। ”

আমি আর কথা না বাড়িয়ে খেতে লাগলাম। আমার খাবার খাওয়া যখন শেষের দিকে তখন মামি রুম হতে বেরিয়ে ডাইনিং এর চেয়ারে এসে বসলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
” চিংড়ির তরকারিটা কেমন হয়েছে চন্দ্রিমা?”

” দারুণ হয়েছে মামি। তোমার হাতের রান্নায় জাদু আছে। ”
এই বলে রান্নাঘরে প্লেট রেখে হাত ধুয়ে ডাইনিং এ এসে বসলাম। আমি বসতেই মামি বললেন,
” বলি কি, পড়ার পাশাপাশি টুকটাক রান্নাবান্নাও শিখেনে। ”

” রান্না তো পারিই। আর কি শিখবো।”

” ও কোনো রান্না হলো নাকি? নেট থেকে দেখে কি-টি রান্না করিস তার নেই ঠিক। এই যে আমার মতো মাছের তরকারি, মাংস রান্না, নানারকম ভাজি, এগুলো শিখবি কবে?”

” শিখবো মামি শিখবো। তবে এখন না। এক দু সপ্তাহের কোনো এক ছুটিতে এগুলো শিখবো। ”

এবার নানু বললেন,
” এমন ছুটি তো অনেকদিন পর পাবি। এ সপ্তাহ থেকেই না হয় একটু আধটু শিখা শুরু কর। ”

হঠাৎ দুজনের রান্না শেখার প্রতি জোরাজোরি দেখে আমার মনে সন্দেহের ছোট্ট এক দানা বাঁধলো। কেননা এর পূর্বে মামি বা নানু কখনো আমার সাথে রান্না বা ঘরের কাজ শেখার প্রতি কোনোপ্রকার জোরাজোরি করেনি। আজ হঠাৎ দুজনে একত্রেই এভাবে রান্না শিখতে বলছে মানে কোনো না কোনো ব্যাপার নিশ্চয়ই আছে।

সন্দেহজনক কণ্ঠে দুজনকেই জিজ্ঞেস করলাম,
” হঠাৎ আমার রান্না শেখার প্রতি দুজনের ইন্টারেস্ট কেনো? নানু, সত্যি করে বলো তো, কি চলছে তোমার মনে?”

মুহূর্তেই নানু চোখেমুখে একরাশ আনন্দ নিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
” তোর জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে……”

অকস্মাৎ বিয়ের প্রস্তাবের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। ফলস্বরূপ পানি খেতে খেতে মুহূর্তেই তা গলায় আটকে নাক দিয়ে উঠে এলো। কাশতে কাশতে আমি উঠে দাঁড়ালাম। মামি ও নানু দ্রুত আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন। মামি পিঠে কয়েকটহ আলতো চাপড় দিয়ে বললেন,
” বিয়ের কথা শুনে এতো হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে ফেললি কেনো? পাগল নাকি!”

মামির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বার কয়েক কাশি দিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। অতঃপর পুনরায় চেয়ারে বসে দুজনকে উদ্দেশ্য করেই বললাম,
” মাস দুয়েক আগেই তো প্রত্যাশা আপুর বিয়ে হলো। এতো দ্রুত আমাকে বিদায় করতে চাও তোমরা!”

মামি চেয়ারে বসে ঝলমলে গলায় বললেন,
” ছেলে যে কত্ত ভালো সেটা দেখবি না! ছেলে কানাডায় থাকে। ওখানে পড়াশোনা শেষ করে ওখানকারই এক কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছে। তার স্বভাব চরিত্রও খুব ভালো। তাহলে সুযোগ থাকতে এতো ভালো ছেলে হাত ছাড়া করবো কেনো। ঠিক বলিনি আম্মা?”

