#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_৪১
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________
১১৪.
ভূমির যখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা তখন সাদা পাঞ্জাবি পরে উপস্থিত হয় একটি ছেলে। গায়ের রং উজ্জ্বল ফরসা। গালে ঘনকালো চাপদাঁড়ি। এই ছেলেটা নিঃসন্দেহে রাসেল নয়। সুমি পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,’আপু, ইনি আমার হাজবেন্ড আরিফ।
আর আরিফ, তোমায় বলেছিলাম না এক আপুর লেখা আমার অনেক ভালো লাগে? এই আপুটাই সে।’
আরিফ ছেলেটি সুন্দর করে হেসে বলল,’আসসালামু আলাইকুম আপু। ভালো আছেন?’
ভূমির মনে হচ্ছিল এখনই সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। তার সাথে এসব কী হচ্ছে? এটা কি তার মনের ভুল? কিন্তু এটা যদি সুমি না হয় তাহলে মেয়েটার সাথে নাম মিলবে কেন? তারচেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে সুমি ভূমির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যক্তি। এই মুখ চিনতে তো ভূমির একদমই ভুল হওয়ার কথা নয়। আর এটা যদি সত্যিই সেই সুমি হয়, তাহলে তার হাজবেন্ড রাসেল না হয়ে এই ছেলে কী করে হয়?
ভূমিকে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাশ থেকে মৃদু ধাক্কা দেয় শোহেব। ভাবনায় ছেদ পড়ে ভূমির। সে যথাসম্ভব মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,’আলহামদুলিল্লাহ্ ভাইয়া। ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্ আপু। সুমির মুখে আপনার কথা বেশ কয়েকবার শুনেছি।’
‘বেশ কয়েকবার শুনেছি’ কথাটিতে খটকা লাগে ভূমির। আরিফের সঙ্গে যদি সুমির অনেক দিনের সম্পর্ক থাকত তাহলে নিশ্চয়ই বলত ‘অনেকবার শুনেছি’। তার মানে! ভূমি বিষয়টা ক্লিয়ার হতে মিষ্টি করে হেসে বলে,’লাভ ম্যারেজ নাকি?’
উত্তরে সুমি হেসে বলে,’না, আপু। আরিফ আমার কাজিনের বন্ধু। আমাকে আগে থেকেই পছন্দ করত।’
‘আপনি করতেন না?’
‘আগে তো জানতামই না। দেশে ফেরার পর বাড়িতে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। এরপর আরকি! কিছুদিন প্রেম করলাম তারপর বিয়ে।’
‘আপনি বাইরে থাকতেন নাকি?’
‘হ্যাঁ, আমেরিকা ছিলাম।’
ভূমির সন্দেহ সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায়। এটা তার চেনা সুমি-ই। তবে রাসেলের জায়গায় আরিফের থাকার বিষয়টিই সে কোনোভাবে বুঝতে পারছে না। সুমিকেও সে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করার মতো প্রয়োজন মনে করে না। ওরা আরো কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে দাঁড়িয়ে। তারপর ছবি তুলে সুমি এবং আরিফ সেখান থেকে বিদায় নেয়।
সুমি চলে যাওয়ার পর শোহেব জিজ্ঞেস করে,’আপনাকে এমন লাগছে কেন হঠাৎ?’
ভূমি গম্ভীর হয়ে বলে, ‘মেয়েটা আমার এক্স হাজবেন্ডের গার্লফ্রেন্ড ছিল।’
‘ওহ আচ্ছা।’ এইটুকু শোহেব অন্যমনস্কভাবেই বলল। তৎক্ষণাৎ যখন কথাটা মস্তিষ্ক ক্যাচ ধরল তখন বিস্মিত হয়ে বলল,’কিহ! মানে রাসেলের গার্লফ্রেন্ড! তো এই ছেলের নাম যে আরিফ বলল?’
‘এই ছেলে রাসেল নয়।’
‘তাহলে! এটা অন্য ছেলে? মানে রাসেলের সাথে তার বিয়ে হয়নি। উফ! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘আমিও না। কোথাও তো একটা গণ্ডগোল আছেই।’
‘কিন্তু আপনি এই মেয়ের সাথে এত স্বাভাবিক ব্যবহার করলেন কীভাবে? আমি হলে তো এতক্ষণে চুলাচুলি করতাম।’
‘মজা করছেন?’
