#বিপরীতে_তুমি_আমি
#পর্বঃ১১
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
অর্ণব প্রমত্ত হয়ে বসে আছে। আরাম কেদারায় তার মত্ত শরীরটা এলিয়ে রাখা রয়েছে। ধ্যান জ্ঞান কিছুই নেই বললেই চলে। কিরণ ফ্যানের গতি বাড়িয়ে দিলো। শীতোষ্ণ আবহাওয়াতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে তার। গলা শুকিয়ে আসছে। এতো বড় কদম বাড়ানোর আগে হয়তো আরো বেশ কয়েকবার ভাবা উচিৎ ছিল। কিন্তু যখন করে ফেলেছে তখন সাহসের সাথে কাজ করা বাঞ্চনীয়। কিরণ তার লাল পেরে বাদামি রঙ্গের শ্ড়ির আচঁলটায় দু হাত মুছে নিল। অযথাই এ কাজ করছে। নরম পা জোড়ায় ধীরে অর্ণবের কাছে এগিয়ে এলো। অর্ণবের বা পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ভীত সতন্ত্র হয়ে। জানালার পাশেই ছোট্ট একটা কাঠের টুল। ডান হাত দিয়ে টুলটা টান দিয়ে বসে পড়লো কিরণ। আরাম কেদারার হাতলে নিজের কুনই রাখে। হাতটা তার গালে। স্থির দৃষ্টিতে তাকালো অর্ণবের দিকে। মানুষটা কি সুন্দর চুপচাপ শুয়ে আছে। জগতে সংসারের কোনো চিন্তা তার মাথায় আপাতত নেই। শূন্য মস্তিষ্ক! অথচ তার বিপরীতের মানুষটার মাথাটা যে চিন্তায়, কৌতুহলে ব্যপক জমাটবদ্ধ তার খবর কি সে রেখেছে? হয়তো রাখেনি আবার হয়তো রেখেছে। কিরণ খেয়াল করলো অর্ণবের চোখের পাতাগুলো ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠছে। প্রজাপতির ডানার মতো কাঁপছে। কিরণের ইচ্ছে হচ্ছে আলতো করে আঙ্গুলে ছুঁয়ে দিতে। ছুঁয়ে দিলে কি খুব অন্যায় হবে? হালকা কালচে গোলাপি ঠোঁট টায় ঠোঁট ছোঁয়ালে কি অর্ণব জেনে যাবে? চুলগুলোর ভেতর আঙ্গুলের প্রবেশের অনুমতি কি তার আছে? কিরণের ভ্রু কুচকে এলো। বোধ হলো তার কেন থাকবে না? অবশ্যই তারই আছে। স্ত্রী তার স্বামীকে ছুঁবে এতে অনুমতি কেন লাগবে। এ মানুষটা তো অদ্যোপান্ত পুরোটাই ওর। প্রতিটা অঙ্গ, প্রতিটা হাড়, প্রতিটি নিউরনে একমাত্র ওর অধিকার। হাসি খেলে গেলো ঠোঁটে। মিষ্টি হাসিতে প্রেম প্রেম গন্ধ বয়ে গেল। ঠোঁট নাড়িয়ে মৃদু স্বরে বললো,
এ মানুষ আমার মানুষ!
অবাধ্য মন আরো অবাধ্য হলো। ক্ষতি কি আজ নিয়ম ভেঙ্গে অনিয়মের বাধঁ পেরোলে! হোক না কিছু ভিন্ন তার অজান্তে যার সাক্ষী কেবল কিরণ, কিরণের অনূভূতি, দাবিয়ে রাখা ভালোবাসা। কিরণ ওঠে দাঁড়ালো। ঝুকে গেলো অর্ণবের দিকে। চিকন আঙ্গুলগুলো দিয়ে স্পর্শিত হলো অর্ণবের চোখের পাপড়ি গুলো। গাল বেয়ে নেমে এলো সে হাত। ছোট ছোট দাঁড়ির খোঁচা লেগে গেলো তার নরম কোমল হাতে। মুখ কুঁচকে এলো। হালকা নীল রঙ্গের শার্টের কলারটা চেপে ধরলো। কিরণের তপ্ত নিঃশ্বাস অর্ণবের মুখের উপর আঁচড়ে পড়ছে। মাঝামাঝি দূরত্ব বোধ হয় দেড় ইঞ্চি বৈকি তার এটু বেশি। সে অবস্থানেই কিরণ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠলো,
মাতাল হয়েও জ্বালাতে হবে আমায়? আমায় জ্বালানো আপনার রগে রগে দৌড়ায় তাই না?