নানুও মামির যুক্তিতে সায় দিয়ে বললো,
” একদম ঠিক। আর ছেলের পরিবারও আমাদের পরিচিত। অনেক আগে থেকেই চিনি ওদের। খুব ভালো পরিবার। স্বভাব চরিত্রে যেমন ভালো তেমন সয়-সম্পত্তিতেও ওদের নামডাক আছে। ”

বিয়ের পক্ষে দুজনের এ যুক্তি দেখেই মুহূর্তেই এ প্রস্তাব নাকচ করে বললাম,
” ছেলে যত ভালোই হোক, আমি বিয়ে করবো না। তোমাদের ছাড়া কোথাও যাবো না আমি। এক কথা আমার।”

মামি কিছু বলতে যাবে, এর পূর্বেই অকস্মাৎ প্রোজ্জ্বল ভাই এসে চেয়ার টেনে আমার পাশে বসলেন। বললেন,
” এইটুকু এক বাচ্চা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য তোমরা পাগল হয়ে যাচ্ছো! যার এখনও নাক টিপলে দুধ বের হয় তাকে বিয়ে করবে কে?”

প্রথমার্ধে প্রোজ্জ্বল ভাইকে নিজের দলে পেয়ে খুশি হলেও উনার শেষোক্ত কথাটি শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম। উনার বাহুতে বার কয়েক মেরে ঝেঁঝে উঠা গলায় বললাম,
” কি খারাপ আপনি প্রোজ্জ্বল ভাই! আমার পক্ষ নিয়েও আমাকে এভাবে অপমান করলেন!”

প্রোজ্জ্বল ভাই প্রাণ খোলা হাসি দিলেন। হাসতে হাসতেই বললেন,
” যা বললাম ঠিকই তো বললাম। সত্যি বললে মানুষ আসলেই খারাপ হয়ে যায়! ”

প্রোজ্জ্বল ভাই ও আমার এ ঝগড়া দেখে মামি ও নানু হেসে উঠলেন। কিন্তু হাসতে পারলাম না আমি। কারণ উনার কথাগুলো মোটেও হাস্যকর ছিলো না। ভীষণ রাগের কারনে আমি আর কথা না বাড়িয়ে গলা ফুলিয়ে বসে রইলাম।

প্রোজ্জ্বল ভাই ততক্ষণে হাসি থামিয়ে দিয়েছেন। কিছুক্ষণ বাদে শান্ত হয়ে মামিকে বললেন,
” মা, এখনই চন্দ্রিমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছো কেনো? ও ক্লাস শুরু করলো মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে। এখনই যদি বিয়ের প্রেশার দাও ওর উপরে তাহলে পড়া কন্টিনিউ করবে কি করে?”

মামি বললেন,
” এক সময় না এক সময় ওকে বিয়ে করতেই হবে। আমরা বলছি না এখনই বিয়ে দিবো। ছেলের সাথে পরিচিতি হোক, কথা বলুক। যদি দুজনেই একে অপরকে পছন্দ করে তাহলে কথা আগাবো। আর এসব হতে নিশ্চয়ই দু তিনদিন লাগবে না। ”

নানু মামির সাথে সায় দিয়ে বললেন,
” তোর মা ঠিক বলেছে প্রোজ্জ্বল। আর চন্দ্রিমা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আশেপাশের কতজন বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে! কিন্তু আমাদের কোনোটা ভালো লাগেনি বলে আমরা কথা তুলিনি। তবে এবারের ছেলেটা অনেক ভালো, ছেলের পরিবারও ভালো। আমার মনে হয় ও চন্দ্রিমাকে সুখী রাখবে।”

প্রোজ্জ্বল ভাই বললেন,
” শুধু মনে হওয়ার ভিত্তিতে একটা ছেলের সাথে ওকে বিয়ে দিবে!”

” তো কি করবো? কার কাছে ওর সুখী হওয়ার গ্যারান্টি পাবো? তোর দাদা যখন আমাকে বিয়ে করেছিলো, তখন আমার মা বাবাও বলেছিলো, তোর দাদার সাথে হয়তো আমি সুখী হবো। তোর মার বিয়ের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিলো। এ জগতে কে সুখী হওয়ার গ্যারান্টি দিতে পারে? এসব আমরা বলি, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। আমাদের বুড়ো চোখ বুঝে কে ভালো কে খারাপ। ”

