#বিরহ_শ্রাবণ(দ্বিতীয় খণ্ড)
#পর্ব_২৬
#লেখিকা_সারা মেহেক
আকস্মিক ঝড়ের ন্যায় অকস্মাৎ অভ্র ভাইয়ের পুনরায় আগমন ঘটলো। উনাকে এমন নিস্তেজ ও বিধ্বস্ত দেখে আমি কিছু সময়ের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। এ মুহূর্তে আমার প্রতিক্রিয়া ঠিক কেমন হওয়া উচিত তা যেনো আমি নিজেই উপলব্ধি করতে পারলাম না। ছাদ হতে দেখলাম, অভ্র ভাই নিজের বাড়ির সামনে রিকশা হতে নামলেন। এরপর ধীর পায়ে খোঁ’ড়া’তে খোঁ’ড়া’তে হেঁটে গেট খুলে বাড়িতে প্রবেশ করলো। উনাদের বাড়ির গেট এ সময়ে খোলাই থাকে। এজন্য অভ্র ভাই কাউকে না জানিয়েই বাড়িতে ঢুকে পড়লেন। বাড়িতে প্রবেশ করেই উনি যখন খোদেজা মামিকে ডাকলেন, তখন আমি পুরোপুরি সম্বিত ফিরে পেলাম৷ অনুভব করলাম আমার অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের হার। অনুভব করলাম আমার হিম হয়ে যাওয়া হাত-পায়ের নড়নচড়ন। আপাত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্কের বন্ধ হয়ে যাওয়া কার্যক্রম যেনো অকস্মাৎ চালু হলো। সে মুহূর্তে আমার মন মস্তিষ্কের যুগল কার্যকলাপ আমাকে জানান দিলো, এক্ষুণিই দৌড়ে অভ্র ভাইয়ের কাছে যেনো ছুটে যাই আমি। এক্ষুণিই উনাকে জিজ্ঞেস করি, উনি এতোদিন কোথায় ছিলেন, কিভাবে ছিলেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্ন তা হলো, উনি কেনো এমনটা করলেন আমার সাথে। আপন মনে এসব প্রশ্ন করতে করতে আমার চোখজোড়া ভিজে এলো। আমার অলক্ষ্যে ও অনিচ্ছায় অভ্র ভাই নামক এক পরপুরুষের জন্য দু নয়ন বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
আমি কিছুক্ষণ ছাদেই দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলাম, অভ্র ভাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে বলে। ঘনঘন ছোট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে অতঃপর ছাদ হতে নেমে এলাম। একেবারে নিচের সিঁড়ি নামতে গিয়ে অকস্মাৎ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের মুখোমুখি হলাম। উনি আমার দিকে সেকেন্ড কয়েক তাকিয়ে চট করে জিজ্ঞেস করলেন,
” কাঁদছিলি চন্দ্রিমা?”
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের প্রশ্নে আমি খানিক বিস্মিত হলাম। কারণ এ মুহূর্তে আমি কাঁদছি না এবং কিছুক্ষণ পূর্বেও যে খুব বেশি কেঁদেছি তা নয়। তাহলে প্রোজ্জ্বল ভাই এত সহজে বুঝলো কি করে?
আমি উনার প্রশ্নের পিঠেই চট করে জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি জানলেন কি করে?”