‘না, সত্যি। হাজার হোক, ওর জন্যই তো সংসার নষ্ট হয়েছে।’
‘সুমির চেয়ে রাসেলের দোষ বেশি। রাসেলকেই যেখানে ছেড়ে দিয়েছি, সেখানে ওকে আর কী বলব?’
‘তাও ঠিক। তবে মেয়েটা এত স্বাভাবিক কেন? আবার আপনার ফ্যান! চেনে না?’
‘সম্ভবত না।’
________
১১৫.
জারিফের জন্য বিরিয়ানি রান্না করছিল প্রীতি। তখন অনবরতভাবে বাসার কলিংবেলটা বেজে ওঠে। সে গিয়ে দরজা খুলে দেখতে পায় একটি ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে জিজ্ঞেস করে,’কাকে চাই?’
‘বাড়িতে জারিফ বা চাচা-চাচি কেউ আছে?’
‘আছে। কিন্তু আপনি কে?’
‘রাসেল।’
নাম শুনে প্রীতি চিনতে পারে কোন রাসেল। এর আগে সে অনেকবার ভূমি এবং জারিফের কাছে রাসেলের কথা শুনেছে। কিন্তু কখনো ছবি দেখেনি। সে সরে গিয়ে রাসেলকে ভেতরে যেতে বলে। ড্রয়িংরুমে বসতে বলে জারিফ আর চাচিকে ডাকতে যায়। রাসেলের নাম শুনে রাগে ফেটে পড়ে জারিফ। সে হনহন করে বের হয় ঘর থেকে। চেঁচিয়ে বলে,’এখানে কী তোর?’
রাসেল বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। নরম কণ্ঠে বলে,’এভাবে কথা বলছ কেন?’
‘এরচেয়ে খারাপ কোনো ব্যবহার থাকলে সেটাই তোর সাথে করতাম। তুই কোন সাহসে এই বাড়িতে এসেছিস?’
জারিফের চেঁচামেচি শুনে চাচি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। প্রথমে রাসেলকে দেখে অবাক হয়ে যান। জিজ্ঞেস করেন,’তুমি এখানে কেন?’
রাসেল এবার তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,’ভালো আছেন চাচি?’
জারিফ রেগে বলে,’নাটক করতে এসেছিস নাকি তুই এখানে? বের হ বাড়ি থেকে।’
জারিফ এবার এক প্রকার মারতেই এগিয়ে যায়। প্রীতি এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। ধস্তাধস্তি করে ঘরের ভেতর নিয়ে যায়। তখনও জারিফ বলে চলছিল,’মা ওকে যেতে বলো বাড়ি থেকে। নয়তো আমি কিন্তু ওকে খুন করে ফেলব।’
প্রীতি ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। চাচি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন,’আমরা কেমন আছি এটা জানার জন্য নিশ্চয়ই আসোনি? কেন এসেছ বলো?’
‘চাচি ভূমির ঠিকানাটা আমায় দিন প্লিজ!’
‘ভূমির ঠিকানা দিয়ে কী করবে?’
‘ওর সাথে আমার কথা আছে। প্লিজ! ওর ঠিকানাটা দিন চাচি।’
‘অসম্ভব! এতকিছুর পর ওর সাথে তোমার আর কী কথা থাকতে পারে? হুট করে ডিভোর্স হয়ে গেল আমরা জানলামও না কী হয়েছে।’
‘আমি পরে আপনাদের সব বলব। আগে ভূমির সাথে কথা বলতে হবে আমার।’
‘কোনো দরকার নেই। ভূমি তোমায় ছাড়া ভালোই আছে। অযথা ওর সুখ নষ্ট কোরো না।’
‘আমি কথা দিচ্ছি, কিচ্ছু করব না আমি। শুধু কিছু কথা বলব। প্লিজ চাচি!’
‘আমি না বলে দিয়েছি। তুমি এখন আসতে পারো।’
‘আমি ওর ঠিকানা না নিয়ে কোথাও যাব না।’
‘আশ্চর্য! এসব কেমন ব্যবহার? দারোয়ান ডাকতে হবে?’
