#বিয়ে_থা
#পর্ব-২৭
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
( কপি নিষিদ্ধ )
সন্ধ্যা বেলা প্রকৃতির রুপ বদল হলো। ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামলো ধরনীতে। কালো গাড়িটা এসে থামলো মেডিক্যালে। গাড়ির দরজা খুলে ছাতা মাথায় নিয়ে বের হলেন রমজান শেখ। বিপরীতে গিয়ে দরজা খুলে বের করে আনলেন মিথিলাকে। স্থান দিলেন ছাতার নিচে। বুকের সাথে পিঠে ঠেকিয়ে শক্ত করে ধরে এগিয়ে চললেন চেম্বারের দিকে।
ডাক্তার দেখিয়ে তারা যখন বের হলেন তখন বাহিরে বৃষ্টি নেই। রমজান শেখ মিথিলার হাত শক্ত করে মুঠোয় নিলেন।
‘ চলো আজ ঘুরি। ‘
মিথিলা আজ অনেক খুশি। সাথে তার আনন্দ বাড়িয়ে দিলো রমজান শেখের প্রস্তাব। মানুষ টা পুরনো শেখ বাবু হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। মিথিলা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালেন। গাড়ি লক করে শেখ বাবুর হাত ধরে হেঁটে চললেন রাস্তা দিয়ে।
দশমিনিট হাঁটার পর বৃষ্টি নামলো। গাড়ি লক করার আগে ছাতা গাড়িতেই রেখে এসেছেন বৃষ্টি ছিল না বলে। মিথিলার শাড়ি ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। তারা যে রাস্তায় দাড়িয়ে আছেন সেখান প্রচন্ড নির্জন। মিথিলার বৃষ্টিময় রুপ রমজান শেখকে গায়েল করলো। হাত ছেড়ে কোমড়ে স্পর্শ করলেন। নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে ছুঁয়ে দিতে লাগলেন মিথিলাকে। বৃষ্টি বাড়ছে। বৃষ্টিময় সেই রাস্তায় বৃষ্টিময় গাঢ় চুম্বন হলো। হলো আরও অনেক কিছু। রমজান শেখ নিজের কোর্ট খুলে মিথিলাকে পড়িয়ে দিলেন। বৃষ্টি কিছু টা কমে যেতেই ফিরে এলেন গাড়ির কাছে। গাড়িতে বসে হাঁচি দিতে দিতে দুজনের দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা। মিথিলা রেগে বললেন,
‘ তোমার জন্যে হলো, বলেছিলাম ছাউনির নিচে যাই। শুনো নি। ‘
রমজান শেখ হাসলেন,
‘ ছাউনির নিচে গেলে কি রোমান্স করতে দিতে? ওখানে আলো ছিল তো। ‘
মিথিলা নাকমুখ কোঁচকান,
‘ একদম বাজে কথা বলবে না, বৃষ্টির মধ্যেও রাস্তায় তার রোমান্স করতে হয়। বেয়াদব লোক। ‘
‘ তোমারই তো। ‘
‘ হ্যাঁ আমারই, সেজন্য এখন দুজন মিলে ঠান্ডা লাগিয়ে বসে আছি। এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে। এক রোগের ডাক্তার দেখাতে এসে আরেক রোগ বেঁধে ফেললাম। ঠান্ডার জন্যে কয়দিন ভুগতে হবে কে জানে। আমার না-হয় সহজে কমে যাবে, তোমার কমবে? সবসময়ই বেশি বেশি। ‘
রমজান শেখ গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করেছেন।
‘ কমে যাবে কয়েকদিন রেস্ট নিলে, চিন্তা করো না। জ্বর তো আসেনি। ‘
মিথিলা তেতে উঠলেন,
‘ আসেনি, মানে আসবে না নাকি? ‘