অর্ণবের চোখের পাতা আবার নড়ে ওঠলো। কলার ছেড়ে দিয়ে কিরণ সোজা বসে পড়লো অর্ণবের কোলে। নষ্টালজিক চিন্তা ভাবনায় মস্তিষ্ক জ্যাম হয়ে আসছে। কিন্তু কিরণ নিজেকে আটকাবে না আজ। সে আজ মনে অনুসারী। মন চাইছে অর্ণবের চওড়া বুক খানায় মাথা রাখতে। বিলম্ব না সে তাই করলো। অর্ণবের বুকের বাম পাশটায় নিভিতে মাথা রাখলো। বাম হাতটা রাখলো বুকের অপর পাশটায়। কিছু সেকেন্ড অতিবাহিত হওয়া মাত্রই কিরণের অনুভূত হলো অপূর্ব এক অনুভূতি। অর্ণবের বুকের ঢিপ ঢিপ আওয়াজ তার কানে স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে। কিরণের নেশা হলো। প্রেম নেশা! মাথাটা হালকা উপর দিকে উঠিয়ে অর্ণবের মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত করলো। বাম হাতটা আপনা আপনি চলে গেলো অর্ণবের গালটায়। মিনিট কয়েক বেশ পর্যবেক্ষণ করা শেষে মাথায় চেপে ধরলো সাংঘাতিক এক ভূত। মাথাটা এগিয়ে টুক করে গালে এক চুম্বন একে ফেললো। গভীর এক চুম্বন। যে চুম্বনের প্রতিটি সেকেন্ডে মিশে রয়েছে গভীর অব্যক্ত এক প্রণয়। বুক থেকে মাথা ওঠিয়ে বসে পড়লো কিরণ। কাজ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে সে। তার তো করার কথা অন্য কাজ। আর সে করছে সম্পূর্ণ অন্য কাজ। গতকাল অর্ণবের তার বাবার সাথে বলা কথাটা প্রতিনিয়ত চক্রাকারে ঘুরেছে। রাতের অধিকাংশ সময় সে ছটফট করেছে। অর্ণবকে বার কয়েক জিজ্ঞাসা করে কোনো কাজ হয় নি। বরাবরের মতেই দক্ষতার সাথে কথা এড়িয়ে গিয়েছে। সাত পাঁচ বুঝিয়েছে। উপায় না পেয়ে তাই কিরণকে এ পথ অবলম্বন করতে হয়েছে।
সারাদিন ডিউটি শেষে মাত্রই ফিরেছে অর্ণব। ঘামে তার পড়নের হালকা নীল রঙ্গের মোলায়েম শার্টটাও শরীরের সাথে আছে। প্রবেশ করেই আবিষ্কার করলো অন্ধকারময় ঘর। হাতড়ে লাইটটা জ্বালিয়ে নিল । নিচে কোথাও কিরণকে দেখে নি। ঘরেও তার উপস্থিতি না পেয়ে মনে মনে খোঁজ চললো। এসির বাটন অন করে শার্টের উপরের এক বোতাম খুলে দিলো। ক্লান্তিতে নুয়ে যাওয়া শরীরটা ছেড়ে দিলো দোলখাওয়া আরাম কেদারায়। ঠান্ডা বাতাসে শরীর ঠান্ডা হওয়া শুরু করেছে। চোখ আবেশে বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ বন্ধ রেখেই হাতের ঘড়িটা খুলে নিল। পাশের ছোট টেবিলটা হাতের নাগালে। ঘড়িটা রেখে গাঢ় নীল রঙ্গের প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করেও রেখে দিল সেখানে। মিনিট দুয়েক দোল খেতে খেতে হঠাৎই কানে এলো কারো কদমের আওয়াজ। চোখ খুলে সামনে দেখলো। লাল পেরে বাদামী রঙ্গের শাড়ি পরিহিত তার নিজস্ব রমনী। হাতে গ্লাস নিয়ে এগিয়ে আসছে।