‘যা ইচ্ছে করেন। তবুও আমি যাব না।’
‘দেখো কোনো রকম সিনক্রিয়েট কোরো না। জারিফ কিন্তু এমনিতেই প্রচুর রেগে আছে।’
‘চাচি, আপনি ওর ঠিকানাটা দিন। আমি চুপচাপ চলে যাব।’
রাসেল নাছোড়বান্দার মতো জোরাজুরি করতে থাকে। এক পর্যায়ে চাচি বলেন,’ঠিক আছে দিচ্ছি। কিন্তু তুমি কোনোভাবে যদি ভূমিকে বিরক্ত করো তাহলে কিন্তু ফলাফল ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।’
‘থ্যাঙ্কিউ চাচি।’
রাসেল চাচির থেকে ঠিকানা নিয়ে তৎক্ষণাৎ সেই বাড়িতে রওনা হয়।
__________
১১৬.
সূচনাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছেন মা। ব্যথায় মেয়েটা ঠিকমতো ঘুমাতেও পারে না। প্রতিদিন মা ওকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তিনি ঘুমন্ত সূচনার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। মাঝে মাঝে তিনি ভাবেন, কোন পূন্যের জন্য আল্লাহ্ তাকে চাঁদের মতো সুন্দর ফুটফুটে এমন একটা মেয়ে দিয়েছেন। সূচনার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। তিনিও মুগ্ধ হয়ে তার রাজকন্যার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। মাথায় চুল গুড়িগুড়ি, মুখ শুষ্ক, ঠোঁট ফেঁটে গেছে। তবুও মেয়েটার সৌন্দর্য কমেনি এক ফোটাও। এতকিছুর মাঝেও কমতি শুধু একটাই। আল্লাহ্ যে কেন কথা বলার ক্ষমতাটা দিলেন না! তিনি পরম আদরে সূচনার কপালে চুমু খান। তখন কলিংবেলের শব্দের সূচনা কিছুটা নড়েচড়ে ওঠে। তিনি ওর পিঠে আস্তে আস্তে চাপড় দেন। যেমনটা ছোট্ট থাকতে ঘুম পাড়াতেন। সূচনা স্বাভাবিক হতেই সে এসে দরজা খুলে।
রাসেল অপরাধীর মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মা ভাষাহীন হয়ে শুধু তাকিয়ে রয়েছেন এক পলকে। বোধশক্তিও লোপ পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
‘মা ভালো আছেন?’ জিজ্ঞেস করে রাসেল।
মায়ের রক্তচক্ষু যেন এবার ধ্বংস করে দেবে রাসেলকে। সে রাগে গমগম করে উঠে বলেন,’কাকে মা বলতেছ তুমি? খবরদার তুমি আমারে মা ডাকবা না। কোন মুখে তুমি এই বাড়িতে আইছ?’
‘মাফ চাওয়ার মতো মুখও আমার নেই মা। তবুও বলব, দয়া করে আমায় ক্ষমা করে দিন।’
‘ক্ষমা? পারলে তো তোমারে আমি খুনই কইরা ফেলি। আমার মাইয়ার জীবনটা নষ্ট কইরা এখন আসছ মাফ চাইতে! এখনই তুমি বাড়ি থেকে বাইর হইয়া যাইবা।’
‘ভূমিকে একটু ডেকে দিন। আমি ওর সাথে কথা বলেই চলে যাব।’ এই বলে রাসেল মায়ের পা জড়িয়ে ধরে। কথা কাটাকাটিতে ওপরের এবং নিচের ফ্ল্যাটের মানুষও দেখতে আসে কী হয়েছে। অগত্যা রাসেলকে ভেতরেই আনতে হয়।
মা চাপাস্বরে বলেন,’তুমি চইলা যাও। আমার মাইয়াটারে একটু শান্তিতে থাকতে দাও।’
‘আমি ওর সাথে কথা বলেই চলে যাব। একটু ডেকে দিন মা!’
