বিনি সুতোর টান পর্ব ২

0
384

#বিনি_সুতোর_টান
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী (ছদ্মনাম)
#পর্ব_দুই

সকাল সকাল মুখের উপর এক জগ পানি পড়ায় ঘুম থেকে হুড়মুড়িয়ে উঠলো জেমি। সারা শরীরে এখনো ব্যাথা, মাথা চড়কির মতো ঘুরছে, শরীর অনেক দূর্বল লাগছে তাও ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সামনে তাকাতেই ইরা বেগমের রাগী চেহারা চোখে পড়লো। ইরা বেগমের রক্ত চক্ষু দেখতেই জেমির মনের মধ্যে অজানা ভয় এসে গ্রাস করলো। কালকের আঘাতের কথা মনে পড়তেই জেমি ভয়ার্ত কন্ঠে কিছু বলার আগেই ইরা বেগম চিৎকার করে বলে উঠলো….

—এটা তোমার বাবার বাড়ি নয় যে এখানে তুমি বেলা অব্দি পড়ে পড়ে ঘুমাবে। আমার ছেলেটা তোমার জন্য না খেয়ে অফিসে বেড়িয়ে গেলো সে খবর কি তোমার আছে। এইসব শরীর খারাপের ন্যাকামি বাবার বাড়ি গিয়ে দেখাবে এখানে না।

বলেই হন হন করে বেড়িয়ে গেলো। জেমির চোখে পানি টলমল করছে। জেমি সব সময় প্রতিবাদী মেয়ে তাহলে আজ কেনো অন্যায় সহ্য করছে জেমি নিজেও জানেনা। জেমি উঠে একবার ঘড়ির দিকে নজর দিলো মাত্র সকাল সাতটা বাজে আর ওর শাশুড়ি ওকে বেলা অব্দি ঘুমানোর জন্য কথা শুনিয়ে গেলো। জেমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রান্না এসে নাস্তা বানানোর কাজে হাত লাগালো। জায়ান তো এত তাড়াতাড়ি অফিস যায় না তাহলে আজ কি হলো যে এত তাড়াতাড়ি অফিসের জন্য বেড়িয়ে গেলো আর ওর অফিস তো আটটায়। এইসব ভাবতেই জেমি আর কিছু না ভেবে রান্নায় মনোযোগ দিলো।চা নিয়ে ইরা বেগমের রুমে ঢুকতেই জেমি খেয়াল করলো ইরা বেগম ফোনে কারোর সাথে কথা বলছিলো হেসে হেসে জেমিকে দেখা মাত্রই ফোন কেটে কড়া কন্ঠে বললো…..

—এতক্ষনে মহারানীর খাবার নিয়ে আসতে মন চাইলো। বলি মেয়ে, আমার তো বয়স হয়েছে এত বেলা অব্দি না খেয়ে থেকে অসুখ বাধিয়ে ম/রে যাব এটাই তুমি চাও।

জেমি খাবার টা টেবিলে রাখতে রাখতে বললো….

— মা এখনো এত সকাল হয়নি যে আপনি না খেয়ে ম/রে যাবেন। বিয়ের পর এই সাতদিন দেখেই আসলাম আপনি নয়টার আগে ঘুম থেকে উঠেন না, তাহলে আজ সাতটায় আপনার এত ক্ষিদে লেগে গেলো যে আপনি ভাবছেন না খেয়ে ম/রে যাবেন।আসল কথা হচ্ছে আমি একটু শান্তিতে ঘুমিয়েছিলাম সেটা আপনার সহ্য হচ্ছিলোনা।

বলেই জেমি আর এক মিনিট ও রুমে না দাড়িয়ে বেড়িয়ে আসলো। ইরা বেগম জেমির কথা শুনে রাগে বকবক শুরু করে দিলেন। জেমি সেদিকে কান না দিয়ে সোজা নিজের ঘরে এসে বিছানায় বসে পড়লো। কেনো যেনো ওর হঠাৎ মনে হলো ওর শরীরে ব্যাথা টা আগের থেকে অনেক কম নাই বললেও চলে, কিন্তু রাতে তো ও কোনো ওষুধ বা মলম লাগায়নি তাহলে কমলো কিভাবে? ভাবতেই জেমি অজান্তেই বলে উঠলো….

—জায়ান লাগিয়ে দেয়নি তো…..