রমজান শেখ চুপ রইলেন। এক হাতে স্ত্রীর কাঁধ জড়িয়ে ধরে ড্রাইভ করতে মনোযোগ দিলেন। চুপচাপ থাকাটা মিথিলার সহ্য হলো না। ঘুষি বসালেন রমজানের বাহুতে। ব্যথায় উহ শব্দ বের করলো।
‘ মারছো কেন? তুমি তো দেখি আমাকে সুস্থ করতে এসে নিজেই সাইকো হয়ে যাচ্ছো। স্বামী নির্যাতন করবে নাকি এবার? ‘
‘ প্রয়োজন হলে তাই করবো। ‘
রমজান হাসলেন,
‘ ঠিক আছে করো, পারলে আমার মতো যখন তখন আদর টাদর করে অজ্ঞান ও করে দিতে পারো। আমি একদম মাইন্ড করবো না। ‘
মিথিলার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। রমজান শেখ শব্দ করে হাসলেন। গাল টেনে দিলেন।
‘ তুমি এখনো অনেক আদুরে প্রিয়তমা। ‘
*
সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে ফারিনের সাথে কফি খেতে খেতে আড্ডা দিতে বসেছিলো নিনীকা। ধ্রুব রুমে ঢুকতেই দুজনের আড্ডার সমাপ্তি হলো। ফারিন কফির কাপ গুলো নিয়ে চলে গেলো। ধ্রুব ক্লান্ত শরীর বউয়ের কাঁধে এলিয়ে দিলো। বেচারা সেই যে নাস্তা করে বের হয়েছিল নিরবের জরুরি ফোনকলে, এখন ফিরলো। নিনীকা মাথাটা সযত্নে নিজের কোলে রাখলো। চুলের ভাজে হাত ডুবিয়ে চুম্বন করলো কপালে।
‘ মাথা কি বেশি-ই ব্যাথা করছে? ‘
ধ্রুব বন্ধ চোখজোড়া খুললো,
‘ বুঝলে কিভাবে? ‘
নিনীকা হাসলো,
‘ বুঝে ফেললাম। ‘
ধ্রুবের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। হাত দিয়ে টেনে কাছে আনলো নিনীকার মুখশ্রী। ওষ্ঠে ফটাফট চুমু বসিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।
‘ এখন ভালো লাগছে। ‘
নিনীকা চুলের ভাজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
‘ ঘুমাবেন পরে আগে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিন। তারপর রিলাক্সে একটা ঘুম দিবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। ‘
‘ তুমি দুপুরে খেয়েছিলে তো? ‘
নিনীকা মুখ কালো করে ফেললো,
‘ আমি ক্ষিদে সহ্য করতে পারি না, সেজন্য আপনার সাথে খাবো বলে ভাত খাইনি। তবে…চিপস, কফি সব খেয়েছি। আপনি কি রাগ করলেন? ‘
ধ্রুব ঘর কাপিয়ে হাসলো। হাসতে হাসতে নিনীকার কোমড়ে নাক ঘষলো।
‘ তুমি কেন অপেক্ষা করে ভাত খাওনি মিসেস? চিপস কফিতে কি পেট ভরে? যাও এক্ষুনি খাবার নিয়ে এসো। ততোক্ষণে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। পাগলি মিসেস টা! কি করে এসব। এভাবে কেউ না খেয়ে থাকে? ‘
নিনীকা চোখ ছোট ছোট করে ফেললো,
‘ আমি যদি না খেয়ে অপেক্ষা না করি তো কে করবে? ‘
ধ্রুব উঠে বসলো,
‘ টিপিকাল বউদের মতো কথা, বাহ্! একদিনের সংসারে এতো পরিবর্তন। আ’ম ইমপ্রেস। ‘
নিনীকা ঠেলে দিলো,
‘ যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। ‘
ধ্রুব ওয়াশরুমের দরজা পর্যন্ত গিয়ে ‘মিসেস’ বলে চিৎকার করে দ্রুত গতিতে নিনীকার সামনে এসে দাড়ালো। নিনীকা চমকে তাকালো।
‘ কি হয়েছে? ‘
