বিরহের নাম তুমি পর্ব-১৫

0
485

#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_১৫
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________
৩৯.
নুসরাত হতবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে তার ভাই আদিলের দিকে। ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করে,’ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ওর দিকে?’
হুশ ফিরে আদিলের। সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে সূচনার উদ্দেশ্যে বলে,’আ’ম এক্সট্রিমলি স্যরি। পেছন থেকে আপনাকে আমি নুসরাত ভেবেছিলাম। সত্যিই বুঝতে পারিনি। প্লিজ, কিছু মনে করবেন না।’
নুসরাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,’তুই ওর সাথে কী করেছিস?’
‘তোকে ভেবে ওকে এই কাগজ দিয়ে মেরেছি।’ হাতের কাগজটি দেখিয়ে বলল আদিল।
‘বদমাইশ! চোখের পাওয়ার গেছে গা তোর?’
অপরাধীর মতো মাথা নত করে রাখে আদিল। এরপর সূচনার দিকে তাকিয়ে বলে,’প্লিজ! কিছু মনে করবেন না।’
‘হুহ, ঢং!’ বলল নুসরাত। এরপর সূচনাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। আদিল আহত হয়ে তাকিয়ে থাকে। মনে শুধু প্রশ্ন জাগছে মেয়েটি কিছু কিছু বলল না কেন? তাহলে কি ক্ষমা করেনি?

নিজের ঘরে এসে নুসরাত বলল,’ঐটা আমার একমাত্র বড়ো ভাই। চীনে পড়াশোনা করে। ছুটিতে বেড়াতে এসেছে এখন।’
সূচনা নিরুত্তর রইল। নুসরাত-ই বলল,’তুমি কি রাগ করেছ? ভাইয়া কিন্তু সত্যিই বুঝতে পারেনি। না হলে কখনোই এমন করত না।’
সূচনা ইশারায় বোঝাল,’কিছু মনে করেনি।’
নুসরাত খুশি হয়। সূচনার জন্য আনা কেকটুকু খাইয়ে দেয়। দুজনে বসে কম্পিউটারে গেইমস খেলে। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও জয়ের চিন্তা মাথা থেকে নামে সূচনার। নুসরাতের মা কিছুতেই দুপুরের খাবার না খেয়ে যেতে দেবে না। এজন্য গেইমস খেলে দুজনে সময় কাটাচ্ছে। রান্নাবান্না শেষ হলে নুসরাতের মা রুমে এসে বলেন,’আয় তোরা। খেয়ে নে।’
খাবার টেবিলে গিয়ে দেখতে পায় কেউই নেই। ওরা খেতে বসার পরে আদিল আসে। তাও মা জোর করে নিয়ে এসেছে। চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। বারবার অপরাধবোধ কাজ করছে তার মাঝে। খেতে খেতে নুসরাতের মা তার দুই ছেলে-মেয়ে, সংসার নিয়ে নানান গল্প করেন। এই পুরো সময়ে সূচনা প্রত্যুত্তরে শুধু মৃদু হাসি প্রদান করে। এতে যেন আরও বেশি অবাক হয়ে যায় আদিল। কথা কেন বলে না মেয়েটি? আদিলের জন্য কি আনইজি ফিল করছে এখানে? মনে মনে এমনটাই ভেবে নেয় সে। তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ে। হাত ধোয়ার সময় সূচনার পাশ দিয়ে বেসিনে যাওয়ার সময়ে তার এঁটো হাত সূচনার মাথায় লেগে যায়। সাথে সাথে সাদা হিজাবটিতে হলুদ দাগ বসে যায়। কিছুক্ষণ সবাই আদিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর মনে মনে নিজেই নিজেকে বকা দেয় আদিল। বারবার তার দ্বারা ভুল হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি তাকে কী ভাবছে? এর মাঝে সূচনার ফোন বেজে ওঠে। নুসরাতের রুমে ফোন ছিল বিধায় সে খাবার রেখে ঐ রুমে চলে যায়। তখনই নুসরাত দাঁত-মুখ খিঁচে বলে,’তুই কী শুরু করেছিস ভাইয়া? ও কী ভাবতেছে?’
আদিল অসহায়ের মতো করে বলে,’আমিও তো বুঝতেছি না!’

