বিয়ে থা পর্ব-৩১

0
10

#বিয়ে_থা
#পর্ব-৩১
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

(কপি নিষিদ্ধ)

দীর্ঘ এক রাত এক দিন জ্বরে ভুগতে হয়েছে রমজান শেখ কে। এখন কিছু টা সুস্থ তিনি। কিন্তু শরীর প্রচন্ড দূর্বল। চেহারাটা যতোই অল্প বয়সী পুরুষদের মতো হোক, শরীর তো বয়সের সাথে সাথে ক্ষয়ে যেতে চাইবেই। রমজান শেখ নিজের শরীরের তেমন যত্ন নিতেন না। নিজের প্রতি ঘৃণা থেকে উপরে উপরে নিজেকে ভালো করেই রেখেছিলেন শুধু। যাতে সবাই ভাবে তিনি অলটাইম ফিট। ডক্টর বাসায় এসে দেখে গেছেন। শরীরের ডায়বেটিস কন্ট্রোলে নেই। শীগ্রই তাকে একজন ডায়াবেটিস ডক্টরের শরণাপন্ন হতে বলেছেন। যেহেতু জ্বর কমে গেছে সেজন্য এই সন্ধ্যা বেলাতেই মিথিলা রমজান শেখ কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলেন। কিন্তু বাঁধা দিলেন রমজান, তার সত্যিই আজ বিছানা থেকে উঠে বাহিরে পা রাখতে ইচ্ছে করছে না। মিথিলা মেনে নিলেন। গরম স্যুপ এনে খাইয়ে দিতে লাগলেন। স্যুপটা একটু টক, রমজান শেখ টক খেতে চেয়েছেন।

বউ কথা কও এ বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। ধারা ছেলের আনুষ্ঠানিক বিয়ের প্রসঙ্গ তুলেছেন। ফাহিম মাহবুব চিন্তিত স্বরে বললেন,

‘ বউমার মা বাবাকে তো জানাতে হবে আগে। ‘

‘ তো জানাবো। দুই পরিবারের আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘

নিনীকা ফারিনের পাশে বসেছিল। এবার সে মুখ তুলে তাকিয়েছে। ধারা আগ্রহ দেখিয়ে বললেন,

‘ নিনীকা তোমার মা বাবার নাম্বার দাও তো। আমি কথা বলবো। ‘

ফাহিম মাহবুব নিজের মোবাইল থেকে রমজান শেখের নাম্বার বের করে দিলেন। ধারা সেই নম্বর টাতেই ডায়াল করলেন।

রমজান শেখের মোবাইল বিকট আওয়াজে বেজে উঠলো। রিসিভ করলেন মিথিলা। রমজান শেখ ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন কে?

মিথিলা লাউঞ্জে দিয়ে দিলেন। ভেসে এলো ধারার গলা।

‘ আসসালামু আলাইকুম, আমি ধারা আহমেদ বলছি। ধ্রুবর মা। ‘

রমজান শেখ তৎক্ষনাৎ মোবাইল কেড়ে নিলেন। বললেন,

‘ আমি রমজান শেখ বলছি। ‘

ভেসে এলো ফাহিম মাহবুব এর গলা,

‘ রমজান শুনছিস? নিনীকা মা ও ধ্রুবর আনুষ্ঠানিক বিয়ের আয়োজন করবো ভাবছি। তুই কি ভাবিকে নিয়ে একবার বাড়িতে আসতে পারবি? ‘

রমজান শেখ আড়চোখে মিথিলার দিকে তাকালেন। মিথিলা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতে বলছেন। রমজান শেখ উত্তর দিলেন,

‘ আমি তো অসুস্থ মিথিকে পাঠাবো না-হয়। ‘

ফাহিম মাহবুব ‘ঠিক আছে’ বলে রেখে দিলেন। ‘

মিথিলা ফুসফুস করে বললেন,

‘ সবকিছুতে তোমার বাড়াবাড়ি। কি হতো বললে যে আমরা যাবো? মেয়েটাকে কতোদিন দেখি না, বলতে পারতে ওদের আসার জন্য। ‘

রমজান শেখ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

‘ বলেছি তো তুমি যাবে। আর কি চাও? ‘

মিথিলা কাঁধে হাত রাখলেন,

‘ চলো না তুমিও যাবে। সুস্থ হয়ে যাবে তো। আমি থাকতে তোমার চিন্তা কিসের বলো তো? ‘

‘ মিথিলা, আমার মেয়ে আমার যাওয়াটা পছন্দ করবে না। তার খুশি আমার জন্যে নষ্ট হয়ে যাক তা আমি চাই না। তুমি যেও, ও তোমাকে দেখলে খুশি হবে। ‘

মিথিলা চুপ হয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন এ সুযোগে মেয়েকে সব বলে আসবেন। জানিয়ে আসবেন নিজের স্বামীর অসহায়ত্ব, অভিযোগ, অপরাধবোধ, ঘৃণা থেকে করা কাজকর্মের কারণ!

