বিনি সুতোর টান পর্ব ৩

0
345

#বিনি_সুতোর_টান
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী(ছদ্মনাম)
#পর্ব_তিন

হাতের ফোস্কা গুলো গলে যাওয়ায় ব্যাথা আর জ্বালা দ্বিগুন হচ্ছে। জায়ান জেমির হাত এখনো চেপে ধরে আছে। জেমি কাঁদছে আর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। জায়ান জেমির হাত চেপে ধরেই জেমিকে টানতে টানতে ইরা বেগমের রুমে নিয়ে যেতে লাগলো। জেমি কাঁদতে কাঁদতে বার বার বলছে “আমার হাত টা ছেড়ে দাও জায়ান আমার লাগছে”। জায়ান সেদিকে কান না দিয়ে ইরা বেগমের রুমে নিয়ে বিছানায়া ছুড়ে মারলো জেমিকে। জেমি হাতটা ছাড়া পেয়েই পাগলের মতো ফুঁ দিতে লাগলো। ওর মনে হচ্ছে ওর দম এক্ষুনি আটকে যাবে। জায়ান জেমিকে ছুড়ে মেরেই তৎক্ষাৎ জেমির চুলের মুঠি ধরে রাগী কন্ঠে চিৎকার করে বলে উঠলো…..

— তোমার সাহস হয় কি করে আমার মাকে কষ্ট দেওয়ার? কি ভেবেছো তুমি স্বামী থাকা সত্তেও বাইরে নোংরামি করে বেড়াবে আর আমার মা আমি দেখে যাবো।

কথা গুলো শুনে জেমির রাগ আর ঘৃনায় অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। জায়ানের প্রতি ঘৃনায় ওর মাথা নিঁচু হয়ে আসচ্ছে। জায়ান এতটা নিচু মানসিকতার হতে পারে জেমি ভাবতেও পারছেনা। রাগ আর ঘৃনার কাছে জেমির হাতের ব্যাথা নিছকেই সামান্য মনে হচ্ছে। ইরা বেগম হাসোজ্জল মুখ নিয়ে দেখছে আর মনে মনে পৈশাচিক আন্দন্দ অনুভব করছে। জায়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইরা বেগম আবারো কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলা শুরু করলো…..

—দেখ বাবা আমার হাতটা জ্বলে যাচ্ছে। দেখ কেমন লাল হয়ে আছে।

বলেই ন্যাকা কান্না কাদঁতে কাঁদতে হাতে ফুঁ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জায়ান ওর মায়ের কথা শুনে পূর্নরায় জেমির হাতটা ধরতেই জেমি হেচকা টানে হাতটা সরিয়ে নিয়ে সজোরে একাধারে দুইটা থাপ্পড় মে/রে বসলো জায়ানের গালে। থাপ্পড় মে/রেই জায়ানের কলার ধরে রাগী কন্ঠে চিৎকার করে বলতে লাগলো…….

—আমার আজ ভাবতেও নিজের প্রতি নিজের ঘৃনা হচ্ছে, যে আমি তোমার মতো একজন কে ভালো বেসেছিলাম। তোমার মতো একজন নিঁচু মানসিকতার মানুষকে শুধু আমি না যেকোনো মেয়ে ঘৃনার চোখে দেখবে। তুমি স্বামী নামে কলঙ্ক, শোনো বিশ্বাস ছাড়া সংসার, ভালোবাসা, সম্পর্ক কোনো টাই টিকে না হোক না অনেক জোরদার সম্পর্ক। তুমি আমার ভালোবাসা ডির্জাভ করো না। করতে পারো না। তোমার মতো একজন মানুষ শুধু ঘৃনা ডির্জাভ করে। সত্যি আর মিথ্যা যে পুরুষ যাচাই না করে স্ত্রীর গায়ে পশুর মতো অত্যাচার করে সে পুরুষ নামে কলঙ্ক। এতদিন জেমির ভালোবাসা দেখেছো আজ থেকে ঘৃনা দেখবে। আমি বেঁচে থাকতে এ জীবনে কোনোদিন তোমাকে ক্ষমা করবো না জায়ান। কোনো দিন না।