সূচনা রুমে এসে দেখে জারিফ ফোন করেছে। সে ফোন কেটে দিয়ে টেক্সট করে,’বলেন।’
‘কোথায় আছিস তুই?’ টেক্সটের রিপ্লাই করে জারিফ।
‘বান্ধবীর বাসায়। কেন?’
‘ওহ তুই কলেজে নেই? আমি তো তোর কলেজে যাচ্ছিলাম।’
‘কোনো দরকারে?’
‘তোর কাছেই।’
‘আচ্ছা আমি আসতেছি।’
‘তোর আসতে হবে না। তোর বান্ধবীর বাড়ির ঠিকানা দে। আমিই আসছি।’
সূচনা বাড়ির ঠিকানা টেক্সট করে পাঠিয়ে দেয়। ডাইনিংরুমে ফিরে গেলেও আর খাওয়া হলো না। আদিল সেখানে নেই। আন্টি কাকুতিমিনতি করে বললেন,’তুমি কিছু মনে কোরো না মা।’
সূচনা মৃদু হেসে দু’দিকে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে কিছু মনে করেনি।
জারিফ কলেজের কাছাকাছিই ছিল। তাই নুসরাতদের বাড়িতে আসতে খুব একটা সময় লাগে না। এরমাঝে সূচনা নুসরাতকে বলেছে তার কাজিন নিতে আসবে। জারিফ ফোন করার পর বিদায় নিয়ে সূচনা নিচে নেমে আসে। জারিফ বাইকের ওপরেই বসে ছিল। সূচনা কাছাকাছি আসার পর প্রথমেই তার দৃষ্টি গেল হিজাবের দিকে। বলল,’খেতে খেতে খাবার কি হিজাবেও লাগানো লাগে?’
সূচনা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। জারিফ বলে,’চল, হিজাব কিনে দেই।’
সূচনা বারণ করে। জারিফ আর জোর করল না। সূচনাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে। প্রীতি সেখানেই অপেক্ষা করছে।

রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখে প্রীতি ওর তিনজন ফ্রেন্ডের সাথে বসে আছে। এরমধ্যে দুজন মেয়ে, একজন ছেলে। সূচনাকে দেখেই প্রীতি এক গাল হেসে জিজ্ঞেস করল,’ভালো আছো?’
সূচনা মাথা নাড়ায়। চেয়ার টেনে বসতে বসতে জারিফ জিজ্ঞেস করে,’খাবার অর্ডার দিয়েছ?’
‘না। তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’ বলল প্রীতি।
‘ওহ। আচ্ছা আমি বরং গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে আসি। কে কী খাবে বলো?’
একেকজন একেক খাবারের নাম বলে। জারিফ চলে যাওয়ার পর প্রীতি ওর ফ্রেন্ডসদের সাথে সূচনার পরিচয় করিয়ে দেয়। ওদের মধ্য থেকে শাহেদ একদম সরাসরি বলে ফেলল,’তুমি অনেক সুন্দর।’ সূচনা অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। প্রীতি শাহেদের পেটে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে চোখ রাঙায়। বাকি দুজনও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল।
‘কী আজব! তোরা এমন করছিস কেন? একটা সুন্দর মেয়েকে সুন্দর বলব না?’ নড়েচড়ে বসে বলল শাহেদ। প্রীতি দাঁতে দাঁত পিষে বলল,’তুই কি একটু চুপ করবি?’
সূচনা ইশারায় প্রীতিকে দেখাল সে হিজাব পরিস্কার করতে ওয়াশরুমে যাবে। প্রীতি হেসে সায় দিলো। শাহেদ এবার অবাক হয়ে বলল,’কী ব্যাপার? ও ইশারায় কথা বলল কেন?’
প্রীতি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’সূচনা কথা বলতে পারে না।’
‘হোয়াট! মজা নিচ্ছিস নাকি তুই?’
‘এসব ব্যাপার নিয়ে কেউ মজা করে?’
‘এখন কী তোর প্রেম প্রেম ভাব উড়ে গেল নাকি শাহেদ?’ কফির মগে চুমুক দিয়ে সহাস্যে কথাটি বলল সাদিয়া। পাশ থেকে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে নাতাশা বলল,’হুশ! ওর মতো প্লে বয় সুযোগ হাতছাড়া করবে নাকি?’