প্রোজ্জ্বল ভাই আমায় উল্টো জিজ্ঞেস করলেন,
” তোর চাহনি আর চেহারার হাবভাবই বলে দিচ্ছে তুই কান্না করেছিস। আর এতোটা বছরে তোকে এটুকু তো চিনতে পেরেছি যে তোকে দেখেই বলতে পারবো তোর কি অবস্থা এখন।
যাই হোক, কেনো কাঁদছিলি সেটা বল। ”
আমার কণ্ঠস্বর এবার বেশ নরম হয়ে এলো এবং সাথে আবেগে পূর্ণও হলো। আমি কিছুটা থেমে থেমে বললাম,
” আমি অভ্র ভাইকে দেখেছি। উনি ফিরে এসেছেন প্রোজ্জ্বল ভাই। ”
এই বলেই আমি অস্থির চিত্তে এক দীর্ঘ প্রশ্বাস টেনে নিলাম। সাথে লক্ষ্য করলাম প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের মুখশ্রীর পরিবর্তিত রূপ। প্রথমে বেশ আশ্চর্যান্বিত ভাব নিয়ে থাকলেও ক্ষণেই তা পরিবর্তিত হয়ে উৎফুল্ল ও হাস্যজ্জ্বল মুখভঙ্গিতে পরিবর্তন হলো। উনি আনন্দিত কণ্ঠে বললেন,
” তো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? দ্রুত চল। কতোদিন পর দেখবো ওকে। বেচারার কি অবস্থা হয়েছে কে জানে। ”
এই বলে প্রোজ্জ্বল ভাই আমার হাত ধরে এক প্রকার টানতে টানতে চারটা সিঁড়ি পার হলেন। উনার হাবভাবে মনে হচ্ছে উনি ভীষণ খুশি হয়েছেন অভ্র ভাইয়ের আসার কথা শুনে। কিন্তু উনার এ খুশির সময়সীমা কতটুকু তা জানি না। কেননা উনার এ খুশির সমাপ্তি তখনই ঘটবে যখন অভ্র ভাই আমাদের বিয়ের কথা জানতে পারবেন। নাকি অভ্র ভাই আগে থেকেই আমাদের বিয়ের ব্যাপারে জানেন। কে জানে।
প্রোজ্জ্বল ভাই ও আমি অভ্র ভাইদের বাড়িতে প্রবেশ করলাম। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখলাম প্রতিবেশী বেশ ক’জন মানুষ উনাদের বাড়িতে এসেছেন। হয়তো অভ্র ভাইয়ের আসার কথা তাদের কানে পৌঁছিয়েছে বলে তারা দেখতে এসেছে।
আমি আর প্রোজ্জ্বল ভাই তাদের পাশ কাটিয়ে অভ্র ভাইয়ের রুমে চলে এলাম। দেখলাম অভ্র ভাই ধীরেসুস্থে ডান হাত দিয়ে গ্লাস ধরে পানি খাচ্ছেন। মামি অভ্র ভাইয়ের পাশে বসে মুখে আঁচল গুঁজে কাঁদছেন। আর অনামিকা উনার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দুজনকে দেখেই অনামিকা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো,
” আরে প্রোজ্জ্বল ভাই, আসুন আসুন৷ চন্দ্রিমা আপু, তুমিও আসো। ”
অনামিকার কথায় মামি ও অভ্র ভাই আমাদের দিকে ফিরে তাকালেন। আমাদের দেখেই অভ্র ভাইয়ের চোখজোড়া খুশিতে চকচক করে উঠলো। প্রোজ্জ্বল ভাই দ্রুত গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন। ভীষণ আবেগী কণ্ঠে বললেন,
” দোস্ত? তোর এই অবস্থা হলো কি করে? তুই বিশ্বাস করবি না, এতোদিন পর তোকে দেখে আমার কি ভালো লাগছে।”
অভ্র ভাইও বললেন,
” আমারও খুব ভালো লাগছে। কতদিন পর সবাইকে দেখছি!”
এই বলে প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাই একে অপরকে ছেড়ে দাঁড়ালেন। এবার অভ্র ভাই আমার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
” তুমি কেমন আছো চন্দ্রিমা?”
অভ্র ভাইয়ের এমন সুস্থ স্বাভাবিক কথার বলার ধরণে বুঝলাম, উনি আমাদের বিয়ের সম্পর্কে এখনও কিছু জানেন না। তাই হয়তো এমন ব্যবহার করছেন! উনার প্রশ্নের জবাবে আমি মৃদু হাসার প্রচেষ্টা করে বললাম,
” আছি, এখন পর্যন্ত ভালোই। ”
অভ্র ভাই আর কথা বাড়ালেন না। বেশ কিছুক্ষণ
পুরো ঘরে নীরবতা বিরাজ করলো। সেই নীরবতাকে চিরে প্রোজ্জ্বল ভাই বেশ শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
” তোর এমন অবস্থা হলো কি করে অভ্র? এসব তোর চাচারা করেছে তাই না?”