নানুর এ যুক্তিতে প্রোজ্জ্বল ভাই হয়তো ধরাশায়ী হলেন। তাই তো কথা সেদিকে না বাড়িয়ে মুহূর্তেই বলে উঠলেন,
” ওসব কথা বাদ দাও। চন্দ্রিমাকে বাইরে বিয়ে দেওয়ার পক্ষে আমি নেই। একবার যদি ও দেশের মাটি ছেড়েছে, তবে এ দেশে ওর আসার সম্ভাবনা তেমন নেই বললেই চলে। যদি আসেও তাহলে কয়েক বছর পর একবার এসে এক সপ্তাহ থেকেই বিদেশে পাড়ি জমাবে আবারো। সো, চন্দ্রিমার এ বিয়ের পক্ষে আমি নেই। আর আমি অ্যাশিওর করবো যেনো বাবাও এ বিয়ের প্রস্তাবকে নাকচ করে। ”
এই বলে উনি উঠে গেলেন। প্রোজ্জ্বল ভাই চলে যেতেই আমি মামি ও নানুর দিকে চেয়ে বিজয়ীর হাসি হাসলাম। ভ্রু নাচিয়ে, ঠোঁট বাকিয়ে সদর্পে দুজনকে বললাম,
” বিয়ের পক্ষে তোমার দুজন৷ আর বিপক্ষে আমরা তিনজন। সুতরাং জয়ী টিম কিন্তু আমরাই৷ এবার হার মেনে নিন মামি। ”
এই বলেই আমি উঠে চলে এলাম। পিছে ফিরে একবার মামি ও নানুকে দেখলাম। দুজনের মুখশ্রীতে এ মুহূর্তে একরাশ হতাশা বিরাজ করছে। তাদের হতাশা আমার জন্য বিজয়ের লক্ষণ ভেবেই খুশিতে গদগদ করে উঠলাম।

রুমে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে গোসল করতে গেলাম। গোসল করে বের হয়ে চুল মুছে পানির স্প্রে বোতল নিয়ে রুমের বাইরে চলে এলাম। দোতলার ইনডোর প্ল্যান্টগুলোয় বেশ কিছুদিন পানি দেওয়া হয় না। সেই ইনডোর প্ল্যান্টগুলোয় পানি দিতে দিতে সময় কাটানোর জন্য গুনগুন করে গান গাইলাম।
” আজ ঝরঝর মুখোর বাদল দিনে……….”

পানি দেওয়া শেষে সবগুলো গাছ ঠিকঠাকভাবে রেখে রুমে চলে এলাম। অতঃপর ফ্যানের নিচে চেয়ার নিয়ে বসে আরামে চুল শুকাতে লাগলাম।
দু মিনিট যেতেই হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে চমকে উঠলাম আমি। দ্রুত চেয়ার ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। দেখলাম, প্রোজ্জ্বল ভাই মেঝেতে পড়ে আছেন আর তার পাশে পড়ে আছে আমার শখের মানি প্ল্যান্ট। প্রোজ্জ্বল পড়ে যাওয়া দেখে যতোটা হাসি পেলো এর চেয়েও বহুগুণ বেশি আমার মানি প্ল্যান্টের জন্য কষ্ট লাগলো। আমি দ্রুত গিয়ে প্রোজ্জ্বল ভাইকে পাশ কাটিয়ে মানি প্ল্যান্টের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখলাম প্লাস্টিকের টবের মাটি চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে আর মানি প্ল্যান্ট পড়ে আছে সামনের দিকে। আমি দ্রুত হাঁটু গেঁড়ে বসে টবে মাটিগুলো তুললাম। অতঃপর মানি প্ল্যান্ট নিয়ে ভালোমতো মাটিতে পুঁতে তা জায়গা মতো রেখে দিলাম৷ এর মাঝে লক্ষ্য করলাম, প্রোজ্জ্বল ভাই আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। হয়তো মেঝে হতে উনাকে তোলার জন্য।
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এ হাত বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমি আড়চোখে চেয়েও সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করলাম। কারণ উনার প্রতি এখন ভীষণ রেগে আছি আমি। দু সপ্তাহ আগেই নতুন কাটিং বসিয়েছিলাম। এতোদিনে মানি প্ল্যান্টের কাটিংটা বসে যেতে শুরু করেছিলো। কিন্তু আজ হঠাৎ পড়ে যাওয়ার যে বেশ ক্ষতি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আমার নিকট হতে সাহায্য না পেয়ে প্রোজ্জ্বল ভাই হাত গুটিয়ে নিলেন। আমিও উনাকে কিছু না বলে চলে এলাম। তবে পিছে শুনলাম, উনি গলার স্বর যথাসম্ভব উঁচিয়ে বলছেন,
” মানুষ এতোটা থ্যাংকলেস কিভাবে হতে পারে আল্লাহ জানে!”

