#বিয়ে_থা
#পর্ব-৩২
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
( কপি নিষিদ্ধ)
বউ কথা কও জ্বলজ্বল করছে। বাড়িকে ঘিরে রেখেছে রঙবেরঙের লাইট। সন্ধ্যার এই সময়টিতে গেইট দিয়ে ঢুকলো ধ্রুবর জিপগাড়িটি। গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো নিরব ও সুমিত্রা। সুমিত্রকাকে রিসিভ করার দায়িত্ব নিরবকে দেওয়া হয়েছিলো। বিয়ে বাড়ির সবাই আপাতত ব্যস্ত। আর মাত্র দুদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠান। আগামীকাল গায়ে হলুদেরও আয়োজন করা হবে।
সুমিত্রা দৌড়ে সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো। ‘নিনীকা ইয়ার’ বলে চিৎকার করে উঠলো। উপর থেকে দৌড়ে নেমে এলো নিনীকা। একটি গভীর আলিঙ্গন হলো। উচ্ছাসে দুজনের মুখ দিয়ে খুশির শব্দ বের হচ্ছে। সুমিত্রা খুশিতে চিৎকার করছে।
বাংলাদেশে আবারও পা রাখতে পেরে তার অনেক আনন্দ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আনন্দের কারণ নিনীকার বিয়ে। যদিও মা বাবা রাজি ছিলেন না প্রথম। কারণ সুমিত্রার আশির্বাদ হয়ে গেছে। বিয়ে মাসের শেষের দিকে। এ অবস্থায় মেয়েকে ভিন্ন দেশে দিতে নারাজ ছিলেন তারা। অগত্যা ধ্রুবর মা বাবা ফোন করে অনুরোধ করলেন। আশ্বাস দিলেন সুমিত্রাকে সহিসালামতে পৌঁছে দিবেন তারা।
সুমিত্রার সাথে সবার পরিচয় করানো হলো। তারপর নিয়ে যাওয়া হলো রুমে। নিনীকার সময়টা ঘরেই কাটে এখন। বউ বলে তার বের হওয়া বারণ। দুদিন হলো ধ্রুবের থেকে আলাদা হতে হয়েছে তাকে। ধারার হুকুম, বিয়ের আগে আর বউয়ের কাছাকাছি থাকা যাবে না। নিজের মায়ের এহেন অত্যাচারে ধ্রুব মর্মাহত। দু’দিন ধরে বউ তার ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
সুমিত্রাকে বলতেই সে খিলখিল করে হেসে উঠলো। আফসোস করে বলল,
‘ আহারে, বেচারা জিজু। দু’দিন ধরে না খেয়ে আছে। ‘
নিনীকা চোখ রাঙালো,
‘ চুপ কর বেয়াদব। কেউ শুনলে কি ভাববে। ‘
‘ ওমা তুই লজ্জা পাচ্ছিস নাকি? আমার ভাবনা কি তবে সঠিক? জিজু আর তোর মধ্যে সব হয়ে গেছে! ‘
নিনীকার মুখ লাল হয়ে গেলো।
‘ তুই চুপ করবি? ‘
সুমিত্রা অবাক হয়ে বলল,
‘ তোর এই রুপটা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন। জিজু কি বেশিই রোমান্টিক? নিতে পারিস তো? আজ সারারাত এই কয়েকদিনের তোর রাত্রি যাপন শুনবো। আ’ম সো এক্সাইটেড ডিয়ার। ‘
নিনীকা ওর কাঁধে চাপড় মারলো,
‘ চুপ কর না, তুই নির্লজ্জ হয়ে গেছিস। ‘
‘ ওমা তুমি করতে পারবে আর আমি বলতে পারবো না? ‘
নিনীকা প্রসঙ্গ পাল্টালো,
‘ যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে কেমন? ‘
সুমিত্রা সিরিয়াস হলো,
‘ মানুষ হিসেবে যতোটুকু বুঝেছি মন্দ না। ডাক্তারি পাশ করেছে। ফ্যামিলি ও ভালো। নাম অনিরুদ্ধ দাশগুপ্ত। দেখতে সুদর্শন বলা যায়। আমার সাথে মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয় শুধু। সে নিজেই খুঁজ নিতে ফোন করে। ভেবেছিলাম আমার বিয়ের পর তোর বিয়ে হবে, কিন্তু দেখ তোরটা আগে হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য জামাই সহ আসতে পারলাম না। কিন্তু তুই জামাই নিয়েই আমার বিয়েতে যাবি। তখন তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। ‘
