বিবর্ণ ভালোবাসা পর্ব ৪

0
282

#বিবর্ণ_ভালোবাসা
#Tahmina_Akhter

৪.

— সন্ধ্যে বেলায় কার ঘুম আসে!

রুদ্রের কাছ থেকে এমন কথা শুনে তনুজার ঘুম ছুটে যায়। সবে চোখটা লেগে এসেছিল। কাঁচা ঘুম থেকে জাগার ফলে তনুজার চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে। রুদ্র কখন এসেছে এই ঘরে তনুজা একটুও টের পায়নি। তনুজা বিরক্তিকর সুরে মনে মনে কিছু একটা বলে উঠে বসে।

রুদ্রের দৃষ্টি হুট করে তনুজার বুকের মাঝে পরে। বুকের কাছের কাপড়টা সরে গিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থতিতে পরে যাওয়ায় রুদ্র অস্বস্তিতে পরে যায়। অস্বস্তি যতটা কাটাতে চাইছে বরং তার চাইতেও বেশি হচ্ছে। কারণ, রুদ্রের দৃষ্টি ঘুরেফিরে সেই একজায়গায় এসে নিবদ্ধ হচ্ছে। নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রুদ্রের। নিজের রাগ দমন করতে না পেরে রুদ্র দরজার দিকে পা বাড়িয়ে দেয়। যেতে যেতেই তনুজাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,

— পুরুষ মানুষের সামনে কি করে শালীনতা বজায় রেখে চলতে হয় আজও শিখতে পারিসনি?

রুদ্রের কথা তনুজার মাথায় ঢুকতেই তনুজা নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মরে যাবার উপক্রম। চটজলদি কাপড়টা টেনে ঠিক করে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ায়। এমন সময় রুদ্র দরজাটা এভাবে ধাক্কা দিয়ে লাগিয়ে যায় যে তনুজা ভয়ে আঁতকে উঠে।

— জীবনে শুধু মাথা নীচু করে চলে গেলেন। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতির মোকাবেলা কি করে করতে হয় তা আপনি কখনো শিখেছেন?

তনুজা অভিমানী কন্ঠে কথাগুলো বলে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

রুদ্র ঘাট থেকে ফিরে এসে তনুজার ঘরে ফিরে যায়। কিন্তু, তনুজাকে ওমন অবস্থায় দেখে রুদ্রের ফিরে আসা ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু, যা বলার জন্য তনুজার কাছে গিয়েছিল সেটাই তো বলা হলো না। রুদ্র দুশচিন্তায় দুই হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো শক্ত করে ধরে টানছিল। যেন মাথার চুলগুলো ছিড়তে পারলে শান্তি পেত।

———–

অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে মেঘলা। নীলচে মেঘের ভেলা মাথার ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। মেঘলার খুব ইচ্ছে করছিল আকাশের মেঘেদের কাছে বলতে, যেন রুদ্র অতি শীঘ্রই ফিরে আসে। রুদ্রের জন্য কখনো দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়নি। বরং, মেঘলার মন রুদ্রকে দেখতে চাওয়ার আগ্রহ মনে জাগার আগে রুদ্র উপস্থিত হতো মেঘলার চোখের সামনে।

সাগরে বুকে আছড়ে পরা ঢেউয়ের শনশন শব্দ। বাতাসের তীব্র গতিতে সাগরের তীরে থাকা নারকেল গাছগুলো যেন ভেঙেচুরে যাবে। বাতাস থেমে গেলে আবারও আগের মতো স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে গাছগুলো।

সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা। রোজ বিকেল বেলা মেঘলা সমুদ্র পাড়ে চলে আসে। ভীষণ ভালো লাগে মেঘলার। একাকী বিষন্ন মনটা যখন কাউকে খুঁজতে ব্যস্ত ঠিক সেসময় এই সমুদ্রের তীরে এলে মেঘলার বিষন্ন মনে প্রশান্তির জোয়ার বয়ে যায়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মালদ্বীপ অসংখ্য দ্বীপের দেশ। ছোট ছোট প্রায় ১২০০ দ্বীপের মধ্যে একটি হলো মালদ্বীপের রাজধানী মালে আইল্যান্ড। প্রায় ১.৫ কিলো লম্বা ও ১ কিলো চওড়া এই দ্বীপ বিশ্বের জনবহুল শহরের মধ্যে একটি। পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ এই দ্বীপের প্রতি। আবার হানিমুন কাপলদের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা হলো এই মালে আইল্যান্ড।

চারদিকে নারিকেল, সুপারি গাছসহ সহ অন্যান্য নানা গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ ছোট্ট এই দ্বীপ মালে। পর্যটকদের পছন্দের এই মালে আইল্যান্ড সবসময়ই লোকারণ্য থাকে। এই আইল্যান্ডে এলে পাওয়া যায় সাগরের মাঝে নগরায়নের ছোঁয়া। নীল সাগর থেকে আসা মিষ্টি হাওয়া শরীর মনকে করে তুলে প্রানবন্ত। এখানে এলে সকল ক্লান্তি-অবসাদ যেন নিমিষেই চলে যায়।

মেঘলা ধীরপায়ে এগিয়ে যায় মালে আইল্যান্ডের পূর্ব দিকে ভারুনুলা রালহুগান্ধু ফেরির দিকে। কারণ, এইখানে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত সুন্দর সূর্যাস্ত দেখতে পাওয়া যায় ।

মেঘলা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে পশ্চিমের আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন সময় দূর থেকে ছোট বড়ো বাচ্চাদের হাসির শব্দ শুনে মেঘলা দেখলো বাচ্চারা সার্ফিং ও স্নোকেলিং করছে। সার্ফিং ও স্নোকেলিং করার জন্য একটা উপযুক্ত জায়গা এই মালে আইল্যান্ড তাই এখানে প্রায়ই পর্যটক সহ স্থানীয় লোকজন আসে।

সাতমাসের উঁচু উদের হাত রেখে ভেতরে থাকা প্রাণটার অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করছে মেঘলা। মাঝে মাঝে নড়াচড়া করছে ভেতরে থাকা ছোট্ট প্রানটি। মেঘলা মুচকি হেসে পেটের ওপর হাত রেখে মনে মনে বলে,

— আমি যদি জাদু জানতাম তবে কি করতাম জানিস? তোকে কিছুসময়ের জন্য আমার পেট থেকে বের করতাম। তারপর, তোকে কিছুক্ষণ বুকে আগলে রাখতাম গভীরভাবে। তারপর, তোর সারামুখে চুমুতে ভরিয়ে দিতাম। তুই বিরক্ত হয়ে মধুর সুরে কান্না শুরু করতি। আর আমি তোর কান্না থামিয়ে ফের আমার পেটে লুকিয়ে রাখতাম। কিন্তু, আফসোস। কখনোই তা সম্ভব নয়। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে কি চাই আমি জানিস? যেন তুই এই পৃথিবীতে এলে আমি তোকে প্রাণ ভরে দেখতে পারি। আমার বুকে তোকে আগলে ধরে আমার মাতৃত্বের স্বাদ নিতে পারি। জানি না বিধাতা আমার ভাগ্যে কি লিখে রেখেছেন? তবে, আশা করি যা করবেন সবার মঙ্গলের জন্য করবেন।

সূর্য ঢলে পরেছে। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের আড়ালে। সূর্যের রক্তিম আভা সমুদ্রের পানিতে ছড়িয়ে আছে। পাখিরা উড়ে যায় আপন নীড়ে। মেঘলা রওনা দিয়েছে কারণ তার আপন নীড়ে ফেরার সময় হয়েছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here