নতুন এক শরবত বানানোর চেষ্টা করেছি। প্রচুর গরম পড়েছে। শরবত খাওয়া খুবই প্রয়োজন। আপনি একটু খেয়ে বলবেন কেমন হয়েছে? ভালো হলে সবাইকে দেবো।
কিরণ এক নাগারে কথাগুলো বলে হাতের গ্লাসটা এগিয়ে দিল অর্ণবের দিকে। অর্ণব তাকিয়েই আছে। কিরণের ভাবমূর্তি দেখছে। গভীরভাবে দেখছে। এতোটা খোলামেলা আচরণ! একটুপর গ্লাসের দিকে তাকালো। কিরণ আরেকটু এগিয়ে দিলে এবার অর্ণব বিনাবাক্য পুরো গ্লাসটা খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে গ্লাসটা দিতেই কিরণও ছুটে যেতেই আবারো ফিরে এলো। অর্ণব তখনও কিরণের মতিগতি দেখছে। কিরণের ফিরে আসায় ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো। কিরণও মেকি হাসিতে উত্তর করলো,
কেমন হয়েছে সেটাই তো বললেন না।
অর্ণব দু পা পিছিয়ে আরামকেদারাটা টেনে বসলো। কিরণের দিকে তাকিয়েই মুচকি হেঁসে বললো,
খুবই ভালো হয়েছে। যদি চাও আরো খাওয়াতে পারো।
কিরণের খুশি তো এবার যেন ধরে না। মাথা নেড়ে নীচে চলে গেলো। মিনিট দশেক পর পুরো জগ নিয়ে এলো। অর্ণব তখনও নির্বাক আর কিরণ অ স্থির। একে একে চার গ্লাস শরবত খেয়ে ধীরে ধীরে শরীর ছেড়ে দিতে লাগলো। কিরণ বুঝতে পারলো নেশা ওঠে গেছে।
এতো পরিশ্রম করে, ছলা কলায় অর্ণবকে মত্ত করতে পেরেছে। এখন তার এই রোমান্টিক বোকামির জন্য কিছুতেই এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে দিতে পারে না। অর্ণব জ্ঞান থাকতে হয়তো সহজে ওকে ভেতরের সেই কথা জানাবে না কিন্তু কিরণকে যে জানতেই হবে। কিরণ পুনরায় নিজের পরিকল্পনায় মনোনিবেশ করলো। কিন্তু বিপত্তি বাজলো যখন দৃষ্টিপাত আবারো অর্ণবের কালচে গোলাপি ঠোঁট হলো। অর্ণব এখন প্রায় অবচেতন। রাতের কথা মনে থাকবে না আর কথাও না। মনকে যে আটকানো যাচ্ছে না। কিরণ নিজের সাথে বোঝা পোড়া করে অবশেষে হার মানলো। এখনো সে অর্ণবের কোলেই বসে রয়েছে। মস্তিষ্কে হেরে মনে জিততে চলছে সে। হেরেছে আবার কোথায়? ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো অর্ণবের দিকে। ঠোঁট ক্রমাগত কাঁপছে। বুকের ধুকপুক বেড়ে বোধ হয় নব্বই পার হয়েছে। ডান হাতটা অর্ণবের ডান গালে রেখে হুট করে অর্ণবের ঠোঁটে চুমু দিয়ে সড়ে যাবে তখনই অনুভব হলো কোমরটা আঁকড়ে ধরেছে কেউ। কোমড়ের দিকে তাকাতেই টানে অর্ণবের আরো বেশি কাছে এসে পড়লো কিরণ। ঘটনার আকষ্মিকতায় পুরোপুরি হতবাক হয়ে গেলো। মূহুর্তে কি হয়ে গেলো তার সমীকরণ মেলাতেই মস্তিষ্কের নিউরনে ধাক্কা খেলো। কি হলো এটা?
চলবে ~~~~