নিনীকা জড়িয়ে ধরলো,
‘ অভিনন্দন ডিয়ার। ‘
দুজন ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। ধ্রুবের সাথে এই খাবার টেবিলেই দেখা হয় শুধু। কিন্তু তার বর আজ এখনো টেবিলে উপস্থিত হয়নি। নিনীকা আশপাশে উঁকিঝুঁকি দিলো। সদর দরজা দিয়ে ধ্রুবকে ঢুকতে দেখা গেলো। পড়োনে বাহিরের পোশাক। চেহারায় ক্লান্তি ভাব। উপরে যেতে যেতে নিনীকার দিকে অসহায় চাহনি নিক্ষেপ করলো। সুমিত্রা সেটা দেখে বলল,
‘ ইশ, আমার জিজুটার কতো কষ্ট হচ্ছে। বেচারা! ‘
নিনীকার মন খারাপ হয়ে গেলো। মানুষটা ক্লান্ত শরীরে ফেরার পর তাকে সবসময়ই জড়িয়ে ধরে। আদর দিয়ে তারপর ফ্রেশ হতে যায়। দুদিন ধরে সেটাও পারছে না। বাড়ি ফিরে বউকে কাছে পাচ্ছে না বলে নিশ্চয়ই তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তার মানুষটার রোমান্টিসিজম একটু বেশিই। এমন নয় যে নিনীকার সেগুলো বিরক্ত লাগে। তার ভালো লাগে। সব শেষে যখন মানুষটার চোখেমুখে তৃপ্তি দেখতে পায় তখন নিজেকে সুখী সুখী লাগে। নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হয়। নিনীকা সেই সুখানুভূতি মিস করছে। প্রচন্ড ভাবে মিস করছে। ভেতরের উত্তেজিত মন গোপন কিছুর জন্যে হাহাকার করছে। আন্দোলন তুলছে বিশ্রীভাবে।
ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। চেয়ার টেনে নিনীকার মুখোমুখি বসলো। পাশে ফারিন। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভাই ভাবীকে দেখে রাখার। টেবিলে তেমন কেউ নেই। ফাহিম মাহবুবের বংশের আত্নীয়রা আগামীকাল আসবেন। আগামীকাল বিদেশ থেকে ধারার ভাইয়েরা আসবেন। অর্থাৎ সবাই আসবেন আগামীকাল। আজ শুধু সুমিত্রা এলো। নিরব তো আর সবমসময় থাকছেই। তার উপর অনেক দায়িত্ব।
ধ্রুবর প্লেটে লেগ পিস পড়লো। সে সেটা তুলে বউয়ের প্লেটে দিয়ে দিলো। ধারা ও ফাহিম নিশ্চুপে হাসলেন। ফারিন ভাইয়ের কানে কানে বলল,
‘ ভাবির দিকে তাকাচ্ছো না কেন তুমি? দেখো ভাবিকে কতো সুন্দর লাগছে। ‘
ধ্রুব তাকালো। এবং তার সর্বনাশটা হয়েই গেলো। এতোক্ষণ মনে মনে বললো তাকাবে না৷ বউ ছাড়া থাকাটা এমনিতেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে তার।
নিনীকার নাকে হীরের ছোট্ট নাক ফুল জ্বলজ্বল করছে। পড়োনে গোলাপি রঙা শাড়ি। ধ্রুব ঢুক গিলে মাথা নিচু করে নিলো।
সুমিত্রা ফিসফিস করে নিনীকাকে বলল,
‘ আমার তো বুকটা ফেটে যাচ্ছে দোস্ত। মুখটা একবার দেখ। ‘
নিনীকা তাকালো, ধ্রুব ও তাকিয়েই ছিল। দুজনের চোখাচোখি হলো। নিনীকা মুচকি হাসলো। ধ্রুব বিনিময়ে চোখের ইশারায় খেতে বলল।
