#বিনি_সুতোর_টান
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী (মেহু)
#পর্ব_দশ
–আমার বা’চ্চা টাকে মে”রে ফেলতে চাইছিলে তুমি।
জেমি আর মায়া একসাথে খাওয়া শেষ করে উঠতেই। হঠাৎ করেই মায়ার মুখ থেকে রক্ত পড়তে লাগলো। জেমি আগেই মায়ার এত ভালো ব্যবহার দেখে সন্দেহ করেছিলো। খাবার গুলো মুখে দিতে চেয়েও পারছিলো না। কেমন যেনো ভয় হচ্ছিলো। মায়া যখন রান্না ঘরে গিয়েছিলো তখন জেমি সুযোগ বুজে মায়ার সাথে নিজের খাবারের থালাটা পরিবর্তন করে নিয়েছিলো। মায়া খেয়ে উঠতেই ওর মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলো। জেমি দেখেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। রক্ত দেখেই মায়া ঘাবড়ে গেলো। জেমি মায়ার অবস্থা দেখে কাঁপা কাঁপা গলায় উপরোক্ত কথাটা বলে উঠলো।
মায়া রক্তাত হাতের দিকে চেয়ে আছে ভয়ার্র চোখে। রক্ত পড়ার কথাতো জেমির তাহলে ওর পড়ছে কেনো? ভাবতেউ মায়ার মাথা ঘুরতে লাগলো। জেমি নিঃশব্দে মায়ার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতেই মায়া ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো। মায়ার গলা আটকে আসচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে ওর। মায়া গলায় হাত দিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বলতে লাগলো…..
—আমার এমন লাগছে কেনো? এমন তো হওয়ার কথা তো….
বলতে চেয়েও মায়া থেমে গেলো। জেমি নিজের মধ্যে চেপে রাখা রাগ আর ঘৃনায় মায়ার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে বসলো। মায়ার শরীর টা মুহূর্তেই দূর্বল হয়ে আসায় জেমির থাপ্পড় খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই জেমি মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেললো। মায়ার চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে আসচ্ছে। নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই জড়িয়ে গেছে ও। জেমি মায়ার গাল চেপে ধরে অগ্নি দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বলতে শুরু করলো….
— কি ভেবেছিলে? তোকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। তোর মিষ্টি কথায় আর এই ন্যাকা কান্নায় জেমি গলে গেছে। নো ইয়ার, জেমি এতটাও বোকা না। তুই যে নোংরা একটা মেয়ে সেটা জানতাম কিন্তু তুই এতটা জঘন্য সেটা আমি কোনো দিন ভাবতে ও পারিনি। ছিঃ, এইবার দেখ অন্য কে আঘাত করলে ঠিক কতটা কষ্ট হয়। আমার যদি ক্ষমতা থাকতো না তোকে নিজের হাতে খু/ন করতাম। কিন্তু কি করব বল? আমি তো আর তোর মতো জঘন্য মানসিকতার মেয়ে না। অনেক সময় মেয়েরাই মেয়েদের প্রধান শত্রু হয়ে দাড়ায়।
জেমি কথাগুলো বলেই ছিটকে ফেলে দিলো মায়াকে। মায়া রাগী চাহনি নিক্ষেপ করে জেমির দিকে এগিয়ে যেতেই দরজার কলিং বেলটা বেজে উঠলো। জায়ান সেই সকালেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো বাড়ি থেকে। ইরা বেগম রুম বন্দি হয়ে বসে আছে। ইরা বেগমের রুমটা দো-তলায় হওয়ায় জেমি আর মায়ার কথার শব্দ তার কানে ঢুকলো না। কলিং বেলের শব্দ মায়ার কানে আসতেই মায়া থেমে গিয়ে ইচ্ছে করে জোরে কান্না করতে শুরু করলো। জেমি সেদিকে নজর না দিয়ে দরজা খুলতেই দরজার ওপর পাশে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে জেমি একটু হাসলো। হেসেই বললো….
–আসুন আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
জেমিকে দেখে পুলিশ গুলো ভেতরে ঢুকতেই মায়া ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো। ওর কথা বলার শক্তি নেই। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে গলায়। চোখ ঝাপসা হয়ে আসচ্ছে। মায়া টেবিলের চেয়ার ধরে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। যেকোনো মুহূর্তে ও ঢুলে পড়ে যাবে। মায়ার অবস্থা খারাপ দেখে পুলিশ অফিসার অন্যদের চোখ ইশারা দিতেই ওরা মায়াকে ধরে ফেললো। মায়াকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইশারা করতেই ওরা মায়াকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো মায়া জোর খাটিয়ে কিছু বলবে সেই শক্তি টুকু ওর নেই। ওরা সবাই মায়াকে নিয়ে যেতেই জেমি ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। পেটে হাত দিয়ে বলে উঠলো…..
—আমি তোর কোনো ক্ষতি হতে দিব না। তুই তোর মায়ের পরিচয়ে বড় হবি। আজকেই আমি তোকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাব। মায়া ফিরে আসবেই। ওকে যতই আমি জেলে পাঠাই ও ফিরে আসবে। আর এসেই যদি আবার তোর ক্ষতি করার চেষ্টা করে। না, না আমি তোকে নিয়ে আজকেই চলে যাব এখান থেকে।
বলেই জেমি কেঁদে উঠলো। মায়া কতটা জঘন্য কাজ করতে পারে ভাবতেই জেমি বার বার আতঁকে উঠছে।
___________________________________________
হেনা বেগম কিচেনে কাজ করছিলেন। আর নাঈম হোসাইন ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে নিউজ পেপার পড়ছিলেন। সারাদিনের ব্যস্ততায় আজকের নিউজ পেপার টা পড়া হয়নি। হঠাৎ করেই কলিং বেল বাজতেই নাঈম হোসাইন গলা উঁচিয়ে বললো…..