প্রীতি এবার কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বলল,’খবরদার শাহেদ! সূচনার সাথে কোনো কিছু চলবে না।’
‘আরে না! আমি কি এত বাজে নাকি? তবে মেয়েটারে আমার সত্যিই ভালো লাগছে বুঝছিস।’ বলল শাহেদ। তখন জারিফ খাবার অর্ডার দিয়ে চলে আসে। তাই এসব কথাবার্তাও বন্ধ হয়ে যায়।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে সূচনা। চোখজোড়া অশ্রুতে টইটুম্বুর হয়ে ওঠে। এত মানুষের ভিড়েও সে কিছুতেই জয়কে ভুলতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে বড়ো শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। হিজাবের হলুদ দাগগুলো ওঠেনি। সে চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। তখন সে পেছন থেকে জয়ের মতো কাউকে দেখে থেমে যায়। নিষ্পলকভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়েই থাকে। ছেলেটি রেস্টুরেন্টের আরও ভেতরের দিকে যাচ্ছে। পারিপার্শ্বিক সবকিছু ভুলে গিয়ে সূচনা দৌঁড়ে যায় সেদিকে। তার এখন চিৎকার করে জয়কে ডাকতে ইচ্ছে করছে। ওয়াশরুম বরাবর চেয়ারেই বসে ছিল জারিফ। সূচনাকে ওভাবে দৌঁড়ে যেতে দেখে সেও উঠে সেদিকে যায়। ওদিকে সূচনার ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে জয়কে ডাকতে না পেরে। সে কাছাকাছি চলে গিয়ে হাত টেনে ধরে। ছেলেটি ঘাবড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সূচনার দিকে তাকায়। সূচনার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়ছে। হাত আলগা হয়ে আসে সূচনার। ছেলেটি জয় নয়! সে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। চোখ আরও বেশি ঝাপসা হয়ে আসে নিরাশ হওয়ায়। সেই সময়ে জারিফ সেখানে উপস্থিত হয়। সূচনা যেন নিজের মাঝেই নেই। জারিফ তাকে ধরে ছেলেটি বলে,’ভাই মিস্টেক! কিছু মনে করবেন না।’
‘ইট’স ওকে।’ ছেলেটি মৃদু হেসে বলল। জারিফ সূচনাকে সেখান থেকে নিয়ে আসে। পেছন থেকে দেখে সেও ভেবেছিল ছেলেটি জয়। সূচনার মনের অবস্থাও সে বুঝতে পারে। জারিফকে পেয়ে আরও বেশি হাউমাউ করে কান্না করে ওঠে সূচনা। রেস্টুরেন্টের মানুষ কৌতুহলী হয়ে তাকায় ওদের দিকে। উপায় না পেয়ে সূচনাকে রেস্টুরেন্টের ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে সূচনা। অস্ফুটস্বরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বাধা দেয় না জারিফ। সে চায় সূচনা কাঁদুক। কেঁদে হালকা হোক। যেই মানুষটা কখনো তার হবে না, তাকে ভেবে গুমড়ে গুমড়ে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে কেঁদে বরঞ্চ হালকা হোক। জারিফও হাঁটু মুড়ে সামনে বসে। সূচনার মাথাটা বুকে চেপে ধরে বলে,’ভালোবাসার জন্য আর মানুষ খুঁজে পেলি না?’
_________
৪০.