রাত তখন নয়টা। নিনীকাকেও ফারিনের ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। এবার থেকে সুমিত্রাও থাকবে। ফারিন ঘুমে কাত৷ আজ তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়েছে সবাই। তাছাড়া সকাল থেকে সবাইকেই দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। সেজন্য সবাই ক্লান্ত। সুমিত্রা নিনীকাকে আস্তে করে বলল,
‘ আমি ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে নেবো। তুই জিজুর কাছে চলে যা। ‘
নিনীকার মুখশ্রী উজ্জ্বল হলো। সে বের হয়ে যেতেই সুমিত্রা দরজা লাগিয়ে বিছানায় এলো। ফারিন ফট করে চোখ মেলে তাকালো।
‘ মাম্মা জানতে পারলে আমাকে ছাড়বে না। ‘
সুমিত্রা গাল টেনে দিলো,
‘ কেউ জানবে না। তোমার ভাবি সবাই জেগে উঠার আগেই ফিরে আসবে। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও, চিন্তা করার জন্যে আমি আছি। ‘
বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে এক হাত কপালে রেখে চোখ বন্ধ করে ছিল ধ্রুব। দরজা লাগানোর শব্দে উঠে বসলো। লাইট অন করে সম্মুখে তাকাতেই চমকে গেলো।
‘মিসেস। ‘
নিনীকা দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়লো। ধ্রুব চিৎ হয়ে বিছানায় পড়ে গেলো। নিনীকা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। ধ্রুব পিঠে হাত রাখলো।
‘ শান্ত হও, আমি আছি তো। ‘
নিনীকা তখনো কাঁপছে। ধ্রুব হাতের সাহায্যে মুখ তুলে ধরলো।
‘ কাঁদছো কেন মিসেস? আমি আছি তো। ‘
‘ মিস ইউ মেজর। ‘
ধ্রুব ঠোঁট চেপে হাসলো,
‘ তোমার মেজরও তোমায় মিস করেছে মিসেস। ‘
নিনীকা ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁধে মুখ গুঁজে দিলো। হাতের সাহায্যে এক এক করে খুলে ফেললো ধ্রুবের পড়োনের শার্টের বোতাম।
মধ্যরাত। ঘুম নেই দুজনের চোখে। ধ্রুবের বুকে মুখ গুঁজে রেখেছে নিনীকা। আরেকটু পর আবারও আলাদা হয়ে যেতে হবে তাদের। ধ্রুব কখনো ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে কখনো হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। কখনো সান্তনা দিচ্ছে,
‘ আর মাত্র একদিন, তারপরই আবারও আমরা একসাথে থাকবো। কেঁদো না। আমার তোমাকে কাঁদতে দেখতে ভালো লাগে না। তুমি না স্ট্রং মেয়ে? আমার মিসেস এতো আবেগি হলো কবে থেকে? ‘
নিনীকা রেগে নাকমুখ কোঁচকালো,
‘ আবগেটা আপনার জন্যেই বেড়ে গেছে। ঠিক আছে আর আসবো না। চলে যাচ্ছি। ‘
নিনীকা সত্যি সত্যি উঠে যাচ্ছে। ধ্রুব টেনে জড়িয়ে ধরলো।
‘ তুমি এভাবে কাঁদলে আমি কিন্তু কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলবো মিসেস। দেখা গেলো সকালে দরজার বাহিরে তোমার শ্বাশুড়ি খুন্তি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। ‘
নিনীকা চোখ ছোটছোট করে তাকালো,
‘ কিছু ঘটাতে বাদ রেখেছেন নাকি? ‘
ধ্রুব হাসলো,
‘ সামান্যতে কি আর মনে ভরে গো? যদি চাও তো আমি শুরু করতে পারি।
ধ্রুব চোখ মারলো। নিনীকা চুল টেনে দিলো।
‘ অসভ্য মেজর। ‘
‘ নিনীকা, আমার রোমান্টিক বউ। ‘
নিনীকা বুকের উপর উঠে বসেছে। ধ্রুব মুখ তুলে চোখ ভুলিয়ে বলল,
‘ আমার আবেদনময়ী মিসেস। ‘
(চলবে)