‘ভূমি বাসায় নাই।’
‘আমি অপেক্ষা করব।’
রাগে, বিরক্তিতে মায়ের এবার সত্যি সত্যিই ইচ্ছে করছে রাসেলকে খুন করে ফেলতে। তিনি অজস্র কথা শুনাতে থাকে এবং অপমান করে। কিন্তু এসবের কিছুই রাসেলের গায়ে লাগছে না। সে যা করেছে, সেসবের কাছে তো এই অপমান কিছুই না। তবে সে যে, ভূমির সাথে দেখা না করে যাবে না এটা স্পষ্ট।
ভূমি আসে মিনিট দশেক পরেই। সবাইকে ভীষণ ক্লান্ত লাগছিল। কিন্তু ড্রয়িংরুমে যখন রাসেলকে দেখতে পায় তখন সকলের ক্লান্তি কর্পূরের মতো উবে যায়। প্রচণ্ড রকম ধাক্কা খায় ভূমি। সে দিশেহারা হয়ে পড়ে। ভূমিকে দেখতে পেয়ে রাসেল উঠে আসে। কাছে আসতে গেলে ভূমি দু’পা পিছিয়ে যায়। রাসেল কান্নায় ভেঙে পড়ে। হাঁটু ভাঁজ করে ফ্লোরে বসে দু’হাত জড়ো করে বলে,’আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি ভূমি। এবারের মতো আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ!’
ভূমি তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,’এই কীটকে বাড়িতে কেন ঢুকতে দিয়েছ? একে বিদায় করো বাড়ি থেকে।’
কথা শেষ করে সে রুমে যাওয়া ধরলে রাসেল পথ আটকে দাঁড়ায়। কান্না করে বলে,’আমার কথা শোনো ভূমি।’
ভূমি এতক্ষণ শান্ত থাকার চেষ্টা করলেও এবার আর পারে না। চেঁচিয়ে বলে উঠে,’কী শুনব আমি? কী শোনার আছে আর আমার?’
‘আমি তো ভুল বুঝতে পেরেছি ভূমি।’
‘তো আমি কী করব?’
‘আমায় ক্ষমা করে একটা সুযোগ দাও। আমি বুঝতে পেরেছি, আসলে তুমি নও বরং সুমিই আমার মোহ ছিল। ও আমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ওকে ভালোবেসে, তোমায় ছেড়ে আমি কত বড়ো ভুল করেছি!’
‘সুমি ছেড়ে দিয়েছে তোমায়?’
রাসেল মাথা নত করে চুপ করে থাকে। ভূমির চোখের কোণে পানি চিকচিক করলেও সে কাঁদে না। কষ্টে হেসে ফেলে বলে,’ওহ আচ্ছা! সুমি চলে গিয়েছে বলেই তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ? তার মানে হলো, সুমি যদি তোমায় ছেড়ে না যেত; তোমাদের সম্পর্ক যদি ঠিক থাকত তাহলে তুমি আর তোমার ভুলটা বুঝতে পারতে না। তুমি নিজের জায়গায় সঠিক থাকতে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, সুমি তোমায় ছেড়েছে বলেই তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছ। কেন? আমাকে তোমার অপশন মনে হয়?’
‘একটাবার সুযোগ দিয়ে দেখো তুমি।’
‘ভূমির এতটা খারাপ সময় এখনো আসেনি রাসেল। তুমি প্লিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও। তোমার মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না আমার।’
‘তুমি মিথ্যে বলছ। আমি জানি ভূমি, তুমি এখনো আমায় ভালোবাসো।’
ভূমি তাচ্ছিল্য করে হাসে। রাসেলের চোখে চোখ রেখে বলে,’শোনো একটা কথা বলি, কিছু মানুষ থাকে যাদের ভালোবেসে ঘৃণা করা যায় না। আবার পূণরায় ভালোবাসাও যায় না। ভালোবাসলে মানুষটা যেমন মনের সর্বস্বজুড়ে থাকে তেমনই, ঘৃণা করলেও সে মনের সর্বস্বজুড়ে তিক্ত অনুভূতি নিয়ে থাকে। তাই এদেরকে ঘৃণাও করা যায় না। তুমিও আমার জীবনে সেই ব্যক্তি যাকে আমি ভালোবাসি না, ঘৃণাও করি না। কেননা তুমি আমার ঘৃণারও যোগ্য নও।’
রাসেল চুপ করে থাকে। ভূমি পূণরায় বলে,’কাজে বুঝতেই পারছ, যে ব্যক্তি আমার ঘৃণারই যোগ্য নয়; তাকে ভালোবাসার প্রসঙ্গ তো অনেক দূরের বিষয়। এখন তুমি প্লিজ এখান থেকে চলে যাও। একটু শান্তিতে বাঁচতে দাও আমায়।’
‘তুমি ক্ষমা না করলে আমি কোথাও যাব না।’
‘অপমানও গায়ে লাগে না? এতটাই নির্লজ্জ হয়ে গেছ? চলে যাও বলছি।’
‘যাব না।’
‘তুমি বাড়ি থেকে বের হবে? নাকি বের হয়ে যাব?’