আমিও এ কথার প্রত্যুত্তরে যেতে যেতে উনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম,
” যে আমার ক্ষতি করে তার প্রতি কোনো মায়াদয়া নেই আমার।”

এই বলে আমি সোজা ওয়াশরুমে চলে এলাম। ভালোমতো হাত পরিষ্কার করে বেরিয়ে দেখলাম প্রোজ্জ্বল ভাই ক্রুদ্ধ চাহনিতে কোমড়ে হাত রেখে আমার রুমে দাঁড়িয়ে আছেন। উনাকে দেখিনি এমন একটা ভাব ধরে বললাম,
” আমি এখন কথা বলার মুডে নেই। ”

আমার কথা শোনা মাত্র প্রোজ্জ্বল ভাই তেড়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। বিছানায় পড়ে থাকা তোয়ালে আমার মুখের উপর ছুঁড়ে মেরে বললেন,
” সারা ঘরে পানি ছিটিয়ে দোষ দিচ্ছিস আমাকে! গোসল শেষে চুল মুছিস কি করে হ্যাঁ? চুলের আগায় পানি থাকে কি করে? এক্ষুণি ভালোভাবে চুল মুছেনে।”

প্রথম পর্যায়ে প্রোজ্জ্বল ভাইকে কিছু বলতে উদ্যত হলেও পরবর্তীতে বুঝতে বাকি রইলো না, উনার মেঝেতে পড়ে যাওয়ার পিছনে হাতটা আমারই আছে। যদিও সেটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে। তবে দোষটা আমার বলে কথা না বাড়িয়ে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের আদেশ মানলাম। পিছন হতে ভেজা চুল পাশে এনে মুছতে লাগলাম। চুলগুলো ভালোভাবে মুছে নিয়ে অতঃপর চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে ক্ষান্ত হলাম। দৃষ্টি তুলে দেখলাম প্রোজ্জ্বল ভাই এখনও আমার রুমে দাঁড়িয়ে আছেন। উনাকে এখনও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
” এখনও দাঁড়িয়ে আছেন যে? আর কিছু বলবেন?”

হঠাৎ চমকে গিয়েছেন এমন ভঙ্গিতে প্রোজ্জ্বল ভাই বললেন,
” না না। আর কিছু বলবো না। তবে এখন থেকে ভালোভাবে চুল মুছে ঘর থেকে বেরুবি। তোর কারণে যে মানুষ রাস্তাঘাটে পড়ে কখন অক্কা পাবে আল্লাহ জানে। ”
এই বলেই উনি চলে গেলেন। আর আমি দায়সারাভাবে চেয়ারে বসে পড়লাম।

—–

প্রোজ্জ্বল ভাই কানাডিয়ান সেই ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার এক সপ্তাহ অব্দি আর বিয়ে নিয়ে কথা হয়নি। কিন্তু গতকাল হতে মামি ও নানু পুনরায় ‘বিয়ে বিয়ে’ জপ ধরেছে। আজ সন্ধ্যায় ছেলের বিষয়ে আমার সাথে কথা বলতে চাইছিলো দুজনে। কিন্তু এ বিষয়ে কথা বলার পূর্বেই বাড়ি হতে পালিয়ে অভ্র ভাইদের বাড়িতে চলে এলাম। আজ অনামিকাকে পড়ানোর কথা না হলেও জোর করে ওকে পড়ালাম। এ নিয়ে অনামিকা অবশ্য আমার সাথে কিছুক্ষণ ঠান্ডা যু’দ্ধও চালালো। পরে বেশ অনুরোধ করার পর ও পড়তে রাজি হলো। তবে সারাটা সময় এক প্রকার খিটখিটে মেজাজ নিয়ে পড়লো ও।