অভ্র ভাই আবারো গ্লাস হতে পানি খেয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন,
” না। এতে চাচাদের কোনো হাত নেই। তুই আর আম্মা শুধু শুধু চাচাদের এর মাঝে টানলি কেনো বুঝলাম না। হ্যাঁ, জমিজমা নিয়ে উনাদের সাথে আমার একটু ঝামেলা চলছে। তাই বলে যে উনারা আমাকে কি”ড” ন্যা”প করাবেন তা তো না। ”
এই বলে উনি খোদেজা মামির দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” তুমি তো চাচাদের চিনো আম্মা। তাহলে শুধু শুধু উনাদের উপর এতো বড় আরোপ দিলে কি চিন্তা করে!”
খোদেজা মামি জবাব দিলেন না। খাটের এক কোনে চুপচাপ নত মস্তকে বসে রইলেন। অভ্র ভাই পুনরায় বললেন,
” প্রোজ্জ্বল তোর মনে আছে, ঐ যে চন্দ্রিমার পরীক্ষার কয়েক সপ্তাহ আগে এলাকার কয়েকটা গু”ণ্ডা একটা মেয়েকে ডি’স্টা”র্ব করছিলো বলে আমার সাথে মা”রা”মা’রি হয়। সাথে তুইও গিয়েছিলি। মনে আছে?”
প্রোজ্জ্বল ভাই কয়েক সেকেন্ডের জন্য চিন্তা করে বললেন,
” হ্যাঁ হ্যাঁ মনে এসেছে। ঐ যে রাস্তার উপর দুজন মিলে ব’খা”টেগুলোক মা’র’লাম ইচ্ছামতো। ”
” হ্যাঁ, ওরাই। এই ছেলেগুলো কাদের আন্ডারে জানিস?”
” না। ”
” এর আগে আমার সাথে হসপিটালে যাদের ঝামেলা হলো, তাদেরই দলের এই চ্যাং’ড়া”গুলো।”
প্রোজ্জ্বল ভাই খানিক বিস্মিত কণ্ঠে বললেন,
” বলিস কি! ঐ সবুজের দলের সব?”
” হ্যাঁ। আর আমাকে কি’ড” ন্যা’প করার পিছনে আর কারোর হাত নেই বরং সবুজ আর ওর দলের ছেলেপেলের হাতই ছিলো। ”
অভ্র ভাইয়ের এ কথা শোনার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। রুমে উপস্থিত প্রতিটি মানুষের মুখশ্রী বিস্ময়কর ভাবে ছেয়ে উঠলো। কারণ আমরা কখনো অনুমানও করতে পারিনি এলাকার কু”খ্যা”ত গু”ণ্ডা সবুজ মা’স্তা”ন এই কাজ করবে। প্রোজ্জ্বল ভাই তো চরম বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করে বসলো,
” কি বলিস এসব! ওরা তোকে কি’ ড’ ন্যা’প করবে কেনো! তোর সাথে ওদের শ’ত্রু”তা কিসের!”