‘আগে আমায় ক্ষমা করো।’
ভূমি আর কিছু না বলে রাগে নিজেই বের হয়ে যায়। উপস্থিত সকলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভূমি বেরিয়ে গেছে। রাসেলও যায় পিছু পিছু। তবে ভূমির কাছে আসার আগেই ভূমি একটা রিকশায় উঠে পড়ে। গন্তব্যহীন পথে যেতে যেতে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ভূমি। এতক্ষণ কান্নাগুলো আটকে রাখতে পারলেও এখন আর কিছুতেই পারছে না। সে কী করবে, কোথায় যাবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। কেন রাসেলকে ফিরে আসতে হলো? সে তো দূরেই ভালো ছিল। চলতি পথে সে ফোন করে শোহেবকে। ফোন রিসিভ করে শোহেব বলে,’আহারে! এতই মিস করছেন যে থাকতে না পেরে ফোন দিলেন? বেশিক্ষণও তো হয়নি আমরা আলাদা হয়েছি।’
শোহেবের মশকরা ভালো লাগছিল না ভূমির। সে ক্রন্দনরতস্বরে বলে,’দেখা করতে পারবেন?’
‘কী হয়েছে? গলা এমন শোনাচ্ছে কেন?’ অস্থির হয়ে জানতে চায় শোহেব।
‘দেখা করতে পারবেন কিনা বলেন।’
‘হ্যাঁ। কোথায় আসব?’
‘ধানমন্ডি লেকের পাশে আসেন।’
‘আপনি ওখানে কেন?’
ভূমি উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেয়। সাথে সাথে তখন ফোন আসে আদিলের। শোহেব ফোন রিসিভ করে বলে,’বলো।’
‘ভাইয়া, ভূমি আপু কোথায় তুমি জানো?’
‘কী হয়েছে আদিল?’
‘আপুর এক্স হাজবেন্ড নাকি বাড়িতে গেছিল। অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। রাগারাগি করে আপু বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। ফাতেমা খালামনি ফোন করে জানাল। আমি এখন ঐ বাসায় যাচ্ছি।’
‘আচ্ছা তুমি গিয়ে ওদিকটা দেখো। আর বলো চিন্তা না করতে। আমি জানি, ভূমি কোথায় আছে। ওকে নিয়ে আসছি আমি। রাখছি এখন।’
ফোন কেটে দিয়ে শোহেব গাড়ি নিয়ে বের হয়। বুকের ভেতর কেমন যেন চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। অজানা আশঙ্কা, ভয়ে বুকের ব্যথা আরও বেড়ে যাচ্ছে। ভূমিকে হারানোর ভয়ে সে তটস্থ। যদি সত্যিই ভূমি রাসেলের কাছে ফিরে যায়?
শোহেব লেকের পাড়ে এসে দেখে আবছা আলো-অন্ধকারে ভূমি দাঁড়িয়ে আছে। শোহেব ক্লান্ত ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। তার পা-ও যেন চলতে চাইছে না। বলছে,’এগিয়ে আর কী করবি? সে তো তোর হবে না।’
এক বুক ব্যথা নিয়ে তবুও শোহেব এগিয়ে যায়। এগিয়ে আসে ভূমিও। শোহেবকে অবাক করে দিয়ে জড়িয়ে ধরে ভূমি। দমকা বাতাসের মতো যেন সমস্ত শরীরেও একটা বাতাস বয়ে গেল শোহেবের। সেই সঙ্গে বুকের ব্যথাটাও যেন পালিয়ে গেল।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]