বারান্দায় অনেকগুলো গাছ লাগিয়েছে ভূমিকা। অধিকাংশ গাছের নাম-ই সে জানে না। তবে গাছগুলো দেখতে অনিন্দ্য সুন্দর। রাসেল অফিসে চলে যাওয়ার পর সে একাই থাকে পুরো বাড়িতে। সে ফাঁকা বাড়িতে একা একা হাঁটে। টিভি দেখে। ঘুমায়। রান্নাবান্না করে, এভাবেই সময় কাটাতে হয়। আগের মতো এখন তো আর এক গাদা কাজ করতে হয় না। এখানে আসার পর থেকে একদিনও রেশমা বেগম ভূমির সাথে কথা বলেননি। তার মাঝে মাঝে ভীষণ খারাপ লাগে এজন্য। বাবা-মা আর সূচনার জন্যও মনটা অস্থির হয়ে থাকে। কাজিনদের ফোনে ফোন দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সে বাবা-মায়ের সাথে ভিডিয়ো কলে অল্প কিছুক্ষণ কথা বলে। সত্যি বলতে মন বেশি পুড়ে তার সূচনার জন্য। ওর কথা ভাবলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। ইচ্ছে তো করে নিজের কাছে নিয়ে আসার জন্য।

কলিংবেলের শব্দে দুশ্চিন্তারা ছুটে পালায়। রাসেল এসেছে ভেবে সে স্বস্তি পায়। দরজা খুলেই রাসেল তার ভুবনভুলানো হাসি দিয়ে বলে,’শুভ সন্ধ্যা বউ।’
ভূমিকাও হেসে বলে,’শুভ সন্ধ্যা।’
ঘরে গিয়ে রাসেল আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর বিছানায় বসতে বসতে বলে,’এখন বলো সারাদিন কী কী করলে?’
হালকা কিছু খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছিল ভূমিকা। সে কফির মগটা রাসেলের হাতে দিয়ে বলল,’আর কী করব? খাই, ঘুমাই, রান্না করি আর চিন্তা-ভাবনা করি।’
‘এত কী ভাবো?’
‘ভাবি আমার বরকে আবার কেউ চুরি করে না নিয়ে যায়।’
‘তুমি থাকতে এই কাজ কেউ পারবে?’
ভূমিকা মাথা নত করে হেসে ফেলে। জিজ্ঞেস করে,’আচ্ছা তোমার একটা ফ্রেন্ড ছিল না লিন্ডা?’
লিন্ডার নাম শুনে একটু ঘাবড়ে যায় রাসেল। পালটা প্রশ্ন করে,’হঠাৎ ওর কথা?’
‘এমনিই বললাম। ও তোমার ফ্রেন্ড তো?’
‘হুম।’
‘একদিন নিয়ে এসো। পরিচিত হব।’
‘কী দরকার? অযথা!’
কিছু না বলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ভূমিকা। রাসেল সেটা লক্ষ্য করে বলে,’ওভাবে তাকিয়ে কী দেখো? অন্যকিছু ভাবতেছ নাকি আবার?’
‘অন্য কিছু কি ভাবার মতো আছে?’
‘তোমরা মেয়েরা এত সন্দেহ করো কেন বলো তো?’
‘সন্দেহ কোথায় করলাম?’
‘আচ্ছা ঠিকাছে, লিন্ডাকে একদিন ডিনারের দাওয়াত করব। ওকে?’
‘হুম।’
‘কী হুম? এখনো গাল ফুলিয়ে থাকবে?’
এই টপিক বাদ দিয়ে ভূমিকা রাসেলের কোলে মাথা রেখে বলে,’সূচনার কথা অনেক মনে পড়ে।’
‘ওকেও নিয়ে আসো তাহলে।’
‘কীভাবে?’
‘আচ্ছা আগে ওর এইচএসসি শেষ হোক কেমন? কথা হয়েছিল?’
‘না।’
‘আচ্ছা ফোন এখান থেকে পাঠালে তো সময় লাগবে কিছুটা। আমি যদি টাকা পাঠিয়ে দেই তাহলে ও কিনে নিতে পারবে না?’
‘আগে ওর সাথে কথা বলি। তারপর জানাবো।’
‘আচ্ছা। চলো ছাদে যাই। আজ অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে।’
ভূমিকা খুশি হয়ে বলে,’চলো।’
_________
৪১.