ধ্রুব বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। নিজের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বলল,
‘ তোমাকে জড়িয়ে ধরিনি বলে বুকটা কেমন যেন করছিলো। ‘
নিনীকা হতভম্ব। এই লোক তাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো।
‘ এভাবে কেউ চিৎকার করে? ‘
‘ নিনীকা হুস, চুপ থাকো। ফিল মি। ‘
আবারও উচ্ছাস নিয়ে বললো,
‘ নিনীকা তুমি এতো নরম কেন? এতো তুলতুলে কেন? আমি তো তোমাকে তুলো ভেবে খেয়ে ফেলবো হঠাৎ। ‘
নিনীকা পিঠে হাত দিয়ে মৃদু জোরে ঘুষি দিলো,
‘ আস্তে বলুন, কি করছেন পাগল মেজর। ‘
‘ নিনীকা আমি যদি দরজা খোলে সবকিছু করেও ফেলি তবুও শব্দ বাহিরে যাবে’না, রুম সাউন্ড প্রুফ। ‘
নিনীকা লজ্জায় ওভাবেই পড়ে রইলো। ধ্রুব ছাড়লো অনেক পরে। ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলছে,
‘ নিনীকা আমি তোমাকে এতো এতো ভালোবাসি। ‘
নিনীকার মাথা ঘুরছে। এলোমেলো চুলগুলো হাত কোপা করে নিলো। পড়োনের লং শার্টের বোতামগুলো আটকে দিয়ে স্কার্ফ পড়ে নিলো। ধ্রুবকে বকতে বকতে নিচে গেলো খাবার আনতে।
ধ্রুব টাওয়াল পড়ে দুষ্টু হাসি মুখে ঝুলিয়ে নিনীকার অপেক্ষায় খাটে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। নিনীকা এলো আরও তিন মিনিট পর। রুমে ঢুকতেই তার গলা শুকিয়ে গেছে। হাঁটুর উপর পর্যন্ত টাওয়াল পড়ে পায়ে পা তুলে বসে আছে ধ্রুব। উন্মুক্ত শরীর দেখিয়ে নিনীকাকে দূর্বল করতে চাইছে সে। নিনীকা চোখমুখ শক্ত করে রইলো। খাবার রাখতেই ধ্রুব আবদার করলো,
‘ তুমি খাইয়ে দাও। ‘
নিনীকা চোখ নিচের দিকে রেখেই প্লেটে ভাত মাখাচ্ছে। ধ্রুব টেনে নিজের কোলে বসিয়েছে। থরথর করে কাঁপছে নিনীকার হাত। ধ্রুব ঘাড়ে থুতনি ঠেকালো।
‘ এভাবে কাপছো কেন মিসেস? এনিথিং রং? ‘
নিনীকার ইচ্ছে হলো হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে। কাঁপা কাঁপা হাতে লোকমা তুলে দিলো ধ্রুবর মুখে। ধ্রুব খেতে খেতে বলল,
‘ তুমিও খাও। ‘
বহু পরিশ্রম করে নিনীকা খাওয়া শেষ করলো। প্লেট রেখে দরজা বন্ধ করে পেছনে ঘুরতেই দেখে ধ্রুবর পড়োনের টাওয়াল মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে। নিনীকার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। ধ্রুব অবুঝ স্বরে বলল,
‘ অনেক গরম লাগছে মিসেস, বাতাস করবে একটু? ‘
নিনীকা ঘেমে একাকার। ধ্রুব তাকে কাছে টেনে নিয়েছে। ফিসফিস করে বলল,
‘ কে যেনো বলেছিল পুরুষেরা শুধু অধিকার দেখিয়ে বিছানায় নিয়ে যেতে পারে। আমি তো তোমাকে বিছানায় নিয়েছি নিনীকা। তোমার খারাপ লাগছে না? ‘
নিনীকা গলার স্কার্ফ ছুড়ে ফেললো।
‘ আপনি নিয়েছেন, এবার আমি নিবো। শোধবোধ। ‘
ধ্রুব চোখ বন্ধ করতে করতে বলল,
‘ মাথা ব্যথা কমানোর আরেকটা পদ্ধতি আছে মিসেস। জানো সেটা কি? বিজ্ঞানের ভাষায় অন্যকিছু বললেও আমি বলি বউয়ের আদর। ‘
(চলবে)