—দেখো তো এইসময় কে এলো?
হেনা বেগম কাপড়ের আঁচলে হাত মুছতে মুছতে গিয়ে দরজা খুলতেই সামনে থাকা মানুষ টা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এতদিন পর নিজের মেয়েটাকে চোখের সামনে দেখে নিজের ভেতরে অভিমান টাকে আর ধরে রাখতে পারলো না। যতই হোক মা তো। মা কখনো সন্তান কে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনা। জেমিকে দেখেই হেনা বেগম ঝাপটে ধরে পাগলের মতো ওর মুখ চু’মু দিতে লাগলো। জেমি ও ওর মাকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো। নাঈম হোসাইন দূর থেকে ছলছল চোখে তাকিয়ে দেখছে। এত দিন পর নিজের মেয়েটাকে দেখে, এত জেদী একটা মানুষ চুপ করে গেলো। হেনা বেগম জেমিকে ধরেই বলতে লাগলো…..
— জেমি মা। কেমন আছিস। তোর এই অবস্থা কি করর হয়েছে মা?
বলেই আবারো জেমিকে ধরে কাঁদতে লাগলো। জেমি ও এতদিন পর নিজের মাকে পেয়ে সমস্ত কষ্ট মন উজাড় করে কেঁদে ভাসাচ্ছে। হেনা বেগম জেমিকে ধরে ভেতরে নিয়ে আসতে আসতে গলা উঁচু করে বলতে লাগলো….
–দেখো কে এসেছে। আমাদের মেয়েটা কতদিন পর আমাদের কাছে এসেছে। দেখো আমাদের ফুলের টুকরো মেয়েটার অবস্থা কি হয়েছে?
নাঈম হোসাইন ছলছল চোখে তাকাতেই জেমি “বাবা” বলে জড়িয়ে ধরলো। সন্তান রা যতই অন্যায় করুক বাবা-মা সারাজীবন তাদের দূরে ঠেলে দিতে পারে না। বাবাদের ভেতরটা যেমন তুলোর মতো নরম, তেমনি বাইরে টাও লোহার মতো শক্ত। জেমি এতদিন পর নিজের বাবা-মাকে ফেরত পেয়ে সমস্ত কষ্ট এক নিমিশেই ভুলে গেলো।
____________________________________________
সন্ধ্যায় জায়ান বাসায় ফিরতেই সদর দরজা খোলা পেলো। এইসময় দরজা খোলা দেখে জায়ান কিছুটা অবাক হলো। জায়ান সোজা জেমির রুমে গিয়েই দেখে জেমি রুমে নেই। জেমিকে রুমে না পেয়ে জায়ানের বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো। জায়ান মুহূর্তেই পাগলের মতো সারাবাড়ি খুঁজতে লাগলো জেমিকে। ইরা বেগম আর জায়ান মিলে সারাবাড়ি খুঁজে ও জেমিকে কোথাও পেলো না। এমন কি মায়া ও নেই। দুজন একসাথে গায়েব। জায়ান সারাবাড়ি খুজে জেমির রুমে এসে আবারো খুঁজতে লাগলো। তন্নতন্ন করে সারাবাড়ি খুঁজে ও কোথাও না পেয়ে জায়ান ধপ করে হাটু ভেঙে বসে পড়লো। ওর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মায়ার কথা মনে পড়তেই এক অজানা ভয় এসে জায়ানকে গ্রাস করে নিলো।
–মায়া, হ্যাঁ, মায়া,কোথায়? মায়া জেমির কোনো ক্ষতি করে দেয় নি তো। মায়া তুই যদি জেমির কোনো ক্ষতি করিস তাহলে তোর অবস্থা কতটা ভয়ংকর হবে তুই ভাবতে ও পারছিস না। নাহ, আমাকে চুপ করে বসে থাকলে চলবে না।
বলেই জায়ান তাড়াহুড়ো করে উঠে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ থেমে গেলো। হুট করেই পেছনে ফিরতেই দেখলো বিছানার উপর কিছু একটা রাখা। জায়ান ধীর পায়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতেই একটা একটা কালো ডায়রি দেখতে পেলো। কৌতুহল বশত জায়ান ডায়রিটা হাতে নিয়ে প্রথম পেজ খুলতেই কয়েক লাইন চোখে পড়তেই ওর ভেতরের সবটা এলোমেলো হয়ে গেলো। ডায়রির প্রথম পাতায় লেখা,,
“চোখের সামনে প্রিয় মানুষগুলো চেঞ্জ হতে দেখার মতো ভয়ংকর দৃশ্য আর হতে পারে না”
তার একটু নিচেই লেখা….
” তোমাকে না চেনার আফসোস আমাকে সারাজীবন সুখী হতে দিবে না ”
#চলবে
(আসসালামু আলাইকুম। প্রথমেই দুঃখিত দেরি করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু, আজ টিকা দেয়ায় হাত অনেক ব্যাথা অনেক কষ্টে এইটুকু লিখছি। আজকের পর্ব এলোমেলো মাফ করবেন। প্রথম ধামাকা টা কেমন লাগল)