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেছে সূচনার। সচরাচর এত তাড়াতাড়ি কখনো তার ঘুম ভাঙে না। ঘুম ভেঙে গেছিল বিধায় সে পড়তে বসে। তবে লাভ হয় না কোনো। মাথা ঝিম মেরে আছে। ব্যথা করছে। সে বই বন্ধ করে পা টিপে টিপে হোস্টেলের ছাদে যায়। কুয়াশার জন্য চারপাশের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে হাত মুড়িয়ে ছাদের রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার শরীরে শীতের কোনো পোশাক নেই। জয়ের প্রতিটা কথা তার কানে বাজে। তার হাসি চোখের সামনে ভাসছে। কোন কারণে জয় এমন করল তার জানা নেই। তবে সেও কি বাকি সবার মতো? এটা কি হওয়ারই ছিল? প্রশ্ন তো অনেক জমে আছে মনের ভেতর। তবে তার উত্তরগুলো নেই। এইসব উত্তর জয় ব্যতীত অন্য কেউ দিতেও পারবে না। সূচনার জানা নেই আদৌ কখনো জয়ের সাথে তার দেখা হবে নাকি। কথাগুলো ভাবতেই তার বুকের গহীন থেকে ভারী দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

ছাদে কিছুক্ষণ একা একা হাঁটাহাঁটি করে নিচে নেমে আসে। এক প্রকার মনের বিরুদ্ধে জোর করেই পড়তে বসে। রিডিং ঠিক-ই পড়ছে, তবে লাইনগুলো মস্তিষ্কে গেঁথে রাখতে পারছে না। তাই সে ইম্পোর্ট্যান্ট লাইনগুলো ছোটো প্রশ্ন আকারে খাতায় লিখতে থাকে। কিছুক্ষণ বাদেই সুখী ওঠে ঘুম থেকে। ফ্রেশ হয়ে সেও পড়তে বসে। সূচনাকে বলে,’আমার কাল পরীক্ষা আছে এজন্য সকালেই উঠেছি ঘুম থেকে। তুমি কেন উঠেছ? শুক্রবার আজ, তাও আবার শীত শীত পরিবেশ! কাঁথা মুড়ি দিয়ে তো আরামসে একটা ঘুম দিতে পারতে।’
উত্তরে সূচনা একবার শুধু সুখীর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে। প্রায় ঘণ্টাখানেক পড়ার সুখী বলে,’খুব খিদে লেগেছে আপু। হোস্টেলে খাবার দিতে তো দেরি হবে। চলো দুই রাস্তার মোড়ে যাই? সেখান থেকে গরম গরম ভাপা পিঠা খেয়ে আসি।’
সূচনার যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। সুখীর ক্ষুধা লেগেছে বলে যেতে রাজি হয়। দুজনে গায়ে শাল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে। সুখী গল্প করছে আর সূচনা অন্যমনস্ক হয়ে শুনছে। পিঠার দোকানে এখন তেমন ভিড় নেই।
‘শুক্রবার বলে এখন তেমন ভিড় নেই। কিন্তু একটুপর-ই দেখবে কত লোকজনে দোকান ভরে গেছে।’ বলল সুখী।
দুজনে সেখানে বসেই ভাপা পিঠা খেয়ে হোস্টেলে ফিরে। আসার সময়ে ফাতেমা এবং সাথীর জন্যও নিয়ে আসে। হোস্টেলে ফিরে সুখী পড়তে বসলেও সূচনা আর পড়তে বসে না। সে গিয়ে নিজের বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরও পায়নি। ঘুমের ঘোরে সে জয়কে দেখতে পায়। ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। ফাতেমা অস্থির হয়ে বলে,’কী হয়েছে? কী হয়েছে?’
সূচনা দু’দিকে মাথা নাড়ায়। সারাদিন, সারাক্ষণ জয়ের কথা ভাবতে ভাবতে এখন স্বপ্নেও জয়কে দেখতে পাচ্ছে। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে সে সত্যিই পাগল হয়ে যাবে। বালিশে মুখ গুঁজে আবার যখন শুয়ে পড়ে তখন হোস্টেল সুপার এসে সূচনাকে জানায় ডেলিভারি ম্যান নিচে অপেক্ষা করছে। সূচনা অবাক হয়। সে তো কিছু অর্ডার করেনি। চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে সে নিচে নামে। ডেলিভারি ম্যান চলে যাওয়ার পর পার্সেলটি নেড়েচেড়ে দেখে সে। একটা ড্রেস শপ থেকে এসেছে পার্সেলটি। তবে কে পাঠিয়েছে তার কোনো নাম, ঠিকানা নেই। সে রুমে এসে প্যাক খুলে দেখতে পায় এক ডজন সাদা শিফন হিজাব সেখানে।

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here