কথা গুলো বলার সময় জেমির গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো। জেমির এই মুহূর্তে কষ্ট হচ্ছে ঘৃনা হচ্ছে জায়ানের প্রতি আর ওর শাশুড়ির প্রতি। জেমি কথা গুলো বলার জায়ানের রাগে কপালের রকটা ফুলে উঠেছিলো, চোখ গুলো লাল বর্ন ধারন করেছে। জেমির শাশুড়ি ও রাগী চাহনী নিক্ষেপ করে আছে ওর দিকে। জেমি কথা গুলো বলেই দরজার দিকে এক পা দিয়েই আবার থেমে গেলো। ঘুড়ে দাড়িয়ে ওর শাশুড়ির সামনে এগিয়ে গিয়ে শান্ত কন্ঠেই বললো…..

—আপনার মতো কিছু শাশুড়ি নামক জঘন্য মানুষের জন্য মায়ের মতো শাশুড়িদের নাম খারাপ হয়। আর আপনার ছেলের মতো কিছু ছেলেদের জন্য মেয়েরা নির্ভয়ে ভালোবেসে ঘর ছাড়তে পেরে উঠেনা। ভালোবাসার থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যায়। এই কয়েকদিন আমি সবটা মুখ বুঝে মেনে নিছি বলে ভাববেন না আমি প্রতিবাদ করতে জানিনা।

বলেই জেমি হনহন করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। জায়ান রাগে দুইহাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। জেমি বেড়িয়ে যেতেই ইরা বেগম রাগে গজগজ করে চিৎকার করে বলে উঠলো……

— দেখলি জায়ান বাবা দেখলি মেয়ের কি তেজ। আমাদের কিভাবে শাসিয়ে গেলো। একদিন তোর বউয়ের জন্য আমাকে ঘর ছাড়া হতে হবে দেখিস।

বলেই ন্যাকা কান্না কাঁদতে লাগলো। জায়ান আর সহ্য করতে না পেরে রেগে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
___________________________________________
–ফাটল ধরিয়ে দিয়েছি। এখন এই তোমাকে তোমার আসল চাল টা দিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুমি বাংলাদেশে ব্যাক করো।

ইরা বেগম খুশিতে গদগদ হয়ে কথাটা বলতেই। ফোনের ওপাশে থাকা মেয়েটা উচ্চস্বরে হাসিতে মেতে উঠলো। মেয়েটা হাসতে হাসতে বললো….

—- থ্যাংক ইউ মামনি। তুমি শুধু আমার পাশে থেকো তাহলেই হবে। আমি ফিরছি খুব যত দ্রুত সম্ভব। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও।

বলেই মেয়েটা খুশি মনে ফোন টা কেটে হা হা করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে উঠলো….

— জায়ান কে পেয়ে গেলে তোমাকেও আমার রাস্তা থেকে সরাতে বেশি ক্ষন লাগবে না মামনি….