অভ্র ভাই ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
” শ’ত্রু”তা কিসের মানে! ওদের সাথেই তো আমার সবচেয়ে বড় শ’ত্রু তা এখন। কারণ ওদের কাজে কথায় বাধা প্রদানকারী একমাত্র সুস্থ সবল মানুষ আমিই ছিলাম। যদিও তুইও ওদের টার্গেটে ছিলি। কিন্তু তোর চেয়ে আমার সাথে ওদের শ’ত্রু’তা বেশি ছিলো।
প্রথমত, কয়েক মাস আগের ঐ ঘটনা ওরা মনে পুষে রেখেছিলো। দ্বিতীয়ত সেদিন হসপিটালে ওদের অপমান, সময়মতো চিকিৎসা না দেওয়া ও ছোটখাটো মা’র’পি”ট ওরা হিসাবের খাতায় তুলে রেখেছিলো। আর তৃতীয়ত এবং আমার মনে হয়, আমার উপর প্র’তি’শো ‘ধ নেওয়ার সবচেয়ে বড় আরেকটা কারণ আমি বিয়ের তিনদিন আগে গিয়ে ওদের সাথে আবারো মা”রা’মা’রি করে এসেছি। ”
অভ্র ভাইয়ের সাথে ঘটে যাওয়া প্রথম দুটো ঘটনা জানা হলেও তৃতীয় ঘটনা জানি না বিধায় চট করে জিজ্ঞেস করলাম,
” তৃতীয় কারণ কি? ঐ দিন আবার মা’রা’মা’রি করে এসেছেন কেনো?”
আমার প্রশ্নে অভ্র ভাই অনামিকার দিকে চাইলেন। অনামিকার দৃষ্টি তখন নত। কিন্তু এ নত দৃষ্টিও তখন বলছিলো, ও কাঁদছে। নীরবে অল্পবিস্তর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অনামিকার এভাবে কাঁদার কারণ তখনও আমার বুঝে এলো না।
অভ্র ভাই বললেন,
” এ কারণটা শুধুই আমার আর অনামিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। কারণ অনামিকা আমাকে নিষেধ করেছিলো। আমি ভেবেও ছিলাম কাউকে জানাবো না।
আসলে ঐ হা’ রা’ মির দলের এক ছেলে মানে ঐ দিন মা’র খাওয়া ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে প্রায়ই অনামিকাকে ডি’স্টা’র্ব করতো। অনামিকা এ বিষয়ে তখনও আমাকে কিছু জানায়নি। কিন্তু যেদিন ঐ ছেলে রাস্তায় অনামিকাকে খারাপ প্রস্তাব দিয়ে বসলো আর তুলে নিয়ে বিয়ে করার হু’ ম’ কি দিলো তখন বাসায় এসে আমাকে এসব জানায় ও। আর বলে এ ব্যাপারে যেনো কাউকে কিছু না জানাই। আমিও ভাবলাম কাউকে না জানিয়ে নিজ থেকেই সমস্যার সমাধান করবো। এজন্য বিয়ের তিনদিন আগে যাই ওদের সাথে কথা বলতে। এক কথায় হু’ম’কি ধা’ম’কি দিতে যাই আর কি। এ কারণেই ওদের সাথে তখন মা’রা’ত্মক কথা কা’টা’ কা’টি হয়। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে মা’রা’মা’রিও হয়। পরে অবশ্য ওদের লোকেরাই মা-রা-মা-রি থামিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দেয়। তখনও বুঝিনি ওরা এতো সহজে আমাকে ছেড়ে দিলো কেনো। বুঝলাম আমাদের বিয়ের দিন এসে। ঐ সবুজ শা’লা আমাকে কল করে বলে অনামিকার কি ছবি নাকি ভিডিও আছে ওদের কাছে। এটা শুনে আমি প্রচণ্ড ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তাই অনামিকাকে কিছু না জানিয়েই তখনই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ি। পরে ওদের আস্তানায় দেখা করলে ওখানেই ওরা আমাকে ক্লো’রো’ফর্ম শুকিয়ে অজ্ঞান করে কি-ড-ন্যা-প করে।”
এই বলে অভ্র ভাই প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়লেন। উনার মুখ থেকে পুরো ঘটনা বিবৃতি শুনে অন্যরা কেমন আশ্চর্য হলো জানি না, তবে আমি ভীষণ আশ্চর্য হয়েছি। কখনো কল্পনাও করিনি অভ্র ভাইয়ের গায়েব হওয়ার পিছনে এ কারণও লুকিয়ে থাকবে।
অভ্র ভাই অনেকটা বিড়বিড় করেই বললেন,
” ঐ সবুজ শা-লার আমাদের সাথেই কেনে এতো শ’ত্রু’তা মাথায় আসে না। হা-রা-মিটা আমার জীবন একদম শেষ করে দিলো। ”
প্রোজ্জ্বল ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
” ওদের কাছে কি আসলেই অনামিকার ছবি ছিলো?”