পরদিন সকালে রমজান শেখকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলেন মিথিলা। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর রমজান শেখ ঘুমিয়ে পড়লেন। মিথিলা ড্রাইভারকে দিয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্যে অনেককিছু কিনলেন। তারপর গাড়িতে করে রওনা হলেন নিনীকার শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে।

বাড়ির কেউ এখনো দুপুরের খাবার খায়নি। সবাই সোফায় বসে অপেক্ষা করছে মিথিলার। উদ্দেশ্য একসাথে খাবার খাবে। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গেইট দিয়ে ঢুকলো একটি কালো গাড়ি। নিনীকা দৌড়ে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো। মিথিলা গাড়ি থেকে বের হতেই ঝাপিয়ে পড়লো।

কতো দিন, কতো মাস পর! মা মেয়ের চোখে জল। মিথিলা মেয়ের কপালে আদর দিলেন। গালে হাত রেখে বললেন,

‘ কেমন আছিস নিনীকা? ‘

‘ আমি অনেক ভালো আছি মা, তোমার শরীর ভালো তো? ‘

‘ ভালো আছে। ‘

বাড়ির সবাই সদর দরজায় দাড়িয়ে আছেন। ধ্রুব এগিয়ে এসে সালাম দিলো। মিথিলা মেয়ে জামাইয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন। ধারা ও ফাহিম মাহবুবের সাথে কুশল বিনিময় করে প্রথমবারের মতো প্রবেশ করলেন বউ কথা কও এ।

দুপুরের খাবার খেয়ে সোফায় বসে আলোচনা করা হলো। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এক সপ্তাহ পর শুক্রবারে অনুষ্ঠান করা হবে ধ্রুবদের বাড়িতে। মিথিলাকে উপরের রুমে রেস্ট করতে বলা হলো। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। ইচ্ছে ছিল মেয়েকে সব বলে দিবেন আজ। কিন্তু এই খুশির সময়ে এসব বলে মেয়ের মন খারাপ করাতে চাইলেন না। মাথায় চলছে স্বামীর চিন্তা। অসুস্থ মানুষ টা কি করছে কে জানে। মিথিলা বিদায় নিলেন। বিয়ের আয়োজন করার জন্যে অনেকবারই আসা যাওয়া হবে তার। মিথিলা যখন সদর দরজা পেরিয়ে গাড়িতে উঠবেন তখন নিনীকা দৌড়ে এলো। নিচু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

‘ তিনি কি বেশি-ই অসুস্থ? ডাক্তার কি বলেছেন? ‘

মিথিলা না হেসে পারলেন না। বললেন,

‘ তিনি কিছু টা সুস্থ আছেন। ডায়বেটিস বেড়ে গেছে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করতে হবে। তাহলে আগের মতো কন্ট্রোলে চলে আসবে। ‘

‘ তাকে মিষ্টি খেতে নিষেধ করো। ‘

‘ তুই করে দিস। ‘

নিনীকা মুখ অন্ধকার করে ফেললো,

‘ তোমার বরকে তুমিই বলো। ‘

‘ ওমা আমার বর কি তোর কেউ হয় না? ‘

‘ তোমার বর এতো শান্ত হলো কবে থেকে? আমি সংসার করছি, কিছু দিন পর আনুষ্ঠানিক বিয়ে। তার তো শান্তিতে থাকার কথা নয়। আফটার অল আমি তার পছন্দের পুরুষের সাথে সংসার করবো না বলে পালিয়ে গেছিলাম। আবার ফিরেও এলাম। যাই হোক তাকে আমার পক্ষ থেকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিও। বাবা হিসেবে তিনি ভালো না হলেও আমার জন্যে ভালো কাউকেই চ্যুজ করেছিলেন। আমি সেজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ। ‘

‘ ধন্যবাদ টা তাকে তুই-ই দিস না-হয়। মানুষ টা খুশি হবে। ‘

‘ ওই জঘন্য ব্যক্তিটার প্রতি তোমার অন্ধ ভালোবাসা দেখলে আমার রাগ হয় মা। ‘

মিথিলা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

‘ ভালো থাকিস মা, মানুষটাকে পারলে ক্ষমা করে দিস।’

কালো গাড়িটি সাই-সাই করে চলে গেলো। নিনীকার চোখে অশ্রু টলমল করছে। যেকোনো সময় গড়িয়ে পড়বে ভাব। সে অশ্রুকণা ঝরতে দিলো না। চোখমুখ শক্ত করে রইলো। ওই মানুষটার জন্যে অশ্রু ঝরানোর কোনো মানে হয়না।

‘ তোমার মন খারাপ কেন মিসেস? ‘

নিনীকা মুখে হাসি ফুটাতে চেষ্টা করলো। ধ্রুব সম্মুখে এসে দাড়িয়েছে।

‘ একদম মিথ্যা হাসি দেখাতে চেষ্টা করবে না। কি হয়েছে বলো আমাকে। ‘

‘ কিছু হয়নি। এমনি মা চলে গেলো বলে খারাপ লাগছে। ‘

‘ শিওর? ‘

‘ হু। ‘

ধ্রুব কাঁধ জড়িয়ে ধরলো।

‘ তুমি ভালো করে মিথ্যাও বলতে পারো না আমার মিসেস। ‘

নিনীকা চুপ করে রইলো। ধ্রুব বউকে নিয়ে রুমে গেলো। কোলে বসিয়ে চেপে ধরলো সত্যি জানার জন্য। নিনীকা কেঁদে ফেললো।

‘ আপনি অনেক খারাপ, আমি ওই লোকটার জন্যে একদম কাঁদতে চাইনি। দিলেন তো কাঁদিয়ে। ‘

ধ্রুব হতভম্ব তার বউ কাঁদছে কেন!

‘ তুমি কার জন্যে কাঁদছো মিসেস? কে তোমাকে কি বলেছে বলো আমায়। ‘

‘ কেউ কিছু বলেনি। ‘

‘ তুমি নিজেই তো এখন বললে তুমি ওই লোকটার জন্যে কাঁদতে চাওনি। কোন লোকটা নিনীকা? ‘

নিনীকা রেগে ধ্রুবের বুকে দাঁত বসিয়ে দিলো।

‘ বলবো না, একদম বলবো না। ‘

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here