বলেই আবার হেসে উঠলো মেয়েটা।
____________________________________________
প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ জেমি ভিজে শরীরে ওয়াশরুমের দেয়াল ঘেষে বসে হাটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে। জায়ানের এই নোংরা আচরণ গুলোর জায়ানের প্রতি ওর ভালোবাসা মুহূর্তেই ম/রে গেছে। এই জায়ান কে তো ও ভালোবাসেনি। জেমি অনেক ক্ষন ভিজে শরীরে থাকায় ওর মাথাটা ভার হয়ে আসচ্ছে, চোখ দুটো ও খোলা রাখতে কষ্ট হচ্ছে, হাতের ব্যাথায় হাতটাও ফুলে উঠেছে, যেই মেয়েটার গায়ে ছোট একটু আচঁড় লাগলে মেয়েটা সারাবাড়ি মাথায় তুলতো। সেই মেয়েটার শরীর আজ আঘাতের চিহ্নে ভরপুর। ভাবতেই জেমি ডুঁকরে কেঁদে উঠলো। হাতের পোড়া স্থানটা অনেক ক্ষন পানিতে ভিজিয়ে রাখায় বরফ হয়ে আছে কিন্তু এখনো জ্বলছে। জেমি একবার হাতের দিকে চোখ দিয়ে আবারো অসহায়ের মতো কেঁদে উঠলো। শরীর টা আর সাঁয় দিচ্ছে না ওর। আর কিছুক্ষন থাকলে ও যে জ্ঞান হারাবে সেটা ও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। নিজেকে সামলে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে পুরো রুম খুঁজে একটাও ওষুধ না পেয়ে হতাশ হয়ে হাতে একটা পাতলা নরম কাপড় ভিজিয়ে প্যাঁচিয়ে সুয়ে পড়লো। এখন একটা ঘুম না দিলে ওর দাড়ানোর মতো শক্তি থাকবে না।
____________________________________________
ঘুমের মধ্যে জেমির মুখের উপর কারোর গরম নিশ্বাস পড়তেই জেমির ঘুমটা ভেঙে গেলো। শরীর অনেক দূর্বল থাকায় ওর চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না। হঠাৎ করেই জেমির কপালে কেউ ঠোঁট ছোঁয়াতেই জেমি অনিচ্ছা শর্তেও ভয় পেলে লাফিয়ে উঠলো। অন্ধকার রুমে জেমি ঠিক বুঝতে পারছেনা ওর সামনে কে আছে? জেমি বিছানায় হাতড়ে ওর ফোন টা বের করে টর্চ অন করলো ঘড়ির দিকে নজর দিতেই দেখলো ১২ টা বেজে ১০ মিনিট। জেমি টর্চ টা সামনে ধরতেই জায়ানের চেহারাটা দেখতে পেয়েই জেমির শরীরের শীতল রক্ত গুলো মুহূর্তেই গরম হতে লাগলো। জেমি রাগী কন্ঠে বলে উঠলো…..

—আমার শরীর ছোঁয়ার মতো অধিকার এখন তোমার নেই। সেই অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলেছো জায়ান। তাই আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে খুব খারাপ হবে। আজ থেকে তোমার মতো একটা নোংরা মানসিকতার লোকের সাথে থাকা আমার পক্ষে পসিবল না।

বলেই জেমি খাটের থেমে নামার জন্য পা দিতেই জায়ান জেমিকে জোর করে বিছানার সাথে চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো…

–তুমি কি ভেবেছো তুমি আমার থেকে দূরে যেতে চাইবে আর আমি যেতে দিব কখনোই না। তুমি আমার আর আমারেই থাকবে। ভালোবাসি তোমাকে।

জেমি নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে জোরেই বলে উঠলো…

–তোমার মতো লোকের মুখে ভালোবাসি শব্দটা মানায় না। ঘৃনা করি তোমাকে আমি। ছাড়ো আমাকে নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

জেমির কথা শুনে জায়ান আরো জোরে চেপে ধরলো জেমিকে। জেমি আপ্রান চেষ্টা করছে জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর। জেমির শরীর অনেকটা দূর্বল থাকায় জায়ানের শক্তির সাথে ও পেরে উঠছে না। জায়ানের প্রত্যেক টা ছোঁয়ায় জেমির কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে। জেমি নিজেকে ছাড়াতে না পেরে চিৎকার করে বলে উঠলো….

—আমাকে ছেড়ে দাও জায়ান। তোমার ছোয়ায় আমার ঘৃনা লাগছে। ছাড়ো আমাকে। প্লিজ। আমাকে ছাড়ো। আমার বিষাক্ত লাগছে তোমার ছোঁয়া।

#চলবে

(আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমাকে দেখিয়ে দিবেন আমার ভুল গুলো আমি সংশোধন করে নিব। গল্পটায় বিরক্ত চলে আসবে কয়েক পার্টে কিন্তু শেষটা অব্দি অপেক্ষা করুন আশা রাখছি ভালো লাগবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here