এইটুকু বলেই আবার থেমে গিয়ে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো…

— যে ছেলে ভালোবেসে বিয়ে করা মেয়েটাকে এইভাবে আঘাত করতে পারে সে ছেলে নাকি আবার মলম লাগিয়ে দিবে। আমিও না কি দিবারাত্রি স্বপ্ন দেখছি।

আর বলতে পারলো না ওর গলায় কথা গুলো ঝট পাঁকিয়ে আসচ্ছে। চোখে পানি টলমল করছে যেকোনো সময় গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে।
____________________________________________
সন্ধ্যায় সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে কিছুক্ষন হবে।চারদিকটা অন্ধকার আর অন্ধকারের মাঝেও রাস্তার ল্যাপপোস্ট গুলো ঠাঁই দাড়িয়ে আছে।ল্যাপপোস্ট গুলো থেকে একটা শিক্ষা নেওয়া যায় যে “নিজে অন্ধকারে থেকেও অন্যকে আলোতে রাখার শিক্ষা” জেমি দুইতলার ছাঁদের উপর দাড়িয়ে এইসবেই পর্যবেক্ষণ করছিলো।গায়ে হালকা জ্বর, গলা টাও খুশখুশ করছে, মাথাটা ঝিম ধরে আছে, নিচে ওর শাশুড়ি ওকে দেখলেই এটা ওটা হুকুম দিচ্ছে তাই সন্ধ্যা নামতেই জেমি দম বন্ধকর পরিবেশ থেকে বেড়িয়ে একটু খোলা আকাশের নিচে এসে দাড়িয়েছে। দূর্বল শরীর নিয়েই সারাদিন গাধারখাটুনি খেটেছে ও। জায়ান এখনো অফিস থেকে ফিরেনি। জেমি অনেক ক্ষন একা একা ছাদে দাড়িয়ে থেকে নিজের জীবনের এই পরিস্থিতির জন্য চোখের জল ফেলে নিচে নেমে আসলো। ইরা বেগম গলা ছেড়ে হাঁক দিচ্ছে। জেমি ইরা বেগমের সামনে যেতেই ইরা বেগম মুখ বাঁকিয়ে হুকুম দিলো,,,

—আমার গলা টা একটু ব্যাথা করছে আমার জন্য একটু গরম পানি নিয়ে এসো।

জেমির কেনো যেনো বিপরীতে প্রশ্ন করতে মন চাইলো না। জেমি নিঃশব্দে রান্না ঘর থেকে গরম পানি এনে ইরা বেগমের সামনের টেবিলে রাখতেই ইরা বেগম বললো….

—দেখছো না আমার শরীর টা ভালো না ওইখানে কেনো রাখলে। আমি নিয়ে খেতে পারবোনা। আমার হাতে দাও।

জেমি ওর শাশুড়ির কথামতো গরম পানিটা ওর শাশুড়ীর হাতে দিতেই ওর শাশুড়ী ইচ্ছেকরে জেমির হাতে ফেলে দিলো। জেমি সাথে সাথে আতৎকে উঠলো। জেমি হাতটা জ্বলে যাচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে ওর দম এক্ষুনি আটকে যাবে। জেমি উপায়ন্তর না পেয়ে ছুটে চললো ওয়াশরুমের দিকে। জেমিকে ছুটে যেতে দেখে ওর শাশুড়ি হাতে থাকা পান মুখে দিতে দিতে একটু জোরে বলতে লাগলো….

–ইচ্ছে করে এমন করলে দেখো দেখো আমার হাতেও পড়েছে ইসস জ্বলে গেলো রে।

ইরা বেগম ইচ্ছে করে চেঁচাতে লাগলো। জায়ান অফিস থেকে ফিরেই সদর দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে ঢুকে ওর মায়ের চেঁচামেচি শুনে ব্যাগটা সোফার উপর রেখে দৌড়ে ওর মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো ওর মা হাতে ফুঁ দিতে দিতে চেচাচ্ছে। জায়ান ওর মায়ের সামনে গিয়ে হাটু ভেঙে বসে ওর মায়ের হাতটা ধরে বলে উঠলো…..

—কি হয়েছে মা? হাতে ব্যাথা পেয়েছো নাকি?