অনামিকার পড়া শেষ হতে না হতেই ওর রুমে এসে হাজির হলেন অভ্র ভাই। চা খাওয়ার বাহানায় আমাকে উঠিয়ে নিয়ে অনামিকাকে পড়া হতে ছুটি দিলেন উনি। অগত্যা অনামিকার মুখ দেখে অভ্র ভাইয়ের সাথে আমাকে উঠে যেতে হলো। উনি অনামিকার রুম হতে আমাকে বের করিয়ে রান্নাঘর হতে দু মগ কফি নিয়ে এলেন। এক মগ আমার হাতে দিয়ে অপর মগ নিজের হাতে নিলেন। বললেন,
” চলো, বাড়ির পিছনে গিয়ে বসি। ”

বলে অভ্র ভাই বেরিয়ে গেলেন। উনার পিছু পিছু আমিও চলে এলাম। গিয়ে বসলাম সেই বেঞ্চিতে। শেষবার এখানে বসেছিলাম পরীক্ষার আগে।

বেঞ্চিতে বসেই আমার দৃষ্টি চলে গেলে ভরা আকাশের চাঁদটা দেখে। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, শেষবার যেদিন এখানে বসেছিলাম সেদিনের চাঁদ আর আজকের চাঁদ হুবুহু একই স্থানে অবস্থান করছে। এ বিষয়ে অভ্র ভাইকে বলতেই উনি বললেন,
” একই জায়গায় তো আছেই। সাথে যে একদম হুবুহু একই রকম চাঁদ গঠন ও রঙের চাঁদ উঠেছে তা কি খেয়াল করেছো?”

উনার কথা শুনে আমি বিস্মিত চাহনিতে চাঁদের দিকে চেয়ে রইলাম। সত্যিই আজও চাঁদটা একই রকম দেখা যাচ্ছে! আমি চাঁদের এ সমাপতন দেখে বিস্ময়ে কিয়ৎক্ষণ হা হয়ে রইলাম। অতঃপর কফির মগে এক চুমুক বসিয়ে অভ্র ভাইকে বললাম,
” কি এক কোইন্সিডেন্স! সেদিনকার মতো আজ সবকিছুর মিল হলেও চা আর কফির পার্থক্য হয়ে গেলো। ”
এই বলে মৃদু হাসলাম আমি। অভ্র ভাইও আমার সাথে হাসলেন।
কিয়ৎক্ষণ বাদে অভ্র ভাই বললেন,
” পার্থক্য শুধু কফি আর চায়ে না। আরেকটি বিষয়েও পার্থক্য রয়েছে। ”

আমি কফিতে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” কি বিষয়ে?”

অভ্র ভাই তৎক্ষনাৎ আমার প্রশ্নের জবাব দিলেন না। বরং কফির মগ বেঞ্চিতে রেখে নত মস্তকে জোরে জোরে কয়েকটি নিঃশ্বাস ছাড়লেন। অতঃপর মাথা তুলে আমার দিকে চেয়ে বললেন,
” সেদিন তোমাকে আমার স্বপ্নচারিণী সম্পর্কে বলেছিলাম। আর আজ আমি আমার স্বপ্নচারিণীকে আমার মনের কথা বলবো।”

অভ্র ভাইয়ের এ কথায় বিস্ময়ে আমার চোখজোড়া বৃহদাকার ধারণ করলো। আমি বিস্মিত কণ্ঠে বললাম,
” সত্যিই!”

” হ্যাঁ। তুমি বারবার জানতে চেয়েছিলে না, আমার স্বপ্নচারিণী কে, নাম কি তার, সে কি করে, কোথায় থাকে?”
অভ্র ভাইয়ের কণ্ঠে কেমন এক বিচলিত ভাব প্রকাশ পেলো। উনার এরূপ কথার ভঙ্গিতে আমি কিঞ্চিৎ দ্বিধাবোধ করলাম। কোনো রকমে জবাব দিলাম,
” হ্যাঁ, জানতে চেয়েছিলাম।”

আমার কথার প্রত্যুত্তরে অভ্র ভাই তৎক্ষনাৎ বললেন,
” আমার স্বপ্নচারিণী এ মুহূর্তে আমার সামনে বসে আছে। চন্দ্রিমা? আমার স্বপ্নচারিণী অন্য কেউ নয়। বরং তুমিই।”
®সারা মেহেক

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here