” আরে না। আমাকে কি-ড-ন্যা-প করার জন্য এসব ওদের ফাঁ’দ ছিলো। আর একজন ভাই হিসেবে আমি ভালোমতোই ওদের ফাঁ’দে পা দিয়েছিলাম। ”
” আচ্ছা, আমরা এতোদিন তোকে খুঁজে পাইনি কেনো? মানে পুলিশ দিয়ে খুঁজিয়েও পাইনি তোকে। ওরা তোকে কোথায় রেখেছিলো?”
” প্রথম দু দিন ওদের আস্তানায় রেখেছিলো। এরপর আমাকে সবার আড়াল করে মানিকগঞ্জ নিয়ে গিয়েছিলো।”
” মানিকগঞ্জ কেনো!”
” তা জানি না। তবে এখানে রেখে ওরা যেমন চুপচাপ ছিলো, মানিকগঞ্জে গিয়ে ওরা ঠিক ততোটাই হিংস্র হয়ে পড়ে। কতভাবে যে আমাকে মে’রে’ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মাঝে মাঝেই আমাকে দুদিন না খাইয়ে রাখতো। শুধু একবেলা পানি ছাড়া কিছুই দিতো না। আর ইচ্ছামতো মার তো আছেই। ”
” তোর এই হাত পায়ের এমন অবস্থা ওরা করেছে?”
” হ্যাঁ। প্রচুর মেরেছে ওরা। মানে যে যেমন পেরেছে, মে’রে’ছে। যার যত রকমের প্রতিশোধ আছে, তা নিয়েছে আমার উপর। শুধু জা’নে মে’রে ফেলতে চায়নি ওরা। ”
” ওরা কি তোকে ছেড়ে দিয়েছিলো?”
” আরে না। এতো সহজেই ছেড়ে দিবে ওরা! আমার অবস্থা প্রায় মৃত করে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু এর আগেই আমি কোনোরকমে জানে বেঁচে পালিয়ে আসি। ”
” ওরা দেখেনি তোকে?”
” যতক্ষণে আমি পালিয়ে বেরিয়েছে ততক্ষণে হয়তো ওরা টের পায়নি। টের পেলে তো আর বেরিয়ে আসতে পারতাম না৷ ”
” তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। তবে মানিকগঞ্জ চিনলি কি করে? আর মানিকগঞ্জ থেকে এখানে আসলিই বা কি করে। ”
” মানিকগঞ্জে ওদের খ’প্প”র থেকে বেরিয়ে স্থানীয় কিছু লোকের সাহায্যে হসপিটালে পৌঁছাই। ওখানে ব্যান্ডেজ করিয়েই একটা এম্বুল্যান্সের মাধ্যমে আমাদের হসপিটালে পৌঁছাই। ”
” কখন পৌঁছালি? দেখলাম না তো তোকে। ”
” দুপুরের দিকে পৌঁছিয়েছি। ”
” একবার ফোনও দিলি না! আর এতো কিছু হয়ে গেলো একবার ফোন করারও প্রয়োজন বোধ করলি না আমাকে?”
” আমার ফোন ছিলো না দোস্ত। আর তোর নাম্বারটাও মনে নেই। এদিকে আম্মার নাম্বার মনে ছিলো। কিন্তু আম্মাকে কল যে কল করবো সে উপায়ও নেই। কারণ আমার এই কি’ড’ন্যা’প হওয়ার কথা আম্মা জানতে পারলে টেনশনেই আধমরা হয়ে যাবে। আর তুই তো জানিসই আম্মার ব্লাড প্রেশার কমে গেলে কি খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। সবদিকে ভেবেই কল দেইনি। ভাবলাম, আমাকে সরাসরি দেখলে তাও আম্মা কিছুটা শান্ত হবে। ”
এই বলে অভ্র ভাই প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়লেন। আর এদিকে প্রোজ্জ্বল ভাই মাথা নিচু করে কিছু ভাবতে লাগলেন। এরপর কেউ আর কোনো কথা বললো না। তবে খোদেজা মামি ও অনামিকা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
আর আমি পুরো ঘটনা শুনে একপ্রকার হতভম্ব হয়ে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ সেদিনের ঐ ম্যাসেজের কথা মনে আসায় এক পর্যায়ে অভ্র ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম,
” তাহলে ঐ ম্যাসেজটা কে পাঠালো আমাকে?”