জায়ান কে পেয়ে ইরা বেগম এই বার বিলাপ পেরে কাঁদতে লাগলো।জায়ান ওর মাকে এইভাবে কাঁদতে দেখে একটু ভরকে গেলো। চারদিকে একবার তাকিয়ে দেখলো জেমি কোথাও নেই। জায়ান আবার প্রশ্ন করতেই জায়ানের মা মুখে আঁচল গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বললো…..

—তোর বউকে শুধু বলেছিলাম আমাকে একটু গরম পানি করে দিতে। সে মেয়ে রাগে ফেটে পড়ে ইচ্ছে করে আমার হাতে গরম পানি ফেলে দিলো। দেখ বাবা দেখ (হাতটা দেখিয়ে) আমার হাতটা জ্বলে যাচ্ছে।

জায়ান ওর মায়ের কথা শুনে একটু অবাক হলো। জায়ান জেমিকে খুব ভালো করে চিনে জেমি কখনো এমন করবে এটা ও ভাবতে পারছেনা। আমার মাকেও অবিশ্বাস করতে পারছেনা। জায়ান দ্বিধায় পড়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলো….

—মা তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে হয়তো ভুল করে পড়েছে জেমি ইচ্ছে করে কেনো ফেলতে যাবে বলো?

জায়ানের মা এইবার উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বললো…..

—জানিস না বাবা তোর বউ ফোনে কারোর সাথে কথা বলছিলো ফিসফিসিয়ে আমি দেখে ফেলে ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম কে ফোন দিয়েছে? এটা শুনে তোর বউ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আমাকে যা নয় তাই বলেই কথা শুনিয়েছে।

বলেউ আবার কাঁদতে লাগলো। কথাটা শুনেই জায়ানের রাগে দাত কড়মড় করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। একবার ও যাচাই করলো না কথাটা সত্যি নাকি মিথ্যার। জায়ান কে বেরিয়ে যেতেই দেখেই ইরা বেগম আড়ালে হাসলো। জায়ান বেড়িয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই জেমি ওয়াশ রুম থেকে বের হলো। ওর চোখে পানি টলমল করছে। জেমি হাতে ফুঁ দিচ্ছে সমানে। জায়ান সেদিকে চোখ না দিয়ে জেমির সামনে গিয়ে জেমির গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মারতেই জেমি ছিটকে সামনে থাকা চেয়ারের উপর পড়ে গেলো। হঠাৎ করে এমন একটা থাপ্পড় খাওয়ায় জেমি নিজেকে সামলাতে পারেনি থাপ্পড়ের কারন টা ওর অজানা। জেমি নিজেকে সামলে উঠে দাড়িয়ে জায়ান কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জায়ান ওর হাত টা চেপে উঠতেই জেমি জোরে আহঃ বলে উঠলো। গরম পানি পড়ে সাথে সাথে হাতটা ফোস্কা পড়ে গেছিলো। জায়ান এইভাবে চেপে ধরায় ফোস্কা গুলো মূহুর্তেই গলে গিয়ে এক বিষাদময় জ্বালা সৃষ্টি করলো। জেমি হাত টা ছুটানোর চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলো…..

—আমার হাতটা ছাড়ো জায়ান। আমার লাগছে, আমি সহ্য করতে পারছিনা, জায়ান প্লিজ ছেড়ে দাও।

#চলবে

(আসসালামু আলাইকুম। অনেকেই কালকের পার্টে বলেছেন সবাই নাকি নায়িকাদের টর্চার করার গল্প লিখে শেষে গিয়ে নায়ক কে হিরো বানিয়ে মিল দেয়। এখন কথা হচ্ছে আমি গল্পটা কি করে লিখব সেটা কি আপনারা জানেন? সবাই তো এক ধাচে গল্প লিখবে এমন না। মাত্র এক পার্ট পড়েই পুরো গল্প বিচার করবেন না।জায়ানের পরিনিতি সম্পর্কে জানতে হলে শেষ অব্দি ধৈর্য ধরে পড়তে হবে।আপনাদের ভালো মন্তব্য যেমন আমাদের লিখতে অনুপ্রেরণা জোগায় ঠিক তেমনি খারাপ মন্তব্য লেখার মানসিকতা নষ্ট করে দেয়।আমার ভুল গুলো সুন্দর ভাষায় দেখিয়ে দিবেন আমি ঠিক করে নিব।আমার কথায় কারোর খারাপ লাগলে মাফ করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here