অভ্র ভাই পাল্টা প্রশ্নের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করলেন,
” ঐ বিয়ে ভাঙা নিয়ে যে ম্যাসেজ সেটা?”
” হুম। ”
” ওটা আমি পাঠাইনি। ঐ হা-রা-ম-জা-দাগুলোর একটা পাঠিয়েছিলো। আমি আন্দাজও করতে পারিনি, এতো বড় মজা নিবে ওরা আমার সাথে। তোমাকে ঐ ম্যাসেজ পাঠিয়ে আমার সামনেই সে কি হাসাহাসি করছিলো! যেনো আমার উপর আরেকদফা প্র’তি”শো’ধ নিতে পেরে খুব খুশি ওরা। কারণ আমি ওদের হু-ম-কি দিয়ে এসেছিলাম, অনামিকার আশেপাশেও যেনো না ঘুরে। আর বিয়ের কথা যেনো স্বপ্নতেও না আনে৷ ওটার রি’ভে’ঞ্জ যে ঐ হা’রা’ম’জা’দা এভাবে আমার বিয়ে ভেঙে নিবে বুঝতেই পারিনি।”
এই বলে অভ্র ভাই আপন মনে অল্পবিস্তর হেসে উঠলেন। আরোও বললেন,
“ঐ ম্যাসেজের জন্য সরি চন্দ্রিমা। বুঝতেই পারছো ওটা আমি পাঠাইনি। ঐ শা-লা-রা আচ্ছামতো একটা মজা নিলো। একেবারে প্র্যা’ঙ্ক যাকে বলে। তবে প্র-তি-শো-ধের নেশায়ই ওরা এমন করেছে। হ্যাঁ, জানি ঐ প্র্যা’ঙ্ক বিয়ের দিনে খুব বাজে একটা ইফেক্ট ফেলেছিলো। কিন্তু যাই হোক, আমি এ বিষয়ে সবার সাথে কথা বলবো। এবার আমি তোমাকে এ বাড়িতে বউ করে নিয়ে আসবো। দেখে নিও৷ ”
এই বলে উনি আবারো সেই হাসি দিলেন। এ হাসি যেনো স্বস্তি, আশ্বস্ত ও প্রশান্তির হাসি৷ কিন্তু উনি তো জানেন না, এ হাসির স্থায়িত্ব খুব বেশি সময়ের না।
এদিকে অভ্র ভাইয়ের এ বিবৃতি শোনার পর আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি স্তব্ধ চাহনিতে উনার দিকে চেয়ে রইলাম। কি থেকে কি হয়ে গেলো! এলাকার মা-স্তা-নের সাথে এক শ-ত্রু-তা আমাদের জীবনের মোড় কোথায় ঘুরিয়ে দিলো!
আমি ফ্যালফ্যাল চাহনিতে একবার প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনার অবস্থাও বোধহয় অনেকটা আমার মতোই।
বিনা আমন্ত্রণে আমাদের এ কাঁটা ঘা-এ নুন ছিটানোর কাজ করলেন প্রতিবেশি এক মামি। অভ্র ভাইয়ের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ টেনে টেনে বললেন,
” আর মাফ চেয়ে কি হবে অভ্র। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। তোমার বন্ধু আর তোমার না হওয়া বউ তো বিয়ে করে ফেলছে। তোমার পিঠে কত বড় একটা ছুঁ-রি চালালো, বুঝতেছো বাবা?”
®সারা মেহেক
#চলবে….